পরিচ্ছেদসমূহ
অনেকেই হয়তো সারাদিনের বেশিরভাগ সময় অফিস বা ভার্সিটিতে ব্যয় করেন। তাই প্রতিদিন এই দীর্ঘ সময়জুড়ে কী কী খাওয়া হচ্ছে সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
কাজের চাপ, সময়ের অভাব, মানসিক চাপ ও খাবারের লোভ—সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলা বেশ কঠিন হয়ে যেতে পারে। এজন্য প্রয়োজন পূর্বপরিকল্পনা। আগেভাগে পরিকল্পনা করে রাখলে—
- ওজন কমানোর স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলা যায়
- দুপুরের খাবার ও স্ন্যাকসের সময়ে কম ক্যালরির পুষ্টিকর খাবারগুলো বেছে নেওয়া যায়
- কাজে থাকা অবস্থায় সতেজ থাকা যায়
- খরচ বাঁচানোও সম্ভব হয়
তাই কাজের জন্য নিয়মিত বাড়ির বাইরে থাকতে হলেও নিচের ১০টি উপায়ে আপনি ওজন কমানো চালিয়ে যেতে পারবেন।
১. নিয়মিত সকালের নাস্তা করুন
অনেকে সকালের নাস্তা বাদ দিয়ে একবারে দুপুরে খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা করেন। নাস্তা বাদ দিলে দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় হওয়ার আগেই ভীষণ ক্ষুধা লাগতে পারে। ফলে অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় এবং দুপুর বেলায় বেশি খাবার খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে।
তাই প্রতিদিন সকালে নাস্তা খাওয়ার অভ্যাস করুন। বাসা থেকে বের হবার সময় যদি ক্ষুধা না লাগে তবে অফিসে গিয়ে নাস্তা করুন।
২. বাড়িতে তৈরি খাবার নিয়ে যান
বাড়িতে রান্না করা খাবার সাধারণত স্বাস্থ্যকর, কম ক্যালরি ও চর্বিযুক্ত হয়ে থাকে। তা ছাড়া কেনা খাবারের চেয়ে খরচও কম হয়। তাই বাড়ি থেকে খাবার তৈরি করে নিয়ে যান। প্রয়োজনে আগের দিন রাতে বেশি করে খাবার রান্না করে ফ্রিজে রেখে সেটা পরদিন নিয়ে যেতে পারেন।
৩. পানি পান করুন
ক্ষুধা লাগলে আগে পূর্ণ দুই গ্লাস পানি পান করে নিন। এতে পেট কিছুটা ভরে আছে এমন মনে হবে এবং হঠাৎ করে প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগবে না। সারাদিনে নিয়ম করে ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
৪. হালকা নাস্তা তৈরি করে রাখুন
একটা বক্সে ফল, শসা, গাজর বা টমেটো কেটে সাথে নিয়ে যেতে পারেন। বিরতির সময়ে সেটা খেয়ে নেয়া যাবে। সাথে খাওয়ার মত কিছু থাকলে হয়তো সিঙ্গারা, পুরি, জিলাপি, বা কোকের মতো অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমানো কিছুটা সহজ হবে।
স্বাস্থ্যকর ও মুখরোচক কিছু নাস্তার তালিকা আমরা ওজন কমানোর চতুর্থ সপ্তাহে তুলে ধরেছি।
৫. গোটা শস্যদানা খান
ওজন কমাতে ময়দা ও সাদা আটার পরিবর্তে লাল আটার রুটি-পাউরুটি নিয়ে যাবেন। সাদা চালের বদলে লাল চালের ভাত নিন। বাজারের পাউরুটি কিনলে হোলগ্রেইন পাউরুটি কেনার চেষ্টা করুন।
