ডেলিভারির পর প্রসবের রাস্তার যত্ন

ডেলিভারির সময়ে আপনার শরীরের, বিশেষ করে প্রসবের রাস্তার ওপর অনেক ধকল যায়। তাই ডেলিভারির পর শরীরের সঠিক যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এ সম্পর্কে সহজ কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালে ডেলিভারি হলে আপনার ছুটির কাগজে বা ছাড়পত্রে এই সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া থাকবে। সেগুলোও মেনে চলবেন। সেই সাথে প্রসবের পরে শিডিউল অনুযায়ী অন্তত ৪ বার ডাক্তার দেখান।

রক্তস্রাব ও প্যাড ব্যবহার

প্রসবের পর প্রথম কিছুদিন যোনিপথে রক্তমিশ্রিত স্রাব যেতে পারে। এসময়ে আরামদায়ক স্যানিটারি প্যাড বা ম্যাটারনিটি প্যাড ব্যবহার করুন। উল্লেখ্য, ট্যামপন বা যোনিপথে ঢোকাতে হয় এমন পণ্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ তা ইনফেকশন ঘটাতে পারে।

ভারী রক্তপাত হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ঘন্টায় দুইটা প্যাড যদি রক্তে ভরে যায়, আর ১–২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে এমন রক্তপাত চলতে থাকে, তাহলে সেটাকে ভারী রক্তপাত হিসেবে ধরা হয়। বিশেষ করে ভারী রক্তপাতের সাথে জ্বর, তলপেটে ব্যথা অথবা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব গেলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটি কোনো ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।

সহবাস

কতদিন পর সহবাস করতে পারবেন সেই বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অনেক ডাক্তার দেড় মাস বা ছয় সপ্তাহ সহবাস থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। শরীরকে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট বিরতি না দিয়ে ডেলিভারির পর খুব তাড়াতাড়ি সহবাস করলে ইনফেকশন হতে পারে।

ভারী কাজ

ডেলিভারির পর সাধারণত দেড় মাস ভারী কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে হালকা থেকে মাঝারি তীব্রতার শরীরচর্চা করতে সাধারণত কোনো বাধা নেই।

ব্যথা

যোনিপথে বা সেলাই এর জায়গায় ব্যথা থাকলে বরফের সেক লাগাতে পারেন। এজন্য একটা ছোটো তোয়ালে বা কাপড়ের টুকরায় বরফ পেঁচিয়ে নিন। এ ছাড়া একটা বড় গামলায় কুসুম গরম পানি নিয়ে তার ওপর ৩–৫ মিনিট ধরে বসে থাকতে পারেন। এভাবে গরম পানির সেঁক নিলে আপনার আরাম লাগতে পারে।

এতেও ব্যথা না কমলে ব্যথানাশক হিসেবে প্যারাসিটামল অথবা আইবুপ্রোফেন বেছে নিতে পারেন। এগুলো ‘ওভার দা কাউন্টার’ ঔষধ। ওভার দা কাউন্টার ঔষধগুলো ফার্মেসি থেকে কিনে সাথে থাকা নির্দেশিকা অনুযায়ী সেবন করা নিরাপদ। তবে আপনার আগে থেকে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে কিংবা এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিন। এ ছাড়া কাটা স্থানে ডাক্তারের পরামর্শে ব্যথা কমানোর বা অবশ করার জেল ব্যবহার করতে পারেন।

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালেও প্যারাসিটামল ও আইবুপ্রোফেন সেবন করা যায়। তবে সাধারণত অ্যাসপিরিন ও কোডেইন জাতীয় ঔষধ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য

কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে নিয়মিত বেশি বেশি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ও পানি খাবেন। এর পাশাপাশি পায়খানা নরম করতে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ইসবগুলের ভুসি অথবা ল্যাকটুলোজ জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন।

সেলাই এর যত্ন

ডেলিভারির সময়ে যোনির সাইড কাটা হলে সেলাই এর জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। প্রতিবার পায়খানা-প্রস্রাব করার পর জায়গাটা ভালোমতো ধুয়ে টিস্যু অথবা একটা পরিষ্কার শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন।

প্রস্রাব

ডেলিভারির পরে কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ হাঁচি, কাশি ও হাসির সময়ে কিছুটা প্রস্রাব বেরিয়ে কাপড় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এটা সাধারণত সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যায়। এই সমস্যা মোকাবেলায় প্যাড ব্যবহার করুন। পেলভিক ফ্লোরের ব্যায়াম বা কেগেল ব্যায়াম করুন—এটা প্রস্রাব ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে।

ডাক্তারের সাক্ষাৎ

নিচের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি—

  • যোনিপথে ব্যথা না কমা কিংবা একটানা ব্যথা
  • ডেলিভারির প্রথম কয়েকদিনের পরেও ভারী রক্তস্রাব
  • দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব
  • জ্বর
  • শরীর কাঁপুনি
  • তীব্র পেট ব্যথা
  • পায়ে ব্যথা হওয়া অথবা ফুলে যাওয়া
  • শ্বাসকষ্ট অথবা কাশি
  • খিঁচুনি অথবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
  • প্রস্রাব ছুটে যাওয়া
  • প্রস্রাবের সময়ে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হওয়া

এগুলো ইনফেকশন, এক্লাম্পসিয়া অথবা রক্ত জমাট বাঁধার মতো জটিলতার লক্ষণ হতে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসবের চিকিৎসা করা উচিত। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করালে এসব জটিলতা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।