টেনশন টাইপ মাথাব্যথা

বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথার মধ্যে সবচাইতে বেশি দেখা যায় টেনশন টাইপ মাথাব্যথা। দৈনন্দিন জীবনে যে মাথাব্যথা আমরা স্বাভাবিক ধরে নেই, এটি মূলত সেই মাথাব্যথা।

টেনশন টাইপ মাথাব্যথার লক্ষণগুলো কী?

মাথার দুপাশেই একটা স্থায়ী ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এছাড়াও ঘাড়ের মাংসপেশিতে টানটান লাগতে পারে এবং চোখের পেছনে একটা চাপ চাপ ভাব হতে পারে।তবে সাধারণত এই মাথাব্যথাটি আপনার প্রতিদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর মত তীব্র হয় না।

এই ব্যথা ৩০ মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে মাঝে মধ্যে ব্যথাটি কিছু দিন স্থায়ী হতে পারে।

এই মাথাব্যথা কাদের হয়?

বেশির ভাগ মানুষই জীবনে কোন না কোন সময়ে এই ধরণের মাথাব্যথায় ভোগে। যেকোন বয়সেই এই মাথাব্যথা হতে পারে, তবে টিনেজ বয়সী ছেলেমেয়ে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে বেশি দেখা যায়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মাঝে এই মাথাব্যথা বেশি হয়ে থাকে।

যদি কোন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাঝে এই মাথাব্যথা টানা ৩ মাস (ন্যূনতম) আর প্রতিমাসে ১৫ বারের বেশি  দেখা দেয়, তবে সেটাকে ক্রনিক টেনশন টাইপ মাথাব্যথা বলে।

কখন ডাক্তারের সহায়তা নিবেন?

এই ধরণের মাথাব্যথা কদাচিৎ হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে যদি এক সপ্তাহে বেশ কয়েকবার দেখা দেয় অথবা যদি খুব তীব্র হয়, তাহলে একজন ডাক্তারের সহায়তা নিবেন।

ডাক্তার আপনাকে মাথাব্যথা সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন। আপনার পারিবারিক স্বাস্থ্য ইতিহাস, খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস, জীবনধারা সম্পর্কেও তিনি জানতে চাইতে পারেন। এ তথ্যগুলো আপনার মাথাব্যথার ধরন নির্ণয়ে ডাক্তারকে সাহায্য করবে।

কখন দ্রুত হাসপাতালে যাবেন

নিচের লক্ষণগুলো থাকলে মাথাব্যথার পেছনে অন্য কোন গুরুতর সমস্যা লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই  কিছু পরীক্ষা এবং দ্রূত চিকিৎসার  প্রয়োজন হতে পারে।

১.মাথায় গুরুতর আঘাত পেলে (যেমন কোন দুর্ঘটনার বা কোথাও পরে যাওয়ার কারণে)।

২.মাথাব্যথা হঠাৎ শুরু হলে এবং শুরুতেই ব্যথার তীব্রতা অনেক বেশি হলে।

৩.মাথাব্যথা হঠাৎ শুরু হলে এবং পূর্বে কখনো এমন তীব্র মাথাব্যথা অনুভব না করে থাকলে।

৪.প্রচণ্ড মাথাব্যথার সাথে নিচের কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন:

  • কথা বলতে কিংবা কিছু মনে করতে হঠাৎ অসুবিধা হলে
  • হাত বা পা দুর্বল বা অবশ হয়ে আসলে
  • কথা বলার সময়ে জড়িয়ে আসলে
  • দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেললে
  • ঝিমিয়ে পরলে অথবা অসংলগ্ন আচরণ করলে
  • গায়ে জ্বর আসলে, কাঁপুনি হলে, ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে, অথবা চামড়ায় র‍্যাশ (ফুসকুড়ি) উঠলে
  • চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে গেলে
  • খিঁচুনি হলে
  • অজ্ঞান হয়ে পরলে

৫.এছাড়াও প্রচণ্ড মাথাব্যথার সাথে নিচের কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাবেন। এই লক্ষণগুলি মাথা এবং ঘাড়ের রক্তনালীর প্রদাহের কারণে দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

  • খাওয়ার সময় চোয়ালে ব্যথা হলে
  • চোখে ঝাপসা দেখলে অথবা একটার জায়গায় দুটো দেখলে
  • মাথার তালুতে চাপ দিয়ে ব্যথা অনুভব করলে

টেনশন টাইপ মাথাব্যথা কী কারণে হয়?

টেনশন টাইপ মাথাব্যথা হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ চিকিৎসাবিজ্ঞানে এখনো স্পষ্ট হয় নি। কিন্তু কিছু বিষয় জানা গেছে যেগুলো টেনশন টাইপ মাথাব্যথা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। যেমন:

  • মানসিক চাপ ও উদ্বেগ  
  • চোখ কুঁচকে দেখা
  • অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গি যেমন কুঁজো হয়ে বসা
  • ক্লান্তি
  • পানিশূণ্যতা
  • অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস
  • ব্যায়াম বা শারীরিক কাজের স্বল্পতা
  • উজ্জ্বল সূর্যের আলো
  • আওয়াজ বা কোলাহল
  • নির্দিষ্ট কিছু ঘ্রাণ

টেনশন টাইপ মাথাব্যথা অন্য কোন রোগের উপসর্গ নয়।  এই মাথাব্যথা নিজেই একটা রোগ। একে এক প্রকারের প্রাথমিক মাথাব্যথা বলা হয়। অন্যান্য প্রাথমিক মাথাব্যথার উদাহরণ হল ক্লাস্টার মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন।

এই মাথাব্যথার চিকিৎসা কী?

এই মাথাব্যথা প্রাণঘাতী নয়। ব্যথানাশক  ওষুধ ও দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এটা সাধারণত কমিয়ে আনা যায়।

দৈনন্দিন জীবনে কী পরিবর্তন আনবেন? যদি আপনার মাথাব্যথা দুশ্চিন্তার কারণে হয়ে থাকে, তবে মানসিক প্রশান্তি আনে এমন কিছু কাজ তা কমিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে। যেমন:

  • যোগ ব্যায়াম
  • ম্যাসাজ
  • ব্যায়াম
  • কপালে ঠান্ডা কাপড় রাখা কিংবা গলার পেছনে হাল্কা গরম কাপড় ধরে রাখা।

ব্যথানাশক ওষুধ

ব্যথানাশক ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে।  মাঝে মধ্যে  এসপিরিন ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

গর্ভাবস্থায় ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে প্যারাসিটামল সবচাইতে ভালো। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত  এই সময়ে আইবুপ্রোফেন সেবন করবেন না। ১৬ বছরের কম বয়সীদের এসপিরিন সেবন করানো উচিত নয় ।

ব্যথানাশক ওষুধ জনিত মাথাব্যথা

একটানা অনেকদিন (সাধারণত ১০ দিন বা তার অধিক সময়) ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলে মাথাব্যথা হতে পারে। অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করার কারণে এই মাথাব্যথা সৃষ্টি হয়। আবার এমনও হতে পারে ওষুধ বন্ধ করলে মাথাব্যথা শুরু হয় কারণ আপনার শরীর ওষুধে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বহুদিন ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার পর আপনার যদি মাথাব্যথা হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। নিজে নিজে  ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না।

টেনশন টাইপ মাথাব্যথার প্রতিকার

আপনি যদি খুব ঘনঘন টেনশন টাইপ মাথাব্যথায় ভোগেন, তাহলে একটি ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারেন কখন কোন অবস্থায় আপনার মাথাব্যথা শুরু হচ্ছে। এতে করে মাথাব্যথা শুরু হওয়ার কারণ সনাক্ত করতে সুবিধা হতে পারে। সেই অনুযায়ী আপনার খাদ্যাভ্যাস বা দৈনন্দিন জীবনে পরিবর্তন এনে ঘনঘন মাথাব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।

আপনার মাথাব্যথা যদি মানসিক চাপ আর দুশ্চিন্তা সংক্রান্ত হয়, তবে নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক প্রশান্তি আনে এমন কাজ আপনার জন্য উপকারী হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর দেহভঙ্গি পরিহার করা, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া এবং যথেষ্ট পরিমাণে পানি খাওয়া আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে।

যাদের ক্রনিক টেনশন টাইপ মাথাব্যথা আছে, তাদের জন্য ৫-৮ সপ্তাহ সময়ের মধ্যে  ১০টির মত আকুপাংচার সেশন উপকারী হতে পারে।