১২ সপ্তাহে ওজন কমানোর উপায়: তৃতীয় সপ্তাহ

ওজন কমানোর তৃতীয় সপ্তাহে পদার্পণ করায় আপনাকে অভিনন্দন!

স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে ওজন কমানোর যে যাত্রা শুরু হয়েছে, এই সপ্তাহেও সেই অভ্যাসগুলোর চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়া বা শরীরচর্চা যতটা চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছিলো, তা এ সপ্তাহে আরও সহজে আয়ত্তে চলে আসবে।

গত সপ্তাহে হয়তো অনেকে প্রথমবারের মত শরীরচর্চা করা শুরু করেছেন বা অনেকদিন পর ব্যায়াম করেছেন। এ কারণে শরীরে একটু ব্যথা থাকতে পারে, তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এটি পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে।

গত সপ্তাহে মোট ১৫০ মিনিট বা আড়াই ঘণ্টা ব্যায়ামের লক্ষ্য পূরণ করতে না পারলেও ঘাবড়ে যাবেন না। আস্তে আস্তে ব্যায়ামের সময় বাড়ান। ব্যায়াম শুরু করে তা নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সাথে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সহজ হয়ে আসবে। এই সপ্তাহে ওজন কমানোর ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর সকালের নাস্তার আরও কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আপনি প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু না করে থাকলে, ১২ সপ্তাহে ওজন কমানোর উপায় এর প্রথম সপ্তাহের কার্যক্রম দেখুন।

এ সপ্তাহে যে অভ্যাসগুলো শুরু করবেন

১. বাড়িতে ওজন মাপার যন্ত্র থাকলে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওজন মাপবেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন এভাবে ওজন পরিমাপ করে, তাদের মধ্যে ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার ও ব্যায়ামের অভ্যাস মেনে চলার সম্ভাবনা বেশি।

২. ব্যায়ামের রুটিন অনুযায়ী একটি চার্ট বানান। প্রতিদিনের লক্ষ্য পূরণ করার পর চার্টে টিক () চিহ্ন দিন। এটি প্রতিদিন ব্যায়াম করার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

৩. সারাদিনে, অর্থাৎ তিনবেলার খাবার এবং স্ন্যাকস হিসেবে কী খাবেন তা সকালেই নির্ধারণ করে ফেলুন। এতে বাজার করতে সুবিধা হবে, আর ক্ষুধা লাগলে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা কমে আসবে।

৪. চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে এই সপ্তাহ থেকে চিনি ছাড়া খাওয়া শুরু করুন। এভাবে সারাদিনে চিনি থেকে আসা বেশ অনেকগুলো ক্যালরি এড়িয়ে ফেলা সম্ভব হবে।

ব্যায়াম করা চালিয়ে যান

নতুন করে ব্যায়াম করা শুরু করলে সারা শরীরে ব্যথা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে এই ব্যথার কারণে ব্যায়াম করার উদ্যম হারিয়ে ফেলা যাবে না। অভ্যাস না থাকার কারণে গত সপ্তাহে ব্যায়াম করতে শারীরিকভাবে বেশ কষ্ট হয়ে থাকতে পারে। তবে শরীরচর্চা চালিয়ে গেলে আগামী সপ্তাহ শেষেই হয়তো এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই নিজেকে ব্যায়াম চালিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

ব্যায়াম করা চালিয়ে যাওয়া সহজ করার জন্য নিচে ৭টি টিপস তুলে ধরা হলো—

১. নিজেকে অনুপ্রেরণা দিন

ব্যায়ামের মূল লক্ষ্য হলো স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে ওজন কমিয়ে আনা – এ ব্যাপারটি নিজেকে বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে। ব্যায়াম যে পুরোপুরি অভ্যাসের ব্যাপার সেটি বুঝতে পারলে শরীরচর্চাকে আর কঠিন কোনো চ্যালেঞ্জ মনে হবে না।

২. রুটিন মেনে চলুন

সপ্তাহের শুরুতেই ঠিক করে নিন আগামী সপ্তাহে কখন, কোথায়, কীভাবে ব্যায়াম করবেন। এভাবে প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজকর্মের মত ব্যায়ামও রুটিনের একটি অংশ হয়ে যাবে। বাইরে গিয়ে দৌড়ানোর বা শরীরচর্চা করার পরিকল্পনা থাকলে আগের দিন রাতে ঘুমানোর আগে জামাকাপড়, পানির বোতল ও ব্যাগ গুছিয়ে রাখা যেতে পারে।

৩. অন্যদের সাথে লক্ষ্য শেয়ার করুন

নিজের অগ্রগতি ও লক্ষ্য কোনো আত্মীয়, ভালো বন্ধু বা কাছের সহকর্মীর সাথে শেয়ার করতে পারেন। এটি আপনাকে লক্ষ্যে স্থির থাকতে সাহায্য করবে।

৪. সঙ্গী বানিয়ে নিন

বাড়ির অন্যান্য সদস্যও যদি আপনার সাথে ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস শুরু করে, তাহলে ওজন কমানোর প্রক্রিয়াটি অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। এতে একেকজনের জন্য একেক রকম রান্না করার ঝামেলা থাকবে না, অন্যের অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে। এছাড়া প্রথম কয়েক সপ্তাহে ব্যায়াম করার কষ্টও ভাগাভাগি করে নেওয়া যাবে। পরিবারের সদস্য ছাড়া কোনো বন্ধুকেও ওজন কমানোর সঙ্গী বানিয়ে নিতে পারেন।

৫. পরিবর্তনের মানসিকতা রাখুন

যেকোনো এক ধরনের ব্যায়াম বা খাবার ভালো নাও লাগতে পারে। তাই বলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া বা শরীরচর্চা করা একেবারেই ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়। জিমে যেতে ভালো না লাগলে সাইক্লিং, দৌড় বা সাঁতার বেছে নেওয়া যেতে পারে; খাবারের ক্ষেত্রেও তাই।

৬. নিজেকে পুরস্কার দিন

ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। কয়েকটি ছোট লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে নিজেকে পুরস্কার দিন। যেমন পরপর দুই সপ্তাহ ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে নিজেকে ছোট কোনো উপহার দিন। তবে উপহার হিসেবে ‘চিট ডে’ বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ইচ্ছা থেকে বেরিয়ে আসাই ভালো। নিজেকে দেওয়ার মতো পুরস্কার হতে পারে—

  • নতুন পোশাক
  • জিমে যাওয়ার অনুসঙ্গ
  • দৌড়ানোর জুতা
  • অনেকদিনের পরিকল্পনা থাকলেও সময়ের অভাবে পড়া হয় না এমন বই পড়া বা মুভি দেখা
  • চুল কাটা
  • একটু দূরে কোথাও ঘুরে আসা

৭. হাল ছাড়বেন না

সপ্তাহের কোনো একদিন ব্যায়াম বাদ গেলে বা একবেলা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ফেললে হতাশ হবেন না। বাকি বেলায় আবার নিজের ওজন কমানোর অভ্যাসগুলো চালিয়ে যান। হতাশ হয়ে পরের বেলা বা পরেরদিন পুরনো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসে ফেরত গেলে ওজন কমানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

ওজন কমানোর সকালের নাস্তা

সকালবেলা ব্যায়াম করতে চাইলে ঘুম থেকে আগেভাগে উঠে পড়ুন। সারারাত না খেয়ে থাকার পর সকালে খালিপেটে ব্যায়াম করা শুরু করলে মাথা ঘুরানো বা ঝিমিয়ে পড়ার মত সমস্যা হতে পারে। ব্যায়ামও চলবে মন্থর গতিতে। তাই সকালে আগে উঠে নাস্তা করে নিন। নাস্তার ১ ঘণ্টার মধ্যে ব্যায়াম করার পরিকল্পনা থাকলে ভারী নাস্তা না করাই ভালো।

ব্যায়ামের পর প্রয়োজনবোধে হালকা কোন খাবার, যেমন সেদ্ধ ডিম, একটি মালটা বা একটা কলা খেয়ে নিতে পারেন। নাস্তায় কী ধরনের খাবার খাওয়া যায় তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে ওজন কমানোর প্রথম সপ্তাহ নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

সকালের নাস্তায় ওটস

সকালের নাস্তায় ওটস হতে পারে ওজন কমানোর গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার। এর স্বাদ আমরা সাধারণত নাস্তায় যেসব খাবার খাই তা থেকে একটু ভিন্ন, তবে সময়ের সাথে আপনি এই স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। ওটসে প্রচুর আঁশ বা ফাইবার থাকে, যা খাবার ধীরে ধীরে হজমে সাহায্য করে। এতে ক্যালরির পরিমাণও তুলনামূলকভাবে কম। স্টিল কাট ওটস বিভিন্ন সুপারশপ ও কাঁচাবাজারে পাওয়া যায়। আধা কাপ দুধ দিয়ে সহজেই আধা কাপ ওটস রান্না করে খাওয়া যায়। এর সাথে একটি আপেল বা কলা, কিংবা কিছু কিশমিশ যোগ করে নিলে স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ দুটোই বাড়বে, পেট অনেকক্ষণ ভরে থাকবে, দুপুরের খাবারের আগে আর ক্ষুধা লাগবে না — সব মিলিয়ে অতিরিক্ত ক্যালরি খাওয়া থেকে বিরত থাকা সহজ হবে।

এই সপ্তাহের কাজগুলো শেষ হলে আপনি ওজন কমানোর ৩য় সপ্তাহের কার্যক্রম শুরু করতে পারেন।

ওজন নিয়ন্ত্রণে যা জানা গুরুত্বপূর্ণ

নিয়মিত ব্যায়াম করুন

সুস্থ থাকতে এবং শরীরকে ফিট রাখতে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ১৫০ মিনিট অ্যারোবিক ব্যায়াম করা উচিত। অ্যারোবিক ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে হাঁটা, সাঁতার, দৌড়, সাইকেল চালানো ও টেনিস বা ব্যাডমিন্টন খেলা।

এছাড়াও সপ্তাহে দুই বার স্ট্রেংথ ট্রেনিং করা উচিত, যা মাংশপেশিকে শক্তিশালী করে তোলে। এর মধ্যে রয়েছে ভারোত্তোলন, যোগব্যায়াম বা ইয়োগা, বাগানে কাজ করা এবং পুশ আপ। ইউটিউব বা গুগলে নিচের শব্দগুলো লিখে খুঁজলেই  স্ট্রেংথ ট্রেনিং-এর নির্দেশনাযুক্ত এমন অনেক ভিডিও পেয়ে যাবেন। এমন কিছু শব্দ হলো—

  • Pushup
  • Pullup
  • Plank
  • Squat