সর্দি-কাশি ও ফ্লু

এসব রোগের চিকিৎসার জন্য সাধারণত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিছু উপদেশ মেনে চললে ঘরে বসেই যত্ন নেয়া যায়।

সারাবছর জুড়েই সর্দি-কাশি ও ফ্লু এর সমস্যা হলেও ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে, বিশেষত শীত ও বসন্ত কালে সমস্যাগুলো বেড়ে যায়।

এসব রোগের চিকিৎসার জন্য সাধারণত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিছু উপদেশ মেনে চললে ঘরে বসেই নিজের যত্ন নেয়া যায়। তা ছাড়া কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমানো যায়।

ফ্লু ও সর্দি-কাশি বা ঠান্ডার লক্ষণ

ফ্লু ও সাধারণ সর্দি-কাশির লক্ষণ প্রায় একই রকম। তবে সাধারণ সর্দি-কাশির তুলনায় ফ্লু এর লক্ষণগুলোর তীব্রতা বেশি হতে পারে এবং সেরে উঠতেও বেশি সময় লাগতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো লক্ষণগুলো বড়দের তুলনায় বেশিদিন ধরে থাকতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন আপনার ফ্লু হয়েছে না কি সর্দি-কাশি?
লক্ষণ সাধারণ সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা ফ্লু
লক্ষণ প্রকাশ লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় কয়েক ঘন্টার মধ্যেই হঠাৎ করে দেখা দেয়
আক্রান্ত অঙ্গ মূলত নাক ও গলার সমস্যা হয় নাক ও গলার পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অঙ্গও আক্রান্ত হতে পারে
জ্বর সাধারণত জ্বর আসে না ফ্লু এর অন্যতম বিশেষ লক্ষণ হলো জ্বর। শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে এবং ৩–৪ দিন পর্যন্ত জ্বর থাকতে পারে। তবে জ্বর ছাড়াও ফ্লু হতে পারে
দুর্বলতা ও ক্লান্তি হতে পারে। অসুস্থ লাগলেও দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে নেওয়া যায় অত্যন্ত ক্লান্ত লাগে। এতটাই অসুস্থ বোধ হয় যে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না
মাথাব্যথা মাথাব্যথা খুব কম মানুষের হয় সাধারণত মাথাব্যথা থাকে
হাঁচি, নাক বন্ধ থাকা অথবা নাক দিয়ে পানি পড়া হতে পারে কখনো কখনো হতে পারে
গলা ব্যথা হতে পারে কখনো কখনো হতে পারে
কাশি ও বুক ব্যথা তীব্রতা মৃদু বা মাঝারি হতে পারে প্রায়ই দেখা যায়। সাধারণত শুকনো কাশি হয়। এসব লক্ষণ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে
অন্যান্য লক্ষণ শরীরে কিংবা মাংসপেশিতে ব্যথা, মুখের চারিদিকে চাপ চাপ লাগা, স্বাদ ও গন্ধ না পাওয়া শরীরে কিংবা মাংসপেশিতে ব্যথা, ঘুমের সমস্যা, ক্ষুধা কমে যাওয়া, পেটের সমস্যা যেমন: ডায়রিয়াপেট ব্যথাবমি বমি ভাব ও বমি হওয়া
স্বাস্থ্য জটিলতা সাধারণত কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি হয় না কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে
ভাইরাসের নাম নানা ধরনের ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস

এ ছাড়া ফ্লুতে শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বরের পাশাপাশি ডায়রিয়া ও বমির সমস্যা বেশি দেখা যায়। সেই সাথে শিশুর কান ব্যথা হতে পারে এবং চঞ্চলতা কমে যেতে পারে।

জ্বর, নতুন করে একটানা কাশি হওয়া, অস্বাভাবিক স্বাদ-গন্ধ পাওয়া অথবা স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা কোভিড-১৯ ইনফেকশন বা করোনার লক্ষণ হতে পারে।   

ফ্লু ও সাধারণ সর্দি-কাশির চিকিৎসা

কারণ ও লক্ষণে পার্থক্য থাকলেও ফ্লু ও সাধারণ সর্দি-কাশির চিকিৎসা প্রায় কাছাকাছি।

ঘরোয়া চিকিৎসা

দ্রুত সর্দি-কাশি ও ফ্লু সারাতে প্রাথমিকভাবে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলুন—

