পেটের আলসার নির্ণয়

পাকস্থলীর আলসারের লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়। ডাক্তার আপনার রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন করবেন। যেমন: আপনি NSAIDs জাতীয় ঔষধ খাচ্ছেন কি না।

প্রয়োজনবোধে তিনি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন। যেমন: আপনার শরীরে হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি (H. pylori) ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন আছে কি না সেটা পরীক্ষা করে দেখা হতে পারে। এছাড়া পেটের ভেতরের অবস্থা ভালোমতো দেখার উদ্দেশ্যে ‘এন্ডোস্কোপি’ নামক একটি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

পেটের আলসারের পরীক্ষা

হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নির্ণয়

ডাক্তার যদি হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি ইনফেকশনের কারণে পাকস্থলীতে আলসার হয়েছে বলে ধারণা করেন, তাহলে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি নিচের তিনটি পরীক্ষার যেকোনো একটি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে পারেন—

১. ইউরিয়া ব্রেথ টেস্ট: এই পরীক্ষার সময়ে পেটের আলসারের রোগীকে বিশেষ এক ধরণের পানীয় পান করতে দেয়া হয়। পানীয়টির বিশেষত্ব হলো, এটি কেবল H. pylori ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এসে একটি বিশেষ রাসায়নিক তৈরি করে।

যেহেতু শুধুমাত্র H. pylori দ্বারা ইনফেকশন হলেই নিঃশ্বাসে ঐ রাসায়নিকের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়, তাই রোগীর নিঃশ্বাসে রাসায়নিকটি অনুপস্থিত থাকলে H. pylori ব্যতীত আলসারের অন্যান্য কারণ অনুসন্ধান করা হয়।

২. স্টুল অ্যান্টিজেন টেস্ট: এই পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার মল বা পায়খানার নমুনা সংগ্রহ করে তাতে H. pylori ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি যাচাই করা হবে। 

৩. H. pylori অ্যান্টিবডি টেস্ট: এই পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে H. pylori ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উপস্থিত আছে কি না তা খুঁজে দেখা হবে। H. pylori অ্যান্টিবডি থাকলে হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি দ্বারা ইনফেকশন হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে বর্তমানে এই রক্ত পরীক্ষার তুলনায় স্টুল অ্যান্টিজেন টেস্টকে সচরাচর বেছে নেওয়া হয়।

পরীক্ষা করে হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরির ইনফেকশন নিশ্চিত হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা উচিত। ইনফেকশন দূর হলে একদিকে আলসার সেরে যাবে, অন্যদিকে ভবিষ্যতে পুনরায় ইনফেকশন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

এন্ডোস্কোপি

এন্ডোস্কোপি (Upper GI Endoscopy) এমন একটি পরীক্ষা যেখানে মুখের ভেতর দিয়ে বিশেষ উপায়ে ক্যামেরা প্রবেশ করিয়ে পেটের ভেতরের অংশ দেখা হয়। আলসারের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কারো কারো ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাটি করানোর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। পাকস্থলীর আলসারের জন্য যে এন্ডোস্কোপি করা হয় তার অপর নাম গ্যাস্ট্রোস্কোপি

এই পরীক্ষাটি সাধারণত হাসপাতাল ও উন্নত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করা হয়। এন্ডোস্কোপি শুরু করার আগে আপনাকে ঘুমের ঔষধের ইনজেকশন বা মৃদু চেতনানাশক জাতীয় ইনজেকশন দেয়া হবে। সেই সাথে গলার ভেতরে এক ধরণের চেতনানাশক স্প্রে করা হবে, যেন গলা দিয়ে নল প্রবেশ করালে অস্বস্তি বোধ না হয়। 

এন্ডোস্কোপ নামক একটি পাতলা, নমনীয় নল ব্যবহার করে পরীক্ষাটি করা হয়। নলের এক প্রান্তে ক্যামেরা সংযুক্ত থাকে। নলটি মুখ হতে পাকস্থলী হয়ে সাধারণত অন্ত্রের প্রথম অংশ (ডিওডেনাম) পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।

ক্যামেরার সাহায্যে পেটের ভেতরের ছবি পাওয়া যায়। ছবির মাধ্যমে পাকস্থলীতে আলসারের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এছাড়া আলসারের বিস্তৃতি সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া যায়।

অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতস্থান থেকে ছোট এক টুকরো টিস্যু বা কোষগুচ্ছ সংগ্রহ করা হয়। টিস্যুতে হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পরীক্ষা করে দেখা হয়।

গ্যাস্ট্রোস্কোপি সাধারণত হাসপাতালের বহির্বিভাগেই করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এর জন্য সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন পড়ে না।

এন্ডোস্কোপি পরীক্ষার প্রস্তুতি

  • এন্ডোস্কোপি পরীক্ষার পূর্বে ৬-৮ ঘণ্টা আগে থেকে না খেয়ে থাকতে হয়। পরীক্ষার ২-৩ ঘণ্টা আগে থেকে পরীক্ষাটি শেষ হওয়া পর্যন্ত পানি পান করা বন্ধ রাখতে হয়।
  • যারা বদহজম বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য ঔষধ সেবন করেন, তাদের ঔষধ (বিশেষত পিপিআই) পরীক্ষার ২ সপ্তাহ আগে থেকে বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
  • অ্যাসপিরিন, ওয়ারফারিন, ক্লোপিডোগ্রেলসহ রক্ত পাতলা করার/জমাট বাঁধা প্রতিরোধের ঔষধ খাওয়া বন্ধ রাখতে হতে পারে।
  • ইনসুলিন নেন বা ঔষধ খান—এমন ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে সুগার নিয়ন্ত্রণের ওপর ভিত্তি করে বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

প্রস্তুতির ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পরীক্ষার আগেই ডাক্তারের সাথে এই বিষয়ে কথা বলে নিন।