গর্ভাবস্থায় অনিদ্রা ও ঘুমের সমস্যা

কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করলে আপনি গর্ভকালীন সময়ে ঘুমের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ নারীরই ঘুমের সমস্যা দেখা যায়।[১] এর মধ্যে রয়েছে রাতে ঘুম না আসা, বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া অথবা সঠিক সময়ে ঘুম আসলেও অনেক তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জেগে ওঠা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গর্ভকালীন সময়ে ভালো ঘুম না হওয়ার সাথে মা ও শিশুর নানান স্বাস্থ্য জটিলতার সম্পর্ক থাকতে পারে।[২]

এ ছাড়াও ঘুমের সমস্যা থেকে দিনের বেলায় বেশি ক্লান্ত লাগতে পারে এবং কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে অসুবিধা হতে পারে। কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করলে আপনি গর্ভকালীন সময়ে ঘুমের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় অনিদ্রার কারণ

গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করে। এসবের পাশাপাশি শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত নানান পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনগুলোর সাথে তাল মেলাতে গিয়ে অনেকসময় ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

গর্ভকাল বাড়ার সাথে সাথে আপনার পেটের আকারও বাড়তে থাকে। পেট বড় হয়ে যাওয়ার কারণে আরামদায়ক অবস্থানে ঘুমাতে অসুবিধা হতে পারে।[৩] এটিও কখনো কখনো অনিদ্রার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। গর্ভকাল যত বাড়ে, ঘুমের সমস্যাও তত বাড়তে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার একেবারে শেষের সপ্তাহগুলোতে পেটের আকারের জন্য আরাম করে ঘুমানো বেশ কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তবে এই বিষয়ে বেশি দুশ্চিন্তা না করে যতটুকু সম্ভব বিশ্রাম নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

ওপরের কারণগুলোর পাশাপাশি সাধারণ সময়ের কিছু কমন উপসর্গের কারণেও গর্ভাবস্থায় ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। যেমন—

  • অতিরিক্ত চিন্তা ও স্ট্রেস
  • দুঃস্বপ্ন
  • স্থূলতা
  • শ্বাসকষ্ট
  • ‘রেস্টলেস লেগ সিন্ড্রোম’ অথবা অস্থিরতা থেকে ঘন ঘন পা নাড়ানো[৪]

গর্ভাবস্থায় অনিদ্রা কি ঝুঁকিপূর্ণ?

সাধারণত ৭–৯ ঘণ্টার ঘুমকেই আদর্শ বলে ধরা হয়।[৫][৬] এর চেয়ে কম ঘুম হলে সেটি আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।[৭] পর্যাপ্ত ঘুম না হলে দিনে ক্লান্তি ও বেখেয়ালি বোধ হতে পারে। ফলে দৈনন্দিন কাজ করতে সমস্যা তৈরি হতে পারে।

ঘুমের সমস্যা হলে প্রসবের সময়ে সিজারিয়ান অপারেশনের প্রয়োজন বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া অনিদ্রার সাথে সঠিক সময়ের আগে প্রসব হয়ে যাওয়ার মতো প্রসব সংক্রান্ত জটিলতা, প্রিএক্লাম্পসিয়াগর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।[৮][৯]

এসবের পাশাপাশি জন্মের পর ১ মাস বয়সে শিশুর ঘুম ও বেশি কান্নাকাটি করার সাথেও মায়ের অনিদ্রার সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।[১০] তাই অন্যান্য সময়ের মতো গর্ভাবস্থায়ও মায়ের পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থায় অনিদ্রার ঘরোয়া চিকিৎসা

ঘুম ঠিকমতো না হওয়া নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করলে সেটি ঘুমাতে আরও বেশি সমস্যা তৈরি করতে পারে। এজন্য এটি নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে নিচের সহজ ও কার্যকর পরামর্শগুলো মেনে চলতে পারেন। এগুলো আপনার ঘুমের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।

