গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙা

প্রসবের সময় যত ঘনিয়ে আসে মায়েদের প্রসব প্রক্রিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা তত বাড়তে থাকে। পানি ভাঙা এর মধ্যে একটি। সাধারণত প্রসব প্রক্রিয়ার শুরুতে পানি ভেঙে থাকে। তবে পানি ভাঙা ছাড়াও প্রসব হতে পারে।

পানি ভাঙা কীভাবে বুঝতে হয় এবং পানি ভাঙ্গলে করণীয় কী—এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকলে তা আপনার প্রসবের প্রক্রিয়াটিকে সহজ ও ঝামেলামুক্ত করতে সাহায্য করবে।

গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙা বলতে কী বোঝায়?

গর্ভে আপনার সন্তান একটি থলির ভেতর বেড়ে ওঠে যার নাম ‘এমনিওটিক স্যাক’। এই থলিটি এক ধরনের পানি দিয়ে পূর্ণ থাকে যাকে বলা হয় ‘এমনিওটিক ফ্লুইড’। এই থলিতে ভেসে ভেসে আপনার সন্তান গর্ভে বেড়ে ওঠে এবং বাইরের চাপ ও ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা পায়।[১]

প্রসবের শুরুতে এই থলিটি নিজ থেকেই ছিঁড়ে যায় এবং এর ভেতরের পানি সন্তান প্রসব হওয়ার রাস্তা দিয়ে বের হয়ে আসে। এ প্রক্রিয়াকে আমরা পানি ভাঙা হিসেবে জানি।

গর্ভাবস্থায় কখন পানি ভাঙে?

গর্ভাবস্থার ৩৭ থেকে ৪২ সপ্তাহকে প্রসবের স্বাভাবিক সময়কাল হিসেবে ধরা হয়। স্বাভাবিকভাবে এই সময়ের মধ্যেই পানি ভাঙে। সাধারণত প্রসববেদনা শুরু হওয়ার পর পানি ভাঙে।

তবে কারও কারও ক্ষেত্রে প্রসববেদনা শুরু হওয়ার আগেও পানি ভাঙ্গতে পারে। যদি ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগে পানি ভেঙে যায় তাকে বলা হয় ‘প্রিটার্ম রাপচার অফ মেমব্রেন’।

গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙার লক্ষণ

পানি ভাঙলে সাধারণত যেই লক্ষণগুলো দেখা যায়—

  • পানি ভাঙ্গলে আপনার যোনি ও এর আশেপাশের জায়গা ভেজা ভেজা লাগতে পারে
  • আপনার অন্তর্বাস এবং পায়জামা ভিজে যেতে পারে
  • অনেকসময় যোনিপথে একসাথে অনেকটুকু পানিও বের হয়ে আসতে পারে তবে সাধারণত পানি ভাঙ্গলে লম্বা সময় ধরে অল্প অল্প করে পানি বের হতে থাকে। 

এই পানি দেখতে পরিষ্কার অথবা হাল্কা হলুদ রঙের হয়।

পানি ভাঙা না কি প্রস্রাব?

অনেকসময় প্রস্রাব না কি পানি ভাঙার পানি—এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। বিভ্রান্তি দূর করার একটি উপায় হলো বের হওয়া পানির গন্ধ। যদি যোনি থেকে বের হওয়া তরলটির প্রস্রাবের মতো, অর্থাৎ অ্যামোনিয়ার ন্যায় ঝাঁঝালো গন্ধ থাকে সেক্ষেত্রে এটি প্রস্রাব। আর যদি কোনো গন্ধ না থাকে অথবা একটি মিষ্টি গন্ধ থাকে সেক্ষেত্রে এটি পানি ভাঙার পানি।

পানি ভাঙা না কি স্রাব?

স্রাব সাধারণত একটু ঘন, আঠালো ও দুধের মতো সাদা হয়। আর পানি ভাঙার পানিটি হালকা হলুদ বা ফ্যাকাশে রঙের এবং পাতলা তরল জাতীয় হয়ে থাকে।

তবে খেয়াল রাখতে হবে যে পানি ভাঙার সাথে একই সময়ে আপনার ‘মিউকাস প্লাগ’, অর্থাৎ গর্ভকালে জরায়ুমুখে জমা হওয়া স্রাবও নিঃসৃত হতে পারে।[২] এটি কিছুটা রক্ত মিশ্রিত হতে পারে, যাকে বলে ‘শো’। প্রসব প্রক্রিয়ার শুরুতে এগুলো স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে। তাই এমনটা হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।

পানি ভাঙার পর করণীয়

পানি ভেঙে গেলে আপনি উত্তেজিত অনুভব করাটা স্বাভাবিক। তবে নিজেকে শান্ত রেখে সঠিকভাবে পরবর্তী ধাপগুলো নেওয়ার চেষ্টা করুন। 

যদি প্রসববেদনাসহ পানি ভেঙে থাকে তাহলে আপনার প্রসব প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। সেক্ষেত্রে আপনার সন্তান প্রসবের পরিকল্পনা অনুযায়ী হাসপাতালে অথবা ম্যাটার্নিটি ক্লিনিকে যান।

কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?

  • যদি গর্ভাবস্থায় আপনাকে চিকিৎসক কোনো ইনফেকশনের ব্যাপারে সতর্ক করে থাকেন, বিশেষ করে যদি আপনি ‘গ্রুপ বি স্ট্রেপটোকক্কাস’ দিয়ে আক্রান্ত হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে পানি ভাঙার সাথে সাথে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আপনার সন্তানও একই ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে।
  • যদি পানি ভাঙার পর পানির রঙ সবুজাভ অথবা বাদামী মনে হয় সেক্ষেত্রে এমনিওটিক ফ্লুইডের সাথে গর্ভের শিশুর প্রথম পায়খানা বা ‘মেকোনিয়াম’ মিশ্রিত থাকতে পারে। এমনটা হলে গর্ভের শিশুর মেকোনিয়াম মিশ্রিত পানি খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে যা শিশুটির ক্ষতি করতে পারে। তাই দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।
  • যদি পানির সাথে বেশি পরিমাণে রক্ত যেতে থাকে তবে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। পানিতে অল্প পরিমাণে রক্ত মিশ্রিত থাকা সাধারণত স্বাভাবিক। কিন্তু বেশি পরিমাণে রক্ত যাওয়াটা গর্ভফুল বা প্লাসেন্টার জটিলতা নির্দেশ করে, যা গর্ভের শিশুর জন্য মারাত্মক হতে পারে।
  • যদি একবার অল্প পরিমাণে পানি বের হয়ে থেমে যায়। এ ক্ষেত্রে আপনার গর্ভের সন্তান নিচে নেমে এসে তার মাথা দিয়ে পানি বের হওয়ার রাস্তাবন্ধ করে দেওয়ার একটি আশংকা থাকে।
  • যদি পানি ভাঙার সাথে আপনার যোনিপথে কিছু আঁটকে আছে বলে মনে হয় অথবা যদি যোনিপথে নাড়ির একটি অংশ দেখতে পান। যদি প্রসব প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে আপনার পানি ভাঙে তাহলে ‘আম্বিলিকাল কর্ড’ বা নাড়ি নিচে নেমে যাওয়ার আশংকা থাকে। একে বলা হয় আম্বিলিকাল কর্ড প্রোল্যাপ্স।

পানি ভাঙার পরও প্রসব ব্যথা না উঠলে করণীয়

যদি গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহ অথবা তার পরে আপনার পানি ভাঙে এবং এর সাথে প্রসববেদনা শুরু না হয়, সেক্ষেত্রে আপনি ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারেন। অপেক্ষা করার সময়ে কিছু নিয়ম মেনে চলুন—

  • ইনফেকশনের ঝুঁকি কমানোর জন্য আপনার অন্তর্বাস, যোনি ও যোনির আশেপাশের জায়গা পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন
  • প্রয়োজনে প্যাড ব্যবহার করুন
  • সহবাস এড়িয়ে চলুন
  • টয়লেটে গেলে যোনির অংশটুকু সামনে থেকে পেছনের দিকে ধোয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দিন

তবে বাসায় অপেক্ষা করার চেয়ে এসময়ে হাসপাতালে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্বাবধানে থাকাটাই অনেকে নিরাপদ মনে করেন।

২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও যদি প্রসববেদনা শুরু না হয়, সেক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে প্রসব শুরু করানোর জন্য ডাক্তার আপনাকে কিছু ঔষধ দিতে পারেন। যেমন: অক্সিটোসিন। কৃত্রিমভাবে প্রসব শুরু করানোর পদ্ধতিকে বলা হয় ‘লেবার ইনডাকশন’।[৩]

পানি অর্থাৎ এমনিওটিক ফ্লুইডে অ্যান্টিবডি থাকে যা গর্ভের শিশুকে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু থেকে সুরক্ষা দেয়। পানি ভাঙার ফলে এই পানি ছাড়া গর্ভের শিশু ইনফেকশনের ঝুঁকিতে থাকে। তাই তাড়াতাড়ি শিশুকে বের করে আনার জন্য লেবার ইনডাকশন করা হয়।

যদি ৩৭ সপ্তাহের আগে এবং ৩৪ সপ্তাহের পর এমন হয়, সেক্ষেত্রে পানি ভাঙার পর ২৪–৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত প্রসববেদনা শুরু হওয়ার অপেক্ষা করা হয়ে থাকে। এরপরও প্রসববেদনা শুরু না হলে সাধারণত অক্সিটোসিন দিয়ে প্রসব প্রক্রিয়া শুরু করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গর্ভাবস্থায় অসময়ে পানি ভাঙ্গলে করণীয়

৩৪ সপ্তাহের আগে পানি ভেঙে গেলে এবং প্রসব বেদনা না থাকলে এই অবস্থাকে বলা হয় ‘প্রিটার্ম প্রিলেবার রাপচার অফ মেমব্রেন’। ৩৪ সপ্তাহের আগে গর্ভের শিশু সাধারণত পুরোপুরি পরিণত হয় না, এসময় তার ফুসফুস অপরিপক্ব থেকে যায়।[৪]

তাই এসময়ে জন্মগ্রহণ করলে শিশুটির সুস্থভাবে বাঁচবার সম্ভাবনা কম থাকে। এজন্য সাধারণত ৩৪ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগে পানি ভাঙলেও প্রসবের প্রক্রিয়া যথাসম্ভব পেছানোর চেষ্টা করা হয়।

এক্ষেত্রে প্রসবের প্রক্রিয়া পেছাতে এবং গর্ভের শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়—[৫]

  • গর্ভবতী মাকে টয়লেটের সুবিধাসহ বেড রেস্ট, অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখা হয়
  • গর্ভের শিশুর ফুসফুসের বিকাশ ত্বরান্বিত করতে এবং রেসপাইরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম নামক শ্বাসকষ্টজনিত মারাত্মক জটিলতা কমাতে স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ দেওয়া হয়।[৬][৭][৮][৯] যেমন: বেটামিথাসন অথবা ডেক্সামিথাসন)
  • ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়[১০][১১][১২]
  • গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষার জন্য ম্যাগনেসিয়াম সালফেট নামক ঔষধ দেওয়া হতে পারে[১৩][১৪][১৫][১৬] 
  • গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে

সাধারণ জিজ্ঞাসা

গর্ভাবস্থায় পানি ভাঙার সঠিক সময় কখন?

গর্ভাবস্থার ৩৭ থেকে ৪২ সপ্তাহ হলো প্রসবের স্বাভাবিক সময়। তাই এই সময়ের মধ্যে পানি ভাঙলে সেটাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়।

গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকেই পানি ভাঙ্গলে কি গর্ভের শিশুকে বাঁচানো সম্ভব?

গর্ভের শিশুর পূর্ণ বিকাশ হওয়ার আগে যদি পানি ভেঙে তার জন্ম হয়ে যায় তাহলে তাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পরে। আর পানি ভাঙার পর সাধারণত খুব বেশিদিন অপেক্ষাও করা যায় না। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে পানি ভাঙলে গর্ভের শিশুকে বাঁচাতে পারার সম্ভাবনা খুব কম।

প্রসবের সময় হয়েছে কিন্তু পানি ভাঙে নাই এই মুহূর্তে করণীয় কী?

