করোনায় শ্বাসকষ্ট হলে যা করবেন

করোনা রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে কীভাবে বুঝবেন হাসপাতালে যেতে হবে কি না? কীভাবে যাচাই করবেন শ্বাসকষ্ট ক্ষণস্থায়ী কি না? যদি হাসপাতালে যেতে হয়, প্রোনিং বা উপুড় হয়ে শুয়ে ফুসফুসকে সাহায্য করতে পারেন। প্রোনিং কখন এবং কীভাবে করবেন? প্রোনিং করতে কখন সাবধানতা অবলম্বন করবেন আর কখন প্রোনিং করা একদমই উচিত হবে না? এই সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে এই লেখাতে।

করোনায় শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তৎক্ষণাৎ যে তিনটি পদক্ষেপ নিবেন

করোনা রোগীর শ্বাসকষ্ট হওয়ার সাথে সাথে যে তিনটি পদক্ষেপ আপনি নিতে পারেন, সেগুলো এখানে খুব সহজ করে লেখা আছে। একটু বুঝে নেয়ার চেষ্টা করবেন, যাতে করে বিপদের সময়ে ঘাবড়ে না গিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় সঠিক কাজগুলো করতে পারেন।

প্রথম পদক্ষেপ: যাচাই করে দেখুন শ্বাসকষ্টটি ক্ষণস্থায়ী কি না। ক্ষণস্থায়ী শ্বাসকষ্ট অনেক কারণেই হতে পারে। যেমন, প্যানিক অ্যাটাক। এটা তেমন উদ্বেগের কারণ নয়।

শ্বাসকষ্ট ক্ষণস্থায়ী কি না এটা যাচাই করার জন্য আপনাকে তিনটা ছোট ছোট কাজ করতে হবে।

  1. একটা ঠাণ্ডা জায়গায় যাবেন। বাসায় থাকলে রুমের জানালাগুলো খুলে দিবেন।
  2. তার পর ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়বেন। এমনভাবে ছাড়বেন যেন আপনি একটা মোমবাতি নেভাচ্ছেন।
  3. এটা করতে করতে একটা চেয়ারে সোজা হয়ে বসবেন। মেরুদণ্ডটা টান টান করে। কুঁজো হয়ে বসবেন না। কাঁধ দুটো আরাম করে ছেড়ে দিবেন। হাঁটুর উপর ভর দিয়ে একটু সামনে ঝুঁকে আসবেন।

এই পদক্ষেপগুলি নিয়ে দেখেন আস্তে আস্তে আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসছে কি না। যদি স্বাভাবিক হয়ে যায়, তাহলে সচরাচর বিশেষ কোন চিন্তার কারণ থাকে না। তবে ব্যতিক্রমও হতে পারে। সেটা দ্বিতীয় পদক্ষেপে বলা আছে। 

দ্বিতীয় পদক্ষেপ: এখন আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন হাসপাতালে যাওয়া প্রয়োজন কি না। এখানে তিনটা ভিন্ন পরিস্থিতির কথা বলবো। প্রথম দুইটা পরিস্থিতি যাদের বাসায় পালস অক্সিমিটার আছে তাদের জন্য। তৃতীয়টা যাদের বাসায় পালস অক্সিমিটার নেই তাদের জন্য।

১.যদি বাসায় পালস অক্সিমিটার থাকে, তবে সেটা দিয়ে আপনার অক্সিজেনের পরিমাণ মেপে দেখবেন। শ্বাসকষ্ট থাকুক বা না থাকুক, অক্সিজেনের পরিমাণ যদি ৯৪ এর কম থাকে, তাহলে আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে।

সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এমন পরামর্শ পেতে পারেন যে অক্সিজেনর পরিমাণ ৯০ হলেই কেবল হাসপাতালে যেতে হবে। সেটা নির্ভরযোগ্য তথ্য নয়। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ গাইডলাইন (ভার্সন ৭.০) অনুযায়ী রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ৯৪ এর নিচে নামলেই রোগীকে অক্সিজেন দেয়ার পরামর্শ আছে। তাই ৯০ পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না।

তবে আপনার যদি স্বাভাবিকভাবেই অক্সিজেন কম থাকে কোন রোগের কারনে, তাহলে ৯৪ আপনার জন্য প্রযোজ্য নয়।  এই লেখাটিতে আরও বিস্তারিত আছে।