লাল চাল বা লাল আটার স্বাদের সাথে অনেকেই অভ্যস্ত নয়, তাই প্রথমে ভালো না-ই লাগতে পারে। কিন্তু এগুলো খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে। ফাইবার ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকায় এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই ধীরে ধীরে হলেও এগুলো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে শুরুর দিকে সাদা চাল বা সাদা আটার সাথে কিছুটা লাল চাল বা আটা মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
৬. মেয়নেজ, আচার ও সস থেকে সতর্ক থাকুন
আচার বানানোর সময়ে প্রচুর তেল ব্যবহার করা হয়। আর মেয়নেজের ৮০% ই হলো ফ্যাট। ১ টেবিল চামচ মেয়নেজে ক্যালরির পরিমাণ ১০০ এর উপরে। আচারে অতিরিক্ত তেল থাকে বলে সেক্ষেত্রেও ক্যালরির পরিমাণটা এমনই হয়। এ ছাড়া বাজারের সস সুস্বাদু করতে প্রচুর চিনি ও বিভিন্ন ফ্লেভারের তেল ব্যবহার করা হয়। তাই এগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
প্রয়োজনে টমেটো এর সাথে কম পরিমাণে চিনি ও লবণ দিয়ে বিভিন্ন মসলা মিশিয়ে বাড়িতেই স্বাস্থ্যকর সস বানিয়ে নিতে পারেন। মেয়নেজ কিনতে হলে লো-ফ্যাট, লো ক্যালরি দেখে কিনুন। বিকল্প হিসেবে টক দই পানি ঝরিয়ে ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
৭. পাঁচ পরিবেশন ফল-সবজি খাওয়া
হালকা নাস্তা হিসেবে একটি ফল বা একটু সালাদ খেয়ে নিতে পারেন। এতে সারাদিনের ফলমূল ও শাকসবজির চাহিদা আংশিকভাবে পূর্ণ হবে। পাঁচ পরিবেশনের মধ্যে প্রতি পরিবেশনে ৮০ গ্রাম শাকসবজি বা ফলমূল খেতে হবে। “পাঁচ পরিবেশন” নিয়ে ওজন কমানোর পঞ্চম সপ্তাহের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
৮. চিপসের বদলে পপকর্ণ খান
ইউটিউব দেখে বাড়িতে সহজেই কম খরচে পপকর্ন বানাতে পারবেন। এক প্যাকেট চিপসের ক্যালরির পরিমাণ পাঁচ কাপ পপকর্ণের ক্যালরির সমান। তাই চিপসের পরিবর্তে পপকর্ণ বেছে নিলে অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস থেকে দূরে থাকা যাবে। ওজন কমানোও সহজ হবে।
৯. চর্বিছাড়া মাংস কিনুন
প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন: সসেজ, নাগেট ও পেপারনি) ফ্যাট ও ক্যালরিবহুল। তাই এগুলোর বদলে মুরগি, মাছ ও ডিম খান। গরু ও খাসির মাংসতেও চর্বি বেশি থাকে। তাই এগুলো পরিমিত পরিমাণে খাবেন আর চর্বি ফেলে দিয়ে রান্না করবেন।
১০. স্যুপ খান
বিভিন্ন ধরনের সবজি মিশিয়ে স্যুপ বানাতে পারেন। এগুলো পেট ভরাতে সাহায্য করে এবং সাথে সাথে শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। স্যুপ সুস্বাদু, কম ক্যালরি ও কম ফ্যাটযুক্ত হয় বলে ওজন কমাতে অনেকেই স্যুপকে প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে রাখেন।
শাকসবজির সাথে মাঝে মাঝে মুরগির মাংস, ডিম, চিংড়ি কিংবা ডাল মিশিয়ে স্যুপ রান্না করতে পারেন। এতে স্বাদে ভিন্নতা আসবে, প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে এবং পেট আরও বেশিক্ষণ ভরে থাকবে। ছুটির দিনে একেবারে বেশি করে স্যুপ বানিয়ে ভাগ ভাগ করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। প্রয়োজনে অফিসে যাওয়ার সময় গরম করে নিয়ে যাওয়া যাবে।