সন্তান জন্মদানের পর পর মায়েরা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে খুব কমই ভাবেন। কিন্তু প্রসব পরবর্তী জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে সচেতন থাকা খুবই জরুরি।
একটি সন্তান জন্মদানের পর আরেকবার গর্ভধারণের জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা দুটি সন্তানের মাঝে কমপক্ষে ১৮ থেকে ২৪ মাসের বিরতির পরামর্শ দেন।
প্রসবের পর ১৮ মাসের কম বিরতিতে পুনরায় গর্ভধারণ করলে তা মা ও শিশুর উভয়ের জন্যই জটিলতা তৈরি করতে পারে বলে গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।[১][২][৩] এমনকি অকাল গর্ভপাত/মিসক্যারেজ কিংবা এবোরশন হয়ে থাকলেও পুনরায় গর্ভধারণের চেষ্টা করার আগে কমপক্ষে ৬ মাস অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।[৪]
প্রসবের কতদিন পর গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে?
অনেক মা মনে করেন ডেলিভারির কয়েক মাস বা সপ্তাহের মধ্যে গর্ভধারণের ঝুঁকি কম থাকে। তবে এটি পুরোপুরি সঠিক নয়। অনেকে আবার মনে করেন প্রসবের পর পিরিয়ড শুরু না হলে পুনরায় গর্ভধারণ হয় না। কিন্তু গর্ভধারণের জন্য পিরিয়ড ফিরে আসা জরুরি নয়।
আপনার দেহ সাধারণত পিরিয়ড শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগেই ডিম্বাণু নিঃসরণ করে। একে ডাক্তারি ভাষায় ওভুলেশন বলে। তাই পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগেও আপনি গর্ভধারণ করতে পারেন।[৫][৬]
যদি আপনি সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ান কিংবা বুকের দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা খাইয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ডেলিভারির এক মাসের মধ্যেই ওভুলেশন হতে পারে এবং প্রসবের ৬ সপ্তাহের মধ্যেই আপনি পুনরায় মা হতে পারেন।[৭]
তাই অপরিকল্পিত গর্ভধারণ এড়িয়ে চলতে প্রসব-পরবর্তী সহবাসের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি প্রয়োজন।
সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সাথে গর্ভধারণের সম্পর্ক
অনেক মা মনে করেন সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির প্রয়োজন হয় না। বিষয়টি সঠিক নয়। বুকের দুধ খাওয়ালে ওভুলেশন কিছুটা দেরিতে হলেও জন্মবিরতিতে এটি পুরোপুরি কার্যকর নয়।
নিচের তিনটি ক্ষেত্রে বুকের দুধ খাওয়ানো হলে পুনরায় গর্ভধারণের ঝুঁকি কম থাকে—
- আপনার পিরিয়ড যদি পুনরায় শুরু না হয়
- আপনি যদি সন্তানকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ান বা এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং করেন, অর্থাৎ ফর্মুলা বা অন্য কোনো ধরনের বাড়তি খাবার না দেন
- আপনার শিশুর বয়স যদি ৬ মাসের কম হয়
তারপরও অপরিকল্পিত গর্ভধারণের ঝুঁকি এড়াতে বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি যেকোনো একটি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করাটা নিরাপদ।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে পরিকল্পনা করবেন যখন
প্রসবের পর সহবাস শুরুর আগেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে পরিকল্পনা করে নিন। এমনকি আপনার গর্ভাবস্থার সময়েও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে কথা বলে রাখতে পারেন। অধিকাংশ মা গর্ভাবস্থার শেষে অথবা প্রসবের পর পর এটি নিয়ে আলোচনা করেন।
যদি হাসপাতালে আপনার ডেলিভারি হয় তাহলে হাসপাতাল থেকে বের হবার আগেই আপনার চিকিৎসকের সাথে এটি নিয়ে আলোচনা করে নিন।
এ ছাড়াও ডেলিভারির পরবর্তী চেকআপ এর সময়ই চিকিৎসক আপনাকে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করবে। সাধারণত প্রসবের ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর এ চেকআপটি হয়ে থাকে। তবে আপনি অন্য যেকোনো সময়ই এ নিয়ে আলোচনা করতে পারবেন।
ডেলিভারির পর যত দ্রুত সম্ভব এ নিয়ে আলোচনা করে নিন। আলোচনার সময় নিচের বিষয়গুলির দিকে লক্ষ্য রাখুন—
- আপনার পূর্ববর্তী গর্ভাবস্থার অভিজ্ঞতা
- আপনার ভবিষ্যৎ পরিবার পরিকল্পনা
- আপনার ও আপনার সঙ্গীর পছন্দ, অপছন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্য
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- আপনাদের কোনো শারীরিক সমস্যা অথবা রোগ যদি থেকে থাকে
কখন শুরু করবেন
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কখন থেকে শুরু করবেন সেটি নির্ভর করবে ব্যবহৃত পদ্ধতি, আপনার স্বাচ্ছন্দ্য, দৈনন্দিন জীবন এবং শারীরিক অবস্থার উপর।
দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতিগুলো সন্তান জন্মদানের পর পর ব্যবহার করতে পারেন। আবার কিছু পদ্ধতি (যেমন: কম্বাইন্ড জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি) ব্যবহার এর জন্য অন্তত ৬ সপ্তাহ অপেক্ষা করুন।
প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো আপনি ডেলিভারির পর ব্যবহার করতে পারেন—
- ব্যারিয়ার মেথড: পুরুষ ও মহিলা কনডম, স্পার্মিসাইড, ডায়াফ্রাম, সারভাইকাল ক্যাপ, স্পঞ্জ
- জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি: মিশ্র বড়ি, প্রজেস্টোরন বড়ি বা মিনিপিল। মিশ্র বড়ি সাধারণত ‘সুখী’ নামে পাওয়া যায়।[৮] আর সরকারিভাবে সরবরাহ করা প্রজেস্টোরন বড়ি ‘আপন’ নামে পাওয়া যায়৷[৯]
- জরায়ুতে পরার ইন্ট্রা ইউটেরাইন ডিভাইস: হরমোনের তৈরি বা কপারের তৈরি
ইমপ্ল্যান্ট
- ইনজেকশন: ডিপো, প্রোভেরা
- স্টেরিলাইজেশন বা স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি: পুরুষদের ভ্যাসেকটমি, নারীদের টিউবাল লাইগেশন
- প্রাকৃতিক পদ্ধতি: ল্যাকটেশনাল এমেনোরিয়া
উপরের সবগুলো পদ্ধতিই আপনি ডেলিভারির পর ব্যবহার করতে পারবেন। তবে প্রত্যেকটি পদ্ধতিরই আলাদা কার্যকারিতা ও ব্যবহারবিধি রয়েছে।
সন্তান জন্মদানের পর কি ইমারজেন্সি জন্মনিরোধক পিল খাওয়া যাবে?
আপনার যদি সন্তান জন্মদানের পর ইমারজেন্সি জন্মনিয়ন্ত্রণ এর প্রয়োজন হয়, আপনি নিচের পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করতে পারেন—
ইমারজেন্সি পিল: লেভোনোগ্যাস্ট্রল (LNG-ECP) নামের একটি পিল গ্রহণ করতে পারেন। এটিকে অনেকসময় ‘মর্নিং আফটার’ পিলও বলা হয়। এ ধরনের আরেকটি পিল হলো ‘ইউলিপ্রোস্টাল এসিটেট’ (UPA) পিল। সন্তানকে বুকের দুধ পান করালে এ পিল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
জরায়ুতে পরার কপার ডিভাইস: আপনি যদি আনপ্রোটেক্টেড বা নিয়ন্ত্রণবিহীন সহবাস করে থাকেন, সেক্ষেত্রে ৫ দিনের মধ্যে এটি ব্যবহার করতে পারেন।[১০] এটি আপনাকে ভবিষ্যৎেও জন্মনিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
বাছাই এর আগে যেসব বিষয়ে লক্ষ রাখবেন
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বাছাইয়ের আগে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখুন—[১১]
- সন্তান: আপনি আর সন্তান চান কি না, চাইলে কতদিন পর চান। আপনি যদি আর সন্তান না চান সেক্ষেত্রে স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
- সময়: কিছু পদ্ধতি সন্তান প্রসব এর পর পরই শুরু করতে হয়, কিছু পদ্ধতি শুরু করতে আপনাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়। কাজেই আপনার পছন্দের সময় অনুযায়ী আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন।
