গর্ভাবস্থায় পা কামড়ানো

গর্ভাবস্থায় কখনো কখনো আপনার পা কামড়াতে বা খিল ধরতে পারে। এটি মূলত পায়ে হঠাৎ করে তীক্ষ্ণ ব্যথা হওয়ার একটি অনুভূতি। অনেকে এই সমস্যাকে ‘পায়ের রগে টান লাগা’ বলে থাকেন।

গর্ভাবস্থায় পা কামড়ানো মায়েদের একটি পরিচিত সমস্যা। এটি সাধারণত মায়ের অথবা গর্ভের শিশুর কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে না। তবে পা কামড়ালে রাতে ঘুমাতে সমস্যা হতে পারে এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। কিছু সহজ উপদেশ মেনে চললে আপনি পা কামড়ানোর সমস্যা থেকে অনেকটাই স্বস্তি পেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় কখন পা কামড়ায়?

বেশিরভাগ সময়ে গর্ভকালের পরের অর্ধেকে, অর্থাৎ ২০তম সপ্তাহের পর থেকে পা কামড়ানো বা খিল ধরার সমস্যা হয়।[১] বিশেষ করে গর্ভকালীন শেষ তিন মাসে এই সমস্যা হওয়া বেশ কমন।[২] অনেকের ক্ষেত্রেই কেবল রাতে পা কামড়াতে দেখা যায়।[৩] তবে দিন অথবা রাত—যেকোনো সময়েই পা কামড়াতে পারে।

পা কামড়ানোর তাৎক্ষণিক চিকিৎসা

ঘরোয়া চিকিৎসা

পা কামড়ানো উপশমে নিচের উপদেশগুলো প্রয়োগ করে দেখতে পারেন—

পায়ের ব্যায়াম

  • যখন আপনার পায়ের রগে টান লাগা বা পা কামড়ানো শুরু হবে তখনই দাঁড়িয়ে যাবেন। এরপর পায়ের পাতা দুটিকে কিছুটা ভেতরের দিকে নিবেন। এরপর পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে উঁচু হতে চেষ্টা করবেন, যেন আপনি উঁচুতে থাকা কোনো কিছুর নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এভাবে পায়ের পেছনের পেশি টানটান করার চেষ্টা করবেন। এতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে।[৪]

ইউটিউবে ‘Calf Stretches (Toe Raises)’ লিখে সার্চ করলে এমন ভিডিও দেখতে পাবেন। সেগুলো দেখে দেখেও এই ব্যায়াম করতে পারেন।

  • পা কামড়ানো শুরু হওয়ার সাথে সাথে কিছুদূর হেঁটে অথবা পা ঝাঁকিয়ে এরপর পা উঁচু করলে এই অনুভূতি উপশম হতে পারে।[৫]
  • পায়ের আঙুলগুলো সজোরে ওপরের দিকে টানটান করলে অথবা পায়ের পেশি জোরে জোরে ঘষলে কামড়ানো উপশম হতে পারে।

গরম পানি দিয়ে গোসল

কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে স্বস্তি পেতে পারেন। এ ছাড়া পায়ের পেছনে হাঁটুর ঠিক নিচের মাংসল অংশে হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে গরম সেঁক দিতে পারেন। তবে হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করার সময়ে সাবধান থাকবেন। পানি সহনীয় তাপমাত্রায় আছে কি না এবং ব্যাগের মুখ ভালোভাবে আটকানো আছে কি না তা দেখে নিবেন। নির্দিষ্ট সময় পরপর ব্যাগ উল্টেপাল্টে দিবেন।

বরফের সেঁক

পায়ে আলতোভাবে ঘষে ঘষে বরফ লাগাতে পারেন।

ঔষধ

গর্ভাবস্থায় পা কামড়ানোর জন্য ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ডি এর মতো বিভিন্ন ঔষধ নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। তবে সেগুলোর কার্যকারিতা এবং মা ও শিশুর ওপর এসবের প্রভাব গবেষণা থেকে পুরোপুরি পরিষ্কার নয়।[৬] তাই ঘরোয়া উপদেশ মেনে চলার পরেও কোনো উন্নতি না হলে নিজে নিজে ঔষধ সেবন না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পা কামড়ানো প্রতিরোধ

