এলার্জি খুব কমন একটা সমস্যা। শিশুদের এলার্জি হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে লক্ষণগুলো কমে যেতে পারে। আবার অনেকের ছোটোবেলায় এলার্জির সমস্যা না থাকলেও, পরবর্তীতে নতুন করে এলার্জি দেখা দিতে পারে। কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে এলার্জি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
এলার্জির কারণ
দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্ষতিকর জিনিস থেকে আমাদেরকে সুরক্ষা দেয়। তবে কখনো কখনো কিছু জিনিসকে এটি ভুলে ক্ষতিকর ভেবে বসে, যা আসলে ক্ষতিকর নয়। এসব জিনিসের বিরুদ্ধে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়ায় এলার্জির লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন: চামড়া লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি।
সাধারণত যেসব জিনিসের সংস্পর্শে আসলে শরীরে এলার্জি দেখা দেয় তার মধ্যে রয়েছে—
- নির্দিষ্ট কিছু খাবার
- ধুলাবালি
- গরম অথবা ঠান্ডা আবহাওয়া
- ঘাম
- গৃহপালিত পশু-পাখি
- পরাগ রেণু ও ফুলের রেণু
- সূর্যরশ্মি
- ডাস্ট মাইট
- মোল্ড বা ছত্রাক
- বিভিন্ন ঔষধ
- কীটনাশক
- ডিটার্জেন্ট ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ
- ল্যাটেক্স বা বিশেষ ধরনের রাবারের তৈরি গ্লাভস ও কনডম
- স্ট্রেস বা মানসিক চাপ
এলার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা
সচরাচর যেসব খাবারে এলার্জি হতে দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে—
- চিংড়ি
- বেগুন
- ইলিশ মাছ
- গরুর মাংস
- বাদাম
এ ছাড়া শিশুদের ক্ষেত্রে ডিম ও দুধেও এলার্জি হতে পারে।
একেকজন মানুষের একেক ধরনের জিনিস অথবা খাবারে এলার্জি থাকতে পারে। তাই কোন ধরনের জিনিসের সংস্পর্শে আসলে অথবা খাবার খেলে এলার্জির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে সেই বিষয়ে লক্ষ রাখা প্রয়োজন। এটি খুঁজে বের করতে পারলে এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়।
এলার্জির লক্ষণসমূহ
শরীর এলার্জিক উপাদানের সংস্পর্শে আসার পর খুব কম সময়ের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এলার্জির লক্ষণগুলো হলো—
- চামড়ায় চুলকানি, র্যাশ বা ফুসকুড়ি হওয়া
- শরীরের কিছু অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া, ফোস্কা পড়া ও চামড়া ঝরে যাওয়া
- ঠোঁট, জিহ্বা, চোখ ও মুখ ফুলে যাওয়া
- চোখে চুলকানি, চোখ থেকে পানি পড়া, লাল হওয়া ও ফুলে যাওয়া
- শুকনো কাশি, হাঁচি, নাকে ও গলায় চুলকানি ও নাক বন্ধ হওয়া
- শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ চাপ লাগা ও শ্বাস নেওয়ার সময়ে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া
- বমি বমি ভাব, বমি, পেট ব্যথা, পেট কামড়ানো ও ডায়রিয়া
যখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
নিচের তিনটি ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ—
- ঔষধ খাওয়ার পরেও লক্ষণ দূর না হলে
- ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ খাওয়ার পর নতুন লক্ষণ দেখা দিলে কিংবা সমস্যা আরও বেড়ে গেলে
- মারাত্মক এলার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে
মারাত্মক এলার্জিক প্রতিক্রিয়া
এলার্জিক উপাদানের প্রতি তীব্র প্রতিক্রিয়া থেকে খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রে অ্যানাফিল্যাক্সিস নামক একটি জরুরি অবস্থা তৈরি হতে পারে। এ অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এমন রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে। সময়মতো একটি ইনজেকশন দিলেই রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব।
অ্যানাফিল্যাক্সিস হচ্ছে কি না যেভাবে বুঝবেন—
- শ্বাসকষ্ট অথবা শ্বাস নেওয়ার সময়ে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া
- বুক-গলা আঁটসাঁট হয়ে আসছে বা আটকে আসছে বলে মনে হওয়া
- মুখ, ঠোঁট, জিহ্বা অথবা গলা ফুলে যাওয়া
- ঠোঁট ও ত্বক নীল হয়ে যাওয়া
- জ্ঞান হারানোর মতো অনুভূতি হওয়া অথবা পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- বিভ্রান্তি ও দুশ্চিন্তা
- মাথা ঘুরানো অথবা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা
- বুক ধড়ফড় করা কিংবা শরীর ঘামে ভিজে যাওয়া
- চামড়ায় চুলকানিসহ লাল লাল ফুসকুড়ি বা র্যাশ হওয়া অথবা চামড়া ফুলে ওঠা
- শরীরের কিছু জায়গা থেকে চামড়া উঠে আসা কিংবা ফোস্কা পড়া
এলার্জি আছে এমন খাবার ও ঔষধ, ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যবহৃত কন্ট্রাস্ট বা ডাই অথবা পোকামাকড়ের কামড় থেকে অ্যানাফিল্যাক্সিস হতে পারে।
এলার্জির চিকিৎসা
খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে এলার্জি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ঘরোয়া প্রতিকার ও জীবনযাত্রা
যেসব খাবার ও ঔষধে এলার্জি হয় সেগুলো এড়িয়ে চলবেন। হাঁপানি অথবা শ্বাসনালীর অন্য কোনো রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলবেন। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ মোকাবেলায় শারীরিক ব্যায়াম, যোগব্যায়াম ও শ্বাসের ব্যায়াম করা যেতে পারে।
ঔষধ
এলার্জির চিকিৎসায় প্রধানত অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এগুলো এলার্জির লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে—এমনকি লক্ষণ দেখা দেওয়ার পূর্বেও সেবন করা যায়। যেমন, কারও যদি ধুলাবালিতে এলার্জি থাকে এবং বিশেষ প্রয়োজনে তার ধুলাবালি পরিষ্কার করতে হয়, সেক্ষেত্রে আগেই অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করা যায়।
এসব ঔষধ বিভিন্ন রূপে পাওয়া যায়। যেমন: ট্যাবলেট, সিরাপ ও ড্রপ। উল্লেখ্য, এলার্জির কিছু ঔষধ সেবনের পরে ঘুম ঘুম লাগা ও মাথা ঝিম ঝিম করার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে আপনার জন্য উপযুক্ত ঔষধটি বেছে নিন।
নাক বন্ধের সমস্যায় ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নাক বন্ধের ড্রপ ও স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এই ড্রপ ও স্প্রেগুলো এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করবেন না। দীর্ঘ সময় ব্যবহারে এলার্জির লক্ষণ আবার ফিরে আসতে পারে।
ত্বকের এলার্জিতে বিভিন্ন ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ও মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। চুলকানির সমস্যায় ক্যালামাইন লোশন ও ১% মেন্থল ক্রিম খুব ভালো কাজ করে। এ ছাড়াও তোয়ালেতে বরফ পেঁচিয়ে চুলকানির স্থানে ঠান্ডা সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়।
গুরুতর এলার্জিতে স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ভালো কাজ করে। স্টেরয়েড খুবই শক্তিশালী ঔষধ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বেশি। তাই ইন্টারনেট দেখে কিংবা ফার্মেসি থেকে নিজে নিজে এসব ঔষধ কিনে খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কেবল ডাক্তারের পরামর্শক্রমেই নিয়ম মেনে এই ধরনের ঔষধ সেবন করা উচিত।
ইমিউনোথেরাপি
গুরুত্বর এলার্জির জন্য ইমিউনোথেরাপি একটি কার্যকরী চিকিৎসা। এই চিকিৎসায় রোগীকে দীর্ঘদিন ধরে নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের উপস্থিতিতে অভ্যস্ত করে তোলা হয়। এর ফলে পরবর্তীতে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে সেই অ্যালার্জেনের প্রতি পূর্বের মতো তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় না। ফলে লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেকটাই সহজ হয়ে আসে।
ওপরে আলোচিত মারাত্মক এলার্জিক প্রতিক্রিয়া বা অ্যানাফিল্যাক্সিস হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। অ্যানাফিল্যাক্সিস এর লক্ষণ দেখা দিলে রোগীর ঊরুর বাইরের দিকে তাৎক্ষণিক একটি ইনজেকশন দিতে হয়। এই ইনজেকশনে অ্যাড্রেনালিন নামক জীবন রক্ষাকারী একটা হরমোন থাকে। এটি মৃত্যুঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
এলার্জি প্রতিরোধ
এলার্জি থেকে মুক্ত থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যেসব বস্তুতে এলার্জি রয়েছে সেগুলো এড়িয়ে চলা। এলার্জি প্রতিরোধে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলুন—
- এলার্জি ঘটায় এমন খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন।
- গৃহপালিত পশু-পাখির বাসস্থান বাড়ির বাইরে তৈরি করুন এবং তাদের নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
- ডাস্ট মাইট নামক এক প্রকার অতিক্ষুদ্র পোকা থেকে এলার্জি প্রতিরোধ করতে বাড়ির যে জায়গাগুলোতে বেশি সময় কাটানো হয় সেগুলো ধুলামুক্ত ও পরিষ্কার রাখুন। বিছানার চাদর, কাঁথা, বালিশ ও লেপের কভার, জানালার পর্দা—এগুলো সপ্তাহে অন্তত একবার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। যেসব জিনিস নিয়মিত ধোয়া যায় না সেগুলো বাসায় যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। যেমন: কার্পেট।
এ ছাড়া বিছানা গোছানো ও ঝাড়া-মোছা করার সময়ে ভালো একটা মাস্ক পড়ুন। যেসব জিনিস ভেজা কাপড় দিয়ে মোছা যায় সেগুলো ভেজা কাপড় দিয়ে মুছুন। এতে ধুলা ছড়াবে না।
ডাস্ট মাইট এক ধরনের ছোটো ছোটো পোকা। এগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখলে সাদা রঙের আট পা-ওয়ালা পোকার মতো দেখা যায়। আমাদের চামড়া থেকে যে মৃত কোষগুলো প্রতিদিন বিছানায়, কার্পেটে কিংবা সোফায় ঝরে পরে, এরা সেগুলো খেয়ে বেঁচে থাকে।
- ছত্রাক বা মোল্ড থেকে সুরক্ষার জন্য বাড়ির পরিবেশ শুষ্ক রাখুন। পাশাপাশি বাতাস চলাচলের ভালো ব্যবস্থা রাখুন। ঘরের ভেতর কাপড় শুকানো থেকে বিরত থাকুন এবং গাছ থাকলে সেটি সরিয়ে ফেলুন।
- গরম বা ঘাম থেকে এলার্জি হতে পারে। তাই খুব পরিশ্রম করার পর শরীর গরম হলে বা ঘেমে গেলে বাতাস চলাচল করছে এমন স্থানে থাকুন এবং ঢিলেঢালা কাপড় পরুন।
- ঠান্ডা থেকেও এলার্জির সমস্যা হতে পারে। এমন হলে বৃষ্টিতে ভেজা ও পুকুরে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন। গোসলের সময়ে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- নির্দিষ্ট কিছু ধাতুতে কারোর এলার্জি থাকতে পারে। এসব ধাতুর তৈরি আংটি, গয়না ও ঘড়ি পরলে এলার্জি হতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো ধাতুতে আপনার এলার্জি থাকলে দৈনন্দিন জীবনে সেই ধাতুর তৈরি জিনিস ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
- ফুলের পরাগ রেণুতে এলার্জি প্রতিরোধের জন্য ঋতু পরিবর্তনের সময়ে যতটা সম্ভব ঘরের ভেতরে থাকুন। বাইরে গেলেও ঘরে ফিরে কাপড় পাল্টে গোসল করে ফেলুন, যেন পরাগ রেণু ধুয়ে চলে যায়। সম্ভব হলে ঘরের ভেতরে জামা-কাপড় শুকোতে দিন। তবে ছত্রাক যেন না জন্মে যায় সেই বিষয়েও খেয়াল রাখবেন। এ ছাড়া যে স্থানে ঘাসের পরিমাণ বেশি সেখানে হাঁটা-চলা করা থেকে বিরত থাকুন।
- বিভিন্ন প্রসাধনীতে থাকা কেমিক্যালে এলার্জি থাকতে পারে। যেমন: সাবান, শ্যাম্পু, ফেইসওয়াশ ও সুগন্ধিতে থাকা কেমিক্যাল। যেসব পণ্যে এলার্জি হয় সেগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
বিশেষ তথ্য: এলার্জি প্রতিরোধে বুকের দুধ
ছোটো শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর অনেক সুফল রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মের পর অন্তত প্রথম চার মাস শিশুকে কোনো শক্ত খাবার না দিয়ে কেবল বুকের দুধ খাওয়ালে সেটি এলার্জি প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।[১][২]
পরীক্ষাসমূহ ও রোগনির্ণয়
এলার্জির কারণ খুঁজে বের করার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসক বিভিন্ন প্রশ্ন ও শারীরিক পরীক্ষা করেন। তা ছাড়া অন্য কোনো রোগের কারণে এলার্জির মতো লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখেন। এলার্জি শনাক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলো হলো—
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
যেসব খাবারে সাধারণত এলার্জি হয় সেগুলো খাদ্যাভ্যাস থেকে বাদ দিয়ে দেখা হয় যে এলার্জি নিয়ন্ত্রণে আসে কি না। পরবর্তীতে আবার খাবারগুলো খেতে শুরু করলে এলার্জি ফিরে আসে কি না তাও দেখার চেষ্টা করা হয়। সাধারণত রোগী কোন ধরনের খাবার খাওয়ায় এলার্জির লক্ষণ দেখা দেয় সেটি একটি ডায়েরিতে লিখে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে করে কোন কোন খাবারে রোগীর এলার্জি হয় তা নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
ত্বকের পরীক্ষা
যেসব পদার্থে এলার্জি হয় সেসবকে অ্যালার্জেন বলে। ত্বকের পরীক্ষাতে অ্যালার্জেন যুক্ত অল্প একটু তরল বাহুর ওপরে দেওয়া হয়। এরপর সুঁই দিয়ে সেই জায়গায় সামান্য একটু ছিদ্র করা হয়। এলার্জি থাকলে ১৫ মিনিটের মধ্যে ঐ স্থানটি চুলকাতে শুরু করে এবং লাল হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, পরীক্ষার আগে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করলে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না।
