পেট ফাঁপা

দৈনন্দিন অভ্যাসে সহজ কিছু পরিবর্তন এনে পেট ফাঁপা ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

বেশিরভাগ মানুষই কখনো না কখনো পেট টান টান হয়ে থাকা, পেট ফুলে থাকা কিংবা পেটে অস্বস্তি হওয়ার মতো উপসর্গের মুখোমুখি হন। বিশেষ করে একটা লম্বা ছুটি কিংবা উৎসবের পরে অনেকেই এমন অনুভব করে থাকেন। এগুলো পেট ফাঁপার লক্ষণ। এই লক্ষণগুলোর সাথে সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত খাওয়াদাওয়ার সম্পর্ক থাকে।

তবে একটানা পেট ফাঁপার সমস্যা হলে এর পেছনে হজমের কোনো সমস্যা অথবা ব্যক্তির ডায়েট দায়ী থাকতে পারে। 

পেট ফাঁপার কারণ

প্রায়ই পেট ফাঁপা অনুভব করার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে— 

  • পায়খানার রাস্তা দিয়ে অতিরিক্ত বায়ু ত্যাগ করা
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • বাতাস গিলে ফেলা। খাওয়ার সময়ে কথা বললে এমন হতে পারে
  • নির্দিষ্ট কোনো খাবার সহ্য না হওয়া
  • সিলিয়াক ডিজিজ
  • ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম

দৈনন্দিন অভ্যাসে সহজ কিছু পরিবর্তন এনে পেট ফাঁপা ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এই উদ্দেশ্যে যেসব খাবার খেলে বেশি বায়ু হয় সেগুলো খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। কার্বোনেটেড (বুদবুদ ওঠে এমন) কোমল পানীয়ের বিকল্প বেছে নিতে হবে। সময় নিয়ে বসে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

অতিরিক্ত বায়ু ত্যাগ

যেসব খাবার খেলে পায়খানার রাস্তা দিয়ে বেশি বায়ু যায় সেগুলো খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। এতে পেট ফাঁপা ভাব কমে আসবে। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে— 

  • শিম ও অন্যান্য বিন জাতীয় সবজি (Beans)
  • পেঁয়াজ
  • ব্রকলি
  • ফুলকপি
  • বাঁধাকপি
  • অঙ্কুরিত সবজি বা স্প্রাউট (Sprouts)

এই তালিকার সবজিগুলো খাওয়া কমিয়ে দিলেও দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল ও অন্যান্য শাকসবজি খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।

দৈনিক কতটুকু ফল ও শাকসবজি খাবেন?

শরীর সুস্থ রাখতে এবং বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী রোগ থেকে বাঁচতে দৈনিক কমপক্ষে পাঁচ পরিবেশন ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ৮০ গ্রাম তাজা ফলমূল অথবা শাকসবজিকে এক পরিবেশন ধরা হয়। হিসাবের সুবিধার্থে এক হাতের তালুতে যতটুকু তাজা ফলমূল অথবা শাকসবজি আঁটে সেটিকে এক পরিবেশন ধরা যেতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য

নিচের তিনটি কাজের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা সম্ভব—

  1. খাদ্য তালিকায় বেশি বেশি ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার রাখা। এমন খাবারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ফলমূল, শাক, সবজি, ডাল ও পূর্ণশস্য (যেমন: লাল চাল ও লাল আটা)
  2. পর্যাপ্ত পানি ও অন্যান্য তরল পান করা। এটি ফাইবারের কাজে সহায়তা করে এবং হজমে সাহায্য করে
  3. নিয়মিত ব্যায়াম করা। সপ্তাহে কেবল চারদিন ২০-৩০ মিনিট করে দ্রুত হাঁটলেও পেটের কাজ করার ক্ষমতার উন্নতি হবে। ফলে হজমের প্রক্রিয়াটি সহজ হয়ে আসবে
  4. পায়খানার বেগ আসলে তা চেপে না রাখা। পায়খানার বেগ আসলে তা যদি আটকে রাখা হয়, তাহলে শরীর ক্রমশ সেখান থেকে পানি শুষে নিতে থাকে। পেটের ভেতর পায়খানা জমিয়ে রাখলে সেটা দিন দিন আরও শক্ত হতে থাকে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

বাতাস গিলে ফেলা 

বাতাস গিলে ফেললে পেট ফাঁপা ভাব হতে পারে। অতিরিক্ত বাতাস গিলে ফেলা প্রতিরোধ করার জন্য কিছু কাজ করা যায়। যেমন—

