গর্ভাবস্থায় স্তনের পরিবর্তন: দৃশ্যমান শিরা

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্তনের দৃশ্যমান শিরাগুলো শিশুর জন্মের পরে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই নিজে নিজেই মিলিয়ে যায়।

শিশু জন্মের পর প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত তার যাবতীয় প্রয়োজনীয় পুষ্টি মায়ের বুকের দুধ থেকেই পেয়ে থাকে। আর এজন্য গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই আপনার শরীরে চলতে থাকে প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো স্তনের পরিবর্তন। যেমন: স্তনের শিরাগুলো দৃশ্যমান হয়ে ওঠা।

গর্ভাবস্থায় স্তনের বোঁটার চারপাশের শিরা বা রক্তনালীগুলো অনেকসময় খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। স্তনের গায়ে এগুলো বেগুনী বা নীলচে রেখার মত দেখায়। এটি গর্ভাবস্থার একটি স্বাভাবিক পরিবর্তন। এতে আতংকিত বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

স্তনের দৃশ্যমান শিরা

কখন থেকে এই পরিবর্তন দেখা যাবে?

সাধারণত গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই স্তনের শিরা দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করে।[১]

তবে সবার ক্ষেত্রেই যে এমন পরিবর্তন দেখা দিবে তা নয়। তা ছাড়া একেকজনের ক্ষেত্রে স্তনের এই পরিবর্তন একেকরকম হতে পারে। ত্বক ফর্সা হলে শিরাগুলো বেশি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠতে পারে। আবার ত্বকের বর্ণ গাঢ় হলে আপনি হয়তো শিরাগুলো খেয়ালও করবেন না। তাই এটি নিয়ে ঘাবড়ে যাবেন না।

সাধারণত গর্ভাবস্থা থেকে শুরু হয়ে সন্তান জন্মদানের পরে কিছু সময় পর্যন্ত স্তনের শিরাগুলো দৃশ্যমান থাকতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পুরো সময়টা জুড়েও এটি থাকতে পারে। তবে এর পরে দৃশ্যমান শিরাগুলো সাধারণত নিজে থেকেই চলে যায়।

গর্ভাবস্থায় আপনার স্তনে আরও কিছু সাধারণ পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।[২][৩] যেমন—

  • স্তনে ব্যথা বা চাপ চাপ লাগা
  • স্তনের আকার আগের চেয়ে বড় হওয়া
  • স্তনের বোঁটা ও এর চারপাশের ত্বকের রঙ গাঢ় হয়ে যাওয়া
  • স্তনের বোঁটা থেকে হলুদাভ দুধের মতো তরল বেরিয়ে আসা

কেন এই পরিবর্তন?

গর্ভাবস্থার প্রথমদিক থেকেই গর্ভবতী নারীর শরীরে রক্ত সরবরাহের পরিমাণ বাড়তে থাকে। সেই সাথে শিরাগুলোও প্রসারিত হয়। এই প্রসারণে গর্ভকালীন হরমোনের ভূমিকা রয়েছে।[৪]

এই বাড়তি রক্তের চাপ আর হরমোনের তারতম্যের কারণে রক্তনালীর ওপরে চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে শিরাগুলো কিছুটা ফুলে উঠতে শুরু করে।[৫] এভাবেই ফুলে ওঠা শিরাগুলোকে স্তনের গায়ে বেগুনী বা নীলচে রেখা হিসেবে দেখা যায়। 

তবে কখনো কখনো স্তনের শিরাগুলো এভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠার পেছনে আরও কিছু কারণ কাজ করতে পারে। যেমন—

  • পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারের অন্যদের (যেমন: মা, বোন, খালা অথবা নানী) গর্ভবতী অবস্থায় এমনটা হয়ে থাকলে আপনার গর্ভকালীন সময়েও এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
  • স্তনের আকার: স্তনের আকার বড় হলে গর্ভাবস্থায় দৃশ্যমান শিরা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া স্তন বড় করার অপারেশন করিয়েছেন এমন ৯৭ জন নারীর ওপরে করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, স্তন বড় করার পরে বেশিরভাগ নারীর স্তনের শিরাগুলো অধিক দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।[৬]
  • মন্ডর’স ডিজিজ: এটি একটি বিরল রোগ।[৭] এই রোগে বুক বা স্তনের চামড়ার নিচে থাকা শিরাগুলোতে প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া হয়। ফলে স্তনের গায়ের শিরাগুলো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

চিকিৎসা

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্তনের দৃশ্যমান শিরাগুলো শিশুর জন্মের পরে নিজে নিজেই মিলিয়ে যায়। তাই আলাদা করে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় সঠিক মাপ অনুযায়ী আরামদায়ক ও ভালো সাপোর্টযুক্ত ব্রা ব্যবহার করলে এই সমস্যা উপশম হতে পারে।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন?

যদি শিশুর জন্মের অনেকদিন পরেও স্তনের শিরাগুলো দৃশ্যমান থেকে যায় অথবা এই সমস্যার কারণে অনেক অস্বস্তি হতে থাকে, তাহলে একজন ডার্মাটোলোজিস্ট বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে নিতে পারেন। তিনি আপনার স্তন পরীক্ষা করে দেখার পাশাপাশি কিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন।

এ ছাড়া স্তনে অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন লক্ষ করলে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে। যেমন—

  • স্তনে অথবা বগলে চাকা বা দলার ন্যায় অনুভব করা
  • স্তনের কোনো অংশ ফুলে যাওয়া
  • স্তনে অস্বাভাবিক ব্যথা কিংবা জ্বালাপোড়া হওয়া
  • স্তনের বোঁটা থেকে রক্ত, পুঁজ কিংবা কোনো অস্বাভাবিক তরল নিঃসৃত হওয়া
  • স্তনের বোঁটা ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া
  • স্তনের চামড়ায় চুলকানি হওয়া অথবা তা লালচে হয়ে যাওয়া
  • স্তনের চামড়ায় টোল বা গর্তের মতো হওয়া
  • স্তনের আকার-আকৃতিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ করা

এসব লক্ষণের মধ্যে কিছু পরিবর্তন হয়তো স্বাভাবিক। তবে এগুলো স্তনের বিশেষ কোনো রোগ, এমনকি স্তন ক্যান্সারের লক্ষণও হতে পারে।[৮] তাই ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়াই শ্রেয়।

প্রতিরোধ

স্তনের শিরাগুলো দৃশ্যমান হয়ে ওঠা গর্ভাবস্থার একটি স্বাভাবিক পরিবর্তন। এটি প্রতিরোধ করার তেমন কোনো উপায় নেই। তা ছাড়া গর্ভাবস্থায় শিরা ফুলে ওঠা আসলে কোনো রোগ বা সমস্যা নয়। বরং এটি অনাগত শিশুর পুষ্টি সরবরাহের জন্য আপনার শরীরের প্রস্তুতি মাত্র।

তাই এই সমস্যা নিয়ে বিচলিত না হয়ে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করাই শ্রেয়। কারণ নির্দিষ্ট সময়টুকুর পরে এটি সাধারণত নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়৷

সাধারণ জিজ্ঞাসা

গর্ভাবস্থায় স্তনে শিরা দেখা যাওয়া কি গুরুতর সমস্যা?

গর্ভাবস্থায় স্তনের চামড়ার নিচে শিরা দেখা যাওয়া সাধারণত কোনো গুরুতর সমস্যা নয়। বরং এটি গর্ভাবস্থার একটি স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন। তবে স্তনে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ করলে কিংবা শিরাগুলো নিয়ে কোনো কারণে দুশ্চিন্তা হলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

(৮)

  1. Pomeranz, Miriam Keltz. “Maternal Adaptations to Pregnancy: Skin and Related Structures.” UpToDate, https://www.uptodate.com/contents/maternal-adaptations-to-pregnancy-skin-and-related-structures. Accessed 18 Aug. 2022.
  2. Alex, Ashley, et al. “Anatomy and Physiology of the Breast during Pregnancy and Lactation.” Advances in Experimental Medicine and Biology, Springer International Publishing, 2020, pp. 3–7, http://dx.doi.org/10.1007/978-3-030-41596-9_1. Accessed 18 Aug. 2022.
  3. Wong, Reynold C., and Charles N. Ellis. “Physiologic Skin Changes in Pregnancy.” Journal of the American Academy of Dermatology, vol. 10, no. 6, Jan. 1984, pp. 929–40.
  4. Pomeranz, Miriam Keltz. “Maternal Adaptations to Pregnancy: Skin and Related Structures.” UpToDate, https://www.uptodate.com/contents/maternal-adaptations-to-pregnancy-skin-and-related-structures. Accessed 18 Aug. 2022.
  5. Sanghavi, Monika, and John D. Rutherford. “Cardiovascular Physiology of Pregnancy.” Circulation, vol. 130, no. 12, Sept. 2014, pp. 1003–08.
  6.  Andonakis, Yuri, and Berend van der Lei. “Increase of Visible Veins After Breast Augmentation.” Annals of Plastic Surgery, vol. 63, no. 6, Dec. 2009, pp. 605–09.
  7. Rountree, Kaitlyn M., et al. “Mondor Disease.” NCBI Bookshelf, 23 May 2022, https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK538282/. Accessed 18 Aug. 2022.
  8. CDC. “What Are the Symptoms of Breast Cancer?” Centers for Disease Control and Prevention, 9 Mar. 2022, https://www.cdc.gov/cancer/breast/basic_info/symptoms.htm. Accessed 18 Aug. 2022.