ওমিপ্রাজল

প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (পিপিআই) গ্রুপের ঔষধ

গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা, অ্যাসিডিটি বা বুক জ্বালাপোড়া করা এবং বদহজমের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একটি ঔষধের নাম ওমিপ্রাজল। পাকস্থলীর আলসারের চিকিৎসায় এবং আলসার প্রতিরোধের জন্যও ওমিপ্রাজল সেবন করা হয়।

ওমিপ্রাজল প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (পিপিআই) গ্রুপের ঔষধ। এগুলোকে আমরা সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ হিসেবে চিনি। পিপিআই জাতীয় ঔষধগুলো মূলত পাকস্থলীতে এসিডের উৎপাদনের মাত্রা কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কাজ করে।

কখনও কখনও অগ্ন্যাশয় অথবা পরিপাকতন্ত্রের টিউমারের বিরল রোগ ‘জলিঞ্জার এলিসন সিনড্রোম’ (Zollinger-Ellison Syndrome) এর চিকিৎসায় ওমিপ্রাজল ব্যবহার করা হয়।

ওমিপ্রাজল ঔষধ সাধারণত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামেও পরিচিত। যেমন: লোসেকটিল, সেকলো, পিপিআই, ওমেটিড, প্রাজোল, ওমেপ ও জেল্ড্রিন। ঔষধটি ক্যাপসুল, ট্যাবলেট বা বড়ি কিংবা ইনজেকশন ও ক্ষেত্রবিশেষে তরল সাসপেনশন হিসেবে পাওয়া যায়।

ওমিপ্রাজল সংক্রান্ত মূল ৫টি তথ্য

১. ওমিপ্রাজল সাধারণত দিনে একবার (সকালবেলা) সেবন করতে হয়।

২. গুরুতর অসুখের ক্ষেত্রে এটি দিনে দুইবার (সকালে ও রাতে) সেবনের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

৩. ঔষধটির কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন: মাথাব্যথা, পেটব্যথা ও ডায়রিয়া। এগুলো সাধারণত তেমন মারাত্মক হয় না। ঔষধ সেবন করা বন্ধ করলেই চলে যায়।

৪. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ওমিপ্রাজল সেবন করা যাবে না।

৫. মদপান করলে পাকস্থলীতে অতিরিক্ত পরিমাণে এসিড তৈরি হয়। তাই ওমিপ্রাজল সেবনের সময়ে মদপান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

ওমিপ্রাজল যারা সেবন করতে পারবেন

  • বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ওমিপ্রাজল সেবন করতে পারেন
  • গর্ভবতী নারী এবং বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান এমন নারী ওমিপ্রাজল সেবন করতে পারবেন
  • ডাক্তারের পরামর্শের ভিত্তিতে শিশুদের ওমিপ্রাজল খাওয়ানো যেতে পারে

যেসব ক্ষেত্রে ওমিপ্রাজল সেবন করা যাবে না

ওমিপ্রাজল সবার জন্য উপযুক্ত নয়। কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওমিপ্রাজল সেবন করা উচিত নয়। যেমন—

  • লিভারের সমস্যা থাকলে
  • আগে কখনো ওমিপ্রাজল অথবা অন্য কোনো ঔষধে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হয়ে থাকলে
  • এন্ডোস্কোপি করানোর পূর্বে। অনেক সময় এন্ডোস্কোপিতে যেসব সমস্যা ধরা পড়ার কথা, ওমিপ্রাজল সেবনের কারণে সেগুলো ধরা না-ও পড়তে পারে। তাই এন্ডোস্কোপি করানোর কয়েক সপ্তাহ আগে ওমিপ্রাজল সেবন করা বন্ধ করতে হবে কি না সেটি ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন।

ওমিপ্রাজল খাওয়ার নিয়ম

ওমিপ্রাজল সাধারণত দিনে একবার (সকালবেলায়) সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। দিনে দুই বেলা ওমিপ্রাজল সেবনের পরামর্শ দেওয়া হলে সকালে এক ডোজ ও রাতে এক ডোজ সেবন করতে হবে। সাধারণত আস্ত ট্যাবলেট অথবা ক্যাপসুলটি পানি দিয়ে গিলে খেতে হয়।

