গর্ভে বেশিরভাগ শিশুই ডেলিভারির আগে মাথা নীচের দিকে এবং পা ওপরের দিকে দিয়ে রাখে।[১] এই অবস্থানে থাকলে নরমাল ডেলিভারি করা অনেকটা সহজ হয়।[২] এই অবস্থানকে ডাক্তারি ভাষায় ‘সেফালিক’ প্রেজেন্টেশন বা পজিশন বলা হয়।
তবে কিছু ক্ষেত্রে শিশু গর্ভে এর উল্টো পজিশনে, অর্থাৎ নিতম্ব অথবা পা নিচে ও মাথা ওপরের দিকে দিয়ে থাকে। এই উল্টো অবস্থানকে ডাক্তারি ভাষায় ‘ব্রিচ’ পজিশন বলা হয়। এমন হলে শিশুর ডেলিভারির জন্য বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন হতে পারে। এই আর্টিকেলে ব্রিচ এর কারণ, চেনার উপায়, ঝুঁকি ও করণীয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
ব্রিচ পজিশন কতটা কমন?
গর্ভে ৩৯ সপ্তাহ পূর্ণ করে জন্মগ্রহণ করা শিশুদের ‘ফুল টার্ম’ বলা হয়। এমন প্রতি ১০০টি শিশুর মধ্যে ৩–৪টি শিশুর ক্ষেত্রে ব্রিচ পজিশন দেখা যায়।[৩] এই সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের ক্ষেত্রে ব্রিচ পজিশনে জন্মানোর প্রবণতা আরও বেশি।[৪]
যেমন, গর্ভাবস্থার ৩২ সপ্তাহে জন্মানো ১০০টা শিশুর মধ্যে ৭টা শিশুর ব্রিচ পজিশনে জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে। ২৮ সপ্তাহ বা এর আগে জন্মানো শিশুদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৫ শতাংশে, মানে প্রতি ৪ জনে ১ জন শিশু ব্রিচ পজিশনে জন্মায়।
আবার আগের গর্ভাবস্থায় শিশু ব্রিচ প্রেজেন্টেশন নিয়ে জন্মালে মায়ের পরবর্তী গর্ভাবস্থাতেও শিশুর ব্রিচ প্রেজেন্টেশনে জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে। প্রথম শিশুর ডেলিভারি ব্রিচ প্রেজেন্টেশন হলে দ্বিতীয় গর্ভধারণে ব্রিচ প্রেজেন্টেশন হবার সম্ভাবনা থাকে প্রায় ১০ শতাংশ। যেটি আবার তৃতীয় গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ শতাংশে।[৫]
এ ছাড়া আগের গর্ভাবস্থায় সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে শিশুর ডেলিভারি হয়ে থাকলে, সেক্ষেত্রেও পরবর্তী গর্ভাবস্থায় ব্রিচ প্রেজেন্টেশনের সম্ভাবনা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়।[৬]
শিশুর ব্রিচ অবস্থানের কারণ
ব্রিচ পজিশনের কারণ সবসময় জানা যায় না। তবে নিচের ঘটনাগুলো শিশুর ব্রিচ পজিশনের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে[৭]—
- আপনি আগে কখনো গর্ভধারণ করে থাকলে
- আপনার গর্ভে জমজ বা একাধিক সন্তান থাকলে
- আপনার গর্ভে শিশুকে ঘিরে থাকা ‘অ্যামনিওটিক ফ্লুইড’ নামক তরল পরিমাণে বেশি বা কম হলে
- আপনার জরায়ুর আকার অস্বাভাবিক হলে কিংবা জরায়ুতে অস্বাভাবিক কোনো বৃদ্ধি থাকলে (যেমন: ফাইব্রয়েড)
- আপনার জরায়ুমুখ প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল দিয়ে আংশিক বা পুরোপুরি ঢেকে গেলে। ডাক্তারি ভাষায় একে প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বলে
- গর্ভের শিশু প্রিটার্ম বা অপরিণত অবস্থায়, অর্থাৎ গর্ভকালীন ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগে জন্মগ্রহণ করলে
- আগে কখনো সিজার হয়ে থাকলে কিংবা আগের কোনো শিশুর ব্রিচ ডেলিভারির ইতিহাস থাকলে[৮]
শিশু ব্রিচ পজিশনে আছে কি না কিভাবে বুঝবেন
