মূলত রোগের লক্ষণগুলো দেখেই অ্যাপেন্ডিসাইটিস নির্ণয় করা হয়। তবে অ্যাপেন্ডিসাইটিসে আক্রান্ত প্রতি ১০০ জন রোগীর মধ্যে কেবল ৫০ জনের ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর সাধারণ লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। একারণে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে কি না তা নির্ণয় করা কিছুটা কঠিন হতে পারে।
আরও একটি বিষয় হলো, অ্যাপেন্ডিক্স সাধারণত তলপেটের ডানপাশে নাড়িভুঁড়ির সাথে সংযুক্ত থাকে। তবে কারও কারও শরীরে এই অঙ্গটি কিছুটা ভিন্ন অবস্থানে থাকতে পারে। যেমন—
- শ্রোণীচক্র বা পেলভিসে
- কোলন বা বৃহদান্ত্রের পেছনে
- ক্ষুদ্রান্ত্রের আশেপাশে
- লিভারের ডানপাশের নিচের অংশের কাছে
কারও কারও ক্ষেত্রে অন্যান্য কিছু রোগেও অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর মতো ব্যথা হতে পারে। যেমন—
- পেটের ইনফেকশন (গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস)
- গুরুতর ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- মূত্রথলি অথবা প্রস্রাবের ইনফেকশন (ইউটিআই)
ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি প্রথমে রোগীর লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে চাইবেন। এরপর রোগীর পেট পরীক্ষা করে দেখা হবে। বিশেষ করে তলপেটের ডানদিকে (অ্যাপেন্ডিক্স এর অবস্থানের আশেপাশে) চেপে দেখা হবে যে এতে ব্যথা আরও বেড়ে যায় কি না।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর সাধারণ লক্ষণগুলো উপস্থিত থাকলে সাধারণত এসব পরীক্ষা করার পরে ডাক্তার মোটামুটি নিশ্চিতভাবে রোগটিকে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হিসেবে নির্ণয় করবেন। সেক্ষেত্রে রোগীকে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া হয়। অপারেশনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রোগীকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা
রোগীর যদি অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর সাধারণ লক্ষণগুলো না থাকে অথবা ব্যথার প্রকৃত কারণ খুঁজে না পাওয়া যায়, তখন সমস্যা সুনিশ্চিতভাবে নির্ণয় করার উদ্দেশ্যে ডাক্তার আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে পারেন।
এসব পরীক্ষার মধ্যে থাকতে পারে—
- রক্ত পরীক্ষা: এই পরীক্ষার সাহায্যে দেহে কোনো ইনফেকশনের লক্ষণ আছে কি না তা দেখা যায়
- প্রেগন্যান্সি টেস্ট: নারীদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি গর্ভবতী কি না সেটি জানা যায়
- প্রস্রাবের পরীক্ষা: মূত্রথলির কোনো ইনফেকশন অথবা ইউটিআই আছে কি না তা দেখতে এই পরীক্ষা করা হয়
- আলট্রাসোনোগ্রাফি: এই পরীক্ষার মাধ্যমে পেটের অন্যান্য অঙ্গের কোনো রোগের কারণে পেট ব্যথা হচ্ছে কি না তা বোঝা যেতে পারে। এ ছাড়া অ্যাপেন্ডিসাইটিস হওয়ার কারণে অ্যাপেন্ডিক্স ফুলে গিয়েছে বা আকারে বড় হয়ে গিয়েছে কি না সেটিও দেখা যেতে পারে
- সিটি স্ক্যান: এটি এক্সরের মতো একটি পরীক্ষা, যার সাহায্যে অ্যাপেন্ডিসাইটিস ছাড়াও পেটের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গের রোগ নির্ণয় করা যায় এবং কী কারণে পেট ব্যথা হচ্ছে সেটি জানা যেতে পারে
এসব পরীক্ষার মধ্যে প্রথম চারটি পরীক্ষার ফলাফল বা রিপোর্ট সাধারণত একই দিনের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট পেতে সময় লাগতে পারে।
রোগ নির্ণয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ
পরীক্ষাগুলোর রিপোর্ট পাওয়ার পরেও যদি রোগটি নিশ্চিতভাবে ধরা না পড়ে তাহলে ডাক্তার ল্যাপারোস্কোপি করানোর পরামর্শ দিতে পারেন। এই পদ্ধতিতে পেটে এক বা একাধিক ছোটো ছিদ্র করে একটি নলাকার টেলিস্কোপের ন্যায় যন্ত্র ভেতরে প্রবেশ করানো হয়।
এরপর পেটের ভেতরের অবস্থা, বিশেষত অ্যাপেন্ডিক্স এবং পেলভিসের বিভিন্ন অঙ্গ (যেমন: মূত্রনালি, মূত্রথলি, মলাশয়, প্রজননতন্ত্র) সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে রোগ নির্ণয় করা যেতে পারে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে এমনটি ধারণা করলে সাধারণত অ্যাপেন্ডিক্স কেটে ফেলে দেওয়ার পরামর্শই দেওয়া হয়। এই পরামর্শের ওপর জোর দেওয়ার কারণ হলো, অপারেশন না করালে অ্যাপেন্ডিক্স ফুলতে ফুলতে একসময় ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যাওয়া একটি গুরুতর সমস্যা, যা থেকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
যেহেতু অ্যাপেন্ডিসাইটিস সন্দেহ করলে সাধারণত অ্যাপেন্ডিক্স কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেহেতু কারও কারও প্রকৃতপক্ষে অ্যাপেন্ডিসাইটিস না হলেও অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, আমাদের শরীর থেকে অ্যাপেন্ডিক্স সরিয়ে ফেললে বিশেষ কোনো সমস্যা হয় না। তবে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হওয়ার পরেও অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করা না হলে সেটির ফলাফল মারাত্মক হতে পারে।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা সম্ভব না হলে রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যে ডাক্তার লক্ষণগুলো শুরু হওয়ার পর ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন। এই সময়ের মধ্যে ব্যথা কি বাড়ছে, কমছে না স্থির থাকছে—এসব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
ডাক্তার যদি সন্দেহ করেন যে রোগীর অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গিয়েছে তাহলে রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করা হবে।
পড়ুন: অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর চিকিৎসা