ডেঙ্গু জ্বর

সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর আসার সাথে সাথেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে বাসায় চিকিৎসা করলে এই রোগ পুরোপুরি সেরে যায়।

ডেঙ্গু জ্বরে যারা আক্রান্ত হন, তাদের প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজনের অবস্থা মারাত্মক হয়। এভাবে শত শত মানুষ প্রতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তবে জ্বর হলে সেটা ডেঙ্গু কি না তা আগেভাগেই ধরে ফেলে সময়মতো চিকিৎসা নিলে ভয়াবহতা অনেকখানি কমিয়ে আনা যায়।[১]

এই আর্টিকেলে তুলে ধরা হয়েছে ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে কি না সেটা কীভাবে বুঝবেন, ডেঙ্গু হলে কীভাবে রোগীর যত্ন নিবেন, আর কোন লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিবেন।

ডেঙ্গুর লক্ষণ

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না।[২] আর ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলেও সেগুলো সাধারণত তেমন গুরুতর হয় না।

কখন লক্ষণ দেখা দেয়?

ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণত মশা কামড়ানোর ৩–১৪ দিনের (গড়ে ৪–৭ দিনের) মধ্যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এক্ষেত্রে মূলত সাধারণ সর্দিজ্বর কিংবা পেট খারাপের মতো লক্ষণ দেখা দেয়। এসময়ে একদিন হঠাৎ করে কাঁপুনি দিয়ে প্রচণ্ড জ্বর আসতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা প্রায় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছে যেতে পারে। আবার তাপমাত্রা এত বেশি না হলেও গা গরম লাগতে পারে অথবা শরীরে কাঁপুনি হতে পারে।

সাধারণ লক্ষণগুলো কী?

ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে[৩][৪]

  1. তীব্র জ্বর (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)
  2. তীব্র মাথাব্যথা
  3. চোখের পেছনে ব্যথা
  4. পেশিতে ও গিরায় গিরায় ব্যথা
  5. বমি বমি ভাব
  6. বমি হওয়া
  7. শরীরের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া। যেমন, বগলে, কুঁচকিতে কিংবা গলায় হাত দিলে বিচির মতো ফোলা অনুভব করা 
  8. গায়ে লাল লাল র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি ওঠা

অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে—

ডেঙ্গু হলে একই সাথে প্রচণ্ড জ্বর ও গায়ে ব্যথা হয় বলে একে অনেকসময় ‘হাড়ভাঙা জ্বর’ বলা হয়।

কতদিন থাকে?

ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো সাধারণত ২–৭ দিন স্থায়ী হয়।[৫] বেশিরভাগ মানুষই ১ সপ্তাহ পরে সেরে উঠতে শুরু করে। সেরে ওঠার সময়ে ২–৩ দিনের জন্য শরীরে আবার র‍্যাশ দেখা দিতে পারে ও চামড়া উঠতে পারে। লক্ষণগুলো সেরে যাওয়ার পরেও কারও কারও কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্লান্ত ও অসুস্থ লাগতে পারে।

শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো কী কী?

ডেঙ্গু রোগের প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর আসা। এক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা প্রায় ১০২–১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় জ্বর না-ও আসতে পারে। জ্বর ছাড়া আরও যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে সেগুলো হলো—

  • শরীরের শক্তি কমে যাওয়া অথবা দুর্বল হয়ে যাওয়া
  • ঘুম ঘুম ভাব
  • খিটখিটে হয়ে যাওয়া অথবা অল্পতেই চিৎকার কিংবা কান্নাকাটি করা
  • গায়ে লাল র‍্যাশ ওঠা
  • মাড়ি অথবা নাক থেকে রক্ত পড়া
  • ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হয়ে লাল লাল র‍্যাশ বা ছোপের মতো হওয়া
  • ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ৩ বার বমি হওয়া
  • পানিশূন্যতা দেখা দেওয়া

শিশুদের ডেঙ্গু হলে সেটি খুব দ্রুত মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই বিশেষ করে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করানো প্রয়োজন।

মারাত্মক ডেঙ্গুর লক্ষণ

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত প্রায় প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে ‘সিভিয়ার ডেঙ্গি’ বা মারাত্মক ডেঙ্গু রোগ হতে পারে।[৬] সাধারণত লক্ষণ দেখা দেওয়ার ৩–৭ দিনের মধ্যে এমন গুরুতর অবস্থা দেখা যায়।

এই সময়ে সাধারণত জ্বর চলে যাওয়ার (তাপমাত্রা <১০০° ফারেনহাইট) ২৪–৪৮ ঘন্টার মধ্যে হঠাৎ করে কিছু মারাত্মক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন—

