ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা

টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়েও আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন। একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে পর্যাপ্ত শরীরচর্চা করার মাধ্যমে অনেকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

আপনি বিভিন্ন রকমের খাবার খেতে পারবেন, তবে কিছু খাবার অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। প্রতিদিন সকালের নাশতা, দুপুরের ও রাতের খাবার সময়মত খাবেন। কোনো বেলার খাবার যেন বাদ না পড়ে। নানা রকমের ফলমূল, শাকসবজি ও কিছু শ্বেতসার-জাতীয় খাবার (যেমন লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি ও আলু) খেতে পারেন। তবে চিনি, লবণ ও চর্বিজাতীয় খাবার যতটুকু না খেলেই নয় ঠিক ততটুকুই খাওয়া উচিত।

ডায়াবেটিস রোগীদের আদর্শ খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের ডায়াবেটিস রোগীর ডায়েট আর্টিকেলটি পড়ুন।

নিয়মিত ব্যায়াম

নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম রক্তে সুগারের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করবে। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। এই ব্যায়াম হতে পারে দ্রুত হাঁটা থেকে শুরু করে ভারী শারীরিক কসরত। সপ্তাহের যেকোনো পাঁচ দিন মাত্র ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করলেও সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টা শারীরিক পরিশ্রম করা হয়ে যাবে।

ডায়াবেটিস রোগীদের ব্যায়াম নিয়ে আরও জানতে চাইলে ডায়াবেটিস রোগীর ব্যায়াম ও ওজন শীর্ষক আর্টিকেলটি পড়ুন।

যাদের ডায়াবেটিস এভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না তাদের ক্ষেত্রে ওষুধ সেবনের প্রয়োজন পড়ে। এই আর্টিকেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ওষুধপত্র নিয়ে আলোচনা করা হবে।

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ওষুধ

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার ওষুধগুলো রক্তে সুগারের মাত্রা যতটা সম্ভব স্বাভাবিকের কাছাকাছি রাখতে সাহায্য করে। এভাবে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। তবে রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা এবং ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলাও গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার ব্লাড সুগার কেমন থাকছে অর্থাৎ কতটুকু নিয়ন্ত্রণে থাকছে তার ওপর ভিত্তি করে ওষুধ, এমনকি ওষুধের ডোজও পরিবর্তন করা প্রয়োজন হতে পারে।

আপনার জন্য সঠিক ডায়াবেটিসের ওষুধ বাছাই

ডায়াবেটিসের ওষুধ আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের বিভিন্ন ধরনের ওষুধ রয়েছে। আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন ওষুধ সবচেয়ে ভালো কাজ করে তা বের করতে কয়েকটি ওষুধ চেষ্টা করা হতে পারে। এভাবে সঠিক ওষুধ ও ডোজ খুঁজে পেতে কিছুদিন সময় লাগতে পারে। 

সাধারণত, প্রথমে একজন রোগীকে মেটফরমিন নামের একটি ওষুধ দেওয়া হয়। মেটফরমিন সেবনের পরেও আপনার রক্তে সুগারের পরিমাণ না কমলে সাথে আরেকটি ওষুধ যোগ করতে হতে পারে। সময়ের সাথে আপনার একাধিক ওষুধ সমন্বয় করে সেবনের প্রয়োজনীয়তা বাড়তে পারে।

একেকজনের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একেক ধরনের ওষুধের প্রয়োজন হয়, আবার ওষুধের ডোজেও ভিন্নতা থাকে। আপনার ডায়াবেটিস কোন পর্যায়ে আছে তার ওপর ভিত্তি করে ডাক্তার আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ওষুধটি নির্ধারণ করে দেবেন। 

একাধিক ওষুধ সমন্বয় করে সেবনের পরেও যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়। সাধারণত শুরুতেই টাইপ ২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ইনসুলিন ব্যবহার করা হয় না।

ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করার নিয়ম

ওষুধগুলো সেবন ও সংরক্ষণ করার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে অবশ্যই সেই নিয়মগুলো জেনে নিবেন। 

ইনসুলিন ব্যবহার করতে হলে ইনজেকশন বা সুঁই দেবার প্রক্রিয়া ডাক্তার বা হাসপাতালের অভিজ্ঞ নার্সের কাছ থেকে জেনে নিবেন। সেই সাথে এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে সেটাও জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন।

ডায়াবেটিসের ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া 

ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবনে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • পেট ফাঁপা ভাব ও ডায়রিয়া 
  • ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া 
  • বমিবমি লাগা
  • শরীরের এক বা একাধিক অংশে পানি আসার কারণে ফুলে যাওয়া 

সবার মধ্যেই এসব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে, এমনটি নয়।

ওষুধ সেবনের পরে শরীর খারাপ লাগলে বা কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

জরুরী পরামর্শ
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই ওষুধ সেবন বন্ধ করবেন না।

ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবনকালে ভ্রমণ

কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময়:

  • আপনি যতদিনের জন্য ঘুরতে যাচ্ছেন ততদিনের ওষুধতো হিসাব করে সঙ্গে নিতেই হবে, সেই সাথে সম্ভব হলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু ওষুধ সাথে নিয়ে যান। এতে করে ফিরতে দেরি হলে বা বিশেষ প্রয়োজনে ওষুধগুলো কাজে লাগবে।
  • ওষুধগুলো আপনার হাতের কাছের কোন ছোট ব্যাগে রাখুন। বড় ব্যাগে রাখলে ওষুধগুলো খুঁজে পেতে সময় লাগা, নষ্ট হওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার মত সমস্যা হতে পারে। 
  • আপনি যদি ইনসুলিন ব্যবহার করেন এবং আপনার প্লেনে করে কোথাও ভ্রমণ করতে হয়, তাহলে হয়তো ভ্রমণের সময় আপনার ইনসুলিনের প্রেসক্রিপশনটি দেখাতে হতে পারে। তাই ইনজেকশন নিয়ে প্লেনে করে ভ্রমণ করার সময় আপনার প্রেসক্রিপশন সাথে রাখুন।