করোনায় মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন

করোনাকালীন সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন কীভাবে নিবেন তা নিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এবং পত্র-পত্রিকায় অনেক পরামর্শ আছে। তবে এত পরামর্শের ভিড়ে কোন পরামর্শগুলো নির্ভরযোগ্য সেটা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

এই বিষয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সিডিসি, এনএইচএস, রয়াল কলেজ অফ সাইকায়াট্রিস্টস সহ বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যে পরামর্শ দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে যে ছয়টি পরামর্শ সবচেয়ে বেশি বার বলা হয়েছে, সেগুলো এই লেখায় সহজ করে তুলে ধরব।

খবর দেখার সময়টুকু কমিয়ে ফেলুন

দিনে কতটুকু সময় আপনি খবর দেখবেন বা সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি) ব্যবহার করবেন, সেটা নির্ধারণ করে ফেলুন। সোশ্যাল মিডিয়া উল্লেখ করছি কারণ এখন এগুলোতে অনেক খবর প্রচার করা হচ্ছে। ফেসবুকে কিছুক্ষণ সময় কাটালে বন্ধুরা কে কেমন আছে, তার চেয়ে বিশ্বের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে খবর পাবার সম্ভাবনা অনেকের ক্ষেত্রে বেশি। যেসব পেইজ বা প্রোফাইল আপনার উদ্বেগ বাড়ায়, সেগুলো আপাতত ‘আনফলো’ করতে বা এড়িয়ে চলতে পারেন। ফোনে নোটিফিকেশন বা “ব্রেকিং নিউজ অ্যালার্ট” থাকলে সেগুলো বন্ধ করতে পারেন।

নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে খবর জানুন

যেকোন খবর পড়ার আগে খুব খেয়াল করে দেখবেন যে খবরের উৎস নির্ভরযোগ্য কি না। বিশেষ করে ওষুধ, ভ্যাক্সিন এবং চিকিৎসার ব্যাপারে খুব সতর্কতার সাথে খবর পড়া প্রয়োজন। নাহলে ভুল তথ্যের ঝুঁকি থাকে এবং তাতে মানসিক চাপ বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

মহামারীর শুরুতে এমন একটি খবর ভাইরাল হয়েছিল যে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর বলেছেন,” পৃথিবীর সব সমাধান শেষ, একমাত্র সমাধান আকাশে। “অনেকেই হয়তো এই খবরটা দেখে থাকবেন। তবে এটা সত্য এমন কোন প্রমাণ মেলে নি।

মোট কথা, মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে হলে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে খবর জানতে হবে। তারপরও খুব বেশি সময় খবরের সাথে না থাকাই শ্রেয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রিয়জনের সাথে সময় কাটান

মহামারীর এই সময়ে একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখা ও সাহস দেয়া এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে যাদের সাথে ভালো সময় কাটাতে পারবেন, তাদের সাথে বেশি বেশি সময় ব্যয় করুন। ভিডিও কল ও মেসেজিং অ্যাপগুলো ব্যবহার করুন। আপনার ভালো অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করুন। আবার দুশ্চিন্তাগুলো নিয়েও কথা বলা প্রয়োজন। কারণ ওগুলো শুধুমাত্র নিজের ভেতর রাখলে আস্তে আস্তে মানসিক চাপ দানা বাঁধবে। তাই যাদেরকে বিশ্বাস করতে পারেন, তাদের সাথে আপনার দুশ্চিন্তাগুলো নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করুন।

শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন

শারীরিক আর মানসিক স্বাস্থ্য একটা আরেকটার সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত ব্যায়াম শরীরকে সুস্থ রাখবে। তাতে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যেরও উপকার হবে।

ভালো লাগে এমন কাজগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকুন

করোনা নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তা আর ভয় সবার মনে। এর মধ্যে মনকে প্রফুল্ল রাখতে যেই ছোট ছোট কাজগুলো আমাদের করতে ভালো লাগে, সেগুলো চালিয়ে যেতে হবে। যেমন, বই পড়া, গান শোনা, গান গাওয়া, কবিতা লেখা, মুভি দেখা, আঁকাআঁকি, রান্নাবান্না, গেমিং, মেকআপ, যোগব্যায়াম ইত্যাদি – এই তালিকার শেষ নেই!  যার যেটা ভালো লাগে, তা নিয়ে সময় কাটাবেন। এটার আরেকটা সুবিধা হল এসব কাজে যারা উৎসাহী, সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের বিভিন্ন গ্রুপ আছে। যেমন, বই পড়ে আপনি একটা রিভিউ লিখলেন বইপড়ুয়াদের গ্রুপে। সেই সুবাদে আরো কিছু সমমনা মানুষের সাথে আলাপ হল। তবে কারো অহেতুক কটুকথা থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করবেন।

সবার প্রতি সদয় হোন

আমরা যেই সময়টা পার করছি, তাতে সদয় হওয়ার কোন বিকল্প নেই। একজন আরেকজনের পাশে না দাঁড়ালে আমরা এই দুঃসময় পার করতে পারবো না। কার মানসিক অবস্থা কেমন আমরা তা সবসময় জানতে পারি না। তাই অহেতুক কাউকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করা বা কটুকথা বলা থেকে বিরত থাকুন। আপনি যখন আরেকজনকে উৎসাহ দিবেন, সাহস যোগাবেন বা পাশে দাঁড়াবেন, তখন আপনার মানসিক স্বাস্থ্যেরও উপকার হবে। বন্ধুকে ভিডিও কল দিয়ে একসাথে একটা নাটক দেখলেন। আপনার প্রিয় একটা বই পাঠালেন। তার সাথে মজার কোন ঘটনা নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন। তার শেষ ভ্রমণের গল্প জানতে চাইলেন। এমন আরও হাজারটা কাজের মাধ্যমে আমরা একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়াতে পারি।

ইন্টারনেটের যুগে অনেক কিছুই সহজ হয়ে গেছে। আবার মনে আঘাত দেয়াও খুব সহজ। তাই এই ব্যাপারে আমাদেরকে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

https://youtu.be/QDfGYd_l1eY