  • তীব্র পেট ব্যথা
  • পেটে চাপ দিলে ব্যথা লাগা কিংবা পেট ফুলে যাওয়া
  • ২৪ ঘন্টায় ৩ বার অথবা তার বেশি বমি হওয়া
  • শরীরের ভেতরে কিংবা বাইরে রক্তপাত হওয়া। এটি বোঝার উপায় হলো—
    • নাক অথবা মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া
    • বমি অথবা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া। এক্ষেত্রে কালো পায়খানা হতে পারে ও বমির সাথে কফির দানার মতো রক্ত যেতে পারে
    • গাঢ় রঙের প্রস্রাব হওয়া অথবা প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া
    • মাসিকের সময়ে অস্বাভাবিকভাবে বেশি রক্তপাত হওয়া অথবা যোনিপথে রক্ত যাওয়া
    • ত্বকে রক্তপাত হওয়ার কারণে লাল রঙের ছোপ ছোপ র‍্যাশ দেখা দেওয়া
মারাত্মক ডেঙ্গুর লক্ষণ
ছবি: লাল রঙের ছোপ ছোপ র‍্যাশ
  • খুব ক্লান্ত, অস্থির কিংবা খিটখিটে লাগা

এসব লক্ষণ ছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ রোগীর মুমূর্ষু অবস্থা নির্দেশ করে—

  • রক্তচাপ কমে যাওয়া
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া/দ্রুত শ্বাস নেওয়া
  • পালস বা নাড়ির গতি দুর্বল কিন্তু দ্রুত হয়ে যাওয়া (মিনিটে ১০০ এর চেয়ে বেশি)
  • শরীর ঠাণ্ডা, ভেজা ভেজা ও ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
  • ঝিমুনি, মানসিক বিভ্রান্তি, খিঁচুনি হওয়া কিংবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
  • পানিশূন্যতা হওয়া। যেমন—
    • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া। যেমন: ৪–৬ ঘন্টা ধরে প্রস্রাব না হওয়া
    • মুখ শুকিয়ে যাওয়া
    • চোখ বসে যাওয়া/গর্তে/কোটরে চলে যাওয়া
    • ছোটোদের ক্ষেত্রে মাথার তালু বসে যাওয়া এবং কান্না করলে চোখ দিয়ে খুব অল্প পানি পড়া কিংবা একেবারেই পানি না পড়া

‘সিভিয়ার ডেঙ্গি’ হলে রক্তনালীর ভেতরে থাকা রক্ত থেকে পানি বেরিয়ে যাওয়ার ফলে মারাত্মক পানিশূন্যতা সৃষ্টি, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পানি আসা, শ্বাসকষ্ট, গুরুতর রক্তপাত ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কাজে সমস্যা হওয়ার ফলে রোগীর অবস্থা খুব সংকটাপন্ন হয়ে যেতে পারে। এমনকি এসব মারাত্মক জটিলতা থেকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

আগে কখনো ডেঙ্গু হয়ে থাকলে মারাত্মক ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।[৭] সেই সাথে ছোটো শিশু ও গর্ভবতীদের এই জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।[৮]

মারাত্মক ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরেও জ্বর কমতে থাকার কারণে ডেঙ্গু সেরে যাচ্ছে ভেবে বাড়িতে বসে থাকবেন না। জ্বর বাড়ুক অথবা কমুক—যাই-ই হোক না কেন, মারাত্মক ডেঙ্গুর যেকোনো লক্ষণ দেখামাত্রই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?

সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর আসার সাথে সাথেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে বাসায় চিকিৎসা করলে এই রোগ পুরোপুরি সেরে যায়। 

তবে মারাত্মক ডেঙ্গুসহ কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তেমন কোনো মারাত্মক লক্ষণ প্রকাশ না পেলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিতে দেরি করা যাবে না। কেননা কিছু রোগী আগে থেকেই শারীরিকভাবে দুর্বল থাকেন। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে হঠাৎ করে খুব দ্রুত গতিতে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে।

এমন ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে—

এ ছাড়াও আপনি একা বসবাস করলে অথবা আপনার পক্ষে বাড়িতে বসে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া সম্ভব নয় মনে হলে নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন। এতে করে আপনার রোগের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যাবে। যেকোনো সময়ে অবস্থার অবনতি হলে সেটি সমাধানে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।[৯]

জ্বর সেরে যাওয়ার সময়টায় সাধারণত ডেঙ্গুর জটিলতা দেখা দেওয়া শুরু করে। তাই এই সময়টায় রোগীর লক্ষণগুলো সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যেকোনো সমস্যা হলে খুবই দ্রুততার সাথে তা সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে।

ডেঙ্গু শনাক্ত করার পরীক্ষা

ডেঙ্গু হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত হওয়ার এবং রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য সাধারণত বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সেগুলো হলো—

১. এনএস১ অ্যান্টিজেন (NS1 Antigen) পরীক্ষা

এটি একটি রক্ত পরীক্ষা যার সাহায্যে খুব দ্রুত (প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যে) ফলাফল পাওয়া যায়। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর আসার প্রথম দিন থেকেই এই পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হয়।

তবে জ্বর আসার চার–পাঁচ দিন পর থেকে এই টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসে। অর্থাৎ জ্বর আসার চার–পাঁচ দিন পরে এই টেস্ট করলে শরীরে আদৌ ডেঙ্গু ভাইরাস আছে কি না সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।

বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে সরকারের নির্ধারিত প্রায় ৫০০ টাকা মূল্যে এই টেস্ট করানো যায়।

২. ডেঙ্গু ইমিউনোগ্লোবিউলিন (Dengue IgM/IgG) পরীক্ষা

আইজিএম ও আইজিজি অ্যান্টিবডি টেস্ট এক প্রকার রক্ত পরীক্ষা। এই পরীক্ষা দুটির সাহায্যে রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত কি না সেটা নির্ণয় করা যায়।

আইজিএম অ্যান্টিবডি টেস্ট সাধারণত জ্বর আসার পাঁচ দিন পর থেকেই করা যায়। তবে জ্বর আসার প্রায় সাত দিনের দিকে এই পরীক্ষা সবচেয়ে ভালো ফলাফল দিতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু হলে এ পরীক্ষা পজিটিভ আসে।

অন্যদিকে শরীরে আইজিজি অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে পূর্বে কেউ কখনো ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল কি না সেটি নির্ণয় করা যায়। এই টেস্টটির মূল্য প্রায় ৩০০–৫০০ টাকা।

৩. সিবিসি (CBC) পরীক্ষা

এই পরীক্ষার মাধ্যমে মূলত রক্তে লোহিত রক্ত কণিকা, শ্বেত রক্ত কণিকা, প্লাটিলেট ও হেমাটোক্রিটের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। ডেঙ্গু হলে এসব রক্ত কণিকার পরিমাণ সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে।

এ ছাড়া রক্ত থেকে পানি বেরিয়ে যেতে শুরু করলে হেমাটোক্রিট অনেক বেড়ে যায়। তাই ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করেছে কি না সেটি নির্ধারণ করার একটি অন্যতম উপায় হলো হেমাটোক্রিটের পরিমাণ নির্ণয় করা। এই টেস্টটির মূল্য প্রায় ১৫০–৪০০ টাকা।

এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন: রক্তের ALT/SGPT ও AST/SGOT পরীক্ষা এবং প্রস্রাব পরীক্ষা।

ডেঙ্গুর ঘরোয়া চিকিৎসা

ডেঙ্গুর জীবাণুকে নিষ্ক্রিয় করে দ্রুত ডেঙ্গু সারিয়ে ফেলার মতো নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে সাধারণত ঘরোয়া কিছু পরামর্শ মেনে চলার মাধ্যমেই ডেঙ্গুর বিভিন্ন লক্ষণ উপশম করা যায়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তবে মারাত্মক ডেঙ্গু এবং কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করতে হয়।

সাধারণ ডেঙ্গু হলে নিচের বিষয়গুলো মেনে চললে তা রোগীর লক্ষণ উপশমে সাহায্য করতে পারে—

১. তরল খাবার: ডেঙ্গু হলে শরীরের রক্তনালী থেকে রক্তের জলীয় অংশ বাইরে বেরিয়ে যায়। তাই এই রোগে শরীরে পানিশূন্যতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। পানিশূন্যতা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

এই সমস্যা প্রতিরোধের জন্য শুরু থেকেই প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে। যেমন: পানি, ডাবের পানি, স্যুপ, লেবু-পানি, দুধ, ফলের রস ও খাবার স্যালাইন। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক কমপক্ষে ৬–৮ গ্লাস পানি ও তরল খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

পানির পাশাপাশি পানিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইট বা লবণের চাহিদা মেটাতে পানির পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন পান করতে পারেন।[১০]

২. বিশ্রাম: ডেঙ্গু রোগে শরীর বেশ দুর্বল হয়ে যায়। এজন্য এই সময়ে যতটা সম্ভব বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই কাজকর্ম থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আর নিয়মিত ঘরের কাজ করলে আপনি বিশ্রামে থেকে বাড়ির অন্য কোনো সদস্য অথবা বন্ধুর সহযোগিতা নিবেন। সেই সাথে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে অবশ্যই শোয়ার সময়ে মশারি টানিয়ে রাখবেন।

৩. ঔষধ: ডেঙ্গুর কারণে সৃষ্ট ব্যথা ও জ্বর কমানোর একমাত্র নিরাপদ ঔষধ হলো প্যারাসিটামল। জ্বর ও ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। শিশুদের ক্ষেত্রে বয়স অনুযায়ী উপযুক্ত ডোজে প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে।

পড়ুন: শিশুদের জন্য প্যারাসিটামল

এ ছাড়া পানিতে এক টুকরা কাপড় ভিজিয়ে রোগীর গা মুছিয়ে দিতে পারেন। জ্বরের সময়ে এভাবে গা মুছিয়ে দিলে অনেকে আরাম পেতে পারে।

ডেঙ্গু হলে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য যেকোনো ধরনের এনএসএআইডি জাতীয় ব্যথার ঔষধ (যেমন: অ্যাসপিরিন ও আইবুপ্রোফেন) সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এসব ঔষধ খেলে শরীরে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা রোগীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে।[১১][১২]

সাধারণত এই উপায়গুলো মেনে চললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর লক্ষণ উপশম করা যায়। তবে ডেঙ্গুর কোনো লক্ষণ অথবা রোগীর সার্বিক অবস্থা নিয়ে চিন্তিত হলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেওয়া ভালো।

ডেঙ্গুর চিকিৎসায় পেঁপে পাতার রস কতটুকু কার্যকর?

প্রচলিত ধারণা: ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় পেঁপে পাতার রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পেঁপে পাতার রস প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে। এভাবে এটি ডেঙ্গুর ফলে সৃষ্ট রক্তক্ষরণ সংক্রান্ত জটিলতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

বিজ্ঞান যা বলে: কোনো রোগের চিকিৎসায় যেকোনো ধরনের ঔষধ ব্যবহারের আগে সেই ঔষধটিকে বেশ কয়েকটি ধাপের বৈজ্ঞানিক গবেষণার পথ পাড়ি দিতে হয়। ডেঙ্গুর চিকিৎসায় পেঁপে পাতার রস নিয়ে এই পর্যন্ত বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। তবে পেঁপে পাতার রসকে সরাসরি ডেঙ্গুর চিকিৎসায় ব্যবহার করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

কিছু গবেষণায় পশুপাখি ও স্বল্প সংখ্যক ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে পেঁপে পাতার সম্ভাব্য উপকারিতা দেখা গিয়েছে।[১৩] তবে এসব গবেষণায় ব্যবহৃত পেঁপে পাতা রস তৈরির কাঁচামাল, প্রক্রিয়া ও আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে। ঠিক কোন পরিমাণে, কতদিন ধরে এবং কোন ধরনের গাছের পাতার রসে উপকার পাওয়া যেতে পারে সেই বিষয়ে এখনো অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।[১৪][১৫]

তাই ডেঙ্গুর চিকিৎসায় পেঁপে পাতার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সঠিক পরামর্শ মেনে চলুন। প্রয়োজন অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি হোন।[১৬]

ডেঙ্গু যেভাবে ছড়ায়

ডেঙ্গু মূলত এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত এই মশা ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ালে সেটিও ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। পরবর্তীতে ভাইরাসবাহী মশা অপর কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তির রক্তেও ডেঙ্গুর জীবাণু প্রবেশ করে।

এডিস মশা
ছবি: এডিস মশা

উল্লেখ্য, ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারী থেকে তার গর্ভের শিশুতে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। এক্ষেত্রে শিশু গর্ভে থাকা অবস্থাতে অথবা জন্মের সময়ে আক্রান্ত হতে পারে। এই ভাইরাস গর্ভের শিশুর ওপর নানান ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন: নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্মগ্রহণ করা, স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজন নিয়ে জন্মানো এবং গর্ভাবস্থাতেই শিশুর মৃত্যু হওয়া।[১৭]

জেনে রাখা ভালো

ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করলে ভাইরাসগুলো রক্তের অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট ধ্বংস করতে পারে। প্লাটিলেটের অভাব হলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তপাত শুরু হতে পারে। এর পাশাপাশি ভাইরাসের কারণে রক্তনালী থেকে রক্তরস বা প্লাজমা বাইরে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরে মোট রক্তের পরিমাণ কমে যায় এবং রক্ত ঘন হয়ে যায়। সেই সাথে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় খুব অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে।

ডেঙ্গু হলে মূলত এসব কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি হয়। ফলে খুব অল্প সময়েই রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এই অবস্থায় অতি দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ

ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে সেগুলো হলো—

১. মশা নিধন

মশার কামড়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়ায় বলে মশা নিয়ন্ত্রণ করাই এই রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায়। এজন্য—

  • ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা সাধারণত জমে থাকা পানিতে ডিম পারে। সেখান থেকেই এই মশার বংশবৃদ্ধি হয়। তাই বাড়ি, অফিস কিংবা স্কুলের আশেপাশের ড্রেন, ডোবা, পুকুর ও জলাশয় নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
  • গাছের টব, নারকেলের ছোবড়া, টায়ার, পরিত্যক্ত আসবাব কিংবা পানি জমতে পারে এমন যেকোনো পাত্র বাড়ির আশেপাশে ফেলে রাখা যাবে না। বাড়ির আশেপাশে ব্যবহার্য কোনো পাত্রে (যেমন: ফুলদানি অথবা গাছের টব) পানি জমলে সেটি অন্তত তিন দিন পর পর ভালোমতো ঘষে মেজে পরিষ্কার করতে হবে। যাতে মশার ডিমগুলোও ধ্বংস হয়ে যায়।
  • পানি জমা করে রাখার পাত্র (যেমন: পানির ট্যাংক, বালতি ও ড্রাম) সবসময় ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। কিছুদিন পর পর এসব খালি করে পরিষ্কার করতে হবে। এসব পাত্র খোলা থাকলে সেখানে মশা নিধনকারী ঔষধ স্প্রে করতে হবে।
  • নিয়মিত এয়ারকন্ডিশনারের ও ফ্রিজের জমে থাকা পানি পরিষ্কার করতে হবে।
  • কয়েকদিনের জন্য বাড়ির বাইরে গেলে কমোড অথবা প্যান ঢেকে রাখতে হবে। সেই সাথে পানির বালতি খালি করে রাখতে হবে।
  • বাড়ি, অফিস কিংবা স্কুলের আশেপাশের এলাকায় নিয়মিত এডিস মশা নিধনকারী ঔষধ ছিটিয়ে দিতে হবে। শহুরে এলাকায় অনেক সময় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বিরতিতে মশার ঔষধ ছিটানো হয়। এর পাশাপাশি ঘরের আশেপাশে নিজ উদ্যোগে মশার ঔষধ ছিটানোর ব্যবস্থা করা উচিত।

২. নিজেকে মশার কামড় থেকে সুরক্ষিত রাখুন

আক্রান্ত মশার মাধ্যমে এ রোগ সুস্থ মানুষের মাঝে ছড়ায়। তাই নিজেকে যথা সম্ভব মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য—

  • সম্ভব হলে বাড়ি, অফিস অথবা স্কুলের জানালায় নেট বা জাল লাগিয়ে নিবেন। এতে করে মশা ঘরের ভেতরে ঢুকতে পারবে না। ঘরের দরজা বেশিক্ষণ খোলা রাখবেন না।
  • বাড়ির দেয়ালে মশা বিতাড়ক রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে রঙ করে নিতে পারেন।
  • ত্বকে লাগানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের মশা নিরোধক ক্রিম বা রেপেলেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
  • বাইরে বের হওয়ার সময়ে কাপড় দিয়ে পুরো ত্বক ভালোভাবে ঢেকে বের হতে চেষ্টা করবেন। এক্ষেত্রে লম্বা প্যান্ট ও লম্বা হাতের জামা পরতে পারেন।
  • রাত কিংবা দিন—যেকোনো বেলায় ঘুমানোর সময় মশারি টানিয়ে ঘুমাবেন।
  • ঘরের ভেতরে মশা নিধনের জন্য ইলেকট্রনিক ব্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
  • ঘরের ভেতরে মশার উপদ্রব কমানোর জন্য মতো মশা বিতাড়ক কয়েল, অ্যারোসল অথবা লিকুইড স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। তবে কয়েল কিংবা স্প্রে কেনার সময় চেষ্টা করবেন স্মোক ফ্রি বা ধোঁয়া হয় না—এমন পণ্য কিনতে। কেননা ঘরের ভেতরে এসবের ধোঁয়ার কারণে অনেকেরই শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তবে এসব পণ্যের কার্যকারিতা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থাকতে পারে। তাই মশা নিধনের অন্যান্য পদ্ধতিগুলোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া বেশি জরুরি।

আপনি ইতোমধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকলে, নিজে মশারি টানিয়ে বিশ্রাম নিবেন এবং ঘুমাবেন। কেননা আপনার মাধ্যমে আবার অনেক নতুন মশা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে অন্যদের আক্রান্ত করতে পারে। ফলে খুব দ্রুত ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করতে পারে।

ডেঙ্গু না কি করোনা?

ডেঙ্গু ভাইরাস অথবা করোনা ভাইরাসের মধ্যে যেকোনোটি দিয়ে ইনফেকশন হলেই জ্বর আসতে পারে। তাই অনেকেই জ্বর আসার পর সেটি ডেঙ্গু না কি কোভিড তা নাও বুঝতে পারে। তবে জ্বরের সাথে অন্য কিছু লক্ষণ দেখে ডেঙ্গু থেকে জ্বর ও করোনা থেকে সৃষ্ট জ্বরকে আলাদা করা যেতে পারে। সাধারণ ডেঙ্গু ও সাধারণ করোনার এমন লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

লক্ষণডেঙ্গু হলেকোভিড হলে
জ্বরকাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসেকাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে
মাথাব্যথাসাধারণত হয়সাধারণত হয়
চোখের পেছনে ব্যথাসাধারণত হয়সাধারণত হয় না
মাংসপেশিতে ব্যথাসাধারণত হয়সাধারণত হয়
হাড়ে ও গিরায় গিরায় ব্যথাসাধারণত হয়সাধারণত হয় না
গায়ে লাল র‍্যাশ ওঠা (বিশেষ করে মুখে, গলায় ও বুকে)সাধারণত হয়সাধারণত হয় না
বমি বমি ভাব ও বমি হওয়াসাধারণত হয়সাধারণত হয়
গলা ব্যথাসাধারণত হয় নাসাধারণত হয়
কাশিসাধারণত হয় নাসাধারণত হয়
শ্বাসকষ্টসাধারণত হয় নাসাধারণত হয়
নাক দিয়ে পানি পড়াসাধারণত হয় নাসাধারণত হয়
নাক দিয়ে গন্ধের এবং মুখে স্বাদের অনুভূতি বদলে যাওয়া অথবা কমে যাওয়াসাধারণত হয় নাসাধারণত হয়
ডায়রিয়াসাধারণত হয় নাসাধারণত হয়

তবে বেশিরভাগ সময়েই এসব ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কখনো কখনো সামান্য দু-একটি লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য এসব ভাইরাস শনাক্ত করার নির্দিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

উল্লেখ্য, অনেকের একই সাথে ডেঙ্গু ও করোনা হতে পারে। তবে ডেঙ্গু, করোনা অথবা একত্রে এই দুটি ইনফেকশন হওয়া—যেটাই হোক না কেন, এসব রোগের মারাত্মক লক্ষণ বা বিপদচিহ্নের বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে এবং সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

ডেঙ্গু জ্বর কতদিন থাকে?

কোনো ধরনের জটিলতা না থাকলে সাধারণত ২–৭ দিন পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ থাকে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এর থেকে বেশি সময় ধরেও লক্ষণ থাকতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কী কী খেতে হবে?

ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে। যেমন: পানি, ডাবের পানি, ফলের রস, লেবুর শরবত ও খাবার স্যালাইন। এ ছাড়াও স্বাভাবিক পুষ্টিকর খাবার খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে খাবার তালিকায় বিশেষ নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কখন ও কেন রক্তের প্লাটিলেট প্রয়োজন?

ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক আকার ধারণ করলে শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তবে শুধুমাত্র প্লাটিলেট কমে যাওয়ার কারণে অবস্থার অবনতি হয়ে রোগী মৃত্যুবরণ করছে—এমন ঘটনা খুবই বিরল।
সাধারণত সময়মতো পানিশূন্যতা নিয়ন্ত্রণ করা, স্বাভাবিক রক্তচাপ বজায় রাখা এবং রক্ত থেকে জলীয় অংশ, অর্থাৎ প্লাজমা বের হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব। এক্ষেত্রে রোগীকে প্লাটিলেট দেওয়ার ভূমিকা খুবই নগণ্য।[১৮]
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় যথাযথ কারণ ছাড়া প্লাটিলেট প্রদান বা ট্রান্সফিউশন তেমন কোনো ভূমিকা রাখে না। বরং এতে করে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।[১৯]
বাংলাদেশ সরকারের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ গাইডলাইনে ডেঙ্গু রোগীকে নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া প্লাটিলেট দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়। তবে প্লাটিলেট খুবই কমে গেলে রোগীর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঐ মুহূর্তে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্লাটিলেট দেওয়া যেতে পারে।[২০]
প্লাটিলেট রক্তদানের মতো করে ইনজেকশনের সাহায্যে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। প্লাটিলেট যোগাড় করা বেশ খরচসাপেক্ষ হতে পারে। তাই সম্ভব হলে রোগীর মতো একই রক্তের গ্রুপের ৩–৪ জন রক্তদাতার সাথে যোগাযোগ রাখা উচিত, যেন প্রয়োজনে তারা রোগীকে প্লাটিলেট দিতে পারে।

ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ?

ডেঙ্গু সরাসরি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। তবে আক্রান্ত মানুষকে এডিস মশা কামড়ালে সেই মশার দেহে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রবেশ করে। পরবর্তীতে সেই একই মশা অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।

এডিস মশা ছাড়া অন্যান্য মশা কি ডেঙ্গু ছড়াতে পারে?

ডেঙ্গু ভাইরাস মূলত এডিস ইজেপটি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস নামক স্ত্রী মশার মাধ্যমে ছড়ায়।[২১] এখন পর্যন্ত এডিস মশা ছাড়া অন্য কোনো মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ানোর তথ্য পাওয়া যায়নি।

ডেঙ্গু জ্বরের টেস্টের নাম কী?

ডেঙ্গু হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাধারণত বেশ কয়েকটি টেস্ট বা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে প্রধান হলো—
১. এনএস১ অ্যান্টিজেন (NS1 Antigen) শনাক্তকরণ পরীক্ষা
২. ডেঙ্গু ইমিউনোগ্লোবিউলিন (Dengue IgM/IgG) পরীক্ষা
৩. সিবিসি (CBC) পরীক্ষা

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে?

ডেঙ্গু জ্বর হলে গোসল করা যেতে পারে। তবে বেশিক্ষণ ধরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল না করাই ভালো। শিশুদের ক্ষেত্রে লম্বা সময় ধরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যেতে পারে। এমনটা হলে শরীরে বেশ কিছু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।[২২]
সেক্ষেত্রে আপনি কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। এ ছাড়া কুসুম গরম পানিতে গামছা অথবা তোয়ালে ভিজিয়ে সেটি দিয়ে শরীর মুছে দিলে জ্বরের মধ্যে অনেকের আরাম লাগতে পারে।

ঘরোয়া চিকিৎসায় কি ডেঙ্গু জ্বর সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা সম্ভব?

ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণগুলোর সাথে অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে ঘরে বসেই ডেঙ্গুর চিকিৎসা করা সম্ভব। প্রথমবার আক্রান্ত হওয়া বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করে না। তাই ডেঙ্গু হলে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ঘরে বসেই রোগীর চিকিৎসা করা যায়।
নিয়ম মেনে প্যারাসিটামল সেবন করলে, বিশ্রাম নিলে এবং প্রচুর পরিমাণে তরল পানীয় পান করলে বেশিরভাগ রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।
তবে রোগীর সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর সবসময় সতর্কতার সাথে নজর রাখা জরুরি। কেননা যেকোনো ধরনের মারাত্মক সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্রই রোগীকে সঠিক চিকিৎসার জন্য দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের ঔষধ কী?

শরীর থেকে ডেঙ্গু ভাইরাস পুরোপুরি দূর করার কোনো চিকিৎসা নেই। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তবে ডেঙ্গুর উপসর্গ হিসেবে যে জ্বর আসে এবং শরীরে ব্যথা হয়—সেটি কমানোর ঔষধ হলো প্যারাসিটামল
আইবুপ্রোফেন ও অ্যাসপিরিন জাতীয় অন্যান্য নানান ঔষধ জ্বর কমাতে পারলেও সেগুলো সেবন করা যাবে না। কারণ সেগুলো রক্তপাত ঘটিয়ে রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে।
এ ছাড়াও ডেঙ্গু জটিল আকার ধারণ করলে রোগীর সার্বিক অবস্থা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হাসপাতালে অন্য কোনো প্রয়োজনীয় ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন।

ডেঙ্গু জ্বর হলে কী কী ঔষধ সেবন করা যাবে না?

ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য যেকোনো ব্যথার ঔষধ (যেমন: অ্যাসপিরিন ও আইবুপ্রোফেন) সেবন করা যাবে না। এর কারণ হলো, এসব ঔষধে শরীরে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ডেঙ্গু আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
পাশাপাশি যেকোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন করা থেকেও বিরত থাকা দরকার। এ ছাড়াও ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত অন্য যেকোনো ধরনের ঔষধ সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর একবার হলে পরে কি আবার হতে পারে?

ডেঙ্গু ভাইরাসের চার ধরনের সেরোটাইপ বা প্রকারভেদ আছে। একটি সেরোটাইপ দিয়ে সাধারণত একজন ব্যক্তি জীবনে একবারই আক্রান্ত হয়ে থাকে। একজন ব্যক্তি একই সেরোটাইপের ডেঙ্গু ভাইরাস দিয়ে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত না হলেও বাকি সেরোটাইপগুলো দিয়ে আবার আক্রান্ত হতে পারে।

ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর কত সময় পর জ্বর হয়?

সাধারণত ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস মশা কামড়ানোর ৩–১৪ দিনের (গড়ে ৪–৭দিন) মধ্যে হঠাৎ করে একদিন কাঁপুনি দিয়ে প্রচণ্ড জ্বর আসতে পারে। এক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা প্রায় ১০২–১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত বাড়তে পারে। ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো সাধারণত ২–৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

(২২)

  1. World Health Organization. “Dengue and Severe Dengue.” WHO, 14 Feb. 2022, https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/dengue-and-severe-dengue. Accessed 19 Nov. 2022.
  2. World Health Organization. “Dengue and Severe Dengue.” WHO, 14 Feb. 2022, https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/dengue-and-severe-dengue. Accessed 19 Nov. 2022.
  3. World Health Organization. “Dengue and Severe Dengue.” WHO, 14 Feb. 2022, https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/dengue-and-severe-dengue. Accessed 19 Nov. 2022.
  4. National Malaria Elimination & AedesTransmitted Diseases Control Program Disease Control Unit . National Guideline for Clinical Management of Dengue Syndrome. Directorate General of Health Services, Ministry of Health and Family Welfare, 2018.
  5. Centers for Disease Control and Prevention. “Dengue Symptoms and Treatment.” CDC, 20 Sept. 2021, https://www.cdc.gov/dengue/symptoms/index.html. Accessed 19 Nov. 2022.
  6. Centers for Disease Control and Prevention. “Dengue Symptoms and Treatment.” CDC, 20 Sept. 2021, https://www.cdc.gov/dengue/symptoms/index.html. Accessed 19 Nov. 2022.
  7. Centers for Disease Control and Prevention. “Dengue Symptoms and Treatment.” CDC, 20 Sept. 2021, https://www.cdc.gov/dengue/symptoms/index.html. Accessed 19 Nov. 2022.
  8. Centers for Disease Control and Prevention. “Dengue Symptoms and Treatment.” CDC, 20 Sept. 2021, https://www.cdc.gov/dengue/symptoms/index.html. Accessed 19 Nov. 2022.
  9. National Malaria Elimination & AedesTransmitted Diseases Control Program Disease Control Unit . National Guideline for Clinical Management of Dengue Syndrome. Directorate General of Health Services, Ministry of Health and Family Welfare, 2018.
  10. Centers for Disease Control and Prevention. “Dengue Symptoms and Treatment.” CDC, 20 Sept. 2021, https://www.cdc.gov/dengue/symptoms/index.html. Accessed 19 Nov. 2022.
  11. World Health Organization. “Dengue and Severe Dengue.” WHO, 14 Feb. 2022, https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/dengue-and-severe-dengue. Accessed 19 Nov. 2022.
  12. National Malaria Elimination & AedesTransmitted Diseases Control Program Disease Control Unit . National Guideline for Clinical Management of Dengue Syndrome. Directorate General of Health Services, Ministry of Health and Family Welfare, 2018.
  13. Ahmad, Nisar, et al. “Dengue Fever Treatment with Carica Papaya Leaves Extracts.” Asian Pacific Journal of Tropical Biomedicine, vol. 1, no. 4, Aug. 2011, pp. 330–33.
  14. Sarker, Md. Moklesur Rahman, et al. “Dengue Fever: Therapeutic Potential of Carica Papaya L. Leaves.” Frontiers in Pharmacology, vol. 12, Apr. 2021.
  15. Charan, Jaykaran, et al. “Efficacy and Safety of Carica Papaya Leaf Extract in the Dengue: A Systematic Review and Meta-Analysis.” International Journal of Applied and Basic Medical Research, vol. 6, no. 4, 2016, pp. 249–54.
  16. Teh, Bee Ping, et al. “Carica Papaya Leaf Juice for Dengue: A Scoping Review.” Nutrients, vol. 14, no. 8, Apr. 2022, p. 1584.
  17. Yin, Xueru, et al. “VERTICAL TRANSMISSION OF DENGUE INFECTION: THE FIRST PUTATIVE CASE REPORTED IN CHINA.” Revista Do Instituto de Medicina Tropical de São Paulo, vol. 58, no. 0, 2016.
  18. Assir, Muhammad Zaman Khan, et al. “Effectiveness of Platelet Transfusion in Dengue Fever: A Randomized Controlled Trial.” Transfusion Medicine and Hemotherapy, vol. 40, no. 5, 2013, pp. 362–68.
  19. Khan Assir, Muhammad Zaman, and Fraz Ahmad. “Prophylactic Platelet Transfusion Does Not Reduce Risk of Clinical Bleeding in Adults with Dengue and Thrombocytopaenia.” Evidence Based Medicine, vol. 22, no. 6, Nov. 2017, pp. 225–225.
  20. National Malaria Elimination & AedesTransmitted Diseases Control Program Disease Control Unit . National Guideline for Clinical Management of Dengue Syndrome. Directorate General of Health Services, Ministry of Health and Family Welfare, 2018.
  21. World Health Organization. “Dengue and Severe Dengue.” WHO, 14 Feb. 2022, https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/dengue-and-severe-dengue. Accessed 19 Nov. 2022.
  22. F., Corrard. “Moyens de Lutte Contre La Fièvre : Les Bains Tièdes Restent-Ils Indiqués ?” Archives de Pédiatrie, vol. 9, no. 3, Mar. 2002, pp. 311–15.