  • খাওয়ার সময়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকা
  • খাওয়ার সময় মুখ বন্ধ করে চিবিয়ে খাওয়া
  • সোজা হয়ে বসে খাওয়া এবং খাওয়ার সময়ে ঝুঁকে বসা থেকে বিরত থাকা
  • বুদবুদ ওঠা কোমল পানীয় (যেমন: কোক-সেভেন আপ) খাওয়া কমিয়ে দেওয়া
  • চুইংগাম খাওয়া বন্ধ করা

খাবার সহ্য না হওয়া

কোনো নির্দিষ্ট খাবার পেটে সহ্য না হলে পেট ফাঁপা ভাব হতে পারে। নিচের তিনটি ক্ষেত্রে এ ধরনের পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে—

  • যদি পায়খানার পরে পেট পুরোপুরি পরিষ্কার না হয়
  • যদি কোনো খাবার পেটে গ্যাস আটকে রাখে
  • যদি কোনো খাবারের প্রতিক্রিয়ায় পেটে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হয় 

এসব সমস্যার জন্য দায়ী দুটি প্রধান খাবার হলো—

১. গ্লুটেন। এটি গম, রাই, বার্লি ও ক্ষেত্রবিশেষে ওটসে থাকা এক ধরনের প্রোটিন

২. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার

কোনো নির্দিষ্টই খাবার পেটে সহ্য না হলে যদি খাবারটি খাওয়া কমিয়ে দেওয়া যায় অথবা একেবারেই বাদ দেওয়া যায় তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়।

কয়েক সপ্তাহের জন্য একটি খাবারের ডায়েরি বানতে পারেন। সেখানে আপনি কী কী খাচ্ছেন ও পান করছেন সেটি লিখে রাখুন। কখন পেট ফাঁপার সমস্যা সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিচ্ছে সেটিও লিখে রাখুন। এতে পেটে নির্দিষ্ট কোনো খাবার সহ্য না হলে সেই সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।

তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘ সময়ের জন্য নির্দিষ্ট ধরনের খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিবেন না। 

যখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ

সবসময় অথবা অনেকদিন ধরে পেট ফাঁপার সমস্যা হলে সেটি কোনো মারাত্মক রোগ—এমনকি ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নারীদের ক্ষেত্রে পেট ফাঁপা এবং সবসময় পেট ভরা মনে হওয়া ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। এসব লক্ষণকে সাধারণ সমস্যা মনে করা হলেও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে অনেকসময় কেবল এই লক্ষণগুলোই দেখা যায়। তাই নারীদের এ জাতীয় লক্ষণ দেখা দিলে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

সিলিয়াক ডিজিজ 

সিলিয়াক ডিজিজ (Coeliac Disease) পরিপাকতন্ত্রের একটি পরিচিত রোগ। এই রোগে গ্লুটেন (Gluten) নামক প্রোটিন হজমে সমস্যা হয়। গ্লুটেনযুক্ত কিছু খাদ্য উপাদানের মধ্যে রয়েছে গম, বার্লি, রাই ও ওটস জাতীয় খাদ্যশস্য।

সিলিয়াক ডিজিজ থাকলে গ্লুটেনযুক্ত খাবার খাওয়ার পরে পেট ফাঁপার পাশাপাশি ডায়রিয়া, পেট ব্যথা ও ক্লান্তি বা শারীরিক অবসাদের মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে।

সিলিয়াক ডিজিজ আছে সন্দেহ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।  

সিলিয়াক ডিজিজের কোনো স্থায়ী নিরাময় নেই। তবে রোগটি সনাক্ত হলে খাবারের তালিকা থেকে গ্লুটেনযুক্ত খাবার পুরোপুরি বর্জন করার মাধ্যমে অনেকাংশে উপকার পাওয়া সম্ভব।

ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম

ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম বা আইবিএস (Irritable Bowel Syndrome—IBS) এর রোগীরা প্রায়ই পেট ফাঁপার সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে সন্ধ্যার দিকে এই পেট ফাঁপার সমস্যা বেড়ে যায়। 

আইবিএস এর পেট ফাঁপার সাথে অতিরিক্ত বায়ুর তেমন সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না। ধারণা করা হয়, নাড়িভুঁড়ির ভেতর দিয়ে খাবারের অস্বাভাবিক চলাচলের কারণে এমনটি হয়।