পেটের গণ্ডগোল হলে যা খাবেন

পেট খারাপ থাকা অবস্থায় যখনই মনে হবে যে খেতে পারবেন, তখনই কিছু খেয়ে নিবেন। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক ও পুষ্টিকর খাবার তালিকা মেনে চলার চেষ্টা করবেন।

পেট ব্যথা, পেট কামড়ানো, বমি বমি ভাবডায়রিয়া—এসব হলে আমরা ‘পেট খারাপ হয়েছে’ বলে থাকি। খাওয়াদাওয়া করলে পেট আরও খারাপ হবে—এমন ধারণা থেকে অনেকেই ঠিকমতো খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু সুস্থ থাকতে এই সময়ে শরীরে সঠিকভাবে পুষ্টির যোগান দেওয়া জরুরি।[১]

পেটের গণ্ডগোলে যেসব খাবার খেলে পেটে স্বস্তি পাওয়ার পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখা যাবে সেটি এই আর্টিকেলে তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি পেট ব্যথা, পেটে জ্বালাপোড়া, পেট ফাঁপাঅ্যাসিডিটি উপশমে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে সেগুলো নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।

যা যা খাবেন

পেটের গণ্ডগোল হলেও যতটা সম্ভব স্বাভাবিক ও পুষ্টিকর খাবার তালিকা মেনে চলার চেষ্টা করবেন। পেট খারাপ থাকা অবস্থায় যখনই মনে হবে যে খেতে পারবেন, তখনই কিছু খেয়ে নিবেন। এক্ষেত্রে একেবারে অনেকখানি খাবার অথবা পানি না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

কোনো নির্দিষ্ট খাবার একেবারেই খেতে ইচ্ছা না করলে পেট খারাপ থাকা অবস্থায় কয়েকদিন সেটি এড়িয়ে চলতে পারেন। নিচের খাবারগুলো পেটের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে—

পানি ও তরল খাবার

যদি মনে হয় শক্ত খাবার খেলে বমি হয়ে যাবে, তাহলে পানি ও বিভিন্ন তরল পানীয় পান করতে পারেন। এগুলো ছোটো ছোটো চুমুকে বার বার খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন।[২] পানীয়টি ঠান্ডা হলে পেটে বেশি আরাম লাগতে পারে। বমি বমি ভাব এড়াতে খাওয়ার সময়ে বেশি বেশি পানি কিংবা পানীয় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

পেটের বিভিন্ন সমস্যায় প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন, ডায়রিয়া ও বমি হলে শরীর থেকে অনেকখানি পানি ও লবণ বেরিয়ে যেতে পারে। তাই পানিশূন্যতা ঠেকাতে ওরস্যালাইনের পাশাপাশি প্রচুর তরল খাবার খাওয়া উচিত।

তরল খাবার ও পানীয়ের মধ্যে সেগুলোই বেছে নেওয়া উচিত যেগুলো পেটকে আরাম দেওয়ার পাশাপাশি শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া পানি ও বিভিন্ন মিনারেল বা লবণ এর চাহিদা পূরণ করে। এসব মিনারেলের মধ্যে অন্যতম হলো পটাশিয়াম ও সোডিয়াম।

অন্যদিকে কিছু পানীয় আছে যেগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে মিনারেল থাকে না, কিন্তু প্রচুর চিনি থাকে। যেমন: কোক ও জুস। এগুলো ডায়রিয়া, পেটের অস্বস্তি ও পেটব্যথাসহ হজমের বিভিন্ন সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এই জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।[৩]

তরল খাবারের মধ্যে কোনটি খাবেন আর কোনটি থেকে দূরে থাকবেন তার একটি তালিকা নিচে তুলে ধরা হয়েছে[৪]

যা খাবেনযা খাবেন না
পানিফলের রস
খাবার স্যালাইন (ওরস্যালাইন ও চালের স্যালাইন)বুদবুদ ওঠা কোমল পানীয় (যেমন: কোক)
ডাবের পানিকৃত্রিম চিনি (আর্টিফিশিয়াল সুইটনার) মেশানো পানীয় (যেমন: ডায়েট কোক)
চিড়ার পানিচা
ভাতের মাড় (লবণ মেশানো)কফি
পাতলা স্যুপঅ্যালকোহলযুক্ত পানীয় (যেমন: মদ)
পানি মিশিয়ে পাতলা করা জুস
চা পাতা ছাড়া বানানো আদা চা

কাঁচকলা

পেট খারাপ হলে অনেকে খাবারের তালিকায় কেবল সাদা ভাত কিংবা জাউ ভাত রাখে। এর পরিবর্তে ভাতের সাথে সিদ্ধ অথবা রান্না করা কাঁচকলা মিশিয়ে খেতে পারেন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, কাঁচকলা পাতলা পায়খানা ও বমি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।[৫]

কাঁচকলায় উচ্চ মাত্রায় ‘রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ’ থাকে।[৬] রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ এক ধরনের শ্বেতসার। এটি পায়খানার সাথে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বেরিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে, ফলে মল ভারী হয়।[৭] তাই পেট খারাপ হলে কাঁচকলা রান্না করে ভর্তা, তরকারি কিংবা ভাতের সাথে খেতে পারেন।

উল্লেখ্য, কাঁচকলা পাকতে থাকলে তাতে থাকা রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ চিনিতে পরিণত হয়। তাই পেট খারাপ হলে কাঁচকলা খাওয়া ভালো।

ডায়রিয়া অথবা বমি হলে শরীর থেকে পানি ও অন্যান্য লবণের সাথে পটাশিয়ামও বেরিয়ে যায়। পাকা কলায় প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, এটি হজম করাও সহজ। একারণে পটাশিয়াম এর অভাব পূরণ করতে পাকা কলা খেতে পারেন।

কলা ছাড়াও কমলা, মালটা ও জাম্বুরার মতো পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফল বেছে নিতে পারেন। এগুলোতে কলার তুলনায় ফ্রুক্টোজ বা চিনির পরিমাণ কম থাকে।

আদা

আদা বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া উপশমে সাহায্য করতে পারে।[৮] এটি গাড়িতে যাতায়াতের সময়ে বমি বমি ভাব বা ‘মোশন সিকনেস’ কমাতেও কার্যকর হতে পারে।[৯] এ ছাড়া আদা পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, বায়ু ও হজমের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।[১০]

তাই পেটের গণ্ডগোলে আদা খেতে পারেন। পানিতে আদা জ্বাল দিয়ে চায়ের মতো বানিয়ে কিংবা কাঁচা আদা চিবিয়ে খাওয়া যায়।

সহজপাচ্য খাবার

পেটের গণ্ডগোল হলে অনেকে সহজে হজম হয় এমন শর্করাজাতীয় খাবার বেছে নেন।[১১] যেমন: সাদা চালের জাউভাত ও সাধারণ পাউরুটি। অন্যান্য খাবারের তুলনায় এসব খাবার পেটে সহ্য করা সহজ বলে ধারণা করা হয়। এই ধারণার পক্ষে তেমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তবে আপনার কাছে সাধারণ খাবারের পরিবর্তে এসব খাবার খেয়ে পেটে আরাম লাগছে মনে হলে এগুলো সাময়িকভাবে খেতে পারেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে শুধু এসব খাবার খেলে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে।[১২]

সাদা ভাত: সাদা ভাত মূলত একটি শ্বেতসার জাতীয় খাবার। এতে ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে। তাই এটি তুলনামূলকভাবে দ্রুত ও সহজে হজম হয়। সাদা ভাত রান্না করার পরে ঠান্ডা করে নিলে তা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ পাওয়া যায়।[১৩][১৪] রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ পায়খানার সাথে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বেরিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। ফলে মল ভারী হয়।[১৫][১৬] গবেষণায় দেখা গিয়েছে, স্যালাইনের পাশাপাশি পাতলা করে রান্না করা জাউভাত সামান্য লবণ মিশিয়ে খেলে সেটি পেট খারাপ সারাতে বেশি ভালো কাজ করে।[১৭]

উল্লেখ্য, লাল চাল সাদা চালের তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টিকর। এতে অদ্রবণীয় ফাইবার থাকে, যা স্বাভাবিক অবস্থায় স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু লাল চাল হজম করতে পরিপাক নালীকে তুলনামূলকভাবে বেশি কাজ করতে হয়। অদ্রবণীয় ফাইবার পায়খানাকে আরও পাতলা করে ফেলতে পারে। তাই পেট খারাপ হলে সাময়িকভাবে সাদা ভাত অথবা জাউভাত বেছে নিতে পারেন।

পাউরুটি বা টোস্ট: লাল আটার রুটি-পাউরুটির তুলনায় সাধারণ পাউরুটিতে আঁশের পরিমাণ কম থাকে। তাই সহজপাচ্য খাবার হিসেবে পেট খারাপ হলে সাময়িকভাবে সাধারণ পাউরুটি খাওয়া যেতে পারে। পাউরুটি খাওয়ার আগে হালকা সেঁকে টোস্ট করে খাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, পাউরুটি ও আটা-ময়দার তৈরি অন্যান্য খাবার খেলে অনেকের হজমের সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে আটা-ময়দার তৈরি খাবারে অসহনীয়তা আছে কি না সেটি খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডায়েটে এই জাতীয় খাবারের বিকল্প অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এগুলোর পাশাপাশি আলুও খেতে পারেন। ভাত, রুটি ও আলুর মতো শ্বেতসার আপনাকে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দিবে।

তরল খাবারের পাশাপাশি এসব শক্ত খাবার পেটে সহ্য হলে এবং আপনি তুলনামূলকভাবে সুস্থ বোধ করলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক খাবারে ফিরে যেতে হবে। এক্ষেত্রে কম তেল-মসলাযুক্ত সুষম খাবার দিয়ে খাওয়া শুরু করা যেতে পারে।

যা যা এড়িয়ে চলবেন

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে ল্যাকটোজ নামের এক ধরনের চিনি থাকে। এই চিনি হজম করতে শরীর ‘ল্যাকটেজ’ নামক এনজাইম নিঃসরণ করে। ডায়রিয়া হলে সাময়িকভাবে এই এনজাইমের পরিমাণ কমে যেতে পারে।[১৮] বিশেষ করে শিশুদের পেটের ইনফেকশনের কারণে ডায়রিয়া হলে এমনটা ঘটে।[১৯] তখন শরীর ঠিকমতো দুধ হজম করতে পারে না।[২০] 

পেটে দুধ ঠিকমতো হজম না হলে পেট ফাঁপা, বমি বমি ভাব ও বায়ুর সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই পেটের সমস্যা হলে সাময়িকভাবে দুধ, আইসক্রিম, ক্রিম, চিজ ও এগুলো দিয়ে তৈরি খাবার এড়িয়ে চলতে পারেন।

ভাজাপোড়া ও চর্বিবহুল খাবার

ভাজাপোড়া খাবারে প্রচুর তেল-চর্বি থাকে। এগুলো গুরুপাক খাবার, অর্থাৎ হজম করা কঠিন। ডায়রিয়ার সময়ে এই ধরনের খাবার পেটে সহ্য না-ও হতে পারে।[২১] পাশাপাশি পেট ব্যথা, ডায়রিয়া ও বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।

সুস্থ অবস্থাতেও চর্বিবহুল খাবার খাওয়া উচিত নয়। এসব খাবার সাধারণত অস্বাস্থ্যকর হয়, পুষ্টিও খুব কম থাকে। আর পেট খারাপ অবস্থায় এসব খেলে পেটে অস্বস্তি, বেশি ভরা ভরা লাগা, পেট ফাঁপা ও বমি বমি ভাবের মতো সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।[২২]

মসলাদার খাবার

পেটের সমস্যায় মসলাদার খাবার না খাওয়াই ভালো। অনেকের এসব খাবার হজম করতে সমস্যা হয়, ফলে পেট খারাপের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যায় মসলাদার খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে পারেন।

চিনিবহুল খাবার

অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে ডায়রিয়ার মতো পেটের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।[২৩] এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে কোমল পানীয়, ফলের রস (যেমন: পানি মেশানো ছাড়া আপেল জুস), জেলি ও কেক। তাই পেটের গণ্ডগোলে এসব খাবার এড়িয়ে চলবেন।

তা ছাড়া দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যদি অনেক চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় রাখা হয়, তাহলে স্থূলতা বা ওবিসিটি ও দাঁত ক্ষয়ের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও কিছু ক্যান্সারসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই স্বাভাবিক সময়েও অতিরিক্ত চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

পড়ুন: চিনি খাওয়ার ফল

কোমল পানীয়

কেউ কেউ মনে করে থাকেন যে, ভরা এক গ্লাস ঠাণ্ডা কোক, সেভেন আপ, পেপসি, স্প্রাইট অথবা ফান্টা খেলে হয়তো পেটে আরাম লাগবে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এতে পেটে ফাঁপা ভাব থেকে অস্বস্তি হতে পারে।[২৪][২৫] এ ছাড়া অ্যাসিডিটির সমস্যা বেড়ে গিয়ে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে।

এ ছাড়া পেট খারাপ হলে কোমল পানীয় খাওয়া ভালো—এই ধারণাটি ভুল। বিশেষ করে বমি ও ডায়রিয়াতে কোমল পানীয় পান করার মাধ্যমে পানিশূন্যতা পূরণের চেষ্টা করা একেবারেই ঠিক নয়।[২৬] এসব পানীয়তে সাধারণভাবেই প্রচুর চিনি থাকে। ডায়েট কোক ও অন্যান্য জিরো সুগার কোমল পানীয়তে কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করা হয়। দুই ধরনের চিনিই পেট খারাপের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।

