হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা সুগার কমে যাওয়া

হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে মাথা ঘুরানো ও বুক ধড়ফড় করা থেকে শুরু করে খিঁচুনি ও জ্ঞান হারানোর মতো মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রক্তে গ্লুকোজ বা সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কমে গেলে তাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলা হয়। অনেকে একে সংক্ষেপে ‘হাইপো’ হিসেবে চেনেন। মূলত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের, বিশেষ করে ইনসুলিন নিতে হয় এমন রোগীদের, হাইপোগ্লাইসেমিয়া দেখা দেয়।

অপরদিকে, রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়াকে হাইপারগ্লাইসেমিয়া বলে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে মাথা ঘুরানো ও বুক ধড়ফড় করা থেকে শুরু করে খিঁচুনি ও জ্ঞান হারানোর মতো মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ‘হাইপো’ এর লক্ষণগুলো দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। সাধারণত বাড়িতে বসে নিজে নিজেই এর চিকিৎসা করা সম্ভব।

সুগার কমে যাওয়ার লক্ষণ

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। আপনার যদি বারবার সুগার কমে যাওয়ার ইতিহাস থাকে তাহলে আপনি নিজেই হয়তো লক্ষণগুলো খেয়াল করলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হচ্ছে কি না তা বুঝতে পারবেন। তবে সময়ের সাথে আপনার লক্ষণগুলোতেও ভিন্নতা আসতে পারে।

রক্তে সুগার কমে যাওয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে কিছু লক্ষণ শুরুর দিকেই দেখা দেয়। দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে খিঁচুনি ও জ্ঞান হারানোর মতো মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শুরুর দিকের লক্ষণগুলো হলো—

  • অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া
  • ক্লান্ত অনুভব করা
  • মাথা ঘুরানো
  • ক্ষুধা লাগা
  • ঠোঁটের চারিদিকে পিন বা সুঁই ফোটানোর মত অনুভূতি হওয়া
  • শরীরে কাঁপুনি হওয়া
  • বুক ধড়ফড় করা
  • সহজেই বিরক্ত, অশ্রুসিক্ত, উত্তেজিত অথবা খামখেয়ালি হয়ে যাওয়া
  • ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া

সময়মতো চিকিৎসা শুরু না করলে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন—

  • দুর্বলতা
  • দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
  • কাজে মনোযোগ দিতে কষ্ট হওয়া
  • বিভ্রান্তি
  • অসংলগ্ন আচরণ, কথা জড়িয়ে যাওয়া ও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়া (মাতাল হলে যেমনটা হয়)
  • ঘুম ঘুম লাগা
  • খিঁচুনি
  • জ্ঞান হারিয়ে ফেলা বা ফিট হয়ে যাওয়া

ঘুমের মধ্যেও রোগী ‘হাইপো’ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়—

  • রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া
  • মাথাব্যথা
  • ক্লান্ত লাগা
  • সারারাত অতিরিক্ত ঘেমে বিছানার চাদর ভিজে যাওয়া

এসব লক্ষণ ছাড়াও বাড়িতে ডায়াবেটিস মাপা হলে যদি রক্তের সুগার ৪ পয়েন্টের (mmol/l) কম আসে তাহলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

সুগার কমে যাওয়ার কারণ

ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তে সুগারের মাত্রা কমে ‘হাইপো’ হয়ে যাওয়ার মূল কারণগুলো হলো—

  • ঔষধের প্রভাব—বিশেষত ডায়াবেটিসের ঔষধের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে ইনসুলিন গ্রহণ, সালফোনাইলইউরিয়া (যেমন: গ্লিবেনক্ল্যামাইড ও গ্লিক্ল্যাজাইড) ও গ্লিনাইড (যেমন: রিপাগ্লিনাইড ও ন্যাটেগ্লিনাইড)  গ্রুপের ঔষধ সেবন অথবা হেপাটাইটিস সি এর ঔষধ সেবন
  • কোনো বেলার খাবার বাদ দেওয়া অথবা দেরি করে খাওয়া
  • আহারের সময়ে যথেষ্ট পরিমাণে শর্করাযুক্ত খাবার না খাওয়া। যেমন: ভাত, রুটি, আলু, পাউরুটি, পাস্তা ও ফলমূল 
  • ব্যায়াম করা—বিশেষ করে ভারী ব্যায়াম, ভারী কাজ অথবা পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া ব্যায়াম করা
  • অতিরিক্ত মদপান অথবা খালি পেটে মদ পান করা

মাঝে মাঝে রক্তের সুগার কমে যাওয়ার কোনো স্পষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। কোনো কোনো সময় ডায়াবেটিস নেই এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও রক্তের সুগার কমে যেতে পারে।

ডায়াবেটিস ছাড়াও সুগার কমে যাওয়ার অন্যান্য কারণ

যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের সচরাচর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয় না। তবে ডায়াবেটিস ছাড়াও রক্তের সুগারের মাত্রা কমে যাওয়ার অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • খাবার খাওয়ার পরে শরীরে অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণ হওয়া। পাকস্থলীর অপারেশনসহ বিভিন্ন কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত শর্করাবহুল খাবার খাওয়ার ৪ ঘন্টা পরে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়।
  • না খেয়ে থাকা অথবা রোযা রাখা
  • অপুষ্টি
  • গর্ভকালীন জটিলতা
  • গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারি (ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে পাকস্থলীর এক প্রকার অপারেশন)
  • অনিয়ন্ত্রিত মদ পান
  • বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা। যেমন—
    • হরমোন জনিত সমস্যা
    • অগ্ন্যাশয়ের রোগ
    • লিভারের সমস্যা
    • কিডনি রোগ
    • অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির রোগ অথবা হৃদরোগের মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা
  • কিছু ঔষধ। যেমন: ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত কুইনাইন

বারবার হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ডাক্তার রক্তে সুগারের মাত্রা প্রকৃতপক্ষেই কমে গিয়েছে কি না সেটি নির্ণয়ে কিছু সাধারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরামর্শ দিবেন। এ ছাড়া কী কারণে এসব লক্ষণ দেখা দিচ্ছে সেটিও খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন।

সুগার কমে গেলে করণীয়

রক্তের সুগার ৪ পয়েন্টের নিচে নেমে গেলে অথবা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে নিচের কাজগুলো করুন—

প্রথম ধাপ: চিনিযুক্ত খাবার খান অথবা চিনিযুক্ত পানীয় পান করুন

একটি ছোটো গ্লাসে কোমল পানীয় (যেমন: কোক বা সেভেন আপ) অথবা ফলের রস নিয়ে খান। বিকল্প হিসেবে ছোটো এক মুঠো মিষ্টি অথবা তিন থেকে ছয়টি গ্লুকোজ বা ডেক্সট্রোজ ট্যাবলেট খেতে পারেন।

বাড়িতে গ্লুকোজ জেলের টিউব থাকলে দুই টিউব জেল মুখের ভেতরে দিয়ে খেয়ে ফেলুন।

দ্বিতীয় ধাপ: ১০ মিনিট পরে আপনার রক্তের সুগার পরিমাপ করুন

যদি এটি ৪ পয়েন্ট বা তার ওপরে থাকে এবং আপনি আগের তুলনায় ভালো অনুভব করেন তাহলে তৃতীয় ধাপে যান।

যদি রক্তের সুগার এখনো পয়েন্টের নিচে থাকে তাহলে আবার প্রথম ধাপে গিয়ে চিনিযুক্ত পানীয় অথবা খাবার খান। এর ১০-১৫ মিনিট পরে আবার রক্তের সুগার পরীক্ষা করুন।

