প্রতি বছর সারাবিশ্বে যত মানুষ অন্ধ হয়ে যান, তার একটা বড় অংশ ঘটে জ্বর ঠোসার ভাইরাস এর কারণে।[১] এ ছাড়াও জ্বর ঠোসা থেকে যৌনাঙ্গের হার্পিস হতে পারে, যা একবার হলে পুরোপুরি নির্মূল করার উপায় এখনো আবিষ্কৃত হয়নি।[২] নবজাতকের মাঝে ভাইরাসটি ছড়ালে তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
তাই জ্বর ঠোসা হলে হেলাফেলা না করে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
জ্বর ঠোসা কেন হয়?
জ্বর ঠোসা একটি ছোঁয়াচে রোগ। এটি ‘হার্পিস সিমপ্লেক্স’ নামের একটি ভাইরাসের কারণে হয়। এই ভাইরাস শরীরে বিভিন্নভাবে প্রবেশ করতে পারে। যেমন—
- জ্বর ঠোসায় আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ কিংবা মুখের লালার সংস্পর্শে আসলে জ্বর ঠোসা ছড়াতে পারে
- জ্বর ঠোসা স্পর্শ করে সেই হাত অন্য কারও মুখের সংস্পর্শে নিলে জ্বর ঠোসা ছড়াতে পারে
- জ্বর ঠোসায় আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ কারও যৌনাঙ্গের সংস্পর্শে আসলে যৌনাঙ্গে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে পারে
শরীরে একবার জ্বর ঠোসার ভাইরাস প্রবেশ করলে সেটি সারাজীবন থেকে যায়।[৩] বেশিরভাগ সময়ে ভাইরাস শরীরে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে, তবে মাঝেমাঝে জেগে উঠে জ্বর ঠোসা তৈরি করে। একারণে অনেকের বারবার জ্বর ঠোসা হয়।
ভাইরাস জেগে ওঠার অন্যতম কারণ হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়া। যেমন: ঠাণ্ডা লাগা অথবা জ্বর আসা। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়া ছাড়াও আরও কিছু কারণে ভাইরাস জেগে উঠে জ্বর ঠোসা তৈরি হতে পারে। যেমন: কোনো কারণে অসুস্থ হলে, খুব ক্লান্ত থাকলে, মানসিক চাপে থাকলে, রোদে গেলে ও মেয়েদের মাসিকের সময়ে।
কীভাবে বুঝবেন জ্বর ঠোসা হয়েছে কি না?
মুখমণ্ডলের যেকোনো স্থানেই জ্বর ঠোসা উঠতে পারে। যেখানে জ্বর ঠোসা উঠবে, সেখানে সাধারণত জ্বর ঠোসা হওয়ার আগেই জ্বালাপোড়া, ঝিম ঝিম করা অথবা চুলকানি শুরু হয়। পরবর্তী ৬–৪৮ ঘণ্টায়—
১. ছোটো ছোটো ফোস্কা বা ঠোসা ওঠে। এগুলোর ভেতরে পানির মতো তরল থাকে।
২. ফোস্কাগুলো ফেটে গিয়ে সেগুলোর ওপরে আস্তে আস্তে চলটা পড়ে
১০ দিনের মধ্যে জ্বর ঠোসা সেরে উঠতে শুরু করে। সেরে ওঠার আগ পর্যন্ত এটি ছোঁয়াচে থাকে। এই সময়ে ব্যথা অথবা জ্বালাপোড়া হতে পারে।
জ্বর ঠোসা কতদিন ছোঁয়াচে থাকে?