এই ঔষধে সাধারণত পেটে অস্বস্তি হয় না। তাই খাবার আগে অথবা পরে—যেকোনো সময়ে এটি সেবন করা যায়। আপনি হয়তো এতদিন শুধু খাবার খাওয়ার ২০-৩০ মিনিট আগে ঔষধটি সেবন করার কথা শুনে থাকবেন। তবে এটি ভরাপেটেও সেবন করা যায়।

ওমিপ্রাজল সেবনের ডোজ

বিভিন্ন অসুখে বিভিন্ন ডোজে ওমিপ্রাজল সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে শিশু অথবা লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ঔষধের ডোজ কমিয়ে দেওয়া হয়। সাধারণত নিচের ডোজ অনুযায়ী ওমিপ্রাজল সেবন করতে বলা হয়—

অসুখডোজ (mg)(প্রতিদিন বা প্রতি ২৪ ঘণ্টায়)
বদহজম১০ মিলিগ্রাম – ২০ মিলিগ্রাম
গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা, বুক জ্বালাপোড়া করা বা অ্যাসিডিটি২০ মিলিগ্রাম – ৪০ মিলিগ্রাম
পাকস্থলীর আলসার২০ মিলিগ্রাম – ৪০ মিলিগ্রাম
জলিঞ্জার-এলিসন সিনড্রোম২০ মিলিগ্রাম – ১২০ মিলিগ্রাম

ডোজ পরিবর্তন

যে ডোজে ওমিপ্রাজল সেবন করা হচ্ছে তাতে কাজ না হলে ডাক্তার ডোজ বাড়িয়ে দিতে পারেন। অসুখের ওপর ভিত্তি করে কখনো কখনো বেশি ডোজে ওমিপ্রাজল সেবন করার প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত প্রথম কয়েক সপ্তাহ বেশি ডোজে ঔষধ সেবন করতে হতে পারে। এরপর প্রয়োজনবোধে ডাক্তার ডোজ কমিয়ে দিবেন।

কতদিন ধরে সেবন করতে হবে

  • নিজে নিজে ফার্মেসি থেকে ওমিপ্রাজল ঔষধ কিনে দুই সপ্তাহ সেবন করার পরেও লক্ষণের কোনো উন্নতি না হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ডাক্তার বিকল্প একটি ঔষধ দিতে পারেন। এছাড়া লক্ষণগুলো কেন ভালো হচ্ছে না সেটি খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে কিছু পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে পারেন।
  • ওমিপ্রাজল সেবন করার কারণের ওপর ভিত্তি করে হয়তো কয়েক সপ্তাহ অথবা কয়েক মাস ঔষধ সেবন করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তবে কখনো কখনো দীর্ঘ সময় ধরে—এমনকি বছরের পর বছর ঔষধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে।
  • সাধারণত কয়েকদিন অথবা কয়েক সপ্তাহ পরে সুস্থ বোধ করলে এটি সেবন করা বন্ধ করে দেওয়া যায়। কেউ কেউ প্রতিদিন ওমিপ্রাজল সেবন করার পরিবর্তে কেবল কোনো লক্ষণ দেখা দিলে ঔষধ সেবন করেন।

তবে সবার ক্ষেত্রে এভাবে ওমিপ্রাজল সেবন করা প্রযোজ্য না-ও হতে পারে। তাই ডাক্তারের সাথে কথা বলে রোগীর জন্য সবচেয়ে মানানসই পদ্ধতিটি জেনে নিতে হবে।

ঔষধ সেবন করতে ভুলে গেলে করণীয়

  • সারাদিনে (২৪ ঘণ্টায়) একবার করে ঔষধ সেবন করলে যখনই মনে পড়বে তখনই বাদ পড়া ডোজটি সেবন করতে হবে।

তবে যদি ভুলে যাওয়া ডোজটির কথা এমন সময়ে মনে পড়ে যে পরবর্তী ডোজের সময় হতে ১২ ঘন্টার চেয়েও কম সময় বাকি আছে, তাহলে ভুলে যাওয়া ডোজটি আর সেবন করবেন না।

  • দৈনিক দুই বেলা করে ঔষধ সেবন করলে যখনই মনে পড়বে তখনই বাদ পড়া ডোজটি সেবন করতে হবে।

