১২ সপ্তাহে ওজন কমানোর উপায়: চতুর্থ সপ্তাহ

ওজন কমানোর চতুর্থ সপ্তাহে পদার্পণ করায় আপনাকে অভিনন্দন। অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলার ডায়েট মেনে চলার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস চালিয়ে যাওয়া এখন হয়তো আগের চেয়ে অনেকটাই সহজ হয়ে এসেছে।

এ সপ্তাহেও স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার চর্চা চালিয়ে যান। সাথে ব্যায়ামের প্রতি বাড়তি যত্ন নিন। গত সপ্তাহে যদি আড়াই ঘণ্টার ব্যায়ামের লক্ষ্য পূরণে সফল না হয়ে থাকেন, তাহলে এই সপ্তাহে সেই লক্ষ্য পূরণ করে ফেলুন।

বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনেকে নতুন করে ব্যায়াম করছেন। এ কারণে হয়তো ক্ষুধা কিছুটা বেড়ে গেছে, প্রতিবেলার খাবারের পাশাপাশি দিনে দুই-একবার স্ন্যাকসজাতীয় হালকা কোনো কিছু খাওয়া হচ্ছে। এই সপ্তাহে এসব হালকা নাস্তার লোভ সামলানোর টিপস এবং বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা মোকাবেলার উপায় তুলে ধরা হয়েছে।

আপনি প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু না করে থাকলে “১২ সপ্তাহে ওজন কমানোর উপায়”-এর প্রথম সপ্তাহের কার্যক্রম দেখুন।

এ সপ্তাহে যে অভ্যাসগুলো শুরু করবেন

১. মিল প্ল্যানিং করুন। মিল প্ল্যানিং অর্থ আগে থেকে কী কী খাবেন তা ঠিক করে রাখা। আগামী ৭ দিন তিন বেলায় কী কী খাবেন তার একটা খসড়া তৈরি করুন। প্ল্যান করার সময় বিগত সপ্তাহগুলোর স্বাস্থ্যকর ডায়েট ও খাবারের পরিমাণ নিয়ে দেওয়া পরামর্শগুলো মাথায় রাখুন।

২. ক্ষুধা লাগলে হালকা কিছু খেয়ে নিলে কোনো ক্ষতি নেই। তবে একটু পর পর কিছু না কিছু খাওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাই তিন বেলার খাবারের পাশাপাশি হালকা নাস্তায় এ সপ্তাহে কোন দিন কী খেতে চান তা ভেবে রাখুন। এতে ক্ষুধা লাগলে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা কমে আসবে।

৩. এবার এ সপ্তাহের মিল প্ল্যানের খসড়া অনুযায়ী সাপ্তাহিক বাজারের তালিকা তৈরি করে ফেলুন এবং সেই অনুযায়ী বাজার করুন। এর ফলে ক্রেভিং হলেও উপকরণ হাতের কাছে না থাকায় অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। কারণ বাজারে গিয়ে সেই খাবার বা খাবারের উপকরণ কিনে আনার চেয়ে বাড়িতে থাকা পুষ্টিকর খাবার খাওয়াই সহজ মনে হতে পারে। এছাড়া সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়।

৩. হালকা নাস্তা হিসেবে কাজে যাওয়ার সময় একটা বক্সে ফল, শশা, গাজর বা টমেটো কেটে সাথে নিয়ে যেতে পারেন। বিরতির সময় সেটা খেয়ে নেয়া যাবে। আবার ৭-৮ টা বাদাম একটা প্যাকেট করে সাথে রাখতে পারেন।

এছাড়া নাস্তাটি ঘরে তৈরি কোন স্বাস্থ্যকর ও মুখরোচক খাবারও হতে পারে। সপ্তাহের শুরুতে প্রতিদিনের স্ন্যাকস পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী সব গুছিয়ে রাখলে, বা সাথে খাওয়ার মত কিছু থাকলে হয়তো পুরি-সিঙ্গারা, চিপস-চকলেট, জিলাপি, বা কোকের মত অস্বাস্থ্যকর নাস্তার প্রতি আকর্ষণ ঠেকানো কিছুটা সহজ হবে।

ওজন কমানোর হালকা খাবার

তিনবেলার খাবারের মাঝে ক্ষুধা লাগলে যদি আপনি একটি স্বাস্থ্যকর নাস্তা বেছে নেন, তাহলে তা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। কারণ এতে ব্যায়ামের পর বা দুইবেলার খাবারের মাঝের সময়টায় দুর্বল লাগবে না। তাছাড়া দুপুরে বা রাতে বেশি খাবার খেয়ে ফেলার প্রবণতা, বা কোনো অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