গর্ভে শিশু কোন অবস্থানে আছে সেটা আপনার জন্য বোঝা কঠিন হতে পারে। তাই শিশু ডেলিভারির জন্য সঠিক অবস্থানে আছে কি না জানতে নিয়মিত গর্ভকালীন চেকআপে যাবেন। চেকআপের সময়ে ডাক্তার আপনার পেটে হাত রেখে পরীক্ষা করবেন। এভাবে শিশু ব্রিচ পজিশনে থাকলে তিনি সেটা বুঝতে পারবেন।
ডাক্তার মূলত আপনার পেটের বিভিন্ন জায়গায় আলতো চাপ দিয়ে গর্ভে শিশুর অবস্থান বোঝার চেষ্টা করবেন। এভাবে তিনি আপনার পেটের ভেতর শিশুর মাথা, পিঠ, পা ও নিতম্বের অবস্থান খুঁজে বের করবেন। ব্রিচ পজিশনে থাকলে শিশুর মাথা ওপরের দিকে এবং নিতম্ব ও/অথবা পা নিচের দিকে থাকবে। শিশুর পিঠ আপনার শরীরের যেকোনো একপাশে ঘুরানো থাকবে। এর সাথে ডাক্তার পেলভিক (যোনিপথে হাত ঢুকিয়ে) পরীক্ষা করতে পারেন।
শিশু ব্রিচ পজিশনে আছে কি না সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে ডাক্তার আপনাকে আল্ট্রাসাউন্ড করানোর পরামর্শ দিবেন।[৯]
শিশু ব্রিচ পজিশনে থাকলে করণীয়
গর্ভের শিশু যদি ৩৬তম সপ্তাহের পরও ব্রিচ পজিশনে থাকে, তাহলে ডাক্তার নিচের বিষয়গুলো নিয়ে আপনার সাথে আলোচনা করবেন—
- ব্রিচ পজিশন পরিবর্তন করে গর্ভের শিশুকে স্বাভাবিক (সেফালিক) অবস্থানে আনা। এই পদ্ধতির ডাক্তারি নাম এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন। এক্ষেত্রে ডাক্তার পেটে বিশেষ পদ্ধতিতে আলতোভাবে চাপ দিয়ে গর্ভের শিশুকে ঘোরানোর চেষ্টা করেন। এভাবে শিশুর মাথা নিচে ও পশ্চাৎদেশ ওপরে—এমন অবস্থানে আনার চেষ্টা করা হয়। ডাক্তার আপনার সাথে এই পদ্ধতির সুবিধা-অসুবিধা ও ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করবেন।
- পরিকল্পিত ব্রিচ ডেলিভারি করানো। এক্ষেত্রে ডাক্তার নরমাল ডেলিভারির মতো করে মাসিকের রাস্তা দিয়ে ব্রিচ পজিশনের শিশুর ডেলিভারি নিয়ে কথা বলবেন।
- পরিকল্পিত সিজারিয়ান অপারেশন করানো। এক্ষেত্রে ডাক্তার প্রসববেদনা ওঠার আগেভাগেই আপনার সাথে শিশুকে সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি করানো নিয়ে আলোচনা করবেন। পরিকল্পিত ব্রিচ ডেলিভারির তুলনায় এক্ষেত্রে সাধারণত জটিলতার সম্ভাবনা কম থাকে।[১০][১১] বেশিরভাগ ব্রিচ শিশুর ডেলিভারির জন্য এই পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়।
একটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরি—ব্রিচ পজিশনে থাকা শিশুকে নরমাল পদ্ধতিতে ডেলিভারি করানোর সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে, এমনকি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সিজার করানোর প্রয়োজন হতে পারে। তাই এই বিষয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন।
শিশুকে ব্রিচ পজিশন থেকে স্বাভাবিক অবস্থানে আনার উপায়
গর্ভকালীন ৩৬তম সপ্তাহেও শিশু ব্রিচ অবস্থানে থাকলে ডাক্তার একটা বিশেষ পদ্ধতির সাহায্যে শিশুকে নরমাল ডেলিভারির উপযোগী অবস্থানে আনার চেষ্টা করতে পারেন। ডাক্তারি ভাষায় এর নাম ‘এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন’। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রিটার্ম ডেলিভারি বা অকাল প্রসবের ঝুঁকি এড়াতে গর্ভকালীন ৩৭ সপ্তাহে বা তারপরে এই পদ্ধতি চেষ্টা করা হয়।
এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন চেষ্টা করার আগে ডাক্তার পদ্ধতিটি আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ কি না সেটি বিবেচনা করবেন। সেই অনুযায়ী পদ্ধতিটির সুবিধা-অসুবিধা ও ঝুঁকি সম্পর্কে আপনার সাথে আলোচনা করে নিবেন।
এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন পদ্ধতি
এক্ষেত্রে গর্ভবতীর পেটে চাপ দিয়ে দিয়ে গর্ভের শিশুকে নরমাল ডেলিভারির জন্য উপযুক্ত পজিশনে আনা হয়। অর্থাৎ মাথা নিচে ও পা ওপরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পদ্ধতিটি প্রায় ৫০% ক্ষেত্রেই সফল হয়।
এটা একটা নিরাপদ প্রক্রিয়া, এতে পেট কাটার বা কোনো অপারেশন করার প্রয়োজন হয় না। তবে শিশুকে ঘোরানোর সময়ে কিছুটা অস্বস্তি লাগতে পারে।
এক্ষেত্রে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে—এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন অবশ্যই হাসপাতালে বা অভিজ্ঞ গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করাতে হবে। যেন মা অথবা শিশুর কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।[১২] এটা সচরাচর ডেলিভারি রুম বা অপারেশন থিয়েটারের কাছেই করানো হয়, যেন প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে সিজার করিয়ে মা ও শিশুকে সুস্থ রাখা যায়।[১৩]
নিচে পদ্ধতিটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে[১৪]—
- এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন করার আগে আপনার শিশু আসলেই ব্রিচ পজিশনে আছে কি না, সেটা নিশ্চিত করতে সাধারণত একটা আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা হবে। এর পাশাপাশি আপনার হার্টবিট ও রক্তচাপ পরীক্ষা করে নেওয়া হবে। শিশুর হার্টবিটও দেখে নেওয়া হবে।
- সাধারণত পদ্ধতির শুরুতে আপনার জরায়ুকে হালকা রিল্যাক্স বা শিথিল করার জন্য একটা ইনজেকশন দেওয়া হবে, যা আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ। ইনজেকশনটা দেওয়ার পর কিছুক্ষণের জন্য আপনার হার্টবিট সামান্য বেড়ে যেতে পারে, রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে হালকা গরম লাগতে পারে। এগুলো সাময়িক, কিছুক্ষণ পরেই চলে যায়।
- এরপর ডাক্তার আপনার পেটে হাত রাখবেন। এসময়ে হাতের সাহায্যে আপনার পেটের ওপর হালকা চাপ দিয়ে গর্ভের ভেতরে শিশুর অবস্থান পরিবর্তনের চেষ্টা করা হবে। এক্ষেত্রে ২ জন মানুষ দরকার হতে পারে।
- এসময়ে আপনার অস্বস্তি হতে পারে, কখনো সখনো কিছুটা ব্যথা লাগতে পারে। তবে পদ্ধতিটা কয়েক মিনিটের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যায়। আপনার ব্যথা হতে থাকলে ডাক্তার প্রক্রিয়াটা থামিয়ে দিবেন।
- মনিটরিং এর মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শুরু হবার আগে ও পরে শিশুর হার্টরেট চেক করা হবে৷ শিশুর হার্টরেটে যদি কোনো সমস্যা বা যেকোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, তাহলে সাথে সাথে এই প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে।
- পদ্ধতিটা শেষ হওয়ার পর সাধারণত আরেকবার আল্ট্রাসাউন্ড করে দেখে নেওয়া হবে যে গর্ভের শিশু সঠিক পজিশনে এসেছে কি না।[১৫]
- আপনার রক্তের গ্রুপ যদি নেগেটিভ হয় (যেমন: এ নেগেটিভ বা A -ve, বি নেগেটিভ বা B -ve, ও নেগেটিভ বা O -ve কিংবা এবি নেগেটিভ বা AB -ve), তাহলে এক্সটারনাল সেফালিক ভারসন করার পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ‘অ্যান্টি ডি’ নামের একটি ইনজেকশন নেওয়ার এবং বিশেষ একটা রক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।[১৬]
এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসনের পর নিচের কোনো লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন—-
- যোনিপথে রক্তপাত হলে
- পেটে ব্যথা হলে
- পেটে টান, খিচ বা কনট্র্যাকশন অনুভব করলে
- গর্ভের শিশুর নড়াচড়া কমে গেছে মনে হলে
কখন এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন করা যাবে না
নিচের ক্ষেত্রগুলোতে এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসন করা হয় না[১৭][১৮][১৯][২০]—
- গর্ভে একের অধিক শিশু থাকলে
- ব্রিচ ছাড়া অন্য কোনো কারণে সিজারের প্রয়োজন হলে
- সম্প্রতি মাসিকের রাস্তায় রক্তপাত হলে
- গর্ভের শিশুর CTG বা হার্টবিটের পরীক্ষায় অস্বাভাবিকতা থাকলে
- গর্ভের শিশুর কোনো স্বাস্থ্য জটিলতা থাকলে
- আপনার প্রজননতন্ত্রের নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা থাকলে
- গর্ভফুলের অবস্থান অস্বাভাবিক হলে অথবা গর্ভফুল জরায়ুর প্রাচীর থেকে ছিঁড়ে আসলে (ডাক্তারি নাম প্লাসেন্টাল এবরাপশন)
- ইতোমধ্যে প্রসব প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে বা পানি ভেঙে গেলে
এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসনের জটিলতা
এক্সটার্নাল সেফালিক ভারসনে সাধারণত তেমন জটিলতা সৃষ্টি হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে[২১][২২][২৩]—
- সত্যিকার প্রসব শুরু হওয়ার আগেই পানি ভাঙা
- ইমারজেন্সি সিজারের প্রয়োজন হওয়া
- শিশুর হার্টরেটে সাময়িক অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসা
- প্লাসেন্টাল এবরাপশন—শিশু প্রসব হওয়ার আগেই জরায়ু থেকে গর্ভফুল ছিঁড়ে আসা
- যোনিপথে রক্তপাত হওয়া
- অকাল প্রসব হওয়া
- গর্ভের শিশুর নাড়ি প্রসবের রাস্তায় বেরিয়ে আসা
- বিরল কিছু ক্ষেত্রে মৃতপ্রসব হওয়া
ঘরোয়া পদ্ধতি
অনেকে মনে করেন কিছু নির্দিষ্ট অবস্থানে শুয়ে অথবা বসে থাকলে, কিংবা কোনো বিশেষ টোটকা ব্যবহারে শিশু ব্রিচ পজিশন থেকে স্বাভাবিক অবস্থানে চলে আসবে।
যেমন, কেউ কেউ হয়তো শুনে থাকবেন বিছানায় হামাগুড়ি দিলে, বেশি করে হাঁটলে, পেটের মধ্যে টর্চ লাইটের আলো ফেললে কিংবা কমলা লেবুর শরবত খেলে ব্রিচ শিশুর পজিশন স্বাভাবিক হয়ে যায়।
তবে এসবের পক্ষে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই যেকোনো ধরনের পদ্ধতি চেষ্টা করার আগে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে তা আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ কি না তা বুঝে নিন।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
ব্রিচ শিশুর নরমাল ডেলিভারির ক্ষেত্রে শিশুর মাথা সবার পরে বের হয়। একারণে শিশুর দেহের বাকি অংশ প্রসবের রাস্তাকে যথেষ্ট প্রসারিত করতে ব্যর্থ হলে শিশুর মাথা অথবা কাঁধ প্রসবের রাস্তায় আটকে যেতে পারে। এতে ডেলিভারিতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। মাথায় ও জয়েন্টে আঘাত লাগতে পারে৷ কিছু ক্ষেত্রে ফরসেপের মতো ডেলিভারির বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হতে পারে।
এর পাশাপাশি শিশুর ডেলিভারির আগেই তার নাড়ি বা আম্বিলিকাল কর্ড আপনার প্রসবের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। এতে নানান কারণে নাড়িতে চাপ পরার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সেখান থেকে শিশুর শরীরে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যেতে পারে।[২৪] ফলে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
আপনার যদি জমজ শিশু হয় এবং তাদের মধ্যে প্রথম, অর্থাৎ জরায়ুমুখের কাছাকাছি থাকা শিশুর ব্রিচ প্রেজেন্টেশন হয়, তাহলে ডাক্তার সাধারণত পরিকল্পিত সিজার করানোর পরামর্শ দিবেন। তবে আপনার প্রথম শিশুর মাথা যদি নিচের দিকে থাকে, তাহলে ডাক্তার নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করতে পারেন। কারণ প্রথম শিশুর নরমাল ডেলিভারির পর দ্বিতীয় শিশু নড়াচড়ার জন্য কিছুটা জায়গা পাবে। এতে করে সে নিজে থেকেই সেফালিক অবস্থানে চলে আসতে পারে। প্রয়োজনে ডাক্তারও তাকে সেফালিক অবস্থানে আনতে সাহায্য করতে পারেন।[২৫]
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্রিচ পজিশনের শিশুদের জন্মের পর দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমস্যা হয় না। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, যেসব শিশু গর্ভকালীন শেষ তিন মাসে ব্রিচ পজিশনে থাকে, তাদের জন্মের পর ‘ডেভেলপমেন্টাল হিপ ডিসপ্লাসিয়া’ নামের জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।[২৬] এতে শিশুর কোমরের নিচের অংশের বা নিতম্বের জয়েন্টগুলো ঠিকমতো তৈরি হয় না। তাই ডেলিভারির পর শিশুকে ডাক্তার দেখিয়ে এবং সেই অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। সমস্যা ধরা পড়লে শিশুকে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে।[২৭]
এক্সটারনাল সেফালিক ভারসন প্রায় অর্ধেকের বেশি ক্ষেত্রেই সফল হয়৷[২৮] এ সম্ভাবনা বেড়ে যায় যদি আপনার আগে নরমাল ডেলিভারি বা যোনিপথে ডেলিভারি হয়ে থাকে।[২৯] তবে কখনো কখনো সফলভাবে এক্সটারনাল সেফালিক ভারসন করার পরও শিশু পুনরায় ব্রিচ পজিশনে চলে যেতে পারে।[৩০]
এক্সটারনাল সেফালিক ভারসন যদি প্রথমবারে সফল না হয়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসক আপনার জন্য উপযোগী বাকি অপশন/পদ্ধতিগুলো নিয়েও আলোচনা করতে পারেন। প্রথম চেষ্টায় সফল না হলে কয়েকদিন পর আবার এক্সটারনাল সেফালিক ভারসন করার চেষ্টা করা যেতে পারে।[৩১]
এক্সটারনাল সেফালিক ভারসন সাধারণত আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য একটি নিরাপদ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে জটিলতার হার খুবই কম। পদ্ধতিটা দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং সাধারণত একই দিনেই বাড়ি ফেরা যায়।[৩২] তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে, যেমন প্রতি ২০০ জনে ১ জনের এক্সটারনাল সেফালিক ভারসন করানোর পর পরই জরুরি ভিত্তিতে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ডেলিভারি করানোর প্রয়োজন হতে পারে।[৩৩] তাই এই পদ্ধতিটি সবসময় হাসপাতালে চেষ্টা করা উচিত, যাতে প্রয়োজনে ইমারজেন্সি সিজারিয়ান সেকশন করা যায়।