তবে ভুলে যাওয়া ডোজটির কথা যদি এমন সময়ে মনে পড়ে যে পরবর্তী ডোজের সময় হতে চার ঘন্টার চেয়েও কম সময় বাকি আছে, তাহলে ভুলে যাওয়া ডোজটা আর সেবন করবেন না।

ভুলে যাওয়া ডোজের ক্ষতি পূরণ করতে গিয়ে কখনো দ্বিগুণ ডোজে ঔষধ খেয়ে ফেলবেন না।

প্রায়ই ঔষধ সেবন করতে ভুলে গেলে মোবাইল ফোন অথবা ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখতে পারেন। অথবা পরিবারের দায়িত্বশীল একজন সদস্যকে ঔষধ সেবনের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দিতে পারেন।

অতিরিক্ত ডোজের ফলাফল

ভুলে দুই-একটা ওমিপ্রাজল বেশি খেয়ে ফেললে কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তবে অতিরিক্ত ঔষধ সেবন করার পরে দুশ্চিন্তা হলে অথবা নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন—

  • বমি বমি লাগা
  • বমি হওয়া
  • মাথা ঘুরানো
  • পেট ব্যথা
  • ডায়রিয়া
  • মাথাব্যথা

সেবন বন্ধ করার পূর্বে করণীয়

সাধারণত ওমিপ্রাজল সেবন বন্ধ করার পূর্বে ডোজ কমিয়ে আনার প্রয়োজন হয় না। তবে দীর্ঘ সময় ধরে ওমিপ্রাজল সেবন করলে ঔষধ সেবন বন্ধ করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

হঠাৎ করে ঔষধ সেবন করা বন্ধ করে দেওয়া হলে পাকস্থলী অনেক বেশি এসিড তৈরি করতে পারে। ফলে লক্ষণগুলো আবার ফিরে আসে। সেজন্য এমন ক্ষেত্রে ঔষধ সেবন একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার পূর্বে ধীরে ধীরে ডোজ কমিয়ে আনতে হয়।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ওমিপ্রাজল সেবনকারী বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। সাধারণত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও সেটি তেমন মারাত্মক হয় না। ঔষধ সেবন করা বন্ধ করলেই এগুলো সাধারণত চলে যায়।

ওমিপ্রাজলের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো হলো—

  • মাথাব্যথা
  • বমি ভাব
  • বমি অথবা ডায়রিয়া
  • পেটে ব্যথা 
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • বায়ু ত্যাগ

এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সমাধান নিচে তুলে ধরা হয়েছে—

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসমাধান
মাথাব্যথা– বিশ্রাম করতে হবে- প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে- মাথাব্যথার জন্য প্যারাসিটামল সেবন করা যায়
অতিরিক্ত মদ পান থেকে বিরত থাকতে হবে
সাধারণত ওমিপ্রাজল খাওয়ার প্রথম সপ্তাহের পরেই মাথাব্যথা চলে যায়। তাই এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মাথাব্যথা থাকলে অথবা মাথাব্যথা তীব্র রূপ নিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
বমি বমি ভাবখাবার অথবা হালকা নাস্তার সাথে কিংবা খাওয়ার পরে ভরাপেটে ওমিপ্রাজল সেবন করতে হবে
মশলাদার অথবা ভারী ও তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
বমি অথবা ডায়রিয়া– পানিশূন্যতা এড়াতে বারবার ছোটো ছোটো চুমুকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।- পানিশূন্যতার লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্বাভাবিকের তুলনায় কম প্রস্রাব অথবা তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হওয়া
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ডায়রিয়া অথবা বমির চিকিৎসায় অন্য কোনো ঔষধ সেবন করা উচিত নয়
পেটে ব্যথা– বিশ্রাম নিন ও আরাম (রিল্যাক্স) করার চেষ্টা করতে হবে
– সময় নিয়ে খাবার ও পানীয় খান। বারবার অল্প অল্প করে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে
– পেটে গরম সেঁক দেওয়া যায়। এজন্য হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে
হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহারের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন: সহনীয় তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করা, মুখ ভালোভাবে আটকানো আছে কি না দেখে নেওয়া এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর ব্যাগ উল্টেপাল্টে দেওয়া
কোষ্ঠকাঠিন্য– খাবারের তালিকায় বেশি বেশি আঁশযুক্ত খাবার রাখতে হবে। যেমন: তাজা ফলমূল, শাকসবজি ও হোলগ্রেইন বা পূর্ণ খাদ্যশস্য- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে
– ব্যায়াম করুন। প্রতিদিন হাঁটতে অথবা দৌড়াতে পারেন।
এতেও কাজ না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
বায়ু ত্যাগ– যেসব খাবার খেলে বায়ু বেশি হয় সেগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন: মসুর ও অন্যান্য ডাল, শিম, অন্যান্য বীন জাতীয় সবজি ও পেঁয়াজ
– সময় নিয়ে খাবার ও পানীয় খেতে হবে। বারবার অল্প অল্প করে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে
– নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবেসিমেথিকোন (Simethicone) জাতীয় ঔষধ আপনাকে বায়ু ত্যাগ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত হলে কিংবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো দূর না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব বিরল। প্রতি ১০০০ জনে ১ জনেরও কম মানুষে এগুলো দেখা যায়।