ব্যায়াম

পা কামড়ানো ঠেকাতে পায়ের কিছু ব্যায়াম করে দেখতে পারেন। এসব ব্যায়াম পায়ের পেশির ওপর কাজ করে এবং ব্যথা ও খিঁচ ধরা কমাতে সাহায্য করে।

ব্যায়াম ১: স্ট্রেচিং

ওয়াল পুশ করার পদ্ধতি
  1. ওপরের ছবির মতো দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়ান। এমনভাবে দাঁড়াবেন যেন দুই পা একত্র থাকে আর পা দেয়াল থেকে প্রায় ২ ফুট দূরে থাকে। খেয়াল রাখবেন যেন আপনি সোজা হয়ে দাঁড়ালে আপনার দুই পা মেঝেতে সমান হয়ে থাকে। আর দুই হাত সোজা করলে যেন হাতদুটো দেয়ালকে স্পর্শ করে।
  2. এবার শরীর সোজা রেখে, অর্থাৎ হাঁটু ও কোমর কোনোদিকে ভাঁজ না করে দেয়ালের দিকে সামান্য ঝুঁকে যান।
  3. সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে হাতের তালু দিয়ে দেয়ালে চাপ দিন, যেন মনে হয় আপনি দেয়ালকে ধাক্কা দিচ্ছেন। এই অবস্থায় দেখবেন যে আপনার পায়ের পেছনের পেশিগুলোতে টান লাগছে। ২০ সেকেন্ড ধরে এই অবস্থানে থাকুন। এরপর সোজা হয়ে দাঁড়ান।
  4. আবারও প্রথম থেকে ব্যায়াম করুন। এভাবে পরপর মোট তিনবার ১ থেকে ৩ নম্বর ধাপ অনুসরণ করুন।
  5. এভাবে দিনে চারবার করে এক সপ্তাহ ব্যায়াম করবেন। এরপর থেকে দিনে দুইবার করে ব্যায়াম করা চালিয়ে যাবেন।[৭]

ব্যায়াম ২: পায়ের গোড়ালির ব্যায়াম

  1. আপনার গোড়ালির জয়েন্ট ভাঁজ করে পায়ের পাতা একবার নিজের বা ওপরের দিকে ওঠান, আরেকবার টানটান করে দ্রুত নিচের দিকে নামান। এভাবে জোরে জোরে মোট ৩০ বার করবেন।
  2. ডান পায়ের পাতা বৃত্তাকারে, অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার মতো করে ঘুরান। একবার ঘড়ির কাঁটা যেদিকে ঘুরে সেদিকে, অর্থাৎ ডান দিকে ৮ বার ঘোরাবেন। এরপর ঘড়ির কাঁটা যেভাবে ঘুরে তার বিপরীত দিকে আরও ৮ বার ঘোরাবেন। এভাবে মোট ১৬ বার ঘুরাতে হবে। একই নিয়মে বাম পায়ের ব্যায়াম করুন।

অন্যান্য উপায়

পা কামড়ানো প্রতিরোধে ব্যায়ামের পাশাপাশি যেসব উপায় অবলম্বন করতে পারেন—

১. পর্যাপ্ত পানি পান করা: পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে পা কামড়ানো উপশম করা যেতে পারে।[৮] একজন সুস্থ-স্বাভাবিক গর্ভবতী নারীর প্রতিদিন গড়ে ২–৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। কাপ কিংবা গ্লাসের হিসাবে আপনাকে সারাদিনে মোট ৮–১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে।[৯] তবে এই বিষয়ে কখনো যদি ডাক্তার কোনো বিশেষ পরামর্শ দিয়ে থাকেন তাহলে সেটাই অনুসরণ করবেন।

২. আরামদায়ক জুতা পরা: পায়ের গোড়ালিকে সাপোর্ট দেয় এমন আরামদায়ক জুতা বেছে নিতে পারেন।

৩. শরীর সচল রাখা: নিয়মিত শরীর সচল রাখার মাধ্যমে পায়ে খিঁচ ধরার সম্ভাবনা কমানো যেতে পারে। নিয়মিত হাঁটার চেষ্টা করবেন। হাঁটার পরিবর্তে আপনার জন্য সুবিধাজনক কয়েকটি ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন। এ ছাড়া একই অবস্থানে অনেকক্ষণ বসে অথবা দাঁড়িয়ে থাকা এড়িয়ে চলবেন। কেউ কেউ বসার সময়ে পায়ের ওপরে পা তুলে বসা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।

