হার্ট অ্যাটাক হতে সুস্থতা লাভ

হার্ট অ্যাটাকের পরে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটি সাধারণত কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

হার্ট অ্যাটাকের পরে সুস্থ হয়ে উঠতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই রোগীর পুনর্বাসনের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো না করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় এই সময়টুকুতে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর্মী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন: ডাক্তার, নার্স, পুষ্টিবিদ ও ফিজিওথেরাপিস্ট। রোগীর সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়াটি যেন নিরাপদ ও সঠিক হয় সেটি নিশ্চিত করতে তাঁরা প্রয়োজনীয় শারীরিক ও মানসিক সহায়তা প্রদান করবেন।

হার্ট অ্যাটাকের পরে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটি সাধারণত কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়া হাসপাতালেই শুরু হয়। হাসপাতালে রোগীর অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং ভবিষ্যতে কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে সেটি নিরূপণ করা হয়। 

হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পরে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরবর্তী ধাপগুলো বাড়িতেই চালানো যায়। সুস্থ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি লক্ষ্য হলো—

  1. দৈনন্দিন কাজকর্মে ফিরে যাওয়ার জন্য শরীরকে ধীরে ধীরে উপযুক্ত করে তোলা
  2. পুনরায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনা

হাসপাতাল থেকে ছুটি নেওয়ার আগে ডাক্তারের কাছ থেকে নিচের বিষয়গুলো জেনে নিতে হবে—

  • কী কী ঔষধ খেতে হবে
  • কতদিন ধরে ঔষধ খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে
  • রোগীর জন্য হার্ট অ্যাটাকের পেছনে সম্ভাব্য কারণ কী ছিল
  • হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে জীবনধারায় কী ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে
  • কোনো নির্দিষ্ট কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে কি না
  • পরবর্তী চেকআপের জন্য কতদিন পড়ে আসতে হবে

এ ছাড়া স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্য কোনো প্রশ্ন অথবা সংশয় থাকলে সেটিও জিজ্ঞাসা করে সমাধান জেনে নিতে হবে।

কর্মস্থলে ফিরে যাওয়া

বেশিরভাগ রোগীই হার্ট অ্যাটাকের পরে তাদের কাজে ফিরে যেতে পারেন। তবে একজন রোগী কত দ্রুত কাজে ফিরতে পারবেন সেটি তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে—

  1. হার্টের অবস্থা
  2. স্বাস্থ্যের সামগ্রিক অবস্থা
  3. কাজের ধরন

যদি একজন রোগী কেবল অফিসে বসে কাজ করেন তাহলে সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের দুই সপ্তাহ পরই তিনি কাজে ফিরে যেতে পারেন।

কিন্তু যদি ভারী কাজ, অর্থাৎ, প্রচুর শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করতে হয় অথবা হার্ট অ্যাটাকের ফলে হার্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে, তাহলে কাজে ফিরতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

রোগীর হার্টের অবস্থা কেমন, হার্ট অ্যাটাকের কারণে কতটুকু ক্ষতি হয়েছে এবং ঠিক কতদিন বিশ্রামের পরে তিনি কাজে ফিরতে পারেন—এসব ব্যাপারে ডাক্তারের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে নিতে হবে।

ব্যায়াম

হাসপাতাল থেকে ফেরার পরে রোগীকে সাধারণত বিশ্রাম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি কেবলমাত্র হালকা শারীরিক কাজকর্ম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন: সিঁড়ি দিয়ে দিনে কয়েকবার ওঠানামা করা অথবা কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা।

ধীরে ধীরে কয়েক সপ্তাহ সময় নিয়ে শারীরিক কাজকর্মের পরিমাণ বাড়াতে হবে। কত তাড়াতাড়ি রোগী তার কাজের পরিমাণ বাড়াতে পারবেন সেটি রোগীর হার্ট ও শরীরের সার্বিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে।

হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য রোগীর বয়স ও সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ব্যায়ামই ‘অ্যারোবিক এক্সারসাইজ’ ধরনের হয়ে থাকে।

অ্যারোবিক এক্সারসাইজ হার্ট ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন আগের তুলনায় উন্নত হয় এবং ব্লাড প্রেসার কমে আসে। অ্যারোবিক এক্সারসাইজ এর মধ্যে রয়েছে সাইকেল চালানো, ট্রেডমিলে দৌড়ানো, জগিং করা ও সাঁতার কাটা।

গাড়ি চালানো

সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের পরে গাড়ি অথবা মোটরসাইকেল চালাতে কোনো সমস্যা হয় না। অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা অথবা জটিলতা না থাকলে হার্ট অ্যাটাকের এক সপ্তাহ পরেই অনেকে গাড়ি চালাতে পারেন। তবে গুরুতর হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে চার সপ্তাহ পর্যন্ত ড্রাইভিং বন্ধ রাখতে হতে পারে।

গাড়ি চালানোর পূর্বে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে সেটি ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন।

উল্লেখ্য, যাত্রীবাহী অথবা মালবাহী গাড়ি চালানোর আগে রোগীকে কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ গাড়ি চালাতে নিষেধ করা হয়। রোগী যেন এই ধরনের যানবাহন চালানোর জন্য যথেষ্ট ফিট তথা সুস্থ হয়ে ওঠে সেজন্য এই সময়টুকু প্রয়োজন হয়। সুস্থ হয়ে ওঠার পরে কখন গাড়ি চালানো যাবে সেটি ডাক্তারের কাছে চেকআপ করিয়ে জেনে নিতে হবে।

ডিপ্রেশন

হার্ট অ্যাটাক নিঃসন্দেহে ভীতিকর একটি অভিজ্ঞতা। এরকম ঘটনার পরে রোগী মানসিকভাবে আঘাত পাওয়া অথবা উদ্বিগ্ন অনুভব করা খুবই স্বাভাবিক।

অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরেও মানসিক চাপের কারণে বিষণ্ণ ও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে। স্ট্রেস ও আবেগের কারণে বাড়ি ফেরার কয়েক সপ্তাহ পরেও রোগী এমন অনুভব করতে পারে। তবে একটানা এমন মন খারাপ ও বিষণ্ণতা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এটি গুরুতর ডিপ্রেশনের লক্ষণ হতে পারে।

চিকিৎসা ছাড়া সাধারণত গুরুতর ডিপ্রেশনের উন্নতি হয় না। এ ছাড়া রোগীর মানসিক অবস্থা শারীরিক সুস্থতার ওপরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এমন ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরি।

যৌন জীবন 

রোগী সুস্থ অনুভব করলে সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের চার থেকে ছয় সপ্তাহ পরে স্বাভাবিক যৌন জীবনে ফিরে যাওয়া যায়। যৌনসঙ্গম বা সহবাস রোগীর পুনরায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় না।

হার্ট অ্যাটাকের পরে কিছু পুরুষের ‘ইরেক্টাইল ডিসফাংশন’ দেখা দিতে পারে। ফলে লিঙ্গ শক্ত না হওয়া কিংবা শক্ত অবস্থা ধরে রাখতে না পারার মতো সমস্যা হতে পারে। একারণে সহবাস কঠিন হয়ে পড়তে পারে। সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের ফলে সৃষ্ট মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমনটি হয়ে থাকে।

কিছু সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে বেটা ব্লকার নামক এক ধরনের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। অবস্থার উন্নতির জন্য রোগীকে সিল্ডেনাফিল (যা সাধারণত ভায়াগ্রা নামে পরিচিত) নামক ঔষধ দেওয়া হতে পারে। এটি পুরুষাঙ্গে রক্ত সরবরাহ বাড়িয়ে ইরেকশনে সহায়তা করে। তবে ঔষধটির কারণে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই এই ধরনের ঔষধ সেবন করা যাবে না।

পুনরায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কমানো 

পুনরায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কমানোর জন্য জীবনধারায় স্বাস্থ্যকর কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। পাশাপাশি কিছু ঔষধ সেবন করা চালিয়ে যেতে হবে।

পুনরায় হার্ট অ্যাটাক হওয়া প্রতিরোধ করতে ‘হার্ট অ্যাটাকের কারণ ও প্রতিরোধ’ আর্টিকেলটি পড়ুন। আর্টিকেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানোর জন্য জীবনধারায় কী ধরনের স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনতে হবে সেই বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এই আর্টিকেলে পুনরায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানোর ঔষধগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।

হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানোর জন্য বর্তমানে চার ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা হয়। সেগুলো হলো—

  1. এসিই ইনহিবিটর
  2. অ্যান্টিপ্লাটিলেট
  3. বেটা ব্লকার
  4. স্ট্যাটিন

এসিই ইনহিবিটর

(ACE Inhibitor=Angiotensin Converting Enzyme Inhibitor)

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় প্রায়ই এই জাতীয় ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এই ঔষধগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী কিছু হরমোনের কাজে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে প্রেসার কমায়।

হরমোনের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ফলে একদিকে রক্তে পানির পরিমাণ কমে যায়, অন্যদিকে রক্তনালীগুলো প্রসারিত হয়। এই দুই ঘটনার প্রভাবে রক্তচাপ কমে আসে।

উল্লেখ্য, এসিই ইনহিবিটর ঔষধগুলো কিডনির রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয়। ফলে কিডনির কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে। তাই এই ধরনের ঔষধ সেবনের আগে রক্ত ও প্রস্রাবের পরীক্ষা করে রোগীর কিডনিতে কোনো সমস্যা আছে কি না সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া উচিত।

একটানা এসব ঔষধ সেবন করতে থাকলে বছরে অন্তত একবার রক্ত ও প্রস্রাবের পরীক্ষা করিয়ে নিতে হতে পারে।

এসিই ইনহিবিটর ঔষধগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে—

  • মাথা ঘুরানো
  • ক্লান্ত লাগা অথবা দুর্বলতা
  • মাথাব্যথা
  • দীর্ঘদিন ধরে শুকনো কাশি হওয়া

বেশিরভাগ লক্ষণ কয়েকদিনের মধ্যে চলে যায়। তবে কেউ কেউ দীর্ঘদিন ধরে শুকনো কাশির সমস্যায় ভুগতে পারেন।

অন্য ঔষধ সেবন চলাকালে এসিই ইনহিবিটর জাতীয় ঔষধ সেবন করা হলে কখনো কখনো অনাকাঙ্ক্ষিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই অন্য কোনো ঔষধ সেবন করলে বিষয়টি ডাক্তারকে জানাতে হবে।

সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের পরপরই এসিই ইনহিবিটর জাতীয় ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের জন্য এই ঔষধ সেবন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

কেউ কেউ এসিই ইনহিবিটর জাতীয় ঔষধ সেবনের জন্য উপযুক্ত নন। সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে অ্যানজিওটেন্সিন রিসেপ্টর ব্লকার জাতীয় ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

অ্যান্টিপ্লাটিলেট

এই জাতীয় ঔষধগুলো রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে। রক্তে থাকা প্লাটিলেট নামক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। অ্যান্টিপ্লাটিলেট ঔষধগুলো প্লাটিলেটের এই ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

সাধারণত রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধের জন্য লো-ডোজ অ্যাসপিরিন (৭৫ মিলিগ্রাম) সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এই ঔষধ রক্তকে পাতলা করে। লো-ডোজ অ্যাসপিরিন সাধারণত আজীবন সেবন করে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

কিছু রোগীর, বিশেষ করে হার্টে রিং পরানো রোগীদের ক্ষেত্রে লো-ডোজ অ্যাসপিরিনের পাশাপাশি আরেকটি অ্যান্টিপ্লাটিলেট জাতীয় ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন: ক্লপিডোগ্রেল, প্রাসুগ্রেল ও টিকাগ্রেলর।

রোগীর অ্যাসপিরিনে অ্যালার্জি থাকলে সেক্ষেত্রেও বিকল্প হিসেবে এসব ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

এসিই ইনহিবিটরের মতো অ্যান্টিপ্লাটিলেট ঔষধগুলোও সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের পরপরই সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

এসব ঔষধ কতদিন সেবন করতে হবে সেটি হার্ট অ্যাটাকের ধরন এবং রোগীর চিকিৎসার ধরনের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত চার সপ্তাহ থেকে শুরু করে এক বছর পর্যন্ত এমন অ্যান্টিপ্লাটিলেট ঔষধ সেবন করতে হয়।

অ্যান্টিপ্লাটিলেট জাতীয় ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে—

অ্যাসপিরিন সেবনের পর কোনো বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তবে কোনো অবস্থাতেই হঠাৎ করে অ্যাসপিরিন সেবন করা বন্ধ করা যাবে না। এতে পুনরায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

কখনো কখনো অ্যাসপিরিনের পাশাপাশি ওয়ারফারিন নামক আরেক ধরনের রক্ত পাতলা করার ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে কেবল বিশেষ ধরনের অ্যারিদমিয়া (এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন / Atrial Fibrillation) হলে অথবা হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকলে তখনই এই ঔষধ ব্যবহার করা হয়।

ওয়ারফারিনের সবচেয়ে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া।

নিচের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে—

  • পায়খানা অথবা প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া
  • কালচে পায়খানা হওয়া
  • শরীরে গুরুতর ক্ষত সৃষ্টি হওয়া বা কালশিটে পড়ে যাওয়া
  • ১০ মিনিটের বেশি সময় ধরে নাক দিয়ে রক্ত পড়া
  • রক্তবমি হওয়া
  • কাশির সাথে রক্ত যাওয়া
  • অস্বাভাবিক মাথাব্যথা 
  • মাসিকের সময়ে স্বাভাবিকের তুলনায় ভারী রক্তক্ষরণ হওয়া অথবা মাসিকের রাস্তা দিয়ে কোনো কারণে রক্ত যাওয়া

নিচের তিনটি ক্ষেত্রে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে—

১. বড় ধরনের দুর্ঘটনার কবলে পড়লে

২. মাথায় গুরুতর আঘাত পেলে

৩. কোনো কারণে রক্তপাত শুরু হওয়ার পর সেটি বন্ধ করা সম্ভব না হলে

বেটা ব্লকার

এই জাতীয় ঔষধগুলো হার্ট অ্যাটাকের পরে হার্টের পেশিগুলোকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।

এই ঔষধগুলো সেবন করলে রোগীর হার্টের পেশীগুলো শিথিল হয়, ফলে হার্ট ধীরে ধীরে স্পন্দিত হয়। সেই সাথে রোগীর রক্তচাপও কমে যায়। এই দুই ঘটনার প্রভাবে হার্টের পেশীগুলোর উপরে চাপ কমে যায়।

সাধারণত রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পরেই এই ঔষধ সেবন শুরু করতে বলা হয় এবং চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এই ঔষধগুলোর কমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে—

  • ক্লান্তি
  • হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
  • হৃৎস্পন্দনের গতি কমে যাওয়া
  • ডায়রিয়া
  • বমি বমি ভাব

অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে—

  • ঘুম কমে যাওয়া অথবা দুঃস্বপ্ন দেখা
  • পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌনসঙ্গমে সমস্যা হওয়া (ইরেক্টাইল ডিসফাংকশন অথবা ইমপোটেন্স)

বেটা ব্লকার জাতীয় ঔষধগুলো অন্যান্য ঔষধের সাথে সেবন করা হলে এদের সমন্বয়ে বিভিন্ন ধরনের বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই এগুলোর সাথে অন্য কোনো ঔষধ সেবন করলে বিষয়টি ডাক্তারকে জানাতে হবে।

স্ট্যাটিন

স্ট্যাটিন জাতীয় ঔষধগুলো রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো করোনারি ধমনীগুলোকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। ফলে পুনরায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

স্ট্যাটিন লিভারে কোলেস্টেরল তৈরিতে ব্যবহৃত এক ধরনের রাসায়নিক (এইচএমজি-কোএ রিডাক্টেজ এনজাইম) এর কাজে বাধা দেয়।

এসব ঔষধ সেবনে কখনো কখনো মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন—

মাঝে মাঝে এই ধরনের ঔষধ সেবনের পরে মাংসপেশিতে ব্যথা ও দুর্বলতা দেখা দেয়। এই ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে ঔষধের ডোজ পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।

এ ছাড়া ক্ল্যারিথ্রোমাইসিন ও এই জাতীয় কিছু অ্যান্টিবায়োটিক সেবন চলাকালে স্ট্যাটিন জাতীয় ঔষধ সেবন বন্ধ রাখার প্রয়োজন হতে পারে। তাই স্ট্যাটিন সেবন করলে বিষয়টি ডাক্তারকে জানাতে হবে।

স্ট্যাটিন সাধারণত লম্বা সময় ধরে সেবন করতে হয়।