বদহজম

বেশিরভাগ মানুষেরই কখনো না কখনো বদহজমের সমস্যা হয়। এটি সাধারণত মারাত্মক কোন কিছুর লক্ষণ নয়। আপনি নিজে নিজেই এর চিকিৎসা করতে পারেন।

বদহজমের লক্ষণ

খাবার খাওয়া বা পানীয় পান করার পরে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে: 

  • বুক জ্বালাপোড়া করা- বিশেষত খাওয়ার পরে বুকে জ্বালাপোড়ার মত যন্ত্রণা অনুভব করা
  • পেট ভরা বা ফুলে উঠেছে এমন বোধ করা 
  • বমিভাব
  • ঢেঁকুর তোলা এবং বায়ু ত্যাগ করা 
  • খাবার বা তিক্ত স্বাদের তরল মুখে উঠে আসা

কখন এটি বদহজম নয়? 

পেট ব্যথা বা পিঠ ব্যথা সাধারণত বদহজমের লক্ষণ নয়। এগুলো থাকলে আপনি হয়তো কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন। 

বদহজম, বুক জ্বালাপোড়া আর এসিড রিফ্লাক্স – এদের মধ্যে পার্থক্য কী? 

বুক জ্বালাপোড়া আর এসিড রিফ্লাক্স একই জিনিস- পাকস্থলীর ভেতরে থাকা এসিড গলা পর্যন্ত উঠে আসা। এরকম ঘটলে আপনি জ্বালাপোড়া অনুভব করবেন। এটি বদহজমের লক্ষণ হতে পারে। 

বদহজমের ঘরোয়া চিকিৎসা

  • ঘুমাতে যাওয়ার ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে কিছু খাবেন না। 
  • বিছানায় শোবার সময় আপনার মাথা ও ঘাড় উঁচু অবস্থানে রাখুন- এটি ঘুমের সময় পাকস্থলীর এসিড গলা পর্যন্ত উঠে আসা বন্ধ করতে পারে। 
  • তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত অথবা অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করবেন।
  • চা, কফি, কোমল পানীয় (কোলা) অথবা মদ পান কমিয়ে ফেলুন।

বদহজমের চিকিৎসা 

বদহজমের সাথে যে বুক জ্বালাপোড়া বা ব্যথা হয়, তা উপশমের জন্য একজন ডাক্তার আপনাকে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। যেসব ওষুধ পেটে এসিডের পরিমাণ কমায় সেগুলো হল:

  • এন্টাসিড (antacid)
  • প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (proton pump inhibitor)

কিছু বদহজমের ওষুধ খাবার খাওয়ার পরে সেবন করা ভালো যাতে তাদের কার্যকারিতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। আরও তথ্যের জন্য ওষুধের সাথে থাকা লিফলেটটি পড়ে দেখুন। 

গর্ভবতী মহিলাদের বদহজমের সমস্যার চিকিৎসা 

গর্ভবতী মহিলাদের প্রায়ই বদহজমের সমস্যা হয়। গর্ভধারণের ২৭ সপ্তাহের পরে এই সমস্যা খুবই স্বাভাবিক। হরমোনের পরিবর্তনের জন্য বা গর্ভে বেড়ে ওঠা শিশু পেটে চাপ দেওয়ার কারণে এটি হতে পারে। একজন ডাক্তার অস্বস্তিকর অনুভুতি বা ব্যথার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন। তারা গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য সঠিক ওষুধটি খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। 

কখন ডাক্তার দেখাবেন

  • বার বার বদহজমের সমস্যায় ভুগতে থাকেন 
  • তীব্র ব্যথা অনুভব করেন
  • ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সী হয়ে থাকেন 
  • কোন চেষ্টা ছাড়াই ওজন অনেক কমে যায় 
  • খাবার গিলতে সমস্যা অনুভব করেন
  • বার বার  বমি করেন
  • আয়রনের অভাবজনিত রক্তস্বল্পতা এর রোগী হন 
  • পেটে চাকার মত কিছু অনুভব করেন 
  • বমি বা পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন 

এগুলো মারাত্মক কোন সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। 

বদহজম কেন হয়?

পাকস্থলীতে থাকা এসিড আপনার পাকস্থলীর আস্তরণ কিংবা গলায় জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। একারণে বদহজম হয় এবং আপনি জ্বালাপোড়া ও ব্যথা অনুভব করেন। 

বদহজমের আরও কিছু কারণ হল: 

  • বিভিন্ন ওষুধ 
  • ধূমপান
  • মদ পান 
  • এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যার নাম Helicobacter pylori

মানসিক চাপ বদহজমের সমস্যা বাড়ায়। 

যেসব অসুখের কারণে বদহজমের সমস্যা হয়

  • হায়াটাস হার্নিয়া (Hiatus hernia)
  • পাকস্থলীর আলসার 
  • পাকস্থলীর ক্যান্সার 
  • Helicobacter pylori নামক জীবাণু দ্বারা সংক্রমণ 
  • গ্যাস্ট্রো-এসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (gastro-oesophageal reflux disease)