বিভিন্ন কারণে বমি বমি ভাব বা পেটে অস্বস্তি হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করে বমি বমি ভাব দূর করার যায়।
বমি বমি ভাব হওয়ার কারণ
বমি বমি ভাবের সাথে অন্য কোনো উপসর্গ থাকলে সেগুলো দেখে বমি বমি ভাবের কারণ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। তবে কখনো কখনো অন্য কোনো উপসর্গ ছাড়াই, শুধু বমি বমি ভাব থাকতে পারে।
বমি বমি ভাবের সাথে থাকতে পারে এমন অন্যান্য কিছু লক্ষণ এবং এদের সম্ভাব্য কারণ এখানে তুলে ধরা হলো—
বমি বমি ভাবের সাথে অন্য লক্ষণ | সম্ভাব্য কারণ |
---|---|
ডায়রিয়া বা বমি | ফুড পয়জনিং |
মাথাব্যথা ও জ্বর | ফ্লু বা এ জাতীয় কোনো ইনফেকশন |
খাওয়ার পর বুক জ্বালা-পোড়া করা অথবা পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দেওয়া | এসিড রিফ্লাক্স (পাকস্থলীর এসিড খাদ্যনালী দিয়ে উপরে উঠা আসা), যাকে ‘গ্যাসের সমস্যা’ বলা হয় |
মাথাব্যথা এবং তীব্র আলো ও শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা | মাইগ্রেন |
মাথা ঘুরানো | লেবিরিন্থাইটিস বা ভার্টিগো |
অন্যান্য যেসব কারণে বমি বমি ভাব হয়
- গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেস হলে বমিবমি ভাব দেখা দেয়
- মোশন সিকনেস এর কারণে চলন্ত গাড়িতে থাকা অবস্থায় বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে
- দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় অনেক সময় এমনটা হতে পারে
- মদ্যপান করলে বমি বমি ভাব হতে পারে
- অনেকের ঔষধ সেবনের পরে বমি ভাব দেখা দেয়
- সম্প্রতি সার্জারি হয়েছে এমন রোগীদের অনেক সময় বমি বমি ভাব বোধ হতে পারে
ঠিক কী কারণে বমি বমি ভাব হচ্ছে তা বুঝতে না পারলে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যেসব উপায় অবলম্বন করলে সাধারণত বমি বমি ভাব দূর হয় সেগুলো চেষ্টা করে দেখতে হবে৷ তারপরও ভালো না হলে কিংবা কয়েকদিন পরও বমি বমি ভাব না গেলে ডাক্তার দেখিয়ে নিন৷
বমি বমি ভাব দূর করার উপায়
বমি বমি ভাব দূর করতে যা যা করতে পারেন—
- খোলা হাওয়া বা বিশুদ্ধ বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারেন
- অন্য দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। যেমন: গান শোনা, বই পড়া অথবা কোনো মুভি দেখা।
- এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি নিয়ে তাতে কিছুক্ষণ পরপর চুমুক দিতে পারেন। অনেকের ক্ষেত্রে কোক, ফান্টা বা এ জাতীয় কোমল পানীয় পান করলে বমি বমি ভাব সেরে যায়।
- আদা বা পুদিনা/পেপারমিন্ট দিয়ে চা খেতে পারেন।
- ভালো পরিমাণে আদা আছে এমন খাবার খেতে পারেন। যেমন: বাজারে জিনজার বিস্কুট পাওয়া, আদার ফ্লেভার যুক্ত কিছু পানীয় ও পাওয়া যায়৷
- একসাথে বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়া পরিহার করা উচিত। এর পরিবর্তে ঘনঘন ও কম পরিমাণে খাবার খাওয়া যেতে পারে।
যা এড়িয়ে চলতে হবে
- বমি বমি ভাব হলে খুব তীব্র গন্ধযুক্ত খাবার রান্না করলে বা খেলে বমি ভাব বেড়ে যেতে পারে। তাই এগুলো পরিহার করতে হবে।
- খুব গরম, ভাজা-পোড়া অথবা তেল চুপচুপে খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
- খাওয়ার সময় আস্তে ধীরে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তাড়াহুড়ো করা যাবে না।
- খাওয়ার সাথে বা খাওয়ার পরে খুব বেশি পরিমাণে পানি বা পানীয় পান করা যাবে না।
- খাবার খাওয়া মাত্র শুয়ে পড়া উচিত নয়।
- পেটের দিকে টাইট হয়ে থাকে এমন কাপড় বা টাইট প্যান্ট/পায়জামা পরলে অস্বস্তি থেকে বমিবমি ভাব হতে পারে। তাই এই সমস্যা থাকলে এমন কাপড় পরা থেকে বিরত থাকা উচিত।
বিশেষভাবে লক্ষণীয়
যদি বমি বমি ভাবের সাথে বমিও হতে থাকে তবে সাবধান থাকতে হবে। কারণ বেশি বমি হলে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে গিয়ে আপনি পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হতে পারেন। পানিশূন্যতা ঠেকাতে বাড়িতে খাবার স্যালাইন বানিয়ে পান করতে পারেন।
পড়ুন: খাবার স্যালাইন বানানোর নিয়ম
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
সাধারণত বমি বমি ভাব বা এজাতীয় সমস্যা কিছু সময়ের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়৷ তবে কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে—
- কয়েকদিন ধরে এই সমস্যা থাকলে এবং নিজে থেকে সেরে না উঠলে।
- নিয়মিত অথবা ঘন ঘন এমন সমস্যা দেখা দিলে।
ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সমস্যার কারণ চিহ্নিত করবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারবেন।
অনেক সময়ে এর চিকিৎসা হিসেবে বমি নিরোধক ঔষধ (যেমন: ওমিডন) সেবন করতে দেওয়া হয়।
জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যেতে হবে কখন?
যদি হঠাৎ করে বমি বমি ভাব হয় এবং সেই সাথে—
- এমন ভাবে বুকে ব্যথা হতে থাকে যাতে মনে হয় যে বুকে কিছু একটা চাপ দিয়ে আছে অথবা বুক ভার হয়ে আছে।
- বুকের ব্যথাটি যদি হাতে, পিঠে, গলায়, ঘাড়ে অথবা চোয়াল পর্যন্ত ছড়াতে থাকে।
- দম বন্ধ হয়ে আসলে অথবা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে।
এসব হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ হতে পারে। তাই এমন অবস্থায় দেরি না করে যতদ্রুত সম্ভব হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে যেতে হবে৷