  • বিশ্রাম নিন ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
  • শরীর উষ্ণ রাখুন
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। পানির পাশাপাশি তরল খাবারও উপকারী। যেমন: ফলের জুস, চিড়া পানি, ডাবের পানি, স্যুপ, ইত্যাদি। পানিশূন্যতা এড়াতে এমন পরিমাণে তরল খাওয়া উচিত যেন প্রস্রাবের রঙ স্বচ্ছ অথবা হালকা হলুদ হয়
  • গলা ব্যথা উপশমের জন্য লবণ মিশিয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করুন। তবে ছোটো শিশুরা ঠিকমতো গড়গড়া করতে পারে না বলে তাদের ক্ষেত্রে এই পরামর্শ প্রযোজ্য নয়
  • কাশি উপশমের জন্য মধু খেতে পারেন। ১ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য এই পরামর্শ প্রযোজ্য নয়

অনেকে ধারণা করেন যে ভিটামিন সি, রসুন ও একানেশিয়া নামের হারবাল ঔষধ সর্দি-কাশি প্রতিরোধে কিংবা সর্দি-কাশি থেকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে। তবে এই ধারণার পক্ষে তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ফ্লু ও সর্দি কাশির ঔষধ

সাধারণ সর্দি-কাশি সাধারণত কোনো ঔষধ ছাড়াই ৭–১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। ফ্লু-ও সাধারণত দুই সপ্তাহের মধ্যে আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়। তবে লক্ষণ উপশমে কিছু ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন—

প্যারাসিটামল: জ্বর ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে পারেন। তবে প্যারাসিটামল সেবন চলাকালে অন্য কোনো ব্যথার ঔষধ, কফ সিরাপ অথবা সর্দি-কাশির হারবাল ঔষধ সেবনের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এসবের অনেকগুলোতে প্যারাসিটামল থাকে। ফলে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে প্যারাসিটামল সেবন করার ঝুঁকি থাকে।

নাক বন্ধের ড্রপ: এগুলোকে ‘ন্যাসাল ডিকনজেসট্যান্ট’ বলা হয়। নাক বন্ধ উপশমে এসব ড্রপ ব্যবহার করা যায়। তবে টানা ১ সপ্তাহের বেশি ব্যবহার করবেন না, তাতে নাক বন্ধের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। ১ সপ্তাহেও উন্নতি না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের এসব ড্রপ দিবেন না। ডাক্তারের পরামর্শে ৬–১২ বছর বয়সী শিশুদের এই ধরনের ড্রপ দেওয়া যেতে পারে, সেক্ষেত্রেও সাধারণত পাঁচ দিনের বেশি দেয়া হয় না।

কফ সিরাপ: কাশি বেশি হলে সর্দি-কাশির ঔষধ বা কফ সিরাপ ব্যবহার করা যেতে পারে।

অ্যান্টিহিস্টামিন: নাক থেকে পানি পড়া এবং হাঁচি কমানোর জন্য ডাক্তার এই ধরনের ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। এগুলো কারও কারও কাছে ‘অ্যালার্জির ঔষধ’ হিসেবেও পরিচিত।

অ্যান্টিভাইরাল: সাধারণত ফ্লু এর চিকিৎসায় বিশেষ কোনো ঔষধের দরকার হয় না। তবে যাদের ফ্লু এর তীব্র লক্ষণ দেখা দেয় এবং জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি, তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ সেবন করতে পারেন৷

ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া শিশুদের কোনো ধরনের ঔষধ দিবেন না।

১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের ফ্লু হয়েছে বলে সন্দেহ হলে তাদের অ্যাসপিরিন ও স্যালিসাইলেট যুক্ত সব ধরনের ঔষধ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। স্যালিসাইলেট যুক্ত ঔষধের মধ্যে রয়েছে পিংক-বিসমল, পেপ্টো, পেপ্টোফিট ও পেপ্টোসিড জাতীয় পেট খারাপের ঔষধ।

ঔষধ সেবনের পূর্বে সতর্কতা

সব ধরনের ঔষধ সেবন করার আগেই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। লক্ষণ দেখা গেলেই হুট করে কোনো ঔষধ সেবন করলে ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সর্দি-কাশির ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন—

  • ঔষধ সেবনের আগে সেটির গায়ে লাগানো লেবেল দেখে নিবেন। ঔষধের সাথে থাকা নির্দেশনাগুলো মেনে চলবেন
  • অনেক সর্দি-কাশির ঔষধের মধ্যে ব্যথানাশক ঔষধের উপাদান থাকে, যেমন প্যারাসিটামল, আইবুপ্রফেন ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে আলাদা করে ব্যথানাশক ব্যবহার করলে ঔষধের মাত্রা ক্ষতিকর পর্যায়ে চলে যেতে পারে
  • গর্ভাবস্থায় অনেক ঔষধ সেবন করাই মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গর্ভবতী মায়েদের যেকোনো ঔষধ সেবন করা থেকে বিরত থাকা উচিত
  • দুই বছরের ছোটো শিশুদের সর্দি-কাশির জন্য কোনো ঔষধ দেওয়া উচিত নয়
  • শিশুদের অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ দেওয়া উচিত নয়

অ্যান্টিবায়োটিক কেন নয়?

সর্দি-কাশি ও ফ্লু এর চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর নয়। কারণ সর্দি-কাশি ও ফ্লু ভাইরাস বাহিত রোগ। আর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে নয়। তাই অযথা অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে অন্যান্য জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

উল্লেখ্য, ফ্লু এর চিকিৎসায় ক্ষেত্রবিশেষে অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ ব্যবহৃত হতে পারে। ডাক্তার আপনার লক্ষণের ওপর ভিত্তি করে ঔষধ সেবন করতে হবে কি না সেটি নির্ধারণ করবেন।

যখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে

নিচের লক্ষণগুলো দেখা গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে—

  • ফ্লু এর ক্ষেত্রে সাত দিনের বেশি এবং সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে লক্ষণ থাকলে
  • তিন মাসের কম বয়সী শিশুর জ্বর আসলে অথবা খুব নিস্তেজ হয়ে পড়লে, কিংবা যেকোনো বয়সী শিশুকে নিয়ে শঙ্কা থাকলে
  • বয়স ৬৫ বছরের বেশি হলে কিংবা গর্ভবতী হলে
  • দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে। যেমন: ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি রোগ ও ফুসফুসের রোগ
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এমন চিকিৎসা নিলে। যেমন: কেমোথেরাপি ও লম্বা সময় ধরে স্টেরয়েড সেবন
  • অনেক জ্বর আসলে অথবা জ্বরের সাথে কাঁপুনি থাকলে

যেসব লক্ষণ দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা নিতে হবে—

শিশুদের ক্ষেত্রে

  • খিঁচুনি
  • ঠোঁট ও মুখ নীল হয়ে যাওয়া
  • পানিশূন্যতা। এর কিছু লক্ষণ হলো—৮ ঘন্টায় একবারও প্রস্রাব না হওয়া, মুখ শুকিয়ে যাওয়া এবং কান্না করলে চোখে পানি না আসা। ছোটো শিশুদের মাথার সামনের দিক বসে যেতে পারে
  • সজাগ অবস্থাতেও পুরোপুরি সচেতন না থাকা এবং অন্যদের সাথে না মেশা
  • দ্রুত শ্বাস নেওয়া অথবা শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে পাঁজরের হাড় ভেতরে ঢুকে যাওয়া
  • বুকে ব্যথা
  • মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা। ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে শিশু হাঁটাচলা করতে চায় না
  • জ্বর ১০৪° ফারেনহাইট এর ওপরে চলে যাওয়া

প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে

  • শ্বাসকষ্ট
  • বুকে অথবা তলপেটে ক্রমাগত ব্যথা অথবা চাপ চাপ লাগা
  • ক্রমাগত মাথা ঘোরানো, বিভ্রান্তি ও ঝিমুনি
  • খিঁচুনি
  • প্রস্রাব না হওয়া
  • মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা
  • প্রচণ্ড দুর্বলতা ও অস্থিরতা
  • কাশির সাথে রক্ত যাওয়া

এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদী অন্যান্য রোগের লক্ষণগুলো বেড়ে গেলে, জ্বর-কাশি কিছুটা কমার পরে আবার ফিরে আসলে, অথবা হঠাৎ করে লক্ষণগুলো বেড়ে গেলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

ফ্লু ও সাধারণ সর্দি-কাশি প্রতিরোধের উপায়

এই রোগগুলো সহজেই একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে। তবে সহজ কিছু পদক্ষেপ দিয়ে তা ঠেকানো সম্বব। ফ্লু এর ক্ষেত্রে প্রথম পাঁচ দিনে ইনফেকশন ছড়ানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণগুলো পুরোপুরি সেরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অন্যদের মধ্যে জীবাণু ছড়াতে পারে।

পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে রোগ ছড়ানো প্রতিরোধ

  1. সম্ভব হলে কাজ থেকে ছুটি নিয়ে নিজের ঘরে থাকুন। মানুষের সংস্পর্শে আসা হতে বিরত থাকুন।
  2. ফ্লু হলে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর অন্তত ২৪ ঘন্টা পার হওয়ার আগে পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। এক্ষেত্রে জ্বর কমানোর ঔষধ খাওয়া ছাড়াই জ্বর চলে যাওয়া উচিত।
  3. সুস্থ হওয়ার আগে পর্যন্ত জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। কারও সাথে হ্যান্ডশেক অথবা কোলাকুলি করা থেকে বিরত থাকুন। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন।
  4. হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময়ে অন্যদের থেকে দূরে সরে যান এবং টিস্যু দিয়ে নাক ও মুখ ঢাকুন। ব্যবহারের পর টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিন। হাতের কাছে টিস্যু না থাকলে কনুই এর ফাঁকে হাঁচি-কাশি দিন। হাঁচি-কাশি দিয়ে সাথে সাথে হাত ধুয়ে ফেলুন।
  5. দরজার হাতল, মোবাইল ফোন ও শিশুদের খেলনার মতো দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য জিনিসগুলো কিছুক্ষণ পর পর জীবাণুমুক্ত করুন।
  6. বারবার সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন।

ফ্লু ও সর্দি-কাশি থেকে সুরক্ষা

ফ্লু ও সর্দি-কাশি রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে নিচের পাঁচটি উপায় অবলম্বন করুন—

  1. নিয়মিত কুসুম গরম পানি ও সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করুন। যদি পানি-সাবান হাতের কাছে না থাকে, অ্যালকোহল জাতীয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন।
  2. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। না হলে ভাইরাস শরীরে ঢুকে ইনফেকশন করতে পারে।
  3. অসুস্থ মানুষের সংস্পর্শ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। তাদের ব্যবহৃত জিনিস ও বাসনপত্রও ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
  4. ব্যায়াম করুন ও সুস্থ জীবনধারা মেনে চলুন।
  5. সাধারণ সর্দি-কাশির কার্যকর ভ্যাকসিন নেই। তবে নিয়মিত ফ্লু এর ভ্যাকসিন নেওয়ার মাধ্যমে ফ্লু রোগটি প্রতিরোধ করা যায়। প্রয়োজনবোধে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফ্লু ভ্যাকসিন নিতে পারেন।

রোগ পরবর্তী জটিলতা

সর্দি-কাশি সাধারণত ৭–১০ দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম কিংবা অ্যাজমার মতো শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগ আছে, তাদের সাধারণ সর্দি-কাশি থেকেও নিউমোনিয়ার মতো জটিলতায় ভোগার সম্ভাবনা থাকে।

অন্যদিকে ফ্লু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে নিউমোনিয়াসহ নানান জটিলতা হতে পারে। এমনকি কিছু জটিলতা থেকে মৃত্যু হতে পারে।

ফ্লু এর জটিলতার মধ্যে রয়েছে—

  • নিউমোনিয়া
  • সাইনোসাইটিস
  • কানের ইনফেকশন
  • হার্টের প্রদাহ বা মায়োকার্ডাইটিস
  • ব্রেইনে প্রদাহ বা এনসেফালাইটিস
  • মাংসপেশির প্রদাহ
  • ফুসফুস ও কিডনির মতো একাধিক অঙ্গের কাজ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়া
  • গুরুতর ইনফেকশন থেকে শরীরে ‘সেপসিস’ নামক জীবনঘাতী প্রতিক্রিয়া তৈরি হওয়া

এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফ্লু হলে সেটি রোগের তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে। যেমন, অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের অ্যাজমার অ্যাটাক হতে পারে এবং হার্টের রোগীদের অবস্থার অবনতি হতে পারে।

যাদের জন্য ফ্লু বেশী ঝুঁকিপূর্ণ

যে কেউই ফ্লুতে আক্রান্ত হতে পারেন এবং ফ্লু সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগতে পারেন। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ফ্লু হওয়ার পর ভোগার সম্ভাবনা বেশি। যেমন—

  • ৬৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তি
  • গর্ভবতী নারী
  • পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু
  • ইতোমধ্যে কোনো রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তি

এমন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ফ্লু এর ভ্যাক্সিন নিতে পারেন। আর ফ্লু থেকে বাঁচার উপায়গুলো মেনে চলবেন।