রক্তের পরীক্ষা
এই পরীক্ষাতে রক্তের নমুনা নিয়ে নির্দিষ্ট অ্যালার্জেন এর বিপক্ষে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না সেটি পরীক্ষা করে দেখা হয়।
প্যাচ পরীক্ষা
এই পরীক্ষাতে শরীরে ‘কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস’ নামক এক ধরনের একজিমা বা এলার্জিজনিত চর্মরোগের উপস্থিতি পরীক্ষা করে দেখা হয়।
চ্যালেঞ্জ পরীক্ষা
এই পরীক্ষাটি অল্প কিছু ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে। এমন জায়গায় পরীক্ষাটি করতে হয় যেখানে গুরুতর এলার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে জরুরি চিকিৎসা করানো সম্ভব। এই পরীক্ষায় নির্দিষ্ট কোনো খাবারে এলার্জি থাকলে সেই খাবারটি রোগীকে খাওয়ানোর মাধ্যমে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা হয়। খাবারের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ানোর মাধ্যমে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া বেড়ে যাচ্ছে কি না সেটিও দেখা হয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
এলার্জি পরীক্ষায় এলার্জি কিট এর ব্যবহার নির্ভরযোগ্য নয়। তাই এই কিটের মাধ্যমে পরীক্ষা এড়িয়ে চলাই ভালো।
জেনে রাখা ভালো
অনেক সময় সেন্সিটিভিটি ও অসহনীয়তা বা ইনটলারেন্স এর সমস্যাকে প্রাথমিকভাবে এলার্জির সমস্যা মনে হতে পারে। এলার্জি, সেন্সিটিভিটি ও অসহনীয়তার পার্থক্য জানা থাকলে চিকিৎসায় ত্রুটি এড়ানো সহজ হবে।
- এলার্জি: সাধারণত ক্ষতি করে না এমন উপাদান শরীরে প্রবেশের পর প্রতিরোধ ব্যবস্থা থেকে তৈরি প্রতিক্রিয়ার নামই এলার্জি। যেমন: নাকে ধুলাবালি প্রবেশ করলে হাঁচি-কাশি হওয়া
- সেন্সিটিভিটি: কোনো উপাদান কারোর শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রভাব ফেললে তাকে সেই উপাদানের প্রতি সেন্সিটিভিটি বলা হয়ে থাকে। যেমন: এক কাপ কফিতে থাকা ক্যাফেইন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কাজ করলে বুক ধড়ফড় করতে পারে এবং শরীরে কাঁপুনি দেখা দিতে পারে।
- অসহনীয়তা: কোনো উপাদানের প্রভাবে শরীরে অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা দেওয়ার ঘটনাকে ইনটলারেন্স বা অসহনীয়তা বলা হয়। যেমন: দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার পরে ডায়রিয়া হওয়া। উল্লেখ্য, এই ধরনের প্রতিক্রিয়ার সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সম্পর্ক থাকে না।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
এলার্জি ছোঁয়াচে নয়। এটি শরীরের একটি বিশেষ প্রতিক্রিয়া। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন ক্ষতিকর নয় এমন জিনিসকেও ভুলে শত্রু ভেবে বসে তখন শরীরে এলার্জির লক্ষণ দেখা দেয়। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন জিনিসে এলার্জি থাকতে পারে।
এলার্জির চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে একটি হলো স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ। এগুলো সাদা রঙের গোল গোল ছোটো বড়ি হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়।
স্টেরয়েড শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেওয়ার মাধ্যমে এলার্জির লক্ষণ কমিয়ে আনে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এসব ঔষধ সেবন করলে ইনফেকশন, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, বদহজম, হাড় ক্ষয়, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই ডাক্তারের সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়।
খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে এলার্জি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করা যেতে পারে। তবে এলার্জির কারণেই এসব গোটা হচ্ছে কি না সেটি খুঁজে বের করা জরুরি।
এলার্জির কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ইতোমধ্যে অ্যাজমার মতো শ্বাসতন্ত্রের রোগ থাকলে রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে।