শরীরে হরমোন এর পরিবর্তনের কারণে অনেক নারী মাথাব্যথার শিকার হন।
অনেকে মাইগ্রেন (এক প্রকার মাথাব্যথা) এর সাথে তাদের মাসিক বা রজঃস্রাবের একটি সম্পর্ক লক্ষ্য করেন। মাসিকের সময়কালীন এই মাথাব্যথা প্রায়ই বেশ গুরুতর রূপ ধারন করে। মাসিক শুরু হওয়ার ২ দিন আগে অথবা মাসিকের প্রথম ৩ দিনে এই মাথাব্যথার সূত্রপাত ঘটতে পারে। নারীর শরীরে এই সময়টাতে এস্ট্রোজেন নামক হরমোনের পরিমাণ কমে যায়, যার ফলে এই মাথাব্যথা আরম্ভ হয়। মাসের অন্যান্য সময়ে হয়ে থাকা মাইগ্রেনের তুলনায় এই সময়কার মাইগ্রেন সাধারণত বেশি দুঃসহ হয় এবং এই ব্যথা পরের দিন ফিরে আসার সম্ভাবনাও বেশি।
মাসিক ছাড়াও অন্যান্য কারণে এই প্রকার হরমোনজনিত মাথাব্যথা হতে পারে। কারণগুলো হলো:
- জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি (কম্বাইন্ড ওরাল কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল) – এই বড়ি খাওয়ার ফলে কারো কারো মাথাব্যথা কমে যায়, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে আগের তুলনায় আরো ঘনঘন মাথাব্যথা হয়। বিশেষ করে যে সপ্তাহে তারা পিল বা বড়ি খাওয়া থেকে বিরত থাকেন এবং এস্ট্রোজেন নামক হরমোনের পরিমাণ কমে যায়।
- রজোবন্ধ বা মেনোপজ- রজোবন্ধের সময় যত ঘনিয়ে আসে, মাথাব্যথা ততই যন্ত্রণাদায়ক হতে থাকে। এমন হওয়ার পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে। এক, রজোবন্ধের আগের সময়টায় মাসিক আরো ঘনঘন হয়। দুই, এই সময়ে নারীর শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয়।
- গর্ভাবস্থা – সন্তান গর্ভে ধারণের প্রথম কয়েক সপ্তাহে মাথাব্যথা তীব্র হয়ে উঠে। এই ব্যথা সাধারণত গর্ভাবস্থার শেষের ৬ মাসে কমে আসে অথবা একদমই চলে যায় । আর এই মাথাব্যথা বাচ্চার কোন ক্ষতি করে না।
আপনার মাথাব্যথা হরমোনজনিত সমস্যার কারণে হচ্ছে কিনা কিভাবে জানবেন
মাসিকের সাথে আপনার মাথাব্যথার আদৌ সম্পর্ক আছে কি না, এই ব্যাপারে জানতে কমপক্ষে ৩ মাস একটি ডায়েরিতে মাসিক চক্র এবং মাথাব্যাথার সকল তথ্য লিখে রাখুন। যদি আপনার মাথাব্যথার সাথে সত্যিই মাসিকের সম্পর্ক থাকে, তাহলে ডায়েরির মাধ্যমে জানা যাবে যে মাসিক চক্রের ঠিক কোন পর্যায়ে মাথাব্যথার সূত্রপাত ঘটেছে ।
এই মাথাব্যথা মোকাবেলায় আপনি নিজে যা করতে পারেন
ডায়েরির মাধ্যমে যদি জানতে পারেন যে মাসিক শুরু হবার ঠিক আগে আপনার মাথাব্যথা হয়, তাহলে আপনি এই কাজ গুলো করতে পারেন:
- ঘনঘন অল্প পরিমাণে কিছু খেতে থাকবেন যাতে আপনার রক্তে শর্করা ভালো পরিমাণে থাকে। এক বেলা খাবার না খেলে বা অনিয়মিত খেলে মাথাব্যথা হতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে হাল্কা কিছু খাবেন এবং অবশ্যই সকালের নাস্তা করবেন।
- নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘুমের পরিমাণ খুব বেশি বা খুব অল্প যাতে না হয়।
- মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন। তা যদি সম্ভব না হয়, মানসিক চাপ মোকাবেলার কিছু উপায় অবলম্বন করুন, যেমন নিয়মিত ব্যায়াম।
হরমোনজনিত মাথাব্যথার চিকিৎসা
মাইগ্রেনের চিকিৎসা: মাসিকের সময় মাইগ্রেনের জন্য ডাক্তার আপনাকে কিছু ওষুধ দিতে পারেন । এসব ওষুধে হরমোন না থাকলেও এগুলো মাইগ্রেন ঠেকাতে পারে। যেমন ট্রিপট্যান, মেফেনামিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
কোন বিরতি ছাড়া জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি: যদি মনে হয় জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি নেওয়ার সাথে আপনার মাথাব্যথার সম্পর্ক আছে, তাহলে ডাক্তারকে জানাবেন।
যে সপ্তাহে আপনি বড়ি খাওয়া থেকে বিরত থাকেন, সেই সময়ে যদি মাথাব্যথা হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে কোন বিরতি ছাড়া কয়েক পাতা বড়ি খেতে পারেন। তখন আপনার শরীরে এস্ট্রোজেনের পরিমাণ হঠাৎ করে কমে যাবে না।
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি: মেনোপজ ঘনিয়ে আসার সময় নারীর শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয়, যার ফলে মাইগ্রেন সহ নানান ধরনের মাথাব্যথার উপদ্রব বেড়ে যায়।
হট ফ্লাশ (হঠাত করে চরম তাপ অনুভব করা যা সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়), অতিরিক্ত ঘাম ইত্যাদি কমিয়ে ফেলতে সহায়তা করতে পারে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি।
তবে আপনি যদি মাইগ্রেনে ভোগেন, ট্যাবলেটের তুলনায় আপনার জন্য প্যাচ অথবা জেল হিসেবে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেয়া শ্রেয়। ট্যাবলেটের তুলনায় এগুলো হরমোনের পরিমাণ অধিক স্থিতিশীল রাখে এবং মাইগ্রেন শুরু করে কম।
এস্ট্রোজেন থেরাপি: আপনার মাসিক যদি নিয়মিত হয়, ডাক্তার আপনাকে মাসিক শুরু হওয়ার আগের কিছু দিন এবং মাসিক চলাকালীন কিছু দিন ব্যবহারের জন্য এস্ট্রোজেন প্যাচ বা জেল দিতে পারেন। তবে এগুলো সাধারণত মাসিকের সময়কার মাইগ্রেনের জন্য দেয়া হয় না।