এ ছাড়া এসব পানীয়তে গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল বা লবণের পরিমাণ নগণ্য। তাই এগুলো খাওয়ার পরিবর্তে পানি মিশিয়ে পাতলা করা ফলের রস ও ডাবের পানি খেতে পারেন।

ফল, শাকসবজি ও পূর্ণশস্য

ফল, শাকসবজি ও পূর্ণশস্য স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এগুলোতে থাকা ফাইবার পায়খানা নরম রাখে এবং নিয়মিত পায়খানা হতে সাহায্য করে। তবে পাতলা পায়খানা হলে অদ্রবণীয় ফাইবার সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।[২৭] তাই পেট খারাপ থাকা অবস্থায় অদ্রবণীয় ফাইবারযুক্ত খাবার সাময়িকভাবে এড়িয়ে চলতে পারেন। পেট খারাপের সমস্যা কমে আসার পরে এগুলো আস্তে আস্তে খাবারের তালিকায় যোগ করুন। রান্না সবজি ও খোসা ছাড়ানো ফলের পাতলা জুস দিয়ে খাওয়া শুরু করতে পারেন।

উল্লেখ্য, দ্রবণীয় ফাইবারযুক্ত খাবার পায়খানাকে নরম কিন্তু ভারী করে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, দ্রবণীয় ফাইবার ডায়রিয়া কমাতে সাহায্য করে।[২৮] তাই পেট খারাপ হলে দ্রবণীয় ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে পারেন। যেমন: শিম, মটরশুঁটি ও অন্যান্য বিন, পানি দিয়ে রান্না করা ওটস, খোসা ছাড়িয়ে রান্না করা সবজি ও খোসা ছাড়ানো ফল।

দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার নিয়ে আরও জানতে পড়ুন: ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার

যখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া জরুরি

প্রায় সবারই কখনো না কখনো পেটের সমস্যা দেখা দেয়। তবে পেট খারাপ অবস্থায় নিচের লক্ষণগুলো থাকলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এগুলো কোনো গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে—

  • জ্বর
  • পায়খানার সাথে পুঁজ যাওয়া
  • পেটে তীব্র ব্যথা হওয়া অথবা তীব্রভাবে পেট কামড়ানো
  • তীব্র পানিশূন্যতা হওয়া
  • পায়খানা অথবা বমির সাথে রক্ত যাওয়া
  • পীত (হলুদাভ সবুজ) রঙের বমি হওয়া
  • পেট ফুলে যাওয়া
  • পায়খানার রাস্তা দিয়ে বায়ু না যাওয়া
  • শারীরিক অবসাদ
  • গিলতে সমস্যা হওয়া
  • রুচি চলে যাওয়া
  • চেষ্টা ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া
  • প্রায়ই ডায়রিয়া হওয়া অথবা অনেকদিন ধরে ডায়রিয়া থাকা

এ ছাড়া পেট খারাপ নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা হলে কিংবা অনেকদিন ধরে পেটের গণ্ডগোল হতে থাকলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পেট সুস্থ রাখতে যা করবেন

পেটকে বিভিন্ন জীবাণুর আক্রমণ থেকে বাঁচাতে পরিপাক নালী ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সুস্থতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ফল ও শাকসবজিসহ একটি সুষম খাবার তালিকা মেনে চলতে হবে। নির্দিষ্ট কোনো খাবার খেলে যদি আপনার পেটে সমস্যা হয়, তাহলে সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে।

পড়ুন: পেট সুস্থ রাখার পাঁচটি ঘরোয়া উপায়

জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ

এই আর্টিকেলে সাধারণ পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে। আপনার ডাক্তার কোনো নির্দিষ্ট ডায়েট কিংবা বিধিনিষেধ মেনে চলার পরামর্শ দিলে সেটিই মেনে চলতে হবে।

পেটের নানান সমস্যার সমাধানে সাময়িকভাবে কিছু খাবার বেশি খাওয়া যায়, আবার কিছু খাবার ডায়েট থেকে বাদ দেওয়া যায়। তবে মনে রাখতে হবে, পেট খারাপের লক্ষণগুলো সেরে গেলে পুনরায় দৈনন্দিন সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাসে ফিরে যেতে হবে।[২৯] নাহলে শরীরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দিতে পারে।