বেশিরভাগ শিশু এবং টিনেজ বয়সী ছেলেমেয়ে বছরে অন্তত একবার মাথাব্যথায় আক্রান্ত হয়। এই মাথাব্যথা বড়দের মাথাব্যথা থেকে খানিকটা ভিন্ন। তাই দেখা যায় মা-বাবারা এ সমস্যাটা লক্ষ্য করেন না।
এই লেখায় থাকছে বাচ্চাদের মাথাব্যথা হচ্ছে কিনা সেটা বুঝতে পারা এবং সেই ব্যথা থেকে আরোগ্য লাভ করার কিছু পরামর্শ।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মাইগ্রেন এবং অন্যান্য মাথাব্যথা বড়দের তুলনায় কম সময়ের জন্য স্থায়ী হয়। বাচ্চাদের মাথাব্যথা হঠাৎ করেই শুরু হয় এবং এর ফলে বাচ্চা দ্রুত ফ্যাঁকাসে ও অবসন্ন হয়ে পরে। এছাড়াও বাচ্চারা বমিবমি ভাব ও বমি করতে পারে। তবে বাচ্চারা বেশ দ্রুতই সেরে উঠে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে মাথাব্যথা ৩০ মিনিটের মধ্যেই চলে গিয়েছে এবং বাচ্চা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। এমনকি সে বাইরে খেলাধুলাও করে এমনভাবে যেন কিছুই হয়নি।
বাচ্চাদের মাথাব্যথা তাদের পেটেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সাধারণত পেটব্যথাও হয়ে থাকে।
দুপুরের খাবার না খেলে বাচ্চাদের মাথাব্যথা হতে পারে
প্রায়সই বাচ্চাদের মাথাব্যথা হয় যখন তারা দুপুরের খাবার খায় না, কিংবা সারা দিনে পরিমাণ মত পানি তাই এই ধরণের মাথাব্যথা প্রতিকারের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বাচ্চাদের নিয়মিত খাবার খাওয়ানো, পানি পান করানো এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম নিশ্চিত করা।
খেলাধুলার কারণে মাথাব্যথা ঠেকাতে যে সতর্কতা প্রয়োজন
খেলাধুলা বাচ্চাদের মাথাব্যাথার সৃষ্টি করতে পারে। এর সম্ভাব্য কারণ হল খেলাধুলার ফলে ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতা হওয়া এবং রক্তের সুগার লেভেলে পরিবর্তন আসা।
খেলার আগে ও পরে বেশি করে পানি খাওয়া, গ্লুকোজ নেয়া মাথাব্যাথা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
নিয়মিত খাবারের সাথে মধ্য সকাল (সকাল ও দুপুরের মাঝামাঝি সময়) এবং মধ্য বিকালে (দুপুর ও সূর্যাস্তের মাঝামাঝি সময়) হাল্কা নাস্তা এক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে।
মাথাব্যথা ও শৈশবকালীন মানসিক সমস্যা
মাঝেমধ্যে বাচ্চাদের মানসিক ও আবেগজনিত সমস্যা থেকেও মাথাব্যথা হতে পারে। বিভিন্ন মানসিক পীড়ন সৃষ্টিকারী পরিস্থিতি যেমন বিদ্যালয়ে মানসিক উৎপীড়নের শিকার হওয়া, বাবা-মায়ের মাঝে বিরোধ, ইত্যাদির ফলে বাচ্চাদের মাথাব্যথার সমস্যা শুরু হতে পারে।
মাথাব্যথার বিস্তারিত ডায়েরিতে লিখে রাখুন
বাচ্চার মাথাব্যথার বিস্তারিত একটি ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারেন। বাচ্চা যদি একটু বড় হয় তাহলে সে নিজেই ডায়েরি লিখতে পারে। মাথাব্যথার নির্দিষ্ট কারণ বের করার এটি একটি ভালো উপায়।
ডায়েরিতে কী লিখবেন? কখন মাথাব্যথা হয় সেটা লিখে রাখুন। এছাড়াও মাথাব্যথা শুরু হওয়ার সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ভিন্ন কিছু ঘটে বা করে থাকলে সেটা লিখে রাখুন। আপনার যদি মনে হয় কোন কিছু এই মাথাব্যথার সাথে সম্পৃক্ত সেটাও লিখে রাখবেন।
এই তথ্যগুলোর কিছু উদহরন হচ্ছে, অনিয়মিত খাবার, কোন নির্দিষ্ট ধরণের খেলাধুলা, রাত জাগা, বা কোন ধরণের কোন মন খারাপ করার বা মানসিক চাপ ফেলার ঘটনা যেমন স্ট্রেস্ফুল মানসিক চাপ সৃষ্টিকরে এমন পরীক্ষা বা বাবা-মা,বন্ধু-বান্ধবের সাথে ঝগড়া।
ডায়েরি লেখাটি চালিয়ে যাবেন। কয়েক মাস হয়ে গেলে আপনার সন্তানের সাথে ডায়েরিটি পড়ুন। মাথাব্যথা হওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো সনাক্ত করতে পারছেন কি না দেখুন।
সম্ভাব্য কারণগুলো সনাক্ত করে আগামী কয়েক মাস আপনার বাচ্চাকে একটি একটি করে সেগুলো থেকে বিরত রাখুন। লক্ষ্য রাখবেন সম্ভাব্য কারণ গুলি থেকে কোন কাজ এড়িয়ে গেলে মাথাব্যথা কমে যায় কি না।
মাথাব্যথা সারাতে বাচ্চা নিজে যা যা করতে পারে
কিছু সাধারণ পদক্ষেপ আপনার বাচ্চাকে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের সময় সহায়তা করতে পারে। যেমন:
- নিঃশব্দ ও অন্ধকার রুমে শুয়ে থাকা
- কপালে অথবা চোখের উপর ঠান্ডা আর্দ্র কাপড় দিয়ে রাখা
- ধীরে ধীরে গভীর নিঃশ্বাস নেয়া
- ঘুমিয়ে যাওয়া, কারণ ঘুম মাথাব্যথা দ্রুত কমিয়ে আনতে সাহায্য করে
- খাবার খাওয়া বা তরল কিছু পান করা। (তবে ক্যাফেইন-যুক্ত পানীয় পরিহার করবেন)
যদি আপনার মনে হয় বাচ্চার পেইনকিলারে (ব্যথানাশক ওষুধ) ব্যথা কমে যাবে, তাহলে নিয়ম মেনে নিরাপদ পরিমাণে তাকে ওষুধ খাইয়ে দিন। প্যারাসিটামল ও আইবুপ্রোফেন দুইটি ওষুধই বাচ্চাদের মাথাব্যথার ক্ষেত্রে কার্যকর ও নিরাপদ। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ট্যাবলেটের বদলে সিরাপ খাওয়াটা সহজতর।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
বড়দের মত বাচ্চাদের বেলায়ও মাথাব্যথা কোন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা নয়। আপনি বাসাতেই বাচ্চার যত্ন নিতে পারবেন। উপরে আলোচিত পন্থা অবলম্বন করেই এর প্রতিকার করা যায়। তবে বাচ্চার মাথাব্যথা নিয়ে চিন্তিত হলে দেরী না করে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।