ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্রের নাম গ্লুকোমিটার। এই যন্ত্রের সাহায্যে ঘরে বসেই রক্তের সুগার (অর্থাৎ, ডায়াবেটিসের মাত্রা) কত পয়েন্ট তা নির্ণয় করা যায়।
এক্ষেত্রে ল্যানসেট নামের একটি সূক্ষ্ম সুঁইয়ের সাহায্যে আঙুলের ডগায় খোঁচা দেওয়া হয়। রক্ত বেরিয়ে আসলে টেস্টিং স্ট্রিপে এক ফোঁটা রক্ত নিয়ে সেটি মেশিনে ঢুকিয়ে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিয়মিত রক্তের সুগার পরিমাপ করা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত সুগারের লেভেল পর্যবেক্ষণে রাখলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। ডায়াবেটিসের বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা এড়াতে রক্তের সুগার মাপার যন্ত্রটি সবসময় হাতের কাছে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত—খালিপেটে ও প্রতিবার আহারের দুই ঘণ্টা পরে—এভাবে দৈনিক চারবার রক্তের সুগার পরিমাপ করার উপদেশ দেওয়া হয়। তবে সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও জীবনধারা বিবেচনা করে দিনে কতবার ও কোন সময়ে ডায়াবেটিস মাপতে হবে সেটি রোগীভেদে ভিন্ন হতে পারে। ডাক্তারের সাথে কথা বলে আপনার জন্য সঠিক পরামর্শটি জেনে নিন।
ঘরে বসে ডায়াবেটিস মাপতে যা যা প্রয়োজন
- রক্তের সুগার মাপার মেশিন বা গ্লুকোমিটার
- জীবাণুমুক্ত ল্যানসেট
- ল্যানসেট বসানোর প্লাস্টিকের কলম
- টেস্ট স্ট্রিপ
ফার্মেসিতে গ্লুকোমিটার কেনার সময়ে এগুলো একসাথে কিনে নেওয়া যায়।
ঘরে বসে ডায়াবেটিস পরীক্ষার নিয়ম
ঘরোয়া উপায়ে রক্তের সুগার মাপার সাতটি ধাপ এখানে তুলে ধরা হলো—
১. প্রথমে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। সাবানের পরিবর্তে অ্যালকোহল প্যাড বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েও হাত জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে আঙুল পুরোপুরি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
২. গ্লুকোমিটারের নির্ধারিত স্থানে একটি টেস্ট স্ট্রিপ প্রবেশ করাতে হবে। গ্লুকোমিটারের মডেলভেদে স্ট্রিপও ভিন্ন হয়। তাই নির্দিষ্ট মডেল অনুযায়ী সঠিক স্ট্রিপ বেছে নিতে হবে। এ ছাড়া স্ট্রিপ নকল অথবা মেয়াদোত্তীর্ন কি না সেই বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
৩. প্লাস্টিকের কলমের ভেতরে একটি ল্যানসেট সংযুক্ত করে ল্যানসেটের ঢাকনা সরিয়ে ফেলতে হবে। উল্লেখ্য, প্রতিবার ডায়াবেটিস মাপার সময়ে নতুন সুঁই ব্যবহার করতে হবে। কলমটির সহজ ও সঠিক ব্যবহারের উপায় জানতে গ্লুকোমিটারের মোড়কে অথবা প্যাকেটের ভেতরে থাকা লিফলেটের নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
৪. এবার কলমটি আঙুলের একপাশে ধরে সুঁই দিয়ে আঙুলের অগ্রভাগে ছিদ্র করতে হবে। কলমটি আঙুলের একপাশে ধরলে ব্যথা কম লাগবে। প্রতিবার রক্তের সুগার মাপার সময়ে ভিন্ন ভিন্ন আঙুল ব্যবহার করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে আসা এক ফোঁটা রক্তই গ্লুকোমিটারে ডায়াবেটিস পরিমাপের জন্য যথেষ্ট।
৫. এখন গ্লুকোমিটারে লাগানো টেস্ট স্ট্রিপে রক্তের ফোঁটা দিতে হবে। আঙুলটি এমনভাবে ধরতে হবে যেন রক্তের ফোঁটা টেস্ট স্ট্রিপের নির্ধারিত অংশকে পূর্ণ করে। রক্তের পরিমাণ খুব কম হলে ভুল রিডিং আসতে পারে অথবা গ্লুকোমিটারের পর্দায় এরর (ERROR) দেখাতে পারে।
৬. কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গ্লুকোমিটারের পর্দায় রক্তের সুগারে তথা ডায়াবেটিসের পয়েন্ট দেখা যাবে। হিসাবটি সাধারণত mmol/l (মিলিমোল/লিটার) এককে দেখানো হয়। পর্দায় যদি কারও রিডিং 6 mmol/l আসে তাহলে সেই সময়ে ডায়াবেটিস বা রক্তের সুগারের লেভেল ৬ পয়েন্ট ধরা হয়।
তবে কিছু গ্লুকোমিটারের হিসাবটি mg/dL (মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার) এককে দেখানো হতে পারে। mg/dL এককে আসা ফলাফলকে ১৮ দিয়ে ভাগ করলে mmol/l এককে ফলাফল বেরিয়ে আসবে।
ডায়াবেটিসের মাত্রা খেয়াল রাখতে একটি নির্দিষ্ট ডায়েরি বা খাতায় তারিখ ও সময় দিয়ে ফলাফল নোট করে রাখা ভালো।
৭. অবশেষে ব্যবহৃত সুঁই ও স্ট্রিপ ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিতে হবে।
নিয়মিত গ্লুকোমিটারের যত্ন নিন এবং নির্দেশনা অনুযায়ী পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করে রাখুন।
ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট হওয়া উচিত?
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডাক্তার তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও জীবনধারা বিবেচনা করে রক্তের সুগারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেন। কখন ও দিনে কতবার গ্লুকোমিটারে ডায়াবেটিস মাপতে হবে সেই সম্পর্কেও উপদেশ দেওয়া হয়।
সাধারণত সুস্থ মানুষ ও ডায়াবেটিস রোগীভেদে রক্তের সুগারের লক্ষ্যমাত্রা কত হওয়া উচিত সেটি নিচে তুলে ধরা হলো—
সুস্থ মানুষের জন্য রক্তের সুগারের স্বাভাবিক মাত্রা—
খালি পেটে | ৪ থেকে ৬ পয়েন্ট |
খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে | ৮ পয়েন্টের নিচে |
ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য রক্তের সুগারের স্বাভাবিক মাত্রা—
খালি পেটে | ৪ থেকে ৭ পয়েন্ট |
খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে | ৮ থেকে ৯ পয়েন্ট |