প্রসব প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ার পরও যদি পানি না ভাঙে সেক্ষেত্রে ডাক্তার কৃত্রিমভাবে আপনার পানি ভাঙার ব্যবস্থা করতে পারেন। পানিটি যেই থলির ভেতর আছে, অর্থাৎ এমনিওটিক থলির গায়ে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে ফুটো করা হতে পারে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ‘এমনিওটোমি’।[১৭] এর ফলে পানি ভেঙে যাবে এবং প্রসব প্রক্রিয়া চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

(১৭)

  1. “Ruptured Membranes: When the Bag of Water Breaks.” Journal of Midwifery & Women’s Health, vol. 61, no. 4, June 2016, pp. 545–46, https://doi.org/10.1111/jmwh.12509.
  2. American College of Obstetricians and Gynecologists. “How to Tell When Labor Begins.” ACOG, https://www.acog.org/womens-health/faqs/how-to-tell-when-labor-begins. Accessed 23 Feb. 2023.
  3. American College of Obstetricians and Gynecologists. “Labor Induction.” ACOG, https://www.acog.org/womens-health/faqs/labor-induction.
  4. Konar, Hiralal. DC Dutta’s Textbook of Obstetrics. JP Medical Ltd, 2018, p. 670.
  5. National Institute for Health and Care Excellence. “Preterm Labour and Birth.” NICE, 20 Nov. 2015, https://www.nice.org.uk/guidance/ng25. Accessed 23 Feb. 2023.
  6. Guidelines Review Committee. “WHO Recommendations on Interventions to Improve Preterm Birth Outcomes.” World Health Organization, 1 Nov. 2015, https://www.who.int/publications/i/item/9789241508988.
  7. Royal College of Obstetricians and Gynaecologists. “Antenatal Corticosteroids to Reduce Neonatal Morbidity and Mortality (Green-Top Guideline No. 74).” RCOG, https://www.rcog.org.uk/guidance/browse-all-guidance/green-top-guidelines/antenatal-corticosteroids-to-reduce-neonatal-morbidity-and-mortality-green-top-guideline-no-74/. Accessed 23 Feb. 2023.
  8. McGoldrick, Emma, et al. “Antenatal Corticosteroids for Accelerating Fetal Lung Maturation for Women at Risk of Preterm Birth.” Cochrane Database of Systematic Reviews, vol. 2021, no. 2, Dec. 2020.
  9. “Prelabor Rupture of Membranes: ACOG Practice Bulletin, Number 217.” Obstetrics & Gynecology, vol. 135, no. 3, Mar. 2020, pp. e80–97, https://doi.org/10.1097/aog.0000000000003700.
  10. Guidelines Review Committee. “WHO Recommendations on Interventions to Improve Preterm Birth Outcomes.” World Health Organization, 1 Nov. 2015, https://www.who.int/publications/i/item/9789241508988.
  11. “Prelabor Rupture of Membranes: ACOG Practice Bulletin, Number 217.” Obstetrics & Gynecology, vol. 135, no. 3, Mar. 2020, pp. e80–97, https://doi.org/10.1097/aog.0000000000003700.
  12. Mercer, B. M., et al. “Antibiotic Therapy for Reduction of Infant Morbidity after Preterm Premature Rupture of the Membranes. A Randomized Controlled Trial. National Institute of Child Health and Human Development Maternal-Fetal Medicine Units Network.” JAMA, vol. 278, no. 12, Sept. 1997.
  13. Guidelines Review Committee. “WHO Recommendations on Interventions to Improve Preterm Birth Outcomes.” World Health Organization, 1 Nov. 2015, https://www.who.int/publications/i/item/9789241508988.
  14. Doyle, Lex W., et al. “Magnesium Sulphate for Women at Risk of Preterm Birth for Neuroprotection of the Fetus.” Cochrane Database of Systematic Reviews, no. 1, Jan. 2009.
  15. Pulei, Anne N., et al. “Preterm Prelabor Rupture of Membranes.” The Global Library of Women’s Medicine, vol. 10, 2021.
  16. “Prelabor Rupture of Membranes: ACOG Practice Bulletin, Number 217.” Obstetrics & Gynecology, vol. 135, no. 3, Mar. 2020, pp. e80–97, https://doi.org/10.1097/aog.0000000000003700.
  17. American College of Obstetricians and Gynecologists. “Labor Induction.” ACOG, https://www.acog.org/womens-health/faqs/labor-induction. Accessed 23 Feb. 2023.