মানসিক অবসাদ, মন খারাপ ও ডিপ্রেশন তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা, তবে আমরা মাঝে মাঝে এই পার্থক্য ধরতে পারি না। মানসিক অবসাদকে ইংরেজিতে লো মুড (low mood) বলা হয়। অধিকাংশ মানুষই মাঝে মাঝে মানসিক অবসাদে ভোগে। তবে সেটা যদি আপনার জীবনযাপনে বাধা সৃষ্টি করে, তবে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন যা আপনাকে ভালো থাকতে সাহায্য করবে।
মানসিক অবসাদের লক্ষণসমূহ
- মন খারাপ থাকা,
- উদ্বিগ্ন বা আতংকিত থাকা,
- স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্ত বোধ করা বা ঘুমাতে না পারা,
- রাগান্বিত বা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়া,
- আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি।
মানসিক অবসাদ সাধারণত কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
ডিপ্রেশনের লক্ষণসমূহ
আপনার যদি দিনের বেশিরভাগ সময় ধরেই মানসিক অবসাদ থাকে, আর ২ সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই এমন লাগতে থাকে থাকে, তবে এটি বিষন্নতা বা ডিপ্রেশনের লক্ষণ হতে পারে।[১]
বিষন্নতার অন্যান্য লক্ষণসমূহ হল:
- জীবনের কোন কিছুই উপভোগ্য মনে না হওয়া,
- নিরাশ হয়ে পড়া,
- দৈনন্দিন কাজকর্মে মনোযোগ দিতে না পারা,
- আত্মহত্যার চিন্তা বা নিজের ক্ষতি করার ইচ্ছা।
মানসিক অবসাদ নিরসনে আপনি যা যা করতে পারেন
- আপনার অনুভূতিগুলো সম্পর্কে কোন বন্ধু, পরিবারের সদস্য, ডাক্তার বা সাইকোলজিস্টের সাথে কথা বলুন।
- আপনাকে বিচলিত করছে এমন সমস্যা সমাধান করুন।
- প্রয়োজনে ঘুমের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারেন।
- আত্মসম্মান বাড়ানোর উপায় সম্বন্ধে জানুন।
- একই রকম সমস্যার সম্মুখীন মানুষদের সাথে পরামর্শ করুন। তাদের অভিজ্ঞতা আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
- মনোযোগী হওয়ার (mindfulness) অনুশীলন করুন, যা আপনাকে শেখাবে অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে আটকে না থেকে বর্তমান মুহূর্তে কীভাবে মনোনিবেশ করা যায়।
- মানসিক সুস্থতা নিয়ে বিভিন্ন অডিও গাইড শুনুন। (আমরা পরিকল্পনা করছি এ বিষয়ে ভিডিও বানানোর। আপাতত অন্যান্য উৎস থেকে সাহায্য নিন।)
যা যা করবেন না
- অনেক কাজ একত্রে করার চেষ্টা করবেন না। ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন যা আপনি সহজেই পূরণ করতে পারবেন।
- যে বিষয়গুলো আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই সে সকল বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টায় আপনার সময় ও শক্তি ব্যয় করুন।
- নিজেকে একা ভাববেন না। অধিকাংশ মানুষই কখনো না কখনো মানসিক অবসাদ অনুভব করে।
- মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির জন্য ধূমপান, জুয়া খেলা বা নেশা করা থেকে বিরত থাকুন। এগুলো আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন?
- ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মানসিক অবসাদ থাকলে।
- নিজে নিজে মানসিক অবসাদ সামলাতে হিমশিম খেলে।
- নিজে থেকে যা চেষ্টা করছেন তা কাজ না করলে।
- ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটাই উপযুক্ত মনে করলে।
কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?
- আপনি বা আপনার পরিচিত কারো তৎক্ষণাত সাহায্য লাগলে।
- আপনি যদি নিজের শরীরের কোন ক্ষতি করে থাকেন। যেমন, অধিক পরিমাণে ওষুধ সেবন করে বা অন্য কোন উপায়ে নিজের ক্ষতি করা।
মানসিক স্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা কে শারীরিক স্বাস্থের জরুরি অবস্থার ন্যায়ই গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে।
মানসিক অবসাদের কারণসমূহ
মানসিক অবসাদ অনুভব করার অনেক ধরনের কারণ থাকতে পারে। কোন কষ্টদায়ক ঘটনা বা অভিজ্ঞতা থেকে মন খারাপ বা আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। মাঝে মাঝে আপাতদৃষ্টিতে নির্দিষ্ট কোন কারণ ছাড়াই মানসিক অবসাদের সৃষ্টি হতে পারে।
মানসিক অবসাদের কারণ নির্ণয় করার উপায়
আপনি যদি মানসিক অবসাদের কারণটি ধরতে পারেন, তবে তা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হতে পারে।
মানসিক অবসাদ সৃষ্টি করে এমন কিছু কারণের উদাহরণ হল:
- কাজ: অতিরিক্ত কাজের চাপ অনুভব করা, বেকারত্ব বা চাকরি থেকে অবসর।
- পরিবার: সম্পর্কের টানাপোড়েন, বিবাহ বিচ্ছেদ, কারো দেখভাল করার দায়িত্ব।
- অর্থনৈতিক সমস্যা: অপ্রত্যাশিত খরচ বা ঋণ।
- স্বাস্থ্য: অসুস্থতা, দুর্ঘটনা বা প্রিয়জন হারানোর শোক।
এমনকি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ, যেমন নতুন বাড়ি কেনা, সন্তানের জন্ম বা বিবাহের পরিকল্পনা করাও দুঃখের অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।
আপনি কেন এমনটা অনুভব করছেন তা হয়তো অন্যদেরকে বোঝানো কষ্ট হতে পারে। তবে কারো সাথে কথা বলার মাধ্যমে আপনি এর সমাধান ও খুঁজে পেতে পারেন।