তৃতীয় ধাপ: ইতোমধ্যে যদি আপনার খাবারের সময় হয়ে থাকে তাহলে খাবার খেয়ে নিন। এক্ষেত্রে এমন খাবার বেছে নেওয়া উচিত যা ধীরে ধীরে শরীরে শর্করা সরবরাহ করে। 

খাবারটি হতে পারে আটার রুটি (লাল আটার রুটি হলে ভালো হয়), ডাল ও সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি, লাল চালের ভাত অথবা ওটস। এগুলোর সাথে গরুর দুধ অথবা দই খেতে পারেন। এক্ষেত্রে লো-ফ্যাট দুধ ও দই বেছে নেওয়া উত্তম।

আহারের সময় না হয়ে থাকলে শর্করাযুক্ত কোনো নাস্তা খান। নাস্তাটি হতে পারে এক পিস পাউরুটি (হোলগ্রেইন হলে ভালো হয়), কয়েকটি বিস্কুট অথবা এক গ্লাস গরুর দুধ।

আপনি যদি আগের চেয়ে সুস্থ অনুভব করেন অথবা হাতেগোনা কয়েকবার হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে, তাহলে সাধারণত হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। কিন্তু যদি বারবার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে থাকে অথবা রক্তে সুগার কমে যাওয়ার পরও আপনার কোনো লক্ষণ দেখা না দেয় তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

অজ্ঞান হয়ে পড়েছে এমন কারোর চিকিৎসা যেভাবে করবেন

প্রথমে রোগীকে নিচের বর্ণনা অনুযায়ী ‘রিকভারি পজিশন’ নামক একটি বিশেষ অবস্থানে রাখুন। এরপর যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

নিস্তেজ অবস্থায় রোগীর গলায় যেন কিছু আটকে না যায় সেজন্য মুখে কোনো ধরনের খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

রোগীকে রিকভারি পজিশনে রাখার উপায়

নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীকে এই অবস্থানে আনা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু এটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে রোগীর শ্বাসরুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনা যায়। নিচে রোগীকে রিকভারি পজিশনে রাখার উপায় নয়টি ধাপে তুলে ধরা হয়েছে—

১. রোগীকে তার পিঠের ওপর শুইয়ে দিন।

২. রোগীর একপাশে হাঁটু গেড়ে বসুন। রোগীর যেই হাতটি আপনার কাছে আছে সেটি রোগীর দেহের সাথে সমকোণে বাঁকিয়ে রাখুন। অর্থাৎ, রোগীর হাতটি কাঁধ বরাবর আড়াআড়িভাবে রাখুন। এভাবে রাখবেন যেন হাতের তালু ওপরের দিকে মুখ করে থাকে।

৩.রোগীর অপর হাতটি বিশেষ কায়দায় ভাঁজ করতে হবে। এজন্য আপনি রোগীর যেদিকে বসেছেন সেই গালের ওপরে রোগীর অপর হাতটি বসান। রোগীর হাত এমনভাবে ভাঁজ করুন যেন এই হাতের পেছনের দিকটি রোগীর গালের ওপর থাকে। এবার আপনার এক হাত দিয়ে রোগীর হাতটি তার গালের ওপর ধরে রাখ…

৪. এবার রোগীর যেই হাঁটু আপনার থেকে দূরে আছে সেটি ভাঁজ করতে হবে। আপনার যেই হাত খালি আছে সেটি দিয়ে রোগীর হাঁটু ৯০ ডিগ্রি কোণে বা সমকোণে ভাঁজ করুন।

৫. রোগীর ভাঁজ করা হাঁটু ধরে রোগীকে সাবধানে টেনে একপাশে কাত করুন। এমনভাবে কাত করবেন যেন রোগী আপনার দিকে মুখ করে কাত হয়। যেই পা নিচে থাকবে সেটি যেন লম্বা হয়ে থাকে।

৬. রোগীর ভাঁজ করা অর্থাৎ গালের ওপর রাখা হাত যেন মাথার ভারসাম্য ধরে রাখে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। রোগীর অপর হাত অর্থাৎ আড়াআড়িভাবে রাখা হাতটি কোনো একপাশে বেশি কাত হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করবে।

৭. রোগীকে কাত করার পরেও যেন ভাঁজ করা হাঁটু সমকোণে থাকে সেটি নিশ্চিত করুন।

৮. রোগীর মাথা আলতো করে পেছনের দিকে কাত করুন এবং থুতনি উঁচু করে ধরুন। এভাবে শ্বাসনালী উন্মুক্ত করুন। শ্বাসপ্রশ্বাসে কোনো কিছু বাধা সৃষ্টি করছে কি না সেটি লক্ষ কর।

৯. রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা হওয়ার আগ পর্যন্ত রোগীকে এভাবে রেখে অবস্থা প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করতে থাকুন।

উল্লেখ্য, হাতের কাছে যদি গ্লুকাগন (Glucagon) ইনজেকশন থাকে এবং আপনি এটি দেওয়ার প্রক্রিয়া জানেন তাহলে রোগীকে রিকভারি পজিশনে রেখে এই ইনজেকশন দিন। তবে রোগী যদি ‘হাইপো’ হওয়ার আগে মদপান করে থাকে তাহলে এটি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

যদি ইনজেকশন দেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হয় তাহলে রোগীকে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

ইনজেকশন দেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে যদি রোগীর জ্ঞান ফিরে আসে এবং রোগী সুস্থ বোধ করে তাহলে রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন। যদি তিনি ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে পারেন তাহলে তাকে শর্করাযুক্ত একটি স্ন্যাকস খেতে দিন। স্ন্যাকস হিসেবে এক পিস পাউরুটি বা টোস্ট (হোলগ্রেইন হলে ভালো হয়), কয়েকটি বিস্কুট অথবা এক গ্লাস গরুর দুধ বেছে নিতে পারেন।

রোগীর জ্ঞান ফিরে আসলেও নিচের দুটি ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে—

  1. বমি হলে
  2. রক্তের সুগার আবারও কমে গেলে

আপনি কখনো গুরুতর হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণে জ্ঞান হারিয়ে থাকলে ডাক্তারকে বিষয়টি অবহিত করা জরুরি।

খিঁচুনি হচ্ছে এমন কারও চিকিৎসা যেভাবে করবেন

রক্তে সুগার কমে যাওয়ার কারণে কারও খিঁচুনি হলে নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন—

১. রোগীর সাথে থাকুন। তিনি যেন আঘাত না পান সেদিকে লক্ষ রাখুন। রোগীকে নরম কিছুর ওপরে শুইয়ে দিন। সবধরনের বিপদজনক জিনিস থেকে রোগীকে দূরে সরিয়ে রাখুন। যেমন: রাস্তাঘাট, চুলা, হিটার, রেডিয়েটর ও উন্মুক্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ।

২. যদি পাঁচ মিনিটের বেশি সময় ধরে খিঁচুনি থাকে তাহলে রোগীকে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

৩. খিঁচুনি বন্ধ হয়ে গেলে রোগীকে চিনিযুক্ত খাবার খেতে দিন এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসার সাধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

মারাত্মক হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণে আপনার কখনো খিঁচুনি হয়ে থাকলে ডাক্তারকে বিষয়টি অবহিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

ঘরোয়া উপায়ে সুগার কমে যাওয়া প্রতিরোধের উপায়

ডায়াবেটিসের রোগীরা নিচের ছয়টি উপদেশ মেনে চলার মাধ্যমে রক্তের সুগার কমে হাইপো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনতে পারেন—

১. নিয়মিত রক্তের সুগার লেভেল পরিমাপ করতে হবে। রক্তের সুগার কমে যাওয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। এভাবে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে মারাত্মক নানান জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে

২. সবসময় কিছু চিনিযুক্ত খাবার অথবা পানীয় সাথে রাখতে হবে। যেমন: গ্লুকোজ বা ডেক্সট্রোজ ট্যাবলেট, ফলের জুস, কিছু মিষ্টি অথবা লজেন্স। যদি গ্লুকাগন ইনজেকশন কিট থাকে তাহলে সেটি সবসময় সাথে রাখতে হবে

৩. কোনো বেলার আহার বাদ দেওয়া যাবে না। সঠিক সময়ে প্রতি বেলার খাবার খেয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে সকালের নাস্তা কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। আপনি বিশেষ কোনো ডায়েট অনুসরণ করলে এ ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৪. ব্যায়াম করার সময়ে সতর্ক থাকতে হবে। ব্যায়ামের আগে শর্করাযুক্ত স্ন্যাকস খেয়ে নিলে সেটি ‘হাইপো’ এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ভারী ব্যায়াম করার আগে অথবা পরে ইনসুলিনসহ ডায়াবেটিসের কিছু ঔষধের ডোজ কমানোর প্রয়োজন হতে পারে। এ ব্যাপারে ডাক্তারের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে নিন

৫. বিশেষত ইনসুলিন ব্যবহারকারী রোগীর ঘুমের মধ্যে হাইপো হয়ে যেতে পারে। এই ঘটনা প্রতিরোধে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিস্কুট অথবা এক পিস পাউরুটির মতো শর্করাযুক্ত স্ন্যাকস খেতে হবে

৬. অতিরিক্ত মদপান থেকে বিরত থাকতে হবে।

যদি বারবার রক্তের সুগারের পরিমাণ কমে যায় তাহলে সেটি প্রতিরোধ করার উপায় জানতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

রক্তে সুগারের স্বল্পতা এবং গাড়ি চালানো

ডায়াবেটিস অথবা অন্য কোনো রোগের কারণে রক্তের সুগার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আপনি হয়তো গাড়ি চালাতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে বিপদ এড়াতে কিছু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়াবেটিস রোগীদের পেশাগত কারণে কিংবা নিত্যদিনের যাতায়াতে গাড়ি (যেমন: সিএনজি, মোটরগাড়ি, পিকআপ, বাস ও ট্রাক) চালাতে হতে পারে। এক্ষেত্রে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি এড়াতে নিচের তিনটি বিষয় নিশ্চিত করা উচিত—

  • গাড়ী চালানোর পূর্বে ২ ঘন্টার ভেতর ব্লাড সুগারের লেভেল পরিমাপ করা
  • দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালালে ২ ঘন্টা পর পর ব্লাড সুগারের লেভেল পরিমাপ করা
  • যাত্রা শুরু করার সময়ে চিনিযুক্ত হালকা নাস্তা এবং কলা অথবা আটার রুটির মতো শর্করা জাতীয় খাবার সাথে রাখা

চলন্ত অবস্থায় যদি মনে হয় সুগারের মাত্রা কমে ‘হাইপো’ হয়ে গিয়েছে তাহলে—

  • নিরাপদ স্থানে গাড়ি থামিয়ে ফেলতে হবে
  • চাবি সরিয়ে নিয়ে গাড়ি বন্ধ করে রাখতে হবে
  • চালকের আসন থেকে সরে যেতে হবে
  • গ্লুকোমিটারের সাহায্যে রক্তের সুগারের লেভেল মাপতে হবে। যদি হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে থাকে তাহলে দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে
  • স্বাভাবিক বোধ করার অন্তত ৪৫ মিনিট হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গাড়ি চালানো যাবে না

রক্তে সুগারের মাত্রা কম থাকা অবস্থায় গাড়ি চালানো নিজের পাশাপাশি অন্যদেরকেও মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়। তাই আপনি অসুস্থ বোধ করলে অথবা হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিচ্ছে বলে মনে হলে গাড়ী চালানো থেকে বিরত থাকুন এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিন। আপনার ডাক্তারের সাথে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।