১. ঘুমানোর পরিবেশ

ঘুমানোর জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বেছে নিন: যেই রুমে ঘুমাবেন সেটি অন্ধকার ও আরামদায়ক রাখার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত গরম, ঠান্ডা অথবা উজ্জ্বল আলোতে ভালোমতো ঘুমাতে অসুবিধা হতে পারে।[১১] ঘুমানোর সময়ে ঘরে যাতে কোনো ধরনের আলো না আসে, এজন্য জানালায় ভারী পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়াও প্রয়োজন হলে ঘুমানোর সময় চোখে ‘আই মাস্ক’ ও কানে ‘ইয়ার প্লাগ’ ব্যবহার করতে পারেন। আই মাস্কের পরিবর্তে চোখের ওপর ছোটো কোনো কাপড় রেখেও ঘুমাতে পারেন।

ঘুমানো অথবা বিশ্রাম নেওয়া ছাড়া বিছানায় অন্য কিছু করা পরিহার করুন: বিছানা শুধুমাত্র ঘুমানোর জন্যই ব্যবহার করুন। বিছানায় টিভি দেখা, ফোন চালানো অথবা পড়ার অভ্যাস থাকলে সেটি বাদ দেওয়ার চেষ্টা করুন। এসব কাজ টেবিল-চেয়ার অথবা সোফায় বসে করুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত বিছানার কাছে না যাওয়ার চেষ্টা করুন।

ঘুমানোর আগে টিভি-মোবাইল দেখা পরিহার করুন: ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, টিভি অথবা কম্পিউটার—এ ধরনের ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বন্ধ রাখুন। এগুলোর উজ্জ্বল আলো ঘুম আসতে বাধা দিতে পারে। চেষ্টা করুন আপনার ঘুমানোর রুমে টিভি অথবা কম্পিউটার না রাখতে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফোন বিছানা থেকে দূরে রেখে এরপর ঘুমাতে যেতে পারেন।

২. ঘুমানোর নিয়ম

আরামদায়ক অবস্থানে ঘুমান: গর্ভাবস্থায় ঘুমের অবস্থান নিয়ে কখনো কখনো আপনার সমস্যা হতে পারে। এসময়ে পেট বড় হয়ে যাওয়ার কারণে উপুড় হয়ে ঘুমানো যায় না, আবার চিৎ হয়ে ঘুমালে নানান ক্ষতি হতে পারে।

বিশেষ করে গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের পর থেকে চিৎ হয়ে শোয়ার ফলে জরায়ুতে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, ফলে আপনার মাথা ঘুরাতে পারে—এমনকি শিশুর শরীরে রক্ত প্রবাহ কমে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এজন্য এসময়ে একপাশ হয়ে, অর্থাৎ ডান অথবা বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমালে সেটি সবচেয়ে ভালো।[১২]

ঘুমের সময় একটি অথবা দুটো হাঁটুই ভাঁজ করে রাখতে পারেন। পেটকে সাপোর্ট দিতে কাত হয়ে শোয়ার পরে পেটের নিচে একটা বালিশ আর দুই হাঁটুর মাঝে আরেকটা বালিশ ব্যবহার করতে পারেন। সুবিধা মনে হলে লম্বা কোলবালিশও ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়াও ঘুমানোর জন্য আপনার জন্য আরামদায়ক বালিশ, তোষক ও কাঁথা-কম্বল ব্যবহার করবেন। অস্বস্তিকর বালিশ ব্যবহার করলে ঘুম আসতে সমস্যা হতে পারে।

তবে ঘুমের অবস্থান নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করবেন না। আপনার শরীর হয়তো ঘুমের মধ্যে আপনাআপনি সবচেয়ে ভালো অবস্থানটি বেছে নিতে পারবে।

নিয়ম করে ঘুমানোর অভ্যাস করুন: প্রতিদিন ঘুমানোর জন্য একটি রুটিন বানাতে পারেন। এই রুটিন অনুযায়ী একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার এবং ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। এই অভ্যাস ঘুমকে নিয়মিত করতে সাহায্য করবে।