৪. কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়া: সারাদিনের কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নিয়ে নিবেন। একটানা অনেকক্ষণ কাজ করা এবং একটানা শুয়ে থাকা—দুটোই এড়িয়ে চলবেন। যখন বসে সময় পার করতে হবে, চেষ্টা করবেন পা দুটো উঁচু অবস্থানে রাখতে। এজন্য একটা টুলের ওপরে পা রাখতে পারেন। এ ছাড়া বসে বিশ্রাম নিতে নিতে, খেতে খেতে অথবা টিভি দেখতে দেখতে পায়ের আঙুলগুলো নাড়াচাড়া করবেন এবং পায়ের পাতা একটু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নিবেন।

৫. সুষম খাবার খাওয়া: আপনার খাবারে যেন প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। সুষম খাবার তালিকা মেনে চলার মাধ্যমে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব প্রতিরোধ করা যাবে।

পড়ুন: গর্ভবতীর খাবার তালিকা

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে?

যদি ব্যথা তীব্র হতে থাকে অথবা একটানা ব্যথা হয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তা ছাড়া পায়ে ব্যথার সাথে যদি ব্যাথার জায়গা গরম হয়ে যায়, ফুলে যায় অথবা লালচে হয়ে যায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এটি ‘ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস’ নামক মারাত্মক রোগের লক্ষণ হতে পারে।

‘ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস’ হলে পায়ের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধে। এই জমাট বাঁধা রক্ত পায়ের রক্তনালী থেকে ছুটে রক্তের সাথে শরীরের অন্যান্য অংশের রক্তনালীতে যেয়ে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ফুসফুসে এমন হলে শ্বাসপ্রশ্বাসে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে, এমনকি রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এটি বিরল রোগ হলেও গর্ভাবস্থায় এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।[১০] তাই এই রোগের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।

কেন পা কামড়ায়?

গর্ভাবস্থায় কী কারণে পায়ে এই ধরনের অনুভূতি হয় তা এখনো সুনিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।[১১] তবে এর পেছনে নিচের কারণগুলোর ভূমিকা থাকতে পারে—

  • পায়ে বিশেষ কিছু এসিড (যেমন: ল্যাকটিক এসিড) জমার কারণে পায়ের পেশি নিজে নিজে সংকুচিত হয়ে পা কামড়াতে পারে।
  • শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট, অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিছু লবণের পরিমাণ ওঠানামা করলে পায়ে আপনাআপনি সংকোচন হয়ে পা কামড়াতে পারে।
  • গর্ভের শিশুর বাড়তি ওজন বহন করার ফলে পায়ে চাপ পড়ার কারণে পা কামড়াতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় সারা শরীরের পাশাপাশি পায়ের রক্ত সরবরাহে পরিবর্তন আসে। একারণেও পা কামড়াতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ক্লান্তি থেকে পায়ে খিল ধরতে পারে।
  • গর্ভকালীন সময়ে শরীরে কিছু হরমোনের মাত্রা অনেক বেশি থাকে। হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে শরীরে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পা কামড়ানোও এমন একটি লক্ষণ হতে পারে।
  • খাবার তালিকায় ফসফরাসযুক্ত খাবার বেশি থাকলে এবং ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার কম থাকলে এমন হতে পারে।
  • কিছু ক্ষেত্রে পায়ের গভীরে থাকা শিরায় রক্ত জমার কারণে পা ফুলে যাওয়ার পাশাপাশি পায়ে ব্যথা ও কামড়ানোর মতো অনুভূতি হতে পারে। যেমন: ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

গর্ভাবস্থায় কোন সময় থেকে পায়ের রগে টান লাগা শুরু হতে পারে?

গর্ভাবস্থায় পায়ের রগে টান লাগা, খিল ধরা বা কামড়ানো গর্ভকালের দ্বিতীয়ার্ধে, অর্থাৎ ২০ সপ্তাহের পর থেকে বেশি হয়ে থাকে।[১২] একটি গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে, অর্ধেকের বেশি মায়েরা ২৫তম সপ্তাহের পর এই সমস্যার মুখোমুখি হন।

গর্ভাবস্থায় পায়ের রগ টানা কি প্রতিরোধ করা যায়?

পায়ের রোগ টানা প্রতিরোধে নিয়মিত পায়ের ব্যায়াম করুন। যেমন: স্ট্রেচিং। ব্যায়াম পায়ের পেশিকে শক্তিশালী করে এবং ব্যথা হওয়া প্রতিরোধ করে। ব্যায়ামের পাশাপাশি আরও কিছু উপায় অবলম্বন করে দেখতে পারেন। যেমন: কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়া, শারীরিক পরিশ্রম করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা, সুষম খাবার খাওয়া ও আরামদায়ক জুতা পরা।

গর্ভাবস্থায় পায়ের রগ টানে যে ব্যথা হয় তা কতদিন পর্যন্ত থাকতে পারে?

গর্ভাবস্থায় পায়ের রগ টানে যে ব্যথা হয় তা দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয়ে পুরো তৃতীয় ত্রৈমাসিক জুড়ে থাকতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কি পায়ের রগ টানের সাথে ঘাড়ের রগেও টান লাগতে পারে?

গর্ভাবস্থায় শরীরের গঠন ও হরমোনের বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে ঘাড়ে ও কাঁধে ব্যথা হতে পারে। এটি পায়ের খিল ধরার মতোই স্বাভাবিক। তবে কিছু ক্ষেত্রে কাঁধের ব্যথা কোনো গুরুতর অবস্থার ইঙ্গিত হতে পারে। যেমন, প্রথম ত্রৈমাসিকে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির কারণে এমন ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।

(১২)

  1. Riss, P., et al. “Zur Klinik Und Therapie von Wadenkrämpfen in Der Schwangerschaft.” Geburtshilfe Und Frauenheilkunde, vol. 43, no. 05, May 1983, pp. 329–31.
  2. Luo, Li, et al. “Interventions for Leg Cramps in Pregnancy.” Cochrane Database of Systematic Reviews, vol. 2020, no. 12, Dec. 2020.
  3. sykehus, Kvinneklinikken Baerum. “Leg Cramps in Pregnancy–How Common Are They?” Europe PMC, https://europepmc.org/article/med/10385800.
  4. Bermas, Bonnie L. “Maternal Adaptations to Pregnancy: Musculoskeletal Changes and Pain.” UpToDate, edited by Charles J Lockwood, https://www.uptodate.com/contents/maternal-adaptations-to-pregnancy-musculoskeletal-changes-and-pain. Accessed 15 Oct. 2022.
  5. Bermas, Bonnie L. “Maternal Adaptations to Pregnancy: Musculoskeletal Changes and Pain.” UpToDate, edited by Charles J Lockwood, https://www.uptodate.com/contents/maternal-adaptations-to-pregnancy-musculoskeletal-changes-and-pain. Accessed 15 Oct. 2022.
  6. Luo, Li, et al. “Interventions for Leg Cramps in Pregnancy.” Cochrane Database of Systematic Reviews, vol. 2020, no. 12, Dec. 2020.
  7. Bermas, Bonnie L. “Maternal Adaptations to Pregnancy: Musculoskeletal Changes and Pain.” UpToDate, edited by Charles J Lockwood, https://www.uptodate.com/contents/maternal-adaptations-to-pregnancy-musculoskeletal-changes-and-pain. Accessed 15 Oct. 2022.
  8. Bermas, Bonnie L. “Maternal Adaptations to Pregnancy: Musculoskeletal Changes and Pain.” UpToDate, edited by Charles J Lockwood, https://www.uptodate.com/contents/maternal-adaptations-to-pregnancy-musculoskeletal-changes-and-pain. Accessed 15 Oct. 2022.
  9. “How Much Water Should I Drink during Pregnancy?” ACOG, https://www.acog.org/womens-health/experts-and-stories/ask-acog/how-much-water-should-i-drink-during-pregnancy. Accessed 15 Oct. 2022.
  10. “Treatment of Venous Thrombosis in Pregnancy and after Birth Patient Information Leaflet.” RCOG, https://www.rcog.org.uk/for-the-public/browse-all-patient-information-leaflets/treatment-of-venous-thrombosis-in-pregnancy-and-after-birth-patient-information-leaflet. Accessed 15 Oct. 2022.
  11. Young, Gavin, and David Jewell. “Interventions for Leg Cramps in Pregnancy.” Cochrane Database of Systematic Reviews, Jan. 2002.
  12. Riss, P., et al. “Zur Klinik Und Therapie von Wadenkrämpfen in Der Schwangerschaft.” Geburtshilfe Und Frauenheilkunde, vol. 43, no. 05, May 1983, pp. 329–31.