নখের সাধারণ পরিবর্তন ও যত্ন

স্বাভাবিক নখ দেখতে একেক জনের একেক রকম হতে পারে। তবে নখের কোনো রোগ হলে নখের রং, পুরুত্ব ও বৃদ্ধির হার কিছুটা বদলে যায়। নখে আঘাত পেলে, শরীরের অন্য রোগ অথবা শারীরিক কোনো পরিবর্তন হলে নখে পরিবর্তন আসতে পারে।

সব পরিবর্তনই যে জটিল সমস্যা এমন নয়। অনেক সময় ছোটোখাটো কারণেও নখ পরিবর্তন হতে পারে। যা নখের যত্ন নিলেই ভালো হয়ে যায়।

নখে পরিবর্তন আসার কারণ

১. বয়স বাড়া

বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রোটিনের সমস্যা হলে নখ পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। আবার বয়সজনিত বিভিন্ন কারণে নখ শক্ত, ঘোলা অথবা বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে।

২. গর্ভাবস্থা

গর্ভবতী নারীদের নখ নরম হয়ে সহজেই ভেঙে যেতে পারে। তাদের নখ মাঝে মধ্যে শক্তও হয়ে যায়। তবে বাচ্চা প্রসবের ছয় মাসের মধ্যে নখ আবার আগের মতো সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

৩. আঘাত লাগলে

নখে কোনো আঘাত লাগলে নখের রং বদলে যেতে পারে। আঘাতের মাত্রা বেশি হলে নখের জোড়া দুর্বল হয়ে যায়। তখন নখ মাংস থেকে আলগা হয়ে যেতে পারে।

আঘাতের কারণে হাতের নখ আলগা হয়ে পড়ে গেলে ছয় মাসের মধ্যে আবার সুস্থ নখ উঠা শুরু করে। তবে পায়ের নখের ক্ষেত্রে নতুন নখ উঠতে ১৮ মাসের মতো সময় লাগতে পারে।

৪. দাঁত দিয়ে নখ কামড়ালে

দাঁত দিয়ে নখ কামড়ালে নখে ক্ষতি হয় এবং তা সহজে ভেঙে যায়। এতে নখের স্বাভাবিক আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া মুখ থেকে জীবাণু নখ ও নখের আশেপাশের ত্বকে প্রবেশ করলে ইনফেকশনও হতে পারে।

৫. অতিরিক্ত নেইল পলিশ ব্যবহার করলে

নখে নেইল পলিশ অথবা অন্য কোনো কৃত্রিম রং অতিরিক্ত ব্যবহার করলে নখের কেরাটিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নেইল পলিশ উঠানোর জন্য নখে ব্যবহৃত রিমুভারে থাকা ‘অ্যাসিটোন’ নামক কেমিক্যাল নখের উপরিভাগের আবরণ ক্ষয় করে নখ দুর্বল করে ফেলতে পারে। তাই অ্যাসিটোনমুক্ত নেইল পলিশ রিমুভার ব্যবহার করা যেতে পারে।

নেইল পলিশ উঠানোর সময়ে খেয়াল রাখতে হবে যেন নখ ও নখের গোড়ার চামড়ার সংযোগ স্থানে যে তুলনামূলক শক্ত চামড়া বা ‘কিউটিকল’ থাকে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কারণ এই চামড়া নখকে গোড়ার সাথে আটকে থাকতে সাহায্য করে।

৬. ধূমপান করলে

ধূমপায়ীদের নখ হলুদ অথবা হলুদ-বাদামী রং ধারণ করে। নখের পাশাপাশি দাঁত ও আঙুলও হলদে হয়ে যেতে পারে। বিড়ি-সিগারেটে থাকা ‘টার’ নামক ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থের কারণে এমন হয়। তবে ধূমপান ছেড়ে দিলে নখে আবার স্বাভাবিক রঙ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

৭. অতিরিক্ত পানি ও ডিটারজেন্ট ব্যবহার করলে

থালা-বাসন ও কাপড় পরিষ্কারের পাউডার অথবা সাবান নখ ক্ষয় করতে পারে। অতিরিক্ত পানি ও এসব পদার্থের সংস্পর্শে বেশিক্ষণ থাকলে নখ ক্ষয়ে নরম হয়ে যায়। তখন নখ সহজেই ভেঙে যেতে পারে।

৮. ঠিকমতো নখ না কাটলে

নিয়মিত নখ না কাটলে, নখ বেশি কেটে ফেললে কিংবা নখের কোণা অতিরিক্ত কাটলে নখের সমস্যা হতে পারে।

৯. ‘ওয়ার্ট’ হলে

একপ্রকার ভাইরাসের কারণে ওয়ার্ট নামক চর্মরোগ হয়। এ রোগে নখ ও নখের আশেপাশে ছোটো ছোটো গোটা উঠে। পরে দেখতে অনেকটা ফুলকপির মতো হয়ে যায়।

১০. ইনফেকশন  হলে

নখ ও নখের আশেপাশের ত্বকে ব্যাকটেরিয়া অথবা ছত্রাক দিয়ে আক্রান্ত হলে সেখানে ইনফেকশন হতে পারে। তখন নখের রং বদলে যেতে পারে।

১১. বিভিন্ন রোগের ফলে

এই পর্যন্ত উল্লেখ করা কারণগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র নখের সমস্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে এসব ছাড়াও কিছু জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী রোগের লক্ষণ হিসেবে নখে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসতে পারে। তখন সেসব রোগের চিকিৎসা ছাড়া, নখের সমস্যা সারানো যায় না।

এমন কিছু রোগ হলো—

কোনো ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও এমন পরিবর্তন হতে পারে। তাই নখের অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন নজরে আসলে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

নখের ফাঙ্গাল বা ছত্রাকজনিত ইনফেকশন

নখ ফেটে গেলে অথবা নখের আশেপাশে কেটে গেলে ছত্রাক নখে প্রবেশ করতে পারে। তখন নখে ফাঙ্গাল বা ছত্রাকজনিত ইনফেকশন হয়। সাধারণত হাতের নখের তুলনায় পায়ের নখে এই সমস্যা বেশি হয়। তখন নখের যেসব পরিবর্তন দেখা যায়—

  • নখ শক্ত হয়
  • নখ সহজেই ভেঙে যায়
  • নখ দেখতে হলুদ, বাদামী অথবা সাদা হয়
  • নখের স্বাভাবিক আকৃতি বদলে যায়
  • নখে বাজে গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে

যে কারো এসব সমস্যা হতে পারে। তবে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যায় যদি—

  • নখ বা নখের আশেপাশে কোনো আঘাত লাগে
  • নখের কোনো অপারেশন হয়
  • পা বেশি ঘামে
  • রাস্তাঘাটে, টয়লেটে, গোসলখানায়, জনসমাগমপূর্ণ জায়গায় খালি পায়ে হাঁটলে
  • ডায়াবেটিস থাকে
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়
  • রক্ত প্রবাহে কোনো সমস্যা থাকে
  • অ্যাথলেটস্‌ ফুট বা পায়ের পাতা ও আঙুলের ফাঁকের ছত্রাকজনিত রোগ হলে

এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। কারণ ছত্রাক দ্রুত আশেপাশের ত্বকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সঠিক চিকিৎসা ছাড়া এ ধরনের সমস্যা ভালো হয় না। অনেকসময় অপারেশনেরও প্রয়োজন হতে পারে।

নখের যত্ন

কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললেই নখের অনেক সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।

যা করবেন

  • গোসলের পরে নিয়মিত হাত ও পায়ের নখ কাটুন
  • সবসময় নখ পরিষ্কার ও শুকনা রাখুন
  • নরম ব্রাশ অথবা কাপড় দিয়ে নখ নিয়মিত পরিষ্কার করুন
  • পানি ও ডিটারজেন্ট কিংবা অন্য কোনো সাবান জাতীয় জিনিস অতিরিক্ত ব্যবহার করলে হাতে রাবারের গ্লাভস্‌ পরে নিন
  • হাতের নখ ও আঙুলের জন্য ক্রিম কিংবা লোশন ব্যবহার করুন
  • মোজা নিয়মিত পরিষ্কার করে পরতে হবে
  • কোনো সেলুনে নখের পরিচর্যার জন্য গেলে ব্যবহৃত যন্ত্র অথবা দ্রব্যগুলো ঠিকমত জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে কি না সেই বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখুন। সম্ভব হলে নিজের ব্যবহারের জন্য আলাদা জিনিসপত্র নিয়ে যেতে পারেন।

ছত্রাকজনিত কোনো ইনফেকশন (যেমন: অ্যাথলেটস্‌ ফুট) হলে তা উপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আঘাত পাওয়া অথবা আলতো ভাবে লেগে আছে এমন নখ যতটুকু মাংসের সাথে লেগে আছে ততটুকু বাদে বাকিটা কেটে ফেলতে হবে। এটি স্বাভাবিক নখ উঠতে সাহায্য করবে।

তবে কোনো কারণ ছাড়াই নখ সহজেই ভেঙে গেলে সেটি বায়োটিন এর অভাব থেকে হতে পারে। এই ব্যাপারে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে পারেন। নখ ভালো রাখতে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

যা করবেন না

  • নখের দুইপাশের কোণার অংশ কাটা যাবে না। নখ কাটার সময়ে শুধুমাত্র নখের মাথা বা সামনের বাড়তি অংশ কাটতে হবে। নখ বেশী কেটে ফেললে নখকুনি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • তীক্ষ্ণ বা ধারালো কোনো কিছু (যেমন: ছুরি অথবা ব্লেড) দিয়ে নখের নিচের ময়লা পরিষ্কার করা যাবে না।
  • নখ কাটার জন্য ব্যবহৃত ক্লিপ বা নেইল কাটার অন্যের সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার পরিহার করুন।
  • নখে ব্যথা কিংবা চাপ লাগে এমন জুতা পরা যাবে না। বিশেষ করে ব্যায়াম অথবা খেলাধুলার সময় আরামদায়ক জুতা অবশ্যই পরতে হবে।
  • দাঁত দিয়ে নখ ও নখের আশেপাশের চামড়া কামড়ানো যাবে না।
  • খালি পায়ে রাস্তায়, টয়লেটে, গোসলখানায়, কিংবা জনসমাগম হয় এমন জায়গায় হাঁটা যাবে না।