২.অক্সিজেন এর পরিমাণ ৯৪ এর উপরে আছে, কিন্তু আপনার শ্বাসকষ্ট কমছে না, তাহলে হাসপাতালে যেতে হবে। করোনা আসার আগেও শ্বাস নিতে কষ্ট হলে রোগীকে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হতো। সেটা এখনো একই।

৩.বাসায় যদি পালস অক্সিমিটার না থাকে, তবে রোগীর শ্বাসকষ্ট না কমলে হাসপাতালে যাবেন।

তৃতীয় পদক্ষেপ:

যদি দেখেন আপনার অক্সিজেন পরিমাণ ৯৪ এর চেয়ে কম অথবা আপনার শ্বাসকষ্ট থামছে না বা কমছে না, তাহলে আপনাকে হাসপাতালে যেতে হবে।

যতক্ষণে আপনার জন্য হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, ততক্ষণ আপনি আরেকটা কাজ করতে পারেন আপনার ফুসফুসের উপকারের জন্য। এটাকে আমরা বলি প্রোনিং। সহজ বাংলায় বললে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা। ইংল্যান্ডে হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের ওপর এটা প্রয়োগ করা হয়েছে। আমাদের দেশেও করোনা ইউনিটগুলোতে এটা চালু করা হয়েছে। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত সম্ভব হলে আপনি এটা বাসায় করতে পারেন।

করোনায় শ্বাসকষ্ট হলে কীভাবে প্রোনিং করবেন?

প্রোনিং এর মোট চারটা অবস্থান। একেকটাতে অন্তত আধা ঘণ্টা থাকতে হবে। পারলে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত চালাবেন। তারপরে আবার জায়গা বদলাবেন।

অবস্থানগুলো হলো:

  1. উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা।
  2. ডান কাত হয়ে শোয়া।
  3. বালিশে হেলান দিয়ে বসা। একদম উঠে বসে পরা না আবার চিত হয়ে শোয়া না। বিছানার সাথে তিরিশ থেকে ষাট ডিগ্রি কোণ করে থাকবেন।
  4. বাম কাত হয়ে শোয়া।

এভাবে করতে থাকতে হবে। চারটা অবস্থান করে ফেলার পরে আবার প্রথম থেকে শুরু করবেন।

করোনায় শ্বাসকষ্ট হলে কখন প্রোনিং করা যাবে না?

প্রোনিং সাধারণত একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করা হয়, যিনি দেখেন রোগীর জন্য এটা উপযোগী কি না। যদি সময় লাগে হাসপাতাল খুঁজে পেতে বা ভর্তি হতে, সেই সময়টুকুর জন্যই বলা। যদি সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন, তখন ডাক্তারের পরামর্শেই চিকিৎসা চলবে। নাহলে এখন যে অবস্থা গুলোর কথা বলবো, সে সময়ে প্রোনিং করা থেকে বিরত থাকবেন।

  1. যদি প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয়। যেমন, রোগী মিনিটে শ্বাস নিচ্ছে ৩৫ বারের বেশি, বা শ্বাস নিতে অন্যান্য মাংসপেশি ব্যবহার করছে – দুই পাঁজরের মধ্যে চামড়া ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে, গলার মাংসপেশি ফুলে উঠছে ইত্যাদি।
  2. রোগী খুব উত্তেজিত অবস্থায় আছে বা বিভ্রান্ত অবস্থায় আছে, অসংলগ্ন আচরণ করছে।
  3. রক্তচাপ নব্বইয়ের নিচে নেমে গেছে।
  4. হৃদস্পন্দনের ছন্দে সমস্যা বা অ্যারিদমিয়া (arrhythmia) আছে।
  5. মেরুদণ্ড স্থিতিশীল না, বুকে জখম আছে, বা কিছুদিন আগে পেটে অপারেশন হয়েছে।

এসব ক্ষেত্রে প্রোনিং করা যাবে না।

আর কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সেগুলো হল:

  1. তিন মাসের বেশি গর্ভবতী হলে
  2. শরীরের ওজন অনেক বেশি হলে
  3. ত্বকে ঘা হয়ে থাকলে
  4. মুখমণ্ডলে ইনজুরি থাকলে
  5. খিঁচুনি রোগ বা স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য রোগ থাকলে