- বুকের দুধ খাওয়ানো: আপনি বাচ্চাকে বুকের দুধপান করালে সব ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আপনার জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে। কোনো কোনো পদ্ধতি আপনার বুকের দুধের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- কার্যকারিতা: আপনি গর্ভাবস্থার আগে ব্যবহার করেছেন এমন অনেক পদ্ধতিই এখন কার্যকর নাও হতে পারে। যেমন: স্পঞ্জ পদ্ধতি, জরায়ুমুখের ক্যাপ পদ্ধতি।
- পুনরাবৃত্তি: একটি পদ্ধতি আপনি কতবার পর্যন্ত ব্যবহার করতে চান সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন, কিছু পদ্ধতি আপনাকে প্রতিদিন ব্যবহার করতে হবে। আবার কিছু কিছু পদ্ধতি একবার ব্যবহার আপনাকে মাস কিংবা বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দিবে।
- যৌনবাহিত রোগ: আপনার অথবা আপনার সঙ্গীর যৌনবাহিত রোগ থেকে থাকলে সেটিও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়। যেমন, আপনার সঙ্গী যদি কনডম ব্যবহার করে তা পরস্পর থেকে যৌনবাহিত রোগ সংক্রামণের ঝুঁকি কমায়।[১২]
- অন্যান্য রোগ: সব ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আপনার জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার যদি কোনো শারীরিক অবস্থা (যেমন: উচ্চ রক্তচাপ) থাকে, তাহলে কিছু কিছু পদ্ধতি এড়িয়ে চলুন।
- ‘ওভার দা কাউন্টার’ কি না: কিছু কিছু পদ্ধতি আপনি নিজেই প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন। যেমন: কনডম, স্পার্মিসাইড, স্পঞ্জ পদ্ধতি। তবে কিছু কিছু পদ্ধতি অবলম্বনের জন্য আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ বা নিবিড় তত্বাবধানে থাকতে হতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বনের সময় আপনার নিচের লক্ষণগুলির কোনোটি দেখা গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন—
- এক পা বা উভয় পা ফুলে গেলে
- শ্বাসকষ্ট হলে
- বুকে ব্যথা হলে
- পায়ে স্পর্শ করার সাথে সাথে ব্যথা হলে
এ ছাড়াও কিছু পদ্ধতি ব্যবহারের সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। এসব পদ্ধতির যেকোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
ইন্ট্রাইউটেরিয়ান ডিভাইস ব্যবহার এর ক্ষেত্রে
- ডিভাইসটি বের হয়ে আসলে
- তীব্র, ধারালো পেট ব্যথা হলে
- প্রস্রাবের সময় রক্ত পরলে
- দুর্গন্ধযুক্ত যোনিস্রাব হলে
- সহবাসের সময় ব্যথা হলে
- ডিভাইসের লম্বা সুতার মতো অংশটি অনুভব করতে না পারলে
পিল, মিনিপিল, প্যাচ, রিং বা ইমপ্ল্যান্ট এর ক্ষেত্রে
- দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা হলে যা সময়ের সাথে সেরে যায় না
- দীর্ঘস্থায়ী বমি হলে
- দুই পিরিয়ডের মধ্যবর্তী সময়েও যোনিপথে ছোপ ছোপ রক্তপাত হলে
সাধারণ জিজ্ঞাসা
সন্তান প্রসবের তিন সপ্তাহের মধ্যেই আপনি আবার গর্ভধারণ করতে পারেন। এমনকি আপনি বুকের দুধ খাওয়ালে কিংবা আপনার পিরিয়ড শুরু না হলেও এমনটা হতে পারে। কাজেই ডেলিভারির পর থেকে প্রতি সহবাসের সময়েই আপনি কোনো না কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করুন।
কার্যকারিতা, সময়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বুকের দুধ খাওয়ানো—এসব দিক বিবেচনায় সাধারণত পুরুষের কনডম ব্যবহার করা জন্মনিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। এ ছাড়া কনডম-ই একমাত্র পদ্ধতি যা জন্মনিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি যৌনবাহিত রোগ প্রতিরোধেও সহায়তা করে থাকে।[১৩]
জন্মবিরতিকরণ পিল বা বড়িতে বিভিন্ন হরমোন থাকে। যেমন: ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টোরন। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব হরমোন, বিশেষ করে উচ্চমাত্রায় (৩০ মাইক্রোগ্রাম এর চেয়ে বেশি) ইস্ট্রোজেন যুক্ত বড়ি আপনার বুকের দুধের সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে।[১৪][১৫] তাই আপনি যদি সন্তানকে বুকের দুধ পান করান তাহলে হরমোনাল জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বনের আগে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ অপেক্ষা করুন।[১৬]
– নিচের পরিস্থিতিতে আপনি কম্বাইন্ড পিল বা এস্ট্রোজেনযুক্ত জন্মবিরতিকরণ পিল খেতে পারবেন না, খেলেও বিশেষ – – – বিবেচনায় খেতে হবে[১৭]—
– ধূমপান করলে[১৮]
– আপনার বয়স ৩৫ বছরের বেশি হলে[১৯]
– উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
– অরাযুক্ত মাইগ্রেন এর মাথাব্যথা থাকলে
– সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো হলে
– আপনার অনিয়মিত মাসিক হলে
– নিচের পরিস্থিতিতে আপনি জন্মবিরতিকরণ পিল একদমই খেতে পারবেন না—
– আপনি পুনরায় গর্ভধারণ করে ফেললে
– আপনার স্তন ক্যান্সার হলে[২০]
– ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস নামের রোগের ইতিহাস থাকলে কিংবা এমনটা হওয়ার ঝুঁকি থাকলে[২১]
– পালমোনারি এমবোলিজম নামক ফুসফুসের রোগের ইতিহাস থাকলে
– লিভারের অসুখ হলে
– রিফামপিসিন নামের যক্ষ্মার ঔষধ সেবন করলে
– পারিবারিকভাবে হাইপারলিপিডেমিয়া রোগ থাকলে[২২]
সাধারণ জন্মবিরতিকরণ পিলের এক পাতায় ২৮টি পিল থাকে। যার মধ্যে ২১টি এক্টিভ পিল ও ৭ টি ইনএক্টিভ পিল। আপনার মাসিকের রক্তপাত শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু করে প্রতিদিন ১টি করে ২১ দিনে ২১টি এক্টিভ পিল খাবেন। এরপর ৭ দিন ইনএক্টিভ পিলগুলো খাবেন। এসময় আপনার মাসিকের মতো রক্ত যেতে পারে। এই ৭ দিন পর পুনরায় শুরু থেকে পিল গ্রহণ করা শুরু করবেন।
আর ২১ টি পিল বা বড়িযুক্ত পাতার ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ হওয়ার পরদিন থেকে পিল খাওয়া শুরু করবেন। প্রতিদিন ১ টি করে ২১ দিন পিল খাবেন। এরপর ৭ দিন বিরতি দিবেন৷ এসময় আপনার মাসিক শুরু হতে পারে। এরপর ৮ম দিনে পুনরায় নতুন পাতা থেকে পিল খাওয়া শুরু করবেন। জন্মবিরতিকরণ পিল প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।[২৩]
পুরুষদের জন্য প্রচলিত দুটি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হলো কনডম ও ভ্যাসেক্টমি। কনডম একটি ‘ব্যারিয়ার পদ্ধতি’। এটি আপনার সঙ্গীর বীর্য বা শুক্রাণু আপনার যোনিপথ পর্যন্ত পৌঁছাতে বাঁধা দেয়। ভ্যাসেক্টমি হলো পুরুষদের স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এতে অপারেশনের মাধ্যমে আপনার সঙ্গীর শুক্রাণু তার যৌনাঙ্গ পর্যন্ত আসতে বাঁধা সৃষ্টি করে।[২৪] নারীদের স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির চেয়ে পুরুষদের স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বা ভ্যাসেক্টমি অধিক নিরাপদ ও সহজে করা সম্ভব।[২৫]
জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতিকে ডাক্তারি ভাষায় ‘স্টেরিলাইজেশন’ বলা হয়। আপনি ও আপনার সঙ্গী যদি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে থাকেন যে আপনাদের আর সন্তানের প্রয়োজন নেই, কেবল মাত্র তখনই আপনার বা আপনার সঙ্গীর স্টেরিলাইজেশন করতে পারেন।
আপনি যদি আগেই চিকিৎসককে নিশ্চিত করেন, তাহলে আপনার সিজারিয়ান সেকশন এর সময়ই একই সেটিং এ এটি করে দেওয়া সম্ভব।[২৬] এ ছাড়া আপনি হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়েও এটি করে নিতে পারেন। এ ছাড়াও প্রসবের কিছুদিন পর এসে ল্যাপরোস্কোপির মাধ্যমে খুব ছোট করে কেটেও আপনি স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারবেন।