গর্ভপাতের চিকিৎসা

গর্ভপাতের ফলে যদি গর্ভের সন্তান ও গর্ভফুল সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে যায় তাহলে আর কোনো ঔষধপত্রের প্রয়োজন পড়ে না। তবে যদি মায়ের গর্ভে এসব কিছু অবশিষ্ট থেকে যায়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন আছে।

গর্ভপাত কোন ধরনের এবং কীভাবে হয়েছে এসবের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন—

১. অপেক্ষমাণ ব্যবস্থা

প্রথম ত্রৈমাসিকে গর্ভপাত হলে, গর্ভ থেকে গর্ভাবস্থার সকল টিস্যু আপনা-আপনি বের হয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। এটিও এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি।

গর্ভপাতের পর জরায়ু থেকে গর্ভের মৃত শিশু, গর্ভফুল ও অন্যান্য টিস্যু নির্গত হয়ে যাওয়ার জন্য সাধারণত ৭ থেকে ১৪ দিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি এই সময়ের মধ্যে রক্তপাত ও ব্যথা কমে যায় অথবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে গর্ভপাত সম্পূর্ণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

এর ৩ সপ্তাহ পর একটি প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে টেস্ট করে গর্ভাবস্থার অবসান হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত করতে বলা হয়। যদি প্রেগন্যান্সি টেস্ট তখনো পজিটিভ আসে, অর্থাৎ আপনি তখনো গর্ভবতী থাকলে, গর্ভপাত সম্পূর্ণ হয়েছে কি না নিশ্চিত হতে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা (যেমন: আলট্রাসাউন্ড) করার প্রয়োজন হতে পারে।

তবে গর্ভপাতের কোনো লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর যদি ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রক্তপাত ও ব্যথা শুরু না হয়—এর অর্থ গর্ভপাত এখনো শুরু হয়নি। আবার রক্তপাত ও ব্যথা যদি ক্রমশ বাড়তে থাকে—এর অর্থ গর্ভপাত অপেক্ষমাণ ব্যবস্থায় পুরোপুরি ভাবে সম্পূর্ণ হয়নি। এই অবস্থায় সাধারণত আপনাকে একটি  আলট্রাসাউন্ড করার পরামর্শ দেওয়া হবে।

এই আলট্রাসাউন্ডের ফলাফল অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, পরবর্তী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই পর্যায়ে ঔষধ অথবা অপারেশনের সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। যদি ডাক্তার আবারও অপেক্ষামান ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আরও ১৪ দিন অপেক্ষা করা যেতে পারে।

তবে এই সময়ে মাসিকের রাস্তায় ভারী রক্তপাত, পেটে তীব্র ব্যথা অথবা জ্বর আসছে কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। কেননা এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। নতুবা ইনফেকশন কিংবা শরীরে রক্ত কমে গিয়ে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

২. ঔষধ

অপেক্ষমাণ ব্যবস্থায় গর্ভপাত সম্পূর্ণ না হলে কিংবা শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ঔষধের প্রয়োজন হলে, ডাক্তার আপনাকে ঔষধ ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন। এক্ষেত্রে সাধারণত দুই ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা হয়। যেমন—

১. মিসোপ্রোস্টল: এই ঔষধ আপনার জরায়ুমুখকে প্রসারিত করে এবং জরায়ুর ভেতরের গর্ভকালীন টিস্যুকে সংকোচনের মাধ্যমে বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। এটি সাধারণত ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়, যা যোনিপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় অথবা জিহ্বার নিচে রাখতে বলা হয় অথবা মুখে সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

২. অক্সিটোসিন: এটি জরায়ুর সংকোচন বাড়িয়ে দিয়ে গর্ভে বিদ্যমান অবশিষ্ট গর্ভকালীন টিস্যুকে বাইরে বের করে দেয়। পাশাপাশি এটি গর্ভপাত পরবর্তী রক্তক্ষরণ কমাতেও সাহায্য করে। অক্সিটোসিন ইনজেকশন আকারে পাওয়া যায়, যা শিরায় অথবা স্যালাইনের সাথে মিশিয়ে শিরাপথে দেওয়া হয়।

এই ঔষধগুলো ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থেকে গ্রহণ করা প্রয়োজন। কেননা এসব ঔষধ কয়েক ঘন্টার মধ্যে আপনার শরীরে কাজ করতে শুরু করে। ফলে মাসিকের রাস্তায় ভারী রক্তপাত ও পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। ভারী রক্তপাত হলে যেকোনো সময়ে শরীরে রক্ত কমে যাওয়ার কারণে আপনি শকে চলে যেতে পারেন, যা আপনার জীবন বিপন্ন করতে পারে।

তাই আপনি এসব ঔষধ গ্রহণের পরে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে হাসপাতালে থাকলে ভালো হয়। এতে যেকোনো সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

তবে কখনো কখনো রক্তপাত অল্প থেকে মাঝারি পরিমাণের হয়। সেক্ষেত্রে ডাক্তার আপনার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আপনাকে বাসায় যাওয়ার পরামর্শ দিতে পারে। এই রক্তপাত প্রায় ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে যেকোনো সময়ে ভারী রক্তপাত হলে দ্রুত হাসপাতালে চলে যাবেন।

তবে অনেক ক্ষেত্রে ঔষধ সেবনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোনো রক্তপাত না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।

এই ঔষধ সেবনের ৩ সপ্তাহ পর আপনি প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে আবার টেস্ট করে নিশ্চিত হবেন যে, আপনি এখনো গর্ভবতী কি না। যদি টেস্টে পজিটিভ রেজাল্ট আসে, অর্থাৎ আপনি তখনো গর্ভবতী থাকলে পুনরায় আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।

সতর্কতা

কখনো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে গর্ভপাতের ঔষধ বাসায় বসে সেবন করবেন না। অনেকে প্রেগন্যান্সি কিট টেস্টের রেজাল্ট পজিটিভ আসার পর অন্য কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই নিজে নিজে গর্ভপাত করানোর ঔষধ সেবন করে থাকেন। এসব ঔষধ সাধারণত বাজারে এমএম কিট, এ কিট, এবি কিট, সাইটোমিস কিট ও টারমিনেক্স নামে পাওয়া যায়। এসব গ্রহণের ফলে মাসিকের রাস্তায় তীব্র রক্তপাত কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হয়ে থাকলে হাসপাতালে আসার আগেই আপনার জীবন বিপন্ন হয়ে যেতে পারে।

যদি এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হয়ে থাকে তাহলে আপনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আপনার পেটের ভেতরে প্রচণ্ড রক্তপাত হয়ে আপনি মারাও যেতে পারেন। তাই অবশ্যই এসব ঔষধ সেবনের পূর্বে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।

৩. অপারেশন

কখনো কখনো গর্ভপাত হলে একটি ছোটো অপারেশনের সাহায্য নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে যোনিপথ ও জরায়ুমুখ দিয়ে কিছু যন্ত্রপাতির সাহায্যে গর্ভের ভেতর থেকে গর্ভাবস্থার টিস্যু বের করে আনা হয়। যেসব কারণে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে—

  • মাসিকের রাস্তায় অনবরত ভারী রক্তপাত হলে
  • জরায়ুর ভেতরে গর্ভাবস্থার টিস্যু অবশিষ্ট থাকায় ইনফেকশন হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হলে
  • অপেক্ষমাণ ব্যবস্থা ও ঔষধ অকার্যকর হলে

এই অপারেশনের পূর্বে চেতনানাশক বা অবশ করার ঔষধ দিয়ে রোগীকে আংশিক কিংবা সম্পূর্ণভাবে অবশ করা হয়ে থাকে।

গর্ভপাতের কিছু বিশেষ রূপ এবং সেসবের চিকিৎসা

চিকিৎসার সুবিধার্থে গর্ভপাতকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হয়।[১] গর্ভপাতের এই বিশেষ রূপগুলো হলো—

১. থ্রেটেনড অ্যাবরশন বা গর্ভপাত ঘটতে পারে এমন অবস্থা

এমন ক্ষেত্রে গর্ভপাত হওয়ার প্রক্রিয়া মাত্র শুরু হতে আরম্ভ করে। তবে গর্ভের শিশু তখনো গর্ভে বেঁচে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে গর্ভাবস্থা ধরে রাখা যেতে পারে, এমনকি সুস্থ সন্তানও জন্ম দেওয়া সম্ভব হতে পারে। 

এই অবস্থাতে সাধারণত গর্ভবতীর যোনিপথে হালকা রক্তক্ষরণ ছাড়া আর তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। এ অবস্থা থেকে গর্ভপাত হবে না কি গর্ভাবস্থা বজায় থেকে সুন্দরভাবে শিশু পৃথিবীর আলো দেখবে সেটি সুনিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব হয় না। একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম ফলাফল হতে পারে।

চিকিৎসা

এক্ষেত্রে মূল চিকিৎসা হলো গর্ভবতীকে বিশ্রামে রাখা এবং অপেক্ষা করা। সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকলেই যে পুরোপুরি গর্ভপাত হওয়া প্রতিরোধ করা যাবে এমনটা নয়। তবুও এই সময়ে বিশ্রাম নেওয়া এবং ভারী কাজ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ব্যথা থাকলে প্রয়োজনে ব্যথানাশক ব্যবহার করা যায়। প্রোজেস্টেরন হরমোনসমৃদ্ধ একটি ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা গর্ভাবস্থা ধরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে, থ্রেটেনড অ্যাবরশনের পর গর্ভাবস্থা বজায় থাকার সম্ভাবনা থাকলেও যেকোনো সময়ে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে।

২. ইনএভিটেবল অ্যাবরশন বা গর্ভপাত হতে যাচ্ছে এমন অবস্থা

এক্ষেত্রে গর্ভপাত হওয়ার প্রক্রিয়া পুরোপুরিভাবে শুরু হয়ে যায় এবং এমন এক অবস্থায় পৌঁছায়, যা থেকে গর্ভপাত প্রতিরোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব না। গর্ভপাত তখনো পুরোপুরি শেষ না হয়ে থাকলেও তা আটকে রাখাও সম্ভব হয় না। এমন অবস্থাকে ইনএভিটেবল অ্যাবরশন বলা হয়।

থ্রেটেনড অ্যাবরশনের মতো শুরুতে মাসিকের রাস্তায় অল্প রক্তপাত হলেও ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। এর পাশাপাশি তলপেটে ব্যথাও বাড়তে পারে।

চিকিৎসা

এক্ষেত্রে ঔষধ ও অপারেশন উভয়ের সাহায্যে গর্ভপাতের চিকিৎসা করা হতে পারে। রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি বাছাই করা হয়।

৩. মিসড অ্যাবরশন বা গর্ভপাত বুঝতে না পারা

এক্ষেত্রে গর্ভধারণের ২৮তম সপ্তাহের পূর্বে গর্ভে সন্তানের মৃত্যু হয় এবং মৃত অবস্থাতেই গর্ভে সন্তান কিছু সময় পর্যন্ত থেকে যায়। ফলে গর্ভপাত হয়েছে কি না তা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। একে মিসড অ্যাবরশন বলে।

মিসড অ্যাবরশন হলে যোনিপথে হালকা খয়েরী রঙের রক্তপাত হতে পারে। এসময়ে গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে কমে আসতে শুরু করে। সেই সাথে গর্ভের আকারও ছোটো হয়ে আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভপাত হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা হয়।

চিকিৎসা

এখানেও ঔষধ ও অপারেশন উভয়ের সাহায্যে গর্ভপাতের চিকিৎসা করা হতে পারে। রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি বাছাই করা হয়।

৪. ইনকমপ্লিট অ্যাবরশন বা অসম্পূর্ণ গর্ভপাত

এ অবস্থায় গর্ভবতী নারীর যোনিপথ দিয়ে মাংসের দলার মতো কিছু বের হয়ে যায়। তবে অপরিণত শিশু কিংবা গর্ভফুলের কিছু অংশ গর্ভের ভেতরে তখনো থেকে যায়। গর্ভপাত পুরোপুরি সম্পূর্ণ হয় না বলে একে ইনকমপ্লিট অ্যাবরশন বলা হয়।

এক্ষেত্রে যোনিপথে মাংসপিণ্ডের মতো কিছু বের হয়ে আসার পর পরই তলপেটে একটানা ব্যথা হতে পারে। পাশাপাশি যোনিপথ থেকে ক্রমাগত রক্তপাত হতে পারে। আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে এ ধরনের গর্ভপাত নিশ্চিত করা যায়।

চিকিৎসা

এক্ষেত্রেও ঔষধ ও অপারেশন উভয়ের সাহায্যে গর্ভপাতের চিকিৎসা করা হতে পারে। রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি বাছাই করা হয়।

৫. সেপটিক অ্যাবরশন বা জরায়ুতে ইনফেকশনসহ অ্যাবরশন

গর্ভপাতের পাশাপাশি জরায়ুতে ইনফেকশন হলে তাকে সেপটিক অ্যাবরশন বলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ইনফেকশন ডিম্বাশয় ও ডিম্বনালী এমনকি পুরো পেটে ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই জরুরি ভিত্তিতে সেপটিক অ্যাবরশনের চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। নতুবা পুরো শরীরে ইনফেকশন ছড়িয়ে গেলে আক্রান্ত নারী মৃত্যুবরণ করতে পারেন।

সাধারণত বাড়িতে অথবা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোনো জায়গায় অবৈধ কিংবা অস্বাস্থ্যকর উপায়ে যোনিপথে কিছু ঢুকিয়ে গর্ভপাত করানোর চেষ্টা করলে সেপটিক অ্যাবরশন হয়। তবে এসব ছাড়া কারও আপনাআপনি গর্ভপাত হলেও তার সেপটিক অ্যাবরশন হতে পারে।

এ ধরনের গর্ভপাতে সাধারণত যোনিপথে দুর্গন্ধময় ও পুঁজযুক্ত রক্তপাত হয়। এর পাশাপাশি জ্বর ও তলপেটে তীব্র ব্যথা হতে পারে।

চিকিৎসা

এক্ষেত্রে রোগীকে ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ইনজেকশনের মাধ্যমে ব্রড স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে অপারেশনের মাধ্যমে জরায়ু থেকে সকল আক্রান্ত টিস্যু অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

তবে ইনফেকশন ছড়িয়ে গেলে রোগীর জীবন বাঁচাতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রয়োজনে জরায়ু কেটে ফেলার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন।

৬. রিকারেন্ট অ্যাবরশন বা বারবার গর্ভপাত হওয়া

যদি কোনো নারীর তিন অথবা তার বেশিবার পরপর গর্ভপাত হয়, এই অবস্থাকে রিকারেন্ট অ্যাবরশন বলে। বিভিন্ন কারণে এমন হতে পারে।

রিকারেন্ট অ্যাবরশন হওয়ার পেছনে অনেকসময় কিছু জেনেটিক কারণ থাকতে পারে। আবার মায়ের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে এমন পারে। যেমন: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম, অ্যান্টি-ফসফোলিপিড অ্যান্টিবডি সিনড্রোম, মায়ের জরায়ু অথবা জরায়ুমুখের গঠনগত সমস্যা।

চিকিৎসা

কখনো কখনো বারবার গর্ভপাত হতে থাকলে তার জন্য দায়ী নির্দিষ্ট সমস্যা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। তাই আপনার ক্ষেত্রে এমন কোনো রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব হলে নির্দিষ্ট চিকিৎসা গ্রহণ করুন। এতে করে পরবর্তীতে একই কারণে গর্ভপাত হওয়া প্রতিরোধ করা যায় এবং এসব অসুস্থতা চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হয়ে যায়। যেমন—

  • অ্যান্টি ফসফলিপিড অ্যান্টিবডি সিনড্রোম: এই রোগে শরীরের রক্ত জমাট বেঁধে যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এর চিকিৎসায় অ্যাসপিরিন ও হেপারিন নামক দুইটি ঔষধের সংমিশ্রণ ব্যবহার করা হলে তা গর্ভাবস্থায় ভালো ফলাফল দেয়।
  • জরায়ুমুখের দুর্বলতা: এই ক্ষেত্রে একটি ছোটো অপারেশনের মাধ্যমে আপনার জরায়ুমুখ শক্ত সুতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। ফলে তা গর্ভাবস্থায় বন্ধ থাকে এবং গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে। সাধারণত গর্ভাবস্থার ১২তম সপ্তাহের পরে এটি করা হয়।
  • জরায়ুর গঠনগত সমস্যা: এমন কোনো সমস্যা থাকলে তা অপারেশনের মাধ্যমে ঠিক করার চেষ্টা করা যেতে পারে।
  • অন্যান্য রোগ: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা ও পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থাকলে সেসব রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

তবে অনেকসময় পুনরাবৃত্ত গর্ভপাতের জন্য বাবা-মায়ের জিনগত সমস্যা দায়ী হতে পারে যার কোনো চিকিৎসা নেই। সেক্ষেত্রে সন্তান নেওয়ার বিকল্প উপায়গুলোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। যেমন: দাতা ডিম্বাণু অথবা দাতা স্পার্ম ব্যবহার।