আমাদের স্বাস্থ্যকর নাস্তা তালিকায় কিছু কম ক্যালরিযুক্ত নাস্তার নাম উল্লেখ করা হলো। এগুলো পরিমিত পরিমাণে খেলে পুষ্টি পাওয়া যাবে, পেট ভরবে এবং ওজনও বাড়বে না।

  • শসা
  • গাজর
  • টমেটো
  • ১টি আপেল
  • ১টি মাল্টা
  • ৩/৪ কাপ টক দই (চিনি ছাড়া)
  • আধা কাপ সেদ্ধ ছোলা
  • ১টি সেদ্ধ ডিম
  • ১টি মাঝারি কলা
  • ৭-৮ টা বাদাম

গাজর একটি কাঁচের বোতলে ভরে সামান্য পানিসহ ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এতে ক্ষুধা লাগলে আবার ধুয়ে-ছিলে-কেটে খাওয়ার ঝামেলা পোহাতে হবে না, আর গাজরও কচকচে থাকবে। শসাও এভাবে কেটে রাখতে পারেন। তবে এগুলো খাওয়ার সময় সাথে লবণ মিশিয়ে খাবেন না।

খাবারের লোভ সামলানোর টিপস

ক্ষুধা লাগলে প্রথমে দুই  গ্লাস পানি খেয়ে নিন, এরপর এসব নাস্তা খান। এগুলো পেট পুরোপুরি ভরিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে খাবেন না, নাস্তা হিসেবে সাময়িকভাবে ক্ষুধা মেটানোর জন্য খাবেন।

এছাড়া অস্বাস্থ্যকর নাস্তার বিকল্প হিসেবে একই ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতে পারেন। যেমন— চকলেট বা মিষ্টির বদলে মাঝারি আকারের দুটি খেজুর বেছে নিন। খাবার খাওয়ার পর ডেজার্ট খাওয়ার অভ্যাস থাকলে ১ টেবিল চামচ কিশমিশ বেছে নিতে পারেন।

ক্রেভিং সামলানো

অনেক সময় আমাদের কোনো খাবার খাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়। ইচ্ছাশক্তি থাকলেও ক্রেভিং হলে সেই লোভ সংবরণ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে।

কিছু বিষয় এই তীব্র আকাঙ্ক্ষার পেছনে কাজ করতে পারে। যেমন—

  • আবেগপ্রবণ অবস্থা
  • মানসিক চাপ
  • একঘেয়েমি বা বোরড হওয়া
  • অনেকদিনের পুরনো অভ্যাস
  • হীনমন্যতা

খাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা বা ক্রেভিংস সামলাতে নিচের ৮টি টিপস মেনে চলুন—

বেশিক্ষণ ক্ষুধা পেটে থাকবেন না

ক্ষুধা লাগলে ক্রেভিং বেড়ে যেতে পারে। তাই ক্ষুধা লাগলে শরীরে শক্তি যোগাতে হালকা কোনো খাবার খেয়ে নিন। উপরে উল্লেখিত স্বাস্থ্যকর নাস্তার তালিকা থেকে আপনার পছন্দের খাবারটি বেছে নিতে পারেন।

পানি পান করুন

পানি পান করলে পেট ভরে, তাই পানি খাওয়ার মাধ্যমে অনেকের জন্য ক্রেভিং সামলানো বেশ সহজ হয়ে যায়। পানির বদলে চিনি ছাড়া চা-কফির মতো গরম কোনো পানীয়ও এক্ষেত্রে কাজ করতে পারে।

অন্য কাজে মনোযোগ দিন

যেই খাবার খাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়, সেই সংক্রান্ত বিভিন্ন চিন্তা মাথায় ঘোরাঘুরি করতে পারে। তাই সাময়িকভাবে নিজেকে অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত রাখুন। হাঁটতে বের হয়ে যান, সময় নিয়ে গোসল করুন বা গান শুনুন। অনেকদিন ধরে যোগাযোগ করা হয় না এমন বন্ধুকে ফোন করে খোঁজখবর নিতে পারেন।

সুগার-ফ্রি চুইং গাম

সুগার-ফ্রি চুইং গাম চিবানোর মাধ্যমে অনেকে এসব ক্ষুধা মোকাবেলা করতে সফল হন। তবে অতিরিক্ত চুইং গাম চিবানো যাবে না। দিনে ২০টির বেশি চুইং গাম চিবানোর ফলে আপনি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।

দাঁত ব্রাশ করুন

টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে পারেন। ব্রাশ করার পর মুখ পরিষ্কার ও ফ্রেশ লাগে। এভাবে কেউ কেউ ক্রেভিং থেকে মুক্তি পেয়ে থাকেন। 

প্রলোভন কমানোর ব্যবস্থা নিন

হাতের নাগালে বা চোখের সামনে যদি অস্বাস্থ্যকর খাবার না থাকে, তাহলে সেগুলোর ক্রেভিং হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। তাই এগুলো কেনা থেকে বিরত থাকুন। একান্ত প্রয়োজন না থাকলে খাবার অর্ডার করার অ্যাপস ফোন থেকে আনইন্সটল করে ফেলুন।

নিজেকে সময় বেঁধে দিন

ক্রেভিং সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়। তাই মাত্র ৩০ মিনিটের জন্য ক্রেভিং সামলানোর চেষ্টা করে দেখুন। এই সময়ে অন্য কোনো কাজে মনোনিবেশ করুন। হয়তো আধা ঘণ্টা পর আপনার সেই খাবার খাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা চলে যাবে।

পরিমিত পরিমাণে ক্রেভিং মেটান

যদি সেই তীব্র আকাঙ্ক্ষা কোনোভাবেই দূর করা না যায় তাহলে খাবারটি খেতে পারেন। তবে অবশ্যই সামান্য পরিমাণে খাবেন, যেন ক্রেভিং মিটে যায়। পেট ভরানোর জন্য না খেয়ে এভাবে মানসিক তৃপ্তির জন্য খেলে ক্যালরির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। দিনের বাকি খাবারগুলো তুলনামূলকভাবে কম ক্যালরিযুক্ত হলে আপনার ওজন কমানোর পথে নিজেকে ধরে রাখা সহজ হবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে যা জানা গুরুত্বপূর্ণ

১। বাড়িতে থাকা সব ধরনের খাবার, বিশেষ করে প্যাকেটজাত খাবারের একটি তালিকা তৈরি করুন। অস্বাস্থ্যকর নাস্তাগুলো কোথায় আছে তা খুঁজে বের করুন। কেক-মিষ্টি, চকলেট, বিস্কুট, চিপস-চানাচুর, আইসক্রিম, ভাজাপোড়া, নিমকি ও অন্যান্য স্ন্যাকস – যেগুলোতে ফ্যাট, চিনি ও লবনের পরিমাণ অনেক বেশি কিন্তু পুষ্টি একেবারেই কম – এগুলোকে একত্র করুন।

এবার ৩টি কাজ করতে পারেন—

  • এগুলো বাসা থেকে বের করে ফেলুন।
  • সম্ভব হলে দোকানে ফেরত দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় অন্য জিনিস কিনুন।
  • যদি বাড়িতেই রাখতে হয় তাহলে হাতের নাগালের বাইরে রাখুন, যেন সহজেই এগুলো খেয়ে ফেলা ঠেকানো যায়।

ফ্রিজে রাখতে হলে ভেতরের দিকে, স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোর পেছনে রাখুন। এতে ক্ষুধা লাগলে স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো খাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে, আর অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

২। ব্যায়ামকে দৈনন্দিন জীবনের অংশ বানিয়ে ফেললে নিজের অজান্তেও ক্যালরি খরচ হবে। ফলে ওজন কমানো আরও সহজ হয়ে যাবে। নিচের অ্যাকশন পয়েন্টগুলো থেকে একেকদিন একেকটি পয়েন্ট বেছে নিতে পারেন।

  • আজকে আমি ১০,০০০ কদম হাঁটব।
  • আজকে আমি বাসে/রিকশায়/গাড়িতে না চড়ে হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে যাওয়া আসা করব।
  • আজকে বন্ধুদের সাথে হাঁটতে বের হবো।
  • আজকে টিভি দেখার সময়ে বসে না থেকে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পা নেড়ে নেড়ে হাঁটবো।

এই সপ্তাহের কাজগুলো শেষ হলে আপনি ওজন কমানোর ৫ম সপ্তাহের কার্যক্রম শুরু করতে পারেন।