তবে কোনো কারণে এক রাতে রুটিন অনু্যায়ী ঘুম না হলে অথবা কম ঘুম হলে পরদিন দুপুরে কিংবা অন্য সময়ে বেশি করে ঘুমিয়ে সেটা পূরণের চেষ্টা করবেন না। এতে করে আপনার নিয়মিত ঘুমের রুটিনটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বরং একদিন একটু কম ঘুম হলেও পরের দিন আবার রুটিনমতো একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

দিনে ঘুমানো কমিয়ে দিন: দিনে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলে সেটি বাদ দেওয়ার চেষ্টা করুন। কেননা এতে রাতে ঠিকমতো ঘুম আসতে সমস্যা হতে পারে। তবে এমন যদি হয় যে, রাতে ঘুমে অনেক সমস্যা হচ্ছে এবং দিনে না ঘুমালে প্রচুর ক্লান্ত লাগছে, তাহলে ক্লান্তি কাটানোর জন্য দুপুরের আগে অল্প কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে নিতে পারেন।

ঘুম না আসলে অথবা মাঝরাতে ভেঙে গেলে উঠে হালকা কাজ করুন: ২০–৩০ মিনিট শুয়ে থাকার পরেও ঘুম না আসলে বিছানা থেকে উঠে যান। কিছুক্ষণের জন্য কোনো ছোটোখাটো কাজ করতে পারেন। যেমন: ঘর গোছানো অথবা শেলফ এর বই গোছানো। এতে একসময় ক্লান্তি আসলে তা ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে ফোন অথবা কম্পিউটার চালাবেন না, এতে ঘুমের সমস্যা আরও বাড়তে পারে।

সময় হিসাব করে ঘুমাবেন না: সারাদিনের মোট কতক্ষণ ঘুমাচ্ছেন, ঘুম ঠিক পরিমাণে হচ্ছে কি না—এসব নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না। এগুলো নিয়ে মাথায় দুশ্চিন্তা থাকলে ঘুম আসতে আরও সমস্যা হতে পারে।

ঘুমানোর আগে উষ্ণ পানিতে গোসল করুন: রাতে ঘুমানোর ঘন্টাখানেক আগে উষ্ণ বা কুসুম গরম পানিতে গোসল করে নিতে পারেন। এটি আপনাকে রিল্যাক্স করিয়ে ঘুম আসতে সাহায্য করতে পারে।[১৩] তবে খুব গরম, অর্থাৎ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার পানিতে গোসল না করাই শ্রেয়।[১৪]

৩. ব্যায়াম

গর্ভাবস্থায় আপনার পছন্দের ব্যায়াম করা চালিয়ে যান। যেমন: হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো ও সাঁতার কাটা। আগে থেকে ব্যায়াম করার অভ্যাস না থাকলে হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়াম করলে (বিশেষ করে হাঁটলে অথবা সাঁতার কাটলে) তা গর্ভাবস্থার রাতে ভালো ঘুমে সাহায্য করে।[১৫] তবে ঘুমানোর ঠিক আগের চার থেকে ছয় ঘন্টার মধ্যে ব্যায়াম না করাই ভালো। এর আগে প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করে নিতে পারেন।[১৬]

৪. মানসিক চাপ কমানো

মেডিটেশন করার চেষ্টা করুন: মানসিক প্রশান্তির জন্য যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করতে পারেন। এ ধরনের ব্যায়াম স্ট্রেস কমানোর পাশাপাশি ঘুমে সাহায্য করতে পারে।[১৭] দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য আপনি একটি সহজ ব্যায়াম করতে পারেন।