যেখানে জ্বর ঠোসা উঠবে সেখানে যখন থেকে জ্বালাপোড়া, ঝিম ঝিম করা অথবা চুলকানি শুরু হয়, তখন থেকেই এটা ছোঁয়াচে। যতদিন পর্যন্ত আপনার জ্বর ঠোসা পুরোপুরি সেরে না ওঠে ততদিন এটা ছোঁয়াচে থাকে। বিশেষ করে যখন জ্বর ঠোসা কাঁচা থাকে কিংবা ফেটে যায়, তখন এটা সবচেয়ে বেশি ছোঁয়াচে থাকে।[৪]
তাই জ্বালাপোড়া, ঝিম ঝিম করা অথবা চুলকানি শুরু হওয়া থেকে ঠোসা পুরোপুরি সেরে ওঠা পর্যন্ত এই পুরোটা সময় জুড়েই নিচের সতর্কতাগুলো মেনে চলবেন।
উল্লেখ্য, জ্বর ঠোসা হওয়ার আগে ত্বকে যখন জ্বালাপোড়া, ঝিম ঝিম করা অথবা চুলকানি শুরু হয়, তখন থেকেই জ্বর ঠোসার অ্যান্টিভাইরাল ক্রিম ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো হয়। এতে জ্বর ঠোসা দ্রুত সেরে উঠতে পারে। এই সম্পর্কে আরও জানতে নিচে ‘জ্বর ঠোসার ঔষধ’ অংশটি পড়ুন।
জ্বর ঠোসা হলে কী সতর্কতা মেনে চলতে হবে?
১. চোখের সুরক্ষা
আমাদের চোখের সামনে ‘কর্নিয়া’ নামের স্বচ্ছ একটা আবরণ থাকে। এটা চোখের জানালা হিসেবে কাজ করে। এই কর্নিয়ার সমস্যার কারণে পৃথিবীতে যত মানুষ অন্ধ হয়ে যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে কমন কারণ হলো জ্বর ঠোসার হার্পিস ভাইরাসের ইনফেকশন।[৫][৬] অর্থাৎ মুখের জ্বর ঠোসা থেকে ভাইরাসটা যদি চোখে চলে যায়, তাহলে এই মারাত্মক বিপত্তি ঘটার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়।
জ্বর ঠোসা থেকে অন্ধত্ব হওয়া প্রতিরোধে চারটি পরামর্শ মেনে চলবেন—
- জ্বর ঠোসায় হাত লাগাবেন না
- জ্বর ঠোসায় হাত চলে গেলে ভালো করে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিবেন
- জ্বর ঠোসা থাকা অবস্থায় চোখে হাত লাগাবেন না
- কোনো কারণে চোখে হাত দিতে হলে আগে ভালো করে হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন
উল্লেখ্য, চোখে হার্পিস ভাইরাস দিয়ে ইনফেকশন হলেই যে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়, তা নয়। অনেকেরই এই ইনফেকশন হয় এবং সেরেও যায়। তাই এটা নিয়ে বেশি ভয় পাবেন না। তবে অল্প সংখ্যক মানুষের ক্ষেত্রে এটা চোখের জটিল ইনফেকশনে রূপ নিতে পারে। তাই সতর্ক থাকাই শ্রেয়।
২. যৌনাঙ্গের হার্পিস থেকে সুরক্ষা
কারও যৌনাঙ্গ জ্বর ঠোসার সংস্পর্শে আসলে যৌনাঙ্গের হার্পিস হতে পারে। জ্বর ঠোসার মতোই একবার যৌনাঙ্গের হার্পিস হলে সেটিকে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া নারীদের যৌনাঙ্গের হার্পিস হলে সেটি ডেলিভারির সময়ে নবজাতকের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাই জ্বর ঠোসা পুরোপুরি সেরে ওঠার আগ পর্যন্ত ওরাল সেক্স থেকে একেবারে বিরত থাকবেন, অর্থাৎ সঙ্গীর যৌনাঙ্গে মুখ লাগাবেন না। নাহলে আপনার সঙ্গীর যৌনাঙ্গে হার্পিস ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৩. নবজাতক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষের সুরক্ষা
