গর্ভাবস্থায় পেটের আকার স্বাভাবিকভাবেই অনেকখানি বেড়ে যায়। গর্ভের শিশুকে জায়গা দেওয়ার জন্য পেটের চামড়াও অনেক প্রসারিত হয়। ফলে ডেলিভারির পরও মায়ের পেটের আকার বড় থেকে যায়। সময়ের সাথে এটি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে।
শরীরকে দ্রুত গর্ভধারণের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার খাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাথে শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ালে সেটাও ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।[১][২]
অনেকের জন্য জন্মদানের পর পেট কমানো একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া হতে পারে। সময়ের সাথে পেট ও পুরো শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এই সময়ে নিজের শারীরিক দুর্বলতার কথা মাথায় রেখে ধৈর্য সহকারে নিজের যত্ন নিতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম
ডেলিভারির পর পেট কমানোর প্রস্তুতি হিসেবে গর্ভাবস্থা থেকেই নিয়মিত শরীরচর্চা করা উচিত। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গর্ভাবস্থায় শরীরচর্চা করলে নারীরা সন্তান প্রসবের পরে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।[৩] এতে ওজন কমিয়ে গর্ভধারণের আগের ওজনে ফিরে যাওয়া সহজ হয়।[৪] শুধু তাই নয়, এটি প্রসব-পরবর্তী বিষণ্ণতা বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
পড়ুন: গর্ভাবস্থায় যেসব ব্যায়াম করা নিরাপদ
প্রসবের পর নতুন শিশুর যত্ন, সেই সাথে প্রসবের ধকল—এমন অবস্থায় হয়তো আপনার ক্লান্ত লাগবে, ব্যায়াম করতে ইচ্ছা করবে না। কিন্তু এসময়ে ব্যায়াম করলে তা আপনার শরীরকে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে সাহায্য করবে। শরীরকে দ্রুত ফিট করে তুলতে, শক্তি বাড়াতে এবং মানসিক প্রশান্তি দিতে সাহায্য করবে।
ডেলিভারির সময়ে বিশেষ জটিলতা না হয়ে থাকলে আপনি যখন ইচ্ছে হবে তখন থেকেই হালকা ব্যায়াম করতে পারবেন। হঠাৎ করেই অনেক বেশি কসরত করার প্রয়োজন নেই। হাঁটাহাঁটি, পেটের পেশি শক্তিশালী করে তোলার ব্যায়াম ও পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজের মতো হালকা ব্যায়াম দিয়ে শুরু করতে পারেন। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের পরিমাণ ও তীব্রতা বাড়ান।
সাধারণত ডেলিভারির পর প্রথম ৬ সপ্তাহ দৌড়ঝাঁপ বা ভারী কোনো ব্যায়াম না করাই ভালো। শরীর সচল রাখা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু শরীরের ওপর অতিরিক্ত ধকল নিয়ে নিজেকে ক্লান্ত করে ফেলবেন না। শরীরের অবস্থা অনুযায়ী ঠিক কোন ধরনের ব্যায়াম আপনার জন্য উপযোগী হবে—তা জানতে প্রসব-পরবর্তী চেকআপের সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সঠিক পরিমাণে সুষম খাবার খাওয়া
প্রসবের পর স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রেখে পেট কমানোর সম্ভাবনা বাড়াতে পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পাশাপাশি সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
প্রতিদিন অন্তত ৪০০ গ্রাম টাটকা অথবা ফ্রোজেন ফল ও শাকসবজি খাবেন। সেই সাথে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মাছ খাবেন। সাদা চাল ও সাধারণ আটা-ময়দার পরিবর্তে লাল চাল ও লাল আটা বেছে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
ওজন অতিরিক্ত হলে এসময়ে সঠিক পরিমাণে খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত আধা ঘন্টা করে দ্রুত হাঁটা অথবা সাঁতার কাটার মতো ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন।
ওজন কমানোর জন্য ব্যক্তিগত গাইডলাইন পেতে ডাক্তার ও রেজিস্টার্ড নিউট্রিশনিস্ট এর পরামর্শ নিন। নিজে নিজে কোনো বিশেষ ডায়েট শুরু না করাই ভালো। এতে বুকের দুধের সরবরাহ কমে যেতে পারে। সেই সাথে শরীরে কোনো নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দিতে পারে।
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, শিশুকে একটানা অন্তত ৩ মাস নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ালে তা তুলনামূলকভাবে বেশি ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।[৫] অন্য এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গর্ভধারণের আগে ওজন অতিরিক্ত ছিল—এমন মায়েদের ওজন কমাতে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ানো বিশেষভাবে সাহায্য করে। ডেলিভারির পর শিশুকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ালে তা শিশুর পাশাপাশি আপনার স্বাস্থ্যের জন্যও সহায়ক হতে পারে।
যদি আপনি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান এবং উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন স্বাভাবিক সীমায় থাকে, তাহলে গর্ভাবস্থায় আলাদা করে কোনো ডায়েট অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই। এই সময়টায় মায়ের সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। সেই সাথে বিশেষভাবে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত তেল-চর্বি ও চিনি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
একটা বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, ডেলিভারির পর আগের অবস্থায় ফিরে আসতে একেকজনের একেক রকম সময় লাগতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো খুব তাড়াতাড়ি শরীরকে পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। তাই এটা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা না করে ধৈর্য ধরুন এবং সুস্থ জীবনধারা চালিয়ে যান।