পড়ুন: দুশ্চিন্তা কমানোর ব্যায়াম

মনের কথা কাছের মানুষকে জানান: যদি কোনো চিন্তার কারণে ঘুমে সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হয়, তাহলে সেই চিন্তা দূর করার ব্যবস্থা করুন। কাছের মানুষদের আপনার সমস্যার কথা জানাতে পারেন। সঙ্গী, বন্ধু অথবা পরিবারের অন্য কাউকে আপনার সমস্যা জানালে মন হালকা হতে পারে। এটি ঘুমের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করতে পারে।

যদি এমন হয় যে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কথা বলার জন্য কাউকে পাচ্ছেন না, তাহলে ডায়েরি লেখার চেষ্টা করতে পারেন। এ ছাড়া মনের কথা ও মাথায় থাকা চিন্তাগুলো ফোনে ভয়েস রেকর্ড করে অথবা নোট করে রাখতে পারেন। অনেক সময় চিন্তা দূর করতে পারলে ঠিকমতো ঘুমানো বেশ সহজ হয়ে আসে।

ঘুমানোর আগে বই পড়তে পারেন: ঘুমানোর আগে হালকা কোনো বই পড়তে পারেন। এ ছাড়া ছোটোখাটো হাতের সেলাইয়ের কাজ কিংবা পছন্দের ছোটোখাটো যেকোনো কাজ বেছে নিতে পারেন। তবে গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত বই, রহস্য অথবা থ্রিলারের বই এসময়ে এড়িয়ে গেলেই ভালো। কারও কারও এসব পড়ে চিন্তা ও উদ্বেগ বেড়ে গিয়ে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

৫. খাবার ও পানীয়

ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পরিহার করুন: ঘুমানোর কমপক্ষে ছয় ঘন্টা আগে ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন। যেমন: চা,-কফি, কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকস। এগুলো পান করলে ঘুম আসতে দেরি হয়। এমনকি ঘুম আসলেও সেটি তেমন গভীর হয় না।

গর্ভকালীন সময়ে দৈনিক ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় ও খাবার খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত ক্যাফেইন খেলে সেটি গর্ভের শিশুর ওজন কম হওয়া এবং সময়ের আগে জন্মানোসহ নানান ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।[১৮][১৯]

ক্যাফেইন জাতীয় পানীয়ের পরিবর্তে গরম দুধ পান করতে পারেন। এতে ট্রিপ্টোফ্যান থাকে। ঘুমের কাছাকাছি সময়ে গরম দুধ পান করলে এটি ভালো ও লম্বা সময় ধরে ঘুম হতে সাহায্য করতে পারে।[২০] তবে আপনার বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকলে ঘুমানোর ঠিক আগেই কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

এক বসায় বেশি খাওয়া এড়িয়ে চলুন: সারাদিনের খাবার অল্প অল্প করে ভাগ ভাগ করে খাওয়ার চেষ্টা করুন। এটি বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে। এর সাথে সাথে বুক জ্বালাপোড়ার কারণে ঘুমের সমস্যা হলে সেটিও কমাবে। ঘুমের আগে আগে খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটা বাদ দেওয়া উচিত। চেষ্টা করুন ঘুমানোর অন্তত তিন ঘন্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে ফেলতে। বেশি রাত করে ভারী খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটিও বাদ দিয়ে দিন।

গর্ভাবস্থায় অনিদ্রার ঔষধ

গর্ভকালীন সময়ে ঘুমের সমস্যা হলে প্রথমে ঘরোয়া চিকিৎসা বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে কাজ না হলে ‘কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি’ নামের একটি পদ্ধতির মাধ্যমে কাউন্সেলিং করে অনিদ্রার চিকিৎসা করা হতে পারে। এর মাধ্যমে সাধারণত ঘুম না আসার কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো প্রতিরোধ করার উপায় নিয়ে কাউন্সেলিং করানো হয়। মানসিক রোগ, গাইনি অথবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আপনাকে প্রশিক্ষিত কাউন্সেলরের কাছে রেফার করতে পারেন।