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জন্য হার্পিস ভাইরাস মারাত্মক হতে পারে।[৭] যেমন, জ্বর ঠোসা থাকা অবস্থায় নবজাতককে চুমু দিলে শিশুর মারাত্মক ইনফেকশন হতে পারে, এমনকি তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া মায়ের স্তনে যদি জ্বর ঠোসা হয়ে থাকে, তাহলে শিশুকে সেই স্তন থেকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়েও শিশুর দেহে ইনফেকশন ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই নবজাতকদের ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক থাকবেন।
কারও একজিমা নামের চর্মরোগ থাকলে জ্বর ঠোসার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা এক্ষেত্রে চামড়ার ক্ষত দিয়ে জ্বর ঠোসার ভাইরাস শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে জীবনঘাতী ইনফেকশনে রূপ নিতে পারে। ছোটো শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ তাদের এই গুরুতর ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এ ছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল—যেমন: গর্ভবতী নারী, ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি, কেমোথেরাপি নিচ্ছেন কিংবা স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ খাচ্ছেন এমন রোগী—তাদের আশেপাশে বিশেষভাবে সাবধান থাকবেন। কারণ সাধারণ জ্বর ঠোসাও তাদের শরীরে মারাত্মক ইনফেকশন ঘটিয়ে বিশেষ ক্ষতি করতে পারে।
৪. ‘আলঝেইমার’ নামক স্মৃতিশক্তি সংক্রান্ত রোগ থেকে সুরক্ষা
স্মৃতিশক্তি কমে গিয়েছে, কথা মনে রাখতে পারেন না, একই প্রশ্ন বারবার জিজ্ঞেস করেন অথবা কিছু বলতে গেলে কথা খুঁজে পান না—এমন বয়স্ক মানুষ হয়তো দেখে থাকবেন। এগুলো সবই ‘আলঝেইমার’ রোগের লক্ষণ। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় জ্বর ঠোসা সৃষ্টিকারী হার্পিস ভাইরাসের সাথে আলঝেইমার রোগের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।[৮]
যদিও এই ভাইরাসের কারণেই রোগটা হয় কি না সেটি এখনো নিশ্চিত নয়, তবে অনেকগুলো গবেষণা সেই দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।[৯] তাই আপনার যদি জ্বর ঠোসা হয়, তাহলে খুব সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখবেন যেন আপনার কাছ থেকে আরেকজনের কাছে এই ভাইরাস না ছড়ায়। কারণ একবার এই ভাইরাস শরীরে ঢুকলে সারাজীবন থেকে যায়, আর আলঝেইমারের মতো জটিল রোগের সাথে এর একটা যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে।
কীভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে পারেন? এই সংক্রান্ত পরামর্শগুলো আমরা ‘জ্বর ঠোসা হলে কী করা উচিত?’ অংশে তুলে ধরেছি।
জ্বর ঠোসা হলে কী করা উচিত?
