PIMS: শিশুদের মাঝে করোনা সংক্রান্ত নতুন রোগ

দেশের হাসপাতালে করোনা সংক্রান্ত নতুন একটি রোগ দেখা যাচ্ছে। ব্রিটেনে এই রোগটি প্রথম দেখতে পাওয়া যায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে। রোগটার নাম PIMS। রোগটা কী, চিকিৎসা আছে কি না, লক্ষণগুলো কী, কাদের হয়, আর কখন দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে- এই সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন এই লেখায়।

রোগটা কী? এই রোগের কি চিকিৎসা আছে?

ব্রিটেনে এই রোগটিকে বলা হয় PIMS। আমেরিকায় বলা হয় MIS-C। কাউকে কাউকে বলতে শুনবেন কাওয়াসাকির মত একটা নতুন রোগ। এই সবগুলো একই রোগ। এই রোগটা সাধারণত শিশুদের হয়। তবে ২১ বছরের কম বয়সী যে কেউ এতে আক্রান্ত হতে পারে।

যদিও খুব কম সংখ্যক শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়, কিছু শিশুর ক্ষেত্রে এটা মারাত্মক রূপ ধারণ করে। এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে এশিয়ানদের মধ্যে এই রোগটা বেশি দেখা দিয়েছে। তাই রোগের লক্ষণগুলো আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন।

এই রোগের কার্যকরী চিকিৎসা আছে। রোগটা মারাত্মক হলেও সময়মত চিকিৎসা পেলে প্রায় সব শিশুই সেরে উঠে। তাই সঠিক সময়ে এই রোগটা চিনতে পারা জরুরি।

এই রোগের লক্ষণগুলো কী কী?

অনেক ধরণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে এবং বিভিন্ন শিশুর ক্ষেত্রে রোগটা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দেখা দিচ্ছে।

যে লক্ষণগুলো বেশি দেখা গেছে, সেগুলো হল:

  • জ্বর
  • বমি
  • পাতলা পায়খানা
  • পেট ব্যথা
  • গায়ে র‍্যাশ ওঠা
  • চোখ দুটো লাল হয়ে যাওয়া
  • ঘাড় ব্যথা
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি

এসব লক্ষণ দেখা দিলে ঘাবড়ে যাবেন না। জ্বর বা পাতলা পায়খানা হওয়া মানেই যে এই রোগটা হয়েছে, ব্যাপারটা তেমন না। এই রোগ আসার আগেও শিশুদের জ্বর বা পাতলা পায়খানা হতো। এখনো হতে পারে। তাই ঘাবড়ে না গিয়ে এসব লক্ষণ দেখা দিলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রোগটা কাদের হয়?

এই রোগটা শিশুদের বেশি হয়। তবে অল্প বয়স্ক তরুণদের মধ্যেও দেখা গেছে। ২১ বছর বয়সের নিচে কারো লক্ষণগুলো দেখা দিলে সতর্ক থাকতে হবে।

এই রোগটা যাদের মধ্যে পাওয়া গেছে, তাদের বেশিরভাগই সেই সময়ে বা তার কয়েক সপ্তাহ আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিল। অথবা করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে ছিল। কিছু রোগী জানত না তাদের করোনা হয়েছিল কারণ তারা অসুস্থ হয় নি। আবার করোনা উপসর্গ দেখা দেয়ার বেশ অনেক দিন পরেও এই রোগটা দেখা দিয়েছে। কারো ক্ষেত্রে করোনা উপসর্গ দেখা দেয়ার ৭৯ দিন পরে, অর্থাৎ প্রায় আড়াই মাস পরেও এই রোগ দেখা দিয়েছে।

অতএব, যেসব চিন্তা করে শিথিল হওয়া যাবে না:

  • শিশুর করোনা হয় নি
  • শিশুর কখনো করোনার উপসর্গ ছিল না বা অসুস্থতা ছিল না
  • শিশুর করোনা হয়েছিলো অনেকদিন আগে, এখন সম্পূর্ণ সুস্থ
  • আপনার করোনা হয়েছিল কিন্তু আপনার শিশু অসুস্থ হয় নি

এই প্রতিটা ক্ষেত্রেই রোগটা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।

কখন শিশুকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন?

  • গায়ে তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি, হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে এবং শিশু ঝিমুচ্ছে
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে
  • শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত হয়ে গেছে
  • শ্বাস কিছুক্ষণের জন্য থেমে যাচ্ছে বা শ্বাস ছাড়ার সময় শব্দ করছে
  • ঠোঁটের চারপাশ বা মুখ নীল হয়ে গেছে
  • খিঁচুনি হয়েছে
  • খুব কষ্ট হচ্ছে, যেমন কান্না থামছেই না
  • খুব ক্লান্ত হয়ে পরেছে
  • জেগে থাকতে পারছে না বা ঘুম থেকে জাগানো যাচ্ছে না
  • কোন সাড়া দিচ্ছে না
  • এমন র‍্যাশ উঠেছে যেটা গ্লাস দিয়ে চাপ দিলে মিলিয়ে যায় না
  • অণ্ডকোষে বা টেস্টিকলে ব্যথা হচ্ছে, বিশেষত ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলেদের বেলায়
  • কনফিউশন, যেমন শিশু আপনার কথা বুঝতে পারছে না যা তার জন্য স্বাভাবিক না
  • শিশু ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, গায়ে ছোপ ছোপ দাগ উঠছে আর শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে
  • বুকে ব্যথা বা চাপ চাপ লাগা যেটা সারছে না
  • পেটে তীব্র ব্যথা হচ্ছে