এসবে কাজ না হলে ডাক্তার আপনাকে নির্দিষ্ট ঘুমের ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। উল্লেখ্য, গর্ভাবস্থায় ঘুমের ওষুধ খাওয়াকে সাধারণত নিরুৎসাহিত করা হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গর্ভাবস্থায় প্রচলিত ঘুমের ওষুধ সেবনের ফলে সময়ের আগে সন্তান প্রসব হওয়া, জন্মের সময়ে শিশুর ওজন কম হওয়া ও আকারে ছোটো হওয়ার মতো জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।[২১]

এ ছাড়া গর্ভধারণের শেষের দিকে ও প্রসবকালীন সময়ে উচ্চ ডোজে ঘুমের ওষুধ খেলে নবজাতকের শ্বাসকষ্টসহ নানান মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা হতে পারে।[২২]

তাই কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে কোনো ঘুমের ওষুধ খাওয়ার চেষ্টা করবেন না। বরং অনিদ্রার সমাধানে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ঘুম না হওয়ার পেছনে শারীরিক অথবা মানসিক কোনো কারণ থাকলে ডাক্তার উপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারবেন। তিনি প্রয়োজনে আপনার অবস্থা বিবেচনা করে সবচেয়ে নিরাপদ ঔষধটি বেছে নিতে সাহায্য করতে পারবেন।

গুরুত্বপূর্ণ

অনেকসময় ডিপ্রেশন বা তীব্র হতাশার কারণেও ঘুমের সমস্যা হতে পারে। পাশাপাশি ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ নামক রোগে ঘুমের সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার কারণেও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এসব কারণে রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে মানসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। নতুবা সময়ের সাথে সমস্যাগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

গর্ভাবস্থায় ঘুমের সময় শ্বাস নিতে সমস্যা হয় কেন?

গর্ভাবস্থায় কখনো কখনো ঘুমের সময়ে শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে। এর কারণ এখনো মোটা দাগে জানা না গেলেও গর্ভাবস্থায় হরমোন, শ্বসনতন্ত্র, হার্ট ও রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থা—এসবের পরিবর্তনের কারণে এরকম হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে কাত হয়ে ঘুমালে এই সমস্যা কিছুটা এড়ানো যেতে পারে। এ ছাড়াও গর্ভাবস্থায় রাইনাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একারণেও শ্বাস নেওয়ায় সমস্যা হতে পারে। এ ধরনের কোনো সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

গর্ভাবস্থায় রাতে ঘুম হয় না কিন্তু দিনে ঘুম হয় এতে কি সমস্যা হবে?

যদি রাতে ঘুমের সমস্যা একদমই দূর না হয়, তাহলে দিনে পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নিলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।[২৩] তবে রাতে ভালোমতো ঘুমানোর জন্য ঘরোয়া উপায়গুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

গর্ভাবস্থায় কি মেলাটোনিন গ্রহণ করা যায়?

গর্ভাবস্থায় মেলাটোনিন খাওয়া নিরাপদ কি না সেই বিষয়ে এখনো যথেষ্ট তথ্য জানা যায়নি।[২৪] এজন্য এই সময়ে মেলাটোনিন এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়।

গর্ভাবস্থার ঘুমের সমস্যা কখন থেকে শুরু হয়?

ঘুমের সমস্যা গর্ভধারণের পরপরই শুরু হতে পারে। তবে সাধারণত গর্ভকাল বাড়ার সাথে সাথে ঘুমের সমস্যাও বাড়তে থাকে।[২৫]

গর্ভাবস্থার ঘুমের সমস্যা কখন শেষ হয়?

গর্ভধারণের পর থেকে সৃষ্টি হওয়া ঘুমের সমস্যা প্রসবের পরেও থেকে যেতে পারে। শিশুর জন্ম ও পারিপার্শ্বিক নানান পরিবর্তনের কারণে এরকম হতে পারে। তবে সময়ের সাথে সাধারণত ঘুমের সমস্যা কমে আসে। ঘরোয়া উপদেশগুলো ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে।