অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলো আমাদের দেহের ‘অ্যাপেন্ডিক্স’ নামক একটি অংশের রোগ।
অ্যাপেন্ডিক্স একটি ছোটো সরু থলের মত অংশ। আকারে দুই থেকে চার ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এটি সাধারণত তলপেটের ডানদিকে থাকে। আমাদের নাড়িভুঁড়ির যে অংশে পায়খানা তৈরি হয়, তার সাথে এটি সংযুক্ত থাকে।
কখনো কখনো এই থলেতে জ্বালাপোড়া/প্রদাহ হয়ে তা ফুলে ওঠে এবং ব্যথা হয়। তখন সেই অবস্থাকে অ্যাপেন্ডিসাইটিস বলা হয়৷
আমাদের শরীরে ‘অ্যাপেন্ডিক্স’ এর সুনির্দিষ্ট ভূমিকা সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি। তবে কোনো অসুস্থতার জন্য অপারেশনের মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্স ফেলে দেওয়া ক্ষতিকর নয়।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে শুরুতে সাধারণত পেট ব্যথা হয়। পেটের মাঝখানের দিকে (নাভির আশেপাশে) এই ব্যথা শুরু হয়ে থাকে।
প্রথমে ব্যথাটি আসা-যাওয়া করতে থাকে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই ব্যথা তলপেটের ডানদিকে গিয়ে স্থির হয়, যেখানে সাধারণত অ্যাপেন্ডিক্স অবস্থিত থাকে। তখন অনবরত তীব্র ব্যথা দেখা দেয়। এই পর্যায়ে ব্যথা আর আগের মতো আসা-যাওয়া করে না।
যেখানে ব্যথা হচ্ছে সেখানে চাপ দিলে অথবা কাশি দিলে কিংবা হাঁটাচলা করলে ব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে ব্যথা ছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন—
- খাবারে অরুচি
- বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া
বিস্তারিত পড়ুন: অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ
অ্যাপেন্ডিসাইটিস কাদের হয়?
অ্যাপেন্ডিসাইটিস একটি কমন রোগ। যেকোনো বয়সেই মানুষ অ্যাপেন্ডিসাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে সাধারণত ১০ থেকে ২০ বছর বয়সীদের এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হওয়ার কারণ
ঠিক কী কারণে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়ে থাকে তা পরিষ্কার নয়। তবে অনেক সময় অ্যাপেন্ডিক্সের মুখে কোনো কিছু আটকে গেলে সেখান থেকে এই সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে।
‘অ্যাপেন্ডিক্স’ থলেটি নাড়িভুঁড়ির সাথে যুক্ত একটি অংশ। থলেটি যেখানে সংযুক্ত থাকে সেই পথে কোনোকিছু জমে থলের মুখটি আটকে যেতে পারে। যেমন—
- নাড়িভুঁড়িতে তৈরি হওয়া পায়খানার ছোটো একটি দলা জমে থলের মুখটি আটকে যেতে পারে
- নাড়িভুঁড়ির দেয়ালে সাধারণত কিছু গ্রন্থি থাকে যেগুলো রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। কোনো ইনফেকশন (যেমন: শ্বাসনালীর ইনফেকশন) এর কারণে এসব গ্রন্থি ফুলে উঠতে পারে। এ কারণেও অ্যাপেন্ডিক্সের মুখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে
অ্যাপেন্ডিক্সের মুখ আটকে গেলে এতে প্রদাহ হতে পারে এবং ফুলে যেতে পারে। ফলে অ্যাপেন্ডিক্সের ভেতরে চাপ বাড়তে পারে এবং এক পর্যায়ে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যেতে পারে।
যেহেতু এখনো অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর পেছনের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি তাই ঠিক কী উপায়ে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায় তা নিশ্চিতভাবে এখনো বলা সম্ভব নয়।
বিস্তারিত পড়ুন: অ্যাপেন্ডিসাইটিস নির্ণয় ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
পেটের ব্যথা যদি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তবে দেরি না করে ডাক্তার দেখানো উচিত।
নিচের দুটি ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে—
- পেটের ব্যথা যদি হঠাৎ করেই অনেক বেড়ে গিয়ে পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়ে, অথবা
- পেটের ব্যথা কিছুক্ষণের জন্য কমে গিয়ে এরপর আবার বেড়ে যায়
ব্যথা যদি কিছুক্ষণের জন্য কমে গিয়ে এরপর আবার বেড়ে যায়, তাহলে সেটি অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে। অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গেলে বিভিন্ন মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাই এসব লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
বিস্তারিত পড়ুন: অ্যাপেন্ডিসাইটিস থেকে সৃষ্ট জটিলতা
অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর চিকিৎসা
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলে সাধারণত অপারেশনের মাধ্যমে দ্রুত রোগীর অ্যাপেন্ডিক্স কেটে ফেলে দেওয়া প্রয়োজন।
অ্যাপেন্ডিক্স কেটে বা সরিয়ে ফেলার অপারেশনের নাম ‘অ্যাপেন্ডিসেকটোমি’ বা ‘অ্যাপেন্ডেকটোমি’। এটি বেশ কমন একটি অপারেশন। এই অপারেশনটি দুটি পদ্ধতিতে করা যায়—
১. ওপেন সার্জারি: সাধারণত অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গেলে বা অন্য কোনো জটিলতা থাকলে সরাসরি পেট কেটে অপারেশন করার প্রয়োজন হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ওপেন সার্জারি।
২. ল্যাপারোস্কোপি: এই পদ্ধতিতে সরাসরি পেট কাটার পরিবর্তে পেটে তিন-চারটি ছোটো ফুটো করা হয়। এসব ছিদ্র দিয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্র ঢুকিয়ে অপারেশন করা হয়।
অপারেশনের পর পুরোপুরি সুস্থ হতে সাধারণত কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। তবে ওপেন সার্জারির পরে কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ ভারী কাজ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
বিস্তারিত পড়ুন: অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর চিকিৎসা