নিচের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন—

১. গিট বা জয়েন্টের ব্যথার সাথে শরীরে লাল লাল দানা বা র‍্যাশ হওয়া। বিশেষ করে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসে এমন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এমন র‍্যাশ হওয়া। যেমন: হাত, গাল ও নাক। এই লক্ষণগুলো সাবঅ্যাকিউট কিউটেনিয়াস লুপাস এরিথিম্যাটোসাস (Subacute Cutaneous Lupus Erythematosus) নামের এক বিরল রোগের লক্ষণ। দীর্ঘদিন ধরে ওমিপ্রাজল সেবন করার পরেও একসময় এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

২. ত্বক হলদেটে হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হয়ে যাওয়া এবং ক্লান্ত বোধ করা। এগুলো লিভারের কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

মারাত্মক অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন

বিরল কিছু ক্ষেত্রে ওমিপ্রাজল সেবনের পরে মারাত্মক অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে।

নিচের ৫টি লক্ষণের যেকোনো একটি দেখা দেওয়ার সাথে সাথে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান—

  • চামড়ায় চুলকানিসহ লাল লাল ফুসকুঁড়ি বা র‍্যাশ দেখা দিলে
  • চামড়া ফুলে উঠলে অথবা ফোস্কা পড়লে কিংবা শরীরের কিছু জায়গা থেকে চামড়া উঠে আসার মতো অবস্থা হলে
  • হাঁপানি রোগীদের মত শোঁ শোঁ শব্দ করে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হলে
  • বুক অথবা গলা আঁটসাঁট হয়ে বা আটকে আসছে এমন অনুভব করলে
  • কথা বলতে অথবা শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে সমস্যা হলে
  • মুখ, ঠোঁট, জিহ্বা অথবা গলা ফুলে যেতে শুরু করলে

এসব লক্ষণ মারাত্মক অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশনের কারণে দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।

দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

তিন মাসের বেশি সময় ধরে ওমিপ্রাজল সেবন করলে রক্তে ম্যাগনেসিয়াম নামক মিনারেলের পরিমাণ কমে যায়। ফলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে—

  • ক্লান্তি
  • বিভ্রান্তি
  • মাথা ঘুরানো অথবা ঝিমঝিম করা
  • মাংসপেশিতে টান লাগা
  • শরীর কাঁপছে এমন অনুভব করা
  • হৃৎস্পন্দন বা হার্টবিট অনিয়মিত হয়ে যাওয়া

এক বছরের বেশি সময় ধরে ওমিপ্রাজল সেবন করলে নির্দিষ্ট কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন—

  • হাড় ভাঙা: দীর্ঘদিন ধরে ওমিপ্রাজল সেবনের ফলে ‘অস্টিওপোরোসিস’ বা হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলে ফ্র্যাকচার বা হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • পেটের ইনফেকশন: অনেকদিন ধরে ওমিপ্রাজল সেবনের ফলে পেটে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • ভিটামিন বি১২ এর অভাব: দীর্ঘদিন ধরে ওমিপ্রাজল সেবনের ফলে ভিটামিন বি১২ এর অভাব দেখা দিতে পারে। এর ফলে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন—
    • রক্তশূন্যতার কারণে প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগা
    • জিহ্বায় ঘা হওয়া এবং জিহ্বা লাল হয়ে যাওয়া
    • মুখে ঘা হওয়া
    • স্নায়ুর সমস্যার কারণে হাত-পা ঝিঁঝিঁ করা বা সুঁই ফোটানোর মতো অনুভূতি হওয়া

এক বছরের অধিক সময় ধরে ওমিপ্রাজল সেবন করতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চেকআপে থাকা জরুরি। ডাক্তার আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে ওমিপ্রাজল সেবন চালিয়ে যেতে হবে কি না সেটি নির্ধারণ করবেন।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ সময় ধরে ওমিপ্রাজল সেবন করলে ওমিপ্রাজলের কার্যকারিতা কমে যায় কি না সেটি এখনো জানা যায়নি। যদি মনে হয় যে ওমিপ্রাজল আর কাজ করছে না, তাহলে ডাক্তারের কাছ থেকে এই ব্যাপারে পরামর্শ নিতে হবে।

ওমিপ্রাজল ও পাকস্থলীর ক্যান্সার

কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে যে পাকস্থলীর এসিড কমানোর ঔষধ (যেমন: পিপিআই ও এইচ২ রিসেপ্টর ব্লকার গ্রুপের ঔষধ) পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা সামান্য বাড়িয়ে দিতে পারে। আরও দেখা গেছে যে তিন বছরের অধিক সময় ধরে ওমিপ্রাজল সেবনকারীদের মধ্যে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।

তবে পাকস্থলীর ক্যান্সারের পেছনে প্রকৃতপক্ষেই এই ঔষধগুলো দায়ী না কি অন্য কোনো কারণ আছে—এই সম্পর্কে সুনিশ্চিত হতে আরও বেশি মানুষের ওপর গবেষণা করার প্রয়োজন।

বেশিরভাগ ঔষধের মতোই ওমিপ্রাজল জাতীয় পিপিআই ঔষধ সেবনের নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই যত কম সময়ের জন্য ঔষধ সেবন করা যায় ততই ভালো।

নিচে পাকস্থলীর ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। এমন যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। লক্ষণগুলো হলো—

  • ঢোঁক গিলতে সমস্যা হওয়া
  • বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া
  • খাওয়ার সময়ে খুব দ্রুত পেট ভরে যাওয়া
  • খাওয়ায় অরুচি
  • ওজন কমানোর চেষ্টা ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া

এখানে ওমিপ্রাজলের সবগুলো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উল্লেখ করা নেই। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ তালিকার জন্য ঔষধের সাথে থাকা কাগজ বা লিফলেটটি পড়ুন।

গর্ভাবস্থায় ও বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের ক্ষেত্রে

গর্ভবতী নারী এবং বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান এমন নারীরা সাধারণত নিরাপদেই ওমিপ্রাজল সেবন করতে পারবেন। তবে গর্ভাবস্থায় ঔষধ ছাড়া অন্যান্য উপদেশ মেনে বদহজমের চিকিৎসা করা সম্ভব হলে সেটি সবচেয়ে ভালো হয়। এমন কিছু উপদেশ হলো—

  • অল্প অল্প করে বারবার খাবার খাওয়া
  • মশলাদার ও তেল-চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা
  • খাওয়ার সময়ে সোজা হয়ে বসে খাওয়া। এভাবে বসলে পাকস্থলীর ওপর থেকে চাপ কমে আসে
  • বিছানায় শোবার সময়ে মাথা ও বুক কোমরের চেয়ে উঁচু অবস্থানে (১০-২০ সেমি ওপরে) রাখা। এটি ঘুমের মধ্যে পাকস্থলীর এসিড গলা পর্যন্ত উঠে আসা প্রতিরোধে সাহায্য করে। এজন্য মাথার নিচে কয়েকটা বালিশ অথবা কাঁথা ভাঁজ করে দিয়ে ঘুমানো যেতে পারে

এসব উপদেশ ঠিকমতো মেনে চলার পরেও কাজ না হলে ওমিপ্রাজল সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

গর্ভাবস্থায় ওমিপ্রাজল সেবনের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ঔষধের সাথে থাকা কাগজ বা লিফলেটটি পড়ুন।

বুকের দুধ পান করানো অবস্থায়

ডাক্তার যদি শিশু সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে বলেন, তাহলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান এমন নারীরা নিরাপদে ওমিপ্রাজল সেবন করতে পারেন।

ওমিপ্রাজল বুকের দুধের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় কি না সেই বিষয়ে সামান্য কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তথ্য অনুসারে এটি বুকের দুধের মাধ্যমে খুবই অল্প পরিমাণে প্রবাহিত হয় এবং শিশুর দেহেও খুব বেশি শোষিত হয় না।

ওমিপ্রাজলের কারণে শিশুর দেহে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই।

ওমিপ্রাজল ও প্রজনন ক্ষমতা

ওমিপ্রাজলের কারণে নারী অথবা পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায় এমন সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই।

এরপরেও সন্তান নেওয়ার পূর্বে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেওয়া উচিত। তিনি বর্তমানে চলমান চিকিৎসা বিবেচনা করে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।

নিচের তিনটি ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত—

  • বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করলে
  • গর্ভবতী হলে
  • বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে

ওমিপ্রাজলের সাথে অন্যান্য ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে সতর্কতা

এমন কিছু ঔষধ আছে যেগুলো ওমিপ্রাজলের সাথে একই সময়ে সেবন করলে এগুলো একে অপরকে প্রভাবিত করে। ফলে—

  • পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে
  • কোনো একটি ঔষধ ঠিকমতো কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে

এমন কিছু ঔষধের একটি তালিকা নিচে তুলে ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব ঔষধ সেবন করতে থাকলে ওমিপ্রাজল সেবন শুরু করার আগে চিকিৎসককে এই বিষয়টি জানাতে হবে। এসব ঔষধের মধ্যে রয়েছে—

  • হার্টের তথা হৃদরোগের ঔষধ। যেমন: ডিগক্সিন (Digoxin)
  • সিলোস্টাজল। এটি পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ বা পায়ের রক্তনালীর বিশেষ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়
  • ফাঙ্গাল ইনফেকশনে ব্যবহৃত ঔষধ। যেমন: ইট্রাকোনাজল, কিটোকোনাজল, পোসাকোনাজল ও ভোরিকোনাজল
  • মেথোট্রেক্সেট (Methotrexate)। এটি সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগ এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নামক গিরা বা জয়েন্টের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়
  • এইচআইভি এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ঔষধ। যেমন: বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ
  • ফেনিটোয়েন (Phenytoin)। এটি খিঁচুনি বা এপিলেপ্সি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়
  • রিফামপিসিন (Rifampicin)। এটি একটি অ্যান্টিবায়োটিক। আমাদের দেশে যক্ষ্মা বা টিবি রোগের চিকিৎসায় এর বহুল ব্যবহৃত রয়েছে
  • ক্লোপিডোগ্রেল (Clopidogrel) ও ওয়ারফারিন (Warfarin)। এগুলোকে ‘রক্ত পাতলা করার ঔষধ’ বলা হয়। রক্ত জমাট বাঁধার চিকিৎসায় এবং রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে এসব ঔষধ ব্যবহৃত হয়

এই তালিকার বাইরে আরও কিছু ঔষধ রয়েছে যেগুলো ওমিপ্রাজলের সাথে সেবন করলে কিছু সমস্যা হতে পারে। এসব ঔষধের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পেতে ঔষধের প্যাকেটের ভেতরের কাগজ বা লিফলেটটি পড়ুন।

ব্যথানাশক ঔষধের সাথে ওমিপ্রাজল সেবন

ব্যথানাশক ঔষধের সাথে (যেমন: প্যারাসিটামল ও আইবুপ্রোফেন) একই সময়ে ওমিপ্রাজল সেবন করা নিরাপদ। পেটের সমস্যা এড়াতে খাবারের সাথে অথবা খাওয়ার পরপরই আইবুপ্রোফেন জাতীয় ঔষধ সেবন করা উত্তম।

ভেষজ বা হারবাল ঔষধের সাথে ওমিপ্রাজল সেবন

ওমিপ্রাজল সেবনের সময়ে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতার জন্য ব্যবহৃত সেইন্ট জন’স উয়্যার্ট (St. John’s Wort) জাতীয় ভেষজ/হারবাল ঔষধ থেকে বিরত থাকুন। এই ধরনের ঔষধ ওমিপ্রাজলের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

ওমিপ্রাজল সেবন চলাকালে ভেষজ বা হারবাল ঔষধ, ভিটামিন ও বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট নিরাপদে সেবন করা যাবে কি না সেই বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই। এসব ঔষধ নিয়ে গতানুগতিক উপায়ে গবেষণা করা হয় না। সাধারণত অন্যান্য ঔষধের ওপর এসব ঔষধের প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয় না।

সতর্কতা

যেকোনো ঔষধ—এমনকি হারবাল ঔষধ, ভিটামিন অথবা কোনো সাপ্লিমেন্ট সেবন করলে ডাক্তারকে বিষয়টি জানাতে হবে।

ওমিপ্রাজল সংক্রান্ত সাধারণ জিজ্ঞাসা

ওমিপ্রাজল কীভাবে কাজ করে?

ওমিপ্রাজল প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (পিপিআই) গ্রুপের ঔষধ। একে আমরা সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ হিসেবে চিনি।
পাকস্থলীর আস্তরণে থাকা এক ধরনের বিশেষ প্রোটিন (এনজাইম) খাবার হজম করার এসিড তৈরিতে পাকস্থলীকে সাহায্য করে।
ওমিপ্রাজল এসব প্রোটিনের কাজে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে পাকস্থলীতে এসিডের উৎপাদনের মাত্রা কমে আসে।

ওমিপ্রাজল সেবনের পরে সুস্থ হতে কতদিন সময় লাগে?

সাধারণত ওমিপ্রাজল সেবনের দুই-তিন দিনের মধ্যে লক্ষণগুলোর উন্নতি হয়। তবে ওমিপ্রাজল পুরোপুরি কাজ করতে চার সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই সময়ে অ্যাসিডিটির কিছু লক্ষণ থেকে যেতে পারে।
নিজে নিজে ফার্মেসি থেকে ওমিপ্রাজল ঔষধ কিনে দুই সপ্তাহ সেবন করার পরেও লক্ষণের কোনো উন্নতি না হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

লক্ষণের উন্নতি না হলে কী করণীয়?

সঠিক নিয়মে ও ডোজে ঔষধ সেবনের পরেও লক্ষণের উন্নতি না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি পিপিআই গ্রুপের ভিন্ন কোনো ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন। যেমন: প্যান্টোপ্রাজল, র‍্যাবেপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল ও ল্যান্সোপ্রাজল।

ওমিপ্রাজল কি গর্ভাবস্থায় নিরাপদ?

গর্ভবতী নারী এবং বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান এমন নারীরা সাধারণত নিরাপদেই ওমিপ্রাজল সেবন করতে পারবেন। তবে গর্ভাবস্থায় ঔষধ ছাড়া অন্যান্য উপদেশ মেনে বদহজমের চিকিৎসা করা সম্ভব হলে সেটি সবচেয়ে ভালো হয়।

ওমিপ্রাজল সেবনের কোনো দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?

তিন মাসের বেশি সময় ধরে ওমিপ্রাজল সেবন করলে রক্তে ম্যাগনেসিয়াম নামক মিনারেলের পরিমাণ কমে যায়। এক বছরের বেশি সময় ধরে ওমিপ্রাজল সেবন করলে নির্দিষ্ট কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন: হাড় ভাঙা, পেটের ইনফেকশন, ভিটামিন বি১২ এর অভাব।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ সময় ধরে ওমিপ্রাজল সেবন করলে ওমিপ্রাজলের কার্যকারিতা কমে যায় কি না সেটি এখনো জানা যায়নি। যদি মনে হয় যে ওমিপ্রাজল আর কাজ করছে না, তাহলে ডাক্তারের কাছ থেকে এই ব্যাপারে পরামর্শ নিতে হবে।

দীর্ঘদিন ধরে ওমিপ্রাজল খেলে কি পাকস্থলীর ক্যান্সার হয়?

কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে যে পাকস্থলীর এসিড কমানোর ঔষধ (যেমন: পিপিআই ও এইচ২ ব্লকার গ্রুপের ঔষধ) পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা সামান্য বাড়িয়ে দিতে পারে। আরও দেখা গেছে যে তিন বছরের অধিক সময় ধরে ওমিপ্রাজল সেবনকারীদের মধ্যে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।
তবে পাকস্থলীর ক্যান্সারের পেছনে প্রকৃতপক্ষেই এই ঔষধগুলো দায়ী না কি অন্য কোনো কারণ আছে—এই সম্পর্কে সুনিশ্চিত হতে আরও বেশি মানুষের ওপর গবেষণা করার প্রয়োজন।

ওমিপ্রাজল খাওয়া বন্ধ করে দিলে কী হবে?

সাধারণত ওমিপ্রাজল সেবন বন্ধ করার পূর্বে ডোজ কমিয়ে আনার প্রয়োজন হয় না।
তবে দীর্ঘ সময় ধরে ওমিপ্রাজল সেবন করলে ঔষধ সেবন বন্ধ করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
হঠাৎ করে ঔষধ সেবন করা বন্ধ করে দেওয়া হলে পাকস্থলী অনেক বেশি এসিড তৈরি করতে পারে। ফলে পূর্বের সমস্যাগুলো আবার ফিরে আসতে পারে।

ওমিপ্রাজলের মতো আর কী কী ঔষধ আছে?

ওমিপ্রাজলের মতো আরও চারটি ঔষধ রয়েছে। সেগুলো হলো, ল্যান্সোপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল ও র‍্যাবেপ্রাজল। এগুলোও ওমিপ্রাজলের মতো প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (পিপিআই) গ্রুপের ঔষধ। আমরা এগুলোকে সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ হিসেবে চিনি।
কখনো কখনো ওমিপ্রাজল সেবনে কাজ না হলে অথবা ওমিপ্রাজল সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ডাক্তার এসব ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।

হজমের সমস্যার আর কোনো ঔষধ আছে কি?

ওমিপ্রাজলের মতো পিপিআইগুলো ছাড়াও বদহজম ও বুক জ্বালাপোড়ার অন্যান্য ঔষধ রয়েছে। যেমন: অ্যান্টাসিড ও এইচ টু ব্লকার।
অ্যান্টাসিড ঔষধগুলোকে আমরা সচরাচর এন্টাসিড, এন্টাসিড প্লাস, গাভিস্কন, গাভিফ্লাক্স ও গ্যাস্ট্রোকন জাতীয় ব্র্যান্ড নামে চিনি।
এইচ২ ব্লকার গ্রুপের ঔষধগুলোর মধ্যে রয়েছে, ফ্যামোটিডিন, সিমেটিডিন, নিজাটিডিন।

ওমিপ্রাজল সেবন চলাকালে কি অ্যান্টাসিড খাওয়া যায়?

প্রয়োজনে ওমিপ্রাজলের সাথে অ্যান্টাসিড সেবন করা যায়।

ওমিপ্রাজল কি পিল ও অন্যান্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়?

ওমিপ্রাজল জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা বড়িসহ সাধারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কার্যকারিতায় কোনো প্রভাব ফেলে না। তবে এটি ‘উলিপ্রিস্টাল’যুক্ত ইমারজেন্সি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। যেমন: এম-পিল, পিউলি, উলিকন ও 5X।
এক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের ইমারজেন্সি পিল সেবনের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

ওমিপ্রাজল সেবন চলাকালে গাড়ি অথবা সাইকেল চালানো যাবে কি?

ওমিপ্রাজল সেবনের ফলে মাথা ঘুরানো, ঘুম ঘুম লাগা অথবা চোখে ঘোলা দেখার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এমনটি হলে সুস্থ বোধ করার পূর্ব পর্যন্ত গাড়ি, সাইকেল, ভারী মেশিন ও যন্ত্রপাতি চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে।

জীবনধারায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনলে কি অ্যাসিডিটির সমস্যা কমানো যায়?

সামগ্রিক জীবনধারা ও খাবারের তালিকায় কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে বদহজম, গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা, বুক জ্বালাপোড়া করা কিংবা অ্যাসিডিটির সমস্যা কমানো যেতে পারে।

ওমিপ্রাজল সেবন চলাকালে মদপান করলে কী হবে?

মদপান করা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ মদপান করলে পাকস্থলীতে অতিরিক্ত পরিমাণে এসিড তৈরি হয়। ফলে পাকস্থলীর ভেতরে জ্বালাপোড়া হয় এবং অবস্থার অবনতি হয়। তাই ওমিপ্রাজলের নিজস্ব কার্যকারিতার ওপর প্রভাব না পরলেও সামগ্রিকভাবে অ্যাসিডিটির সমস্যা গুরুতর রূপ নিতে পারে।