সাধারণত জ্বর ঠোসা নিজে নিজেই সেরে যায়। সেরে যাওয়ার পরে সাধারণত কোনো দাগও থাকে না। তবে লক্ষণ উপশমে আপনি কিছু কার্যকর পরামর্শ মেনে চলতে পারেন।
জ্বর ঠোসার ঘরোয়া চিকিৎসা
১. দ্রুত সারাতে অ্যান্টিভাইরাল ক্রিম বা মলম: জ্বর ঠোসা হবে বুঝতে পারার সাথে সাথেই অ্যান্টিভাইরাল ক্রিম লাগাতে পারেন। এটা জ্বর ঠোসা দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। ক্রিম লাগানোর সময়ে জ্বর ঠোসায় ঘষে ঘষে না লাগিয়ে আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে চেপে চেপে লাগাবেন। ক্রিম লাগানোর আগে ও পরে ভালো করে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিবেন। কোন ক্রিম লাগাবেন, তা জানতে নিচে ‘জ্বর ঠোসার ঔষধ’ অংশটি পড়ুন।
২. দ্রুত সারাতে মধু: কিছু গবেষণায় জ্বর ঠোসা সারাতে অ্যান্টিভাইরাল ক্রিমের পরিবর্তে মেডিকেল গ্রেড কানুকা মধু ব্যবহার করে দেখা গিয়েছে যে, মধু অ্যান্টিভাইরাল ক্রিমের মতোই কার্যকর।[১০][১১] ভালো মানের কানুকা অথবা অন্য কোনো বিশুদ্ধ মধু ব্যবহার করে দেখতে পারেন আপনার জন্য কাজ করে কি না। জ্বর ঠোসা হবে বুঝতে পারার সাথে সাথেই সেখানে মধু লাগাবেন।[১২] দিনে পাঁচ বার করে জ্বর ঠোসা পুরোপুরি সেরে ওঠা পর্যন্ত এভাবে ব্যবহার করবেন।
৩. ব্যথা কমানোর উপায়: জ্বর ঠোসার ব্যথা কমানোর কয়েকটা উপায় আছে। আপনার সুবিধামতো নিচের উপায়গুলো ব্যবহার করতে পারেন—
- বরফ: জ্বর ঠোসার ওপরে বরফ লাগাতে পারেন।[১৩] এ ছাড়া বরফের ছোটো ছোটো টুকরা চুষতে পারেন। এসবের মাধ্যমে ব্যথা কমার পাশাপাশি জ্বালাপোড়া ও চুলকানিও কমতে পারে।
- ঠাণ্ডা সেঁক: দিনে কয়েকবার ঠাণ্ডা সেঁক দিতে পারেন। একটা পরিষ্কার ছোটো তোয়ালে ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে ৫–১০ মিনিট জ্বর ঠোসার ওপরে দিয়ে রাখুন। এটি জ্বালাপোড়া ও লালচে ভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- মলম: জ্বর ঠোসার ব্যথা কমাতে লিডোকেইন জাতীয় জেল অথবা মলম ব্যবহার করতে পারেন। ফার্মেসিতে কোন নামে কিনতে পাওয়া যায়, তা জানতে নিচে ‘জ্বর ঠোসার ঔষধ’ অংশটি পড়ুন।
- ঔষধ: ব্যথা, জ্বর ও ফোলা কমাতে প্যারাসিটামল অথবা আইবুপ্রোফেন খেতে পারেন। শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াতে পারেন।
৪. পানিশূন্যতা এড়ানো: জ্বর ঠোসা হলে ব্যথার কারণে অনেকেই খাবার ও পানি খাওয়া কমিয়ে দেয়। একারণে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করছেন কি না সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
৫. ত্বক ফাটা এড়াতে পেট্রোলিয়াম জেলি: ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যাওয়া এড়াতে জ্বর ঠোসার ওপরে ও এর আশেপাশের ত্বকে আলতো করে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগাবেন। এর আগে ও পরে অবশ্যই সাবান-পানি দিয়ে ভালোমতো হাত ধুয়ে ফেলবেন।
৬. রোদ থেকে সুরক্ষা: রোদে বের হলে সানস্ক্রিন, বিশেষ করে ঠোঁটে সানব্লক লিপ বাম (এসপিএফ ১৫ বা তার বেশি শক্তির) ব্যবহার করবেন।
৭. বারবার জ্বর ঠোসা হওয়া ঠেকানো: যেসব কাজ জ্বর ঠোসার ভাইরাসকে জাগিয়ে দিতে পারে সেগুলো এড়িয়ে চলবেন। যেমন: রোদ, মানসিক চাপ ও অতিরিক্ত ক্লান্তি। এতে পরবর্তীতে জ্বর ঠোসা হওয়ার সম্ভাবনা কমতে পারে।
যা করবেন না
- জ্বর ঠোসা হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন না। কোনো কারণে স্পর্শ করতে হলে (যেমন: ঔষধ লাগানোর সময়ে) তার আগে ও পরে অবশ্যই সাবান ও পানি দিয়ে ভালোমতো হাত ধুয়ে ফেলবেন।
- আক্রান্ত অবস্থায় কাউকে চুমু দিবেন না। বিশেষ করে ছোটো শিশুদের চুমু দেওয়া থেকে একেবারেই বিরত থাকবেন।
- জ্বর ঠোসা থাকা অবস্থায় আপনার খাবার অথবা পানি আরেকজনের সাথে শেয়ার করবেন না।
- জ্বর ঠোসায় ছোঁয়া লাগে এমন জিনিসপত্র—যেমন: আপনার ব্যবহার করা চামচ, গ্লাস, তোয়ালে, রেজার, লিপজেল ও লিপস্টিক—এগুলো আলাদা রাখবেন। অন্য কেউ যেন ব্যবহার না করে সেই বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।
- জ্বর ঠোসা থাকলেও সহবাস করা যাবে। তবে জ্বর ঠোসা পুরোপুরি সেরে ওঠার আগ পর্যন্ত ওরাল সেক্স বা যৌনাঙ্গে মুখ স্পর্শ করা থেকে একেবারে বিরত থাকবেন। নাহলে আপনার সঙ্গীর যৌনাঙ্গে হার্পিস ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- জ্বর ঠোসা থাকা অবস্থায় চোখে হাত লাগাবেন না। কোনো কারণে চোখে হাত দিতে হলে আগে ভালো করে হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে নিবেন।
- কারও কারও ক্ষেত্রে কিছু খাবার জ্বর ঠোসার সংস্পর্শে আসলে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: টমেটো, কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা, অতিরিক্ত মসলাদার ও লবণযুক্ত খাবার। আপনার এমন সমস্যা হলে এসব খাবার এড়িয়ে চলতে পারেন।
- জরুরি প্রয়োজন না হলে জ্বর ঠোসা পুরোপুরি সেরে ওঠার আগ পর্যন্ত দাঁতের কোনো প্রসিডিউর না করানোই ভালো।
জ্বর ঠোসার ঔষধ
জ্বর ঠোসা সারানোর জন্য নিচের ‘ওভার দা কাউন্টার’ ঔষধগুলো ব্যবহার করতে পারেন। ওভার দা কাউন্টার ঔষধগুলো ফার্মেসি থেকে কিনে সাথে থাকা নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যবহার করা নিরাপদ। তবে আপনার জন্য উপযুক্ত ডোজ সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে কিংবা ঔষধের বিষয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিন।
১. জ্বর ঠোসার ক্রিম বা মলম: জ্বর ঠোসার চিকিৎসায় অ্যান্টিভাইরাল ক্রিম (যেমন: এসাইক্লোভির) ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো জ্বর ঠোসা দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। অন্তত ৪ দিন ব্যবহার করবেন। সাধারণত দিনে ৫ বার ব্যবহার করতে হয়। ব্যবহারের আগে ঔষধের সাথে থাকা নির্দেশিকা ভালোমতো পড়ে সেই অনুযায়ী ব্যবহার করবেন। ফার্মেসিতে এই ক্রিম যেসব নামে পাওয়া যায়—
ব্র্যান্ড নাম | কোম্পানি |
---|---|
ভাইরাক্স | স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড |
ভাইরক্সি | এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড |
অ্যাসেরাক্স | অপসনিন ফার্মা লিমিটেড |
নোভাইরাক্স | ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড |
সিমপ্লোভির | ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড |
ভাইরুনিল | গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড |
২. ব্যথা কমানোর মলম: জ্বর ঠোসার ব্যথা কমাতে লিডোকেইন জাতীয় জেল অথবা মলম ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহারের আগে ঔষধের সাথে থাকা নির্দেশিকা ভালোমতো পড়ে সেই অনুযায়ী ব্যবহার করবেন। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এসব ঔষধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ফার্মেসিতে এই মলম যেসব নামে পাওয়া যায়—
ব্র্যান্ড নাম | কোম্পানি |
---|---|
জেসোকেইন | জেসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড |
জাইলোজেল | ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড |
জেড-লিডোকেইন | জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড |
৩. প্যারাসিটামল অথবা আইবুপ্রোফেন: জ্বর ঠোসার ব্যথা, ফোলা ও জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল অথবা আইবুপ্রোফেন খেতে পারেন। শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াতে পারেন। কোন ডোজে খাওয়াবেন সেটি জানতে আমাদের আর্টিকেল থেকে দেখে নিন অথবা ঔষধের সাথে থাকা নির্দেশিকা থেকে পড়ে নিন।
কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে। যেমন: গর্ভবতী নারী, ডায়াবেটিস বা ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তি, কেমোথেরাপি নিচ্ছেন কিংবা স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ খাচ্ছেন এমন রোগী
- চোখের কাছাকাছি স্থানে জ্বর ঠোসা হলে
- অনেকখানি জায়গা জুড়ে জ্বর ঠোসা হলে কিংবা ঠোসা ছড়িয়ে পড়লে
- জ্বর ঠোসা শরীরের অন্য কোথাও যেমন হাতে অথবা যৌনাঙ্গে ছড়িয়ে পড়লে
- খুব বেশি ব্যথা হলে, খাওয়াদাওয়ায় অনেক সমস্যা হলে অথবা জ্বর না কমলে
- মুখের ভেতরে ঘা হলে এবং মাড়ি ফুলে গিয়ে ব্যথা হলে। এগুলো মুখ ও মাড়ির ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে
- ১০ দিন পরেও জ্বর ঠোসা সেরে উঠতে শুরু না করলে
- কিছুদিন পরপরই (যেমন: বছরে ছয় বারের বেশি) জ্বর ঠোসা হলে
- জ্বর ঠোসা নিয়ে দুশ্চিন্তা হলে
- জ্বর ঠোসার মতো দেখতে হলেও অন্য কোনো রোগ হয়েছে মনে হলে
কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার আপনাকে অ্যান্টিভাইরাল ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।
উল্লেখ্য, নবজাতক শিশু, গর্ভবতী নারী ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল কিংবা গুরুতর জ্বর ঠোসা হয়েছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা জ্বর ঠোসা থেকে সৃষ্ট জটিলতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
জ্বর ঠোসা হয় ‘হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস’ নামের একটি ভাইরাসের কারণে। একবার এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে সেটি সারাজীবন থেকে যায়। বেশিরভাগ সময়ে ভাইরাস শরীরে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে, তবে মাঝেমাঝে জেগে উঠে জ্বর ঠোসা তৈরি করে।
ভাইরাস জেগে ওঠার অন্যতম কারণ হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়া। যেমন: ঠাণ্ডা লাগা অথবা জ্বর আসা। এর ভিত্তিতেই হয়তো এই রোগের নাম দেওয়া হয়েছে জ্বর ঠোসা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়া ছাড়াও আরও কিছু কারণে ভাইরাস জেগে উঠে জ্বর ঠোসা তৈরি হতে পারে। যেমন: কোনো ইনফেকশন হলে, খুব ক্লান্ত থাকলে, মানসিক চাপে থাকলে কিংবা মেয়েদের মাসিকের সময়ে।
না, জ্বর ঠোসা ও জ্বর দুটি আলাদা জিনিস। জ্বরের কারণে জ্বর ঠোসা হয় না। জ্বর ঠোসা হয় নির্দিষ্ট একটা ভাইরাসের কারণে। এর নাম হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস। শরীরে একবার কোনোভাবে এই ভাইরাস ঢুকলে সেটি সারাজীবন শরীরে থেকে যায়। বেশিরভাগ সময়ে ভাইরাস শরীরে চুপচাপ বসে থাকে। তবে মাঝেমাঝে জেগে উঠে জ্বর ঠোসা তৈরি করে।