কানে ব্যথা

কানে ব্যথা খুব কমন একটা সমস্যা। শিশুদের সমস্যাটি বেশি হয়ে থাকে। সাময়িকভাবে যন্ত্রনাদায়ক হলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি কোনো গুরুতর রোগের লক্ষণ নয়। সময়মত সঠিক চিকিৎসা নিলে কানে ব্যথা থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়। 

কানে ব্যথার কারণ

নানান কারণে কানে ব্যথা হতে পারে। বিভিন্ন কারণে ব্যথার স্থায়িত্ব বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। নিচে কানে ব্যথার খুব পরিচিত কিছু ধরন ও সেসবের সম্ভাব্য কারণগুলোর একটা তালিকা দেওয়া হলো—

কানে ব্যথার সাথেসম্ভাব্য কারণ
দাঁতে ব্যথা অনুভুত হওয়া– শিশুদের দাঁত ওঠা
– দাঁত ও দাঁতের মাড়িতে ইনফেকশনের জন্য ফোঁড়া হওয়া
শুনতে সমস্যা হওয়া– গ্লু ইয়ার বা কানে পানি জমা

– কানে খইল বা ময়লা তৈরি হওয়া

– কানের ভেতরে কিছু আটকে যাওয়া। যেমন: শিশু কোনো খেলনা, বাদাম অথবা মটরশুঁটি কানে ঢুকিয়ে ফেললে যদি তা আটকে যায়

– কানের পর্দা ছিদ্র হওয়া
খাবার গিলার সময় ব্যথা অনুভুত হওয়া– গলা ব্যথা

– টনসিলের ইনফেকশন

– টনসিলের বিভিন্ন জটিলতা। যেমন: টনসিলের চারপাশে গুরুতর ইনফেকশন থেকে ফোঁড়া হওয়া
জ্বর আসা– কানের ইনফেকশন

সর্দি-কাশি ও ফ্লু

কানে কিছু আটকে গেলে তা নিজে নিজে বের করার চেষ্টা না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান।

কানের ব্যথা কমানোর উপায়

কানের ব্যথা কমাতে নিচে উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে চলুন—

  • নরম কাপড় দিয়ে উষ্ণ অথবা ঠাণ্ডা সেক দিতে পারেন
  • প্যারাসিটামল অথবা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথানাশক ঔষধ খেতে পারেন

উল্লেখ্য, যাদের বয়স ১৬ বছরের কম তাদের অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ সেবন করা উচিৎ নয়।

ব্যথা প্রতিকারে যা করবেন না—

  • কানে কিছু প্রবেশ করাবেন না। যেমন: কটন বাড জাতীয় বস্তু
  • ইয়ার ওয়াক্স বা কানের ময়লা বের করার চেষ্টা করবেন না
  • কানে পানি প্রবেশ করতে দেবেন না

যখন জরুরিভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন

কানে ব্যথার সাথে সাথে যে সমস্যাগুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন—

  • ৩ দিনের বেশি সময় কানে ব্যথা থাকলে
  • বার বার কান ব্যথা হলে
  • ব্যথা বেড়ে গেলে এবং অবস্থার অবনতি হলে
  • অনেক জ্বর আসলে অথবা গা গরম লাগলে এবং কাঁপুনি হলে
  • কান ও কানের চারপাশ ফুলে গেলে
  • কান থেকে পানি কিংবা তরল পদার্থ বের হতে থাকলে
  • কানে শুনতে সমস্যা হলে অথবা শুনতে না পেলে
  • কানে কিছু আটকে গেলে
  • শিশুর বয়স ২ বছরের চেয়ে কম হলে এবং একইসাথে দুই কানে ব্যথা থাকলে

যেভাবে বুঝবেন আপনার শিশুর কানে ব্যথা হচ্ছে

শিশু ও ছোটো বাচ্চাদের এক কানে অথবা একই সাথে দুই কানে ব্যথা হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইনফেকশনের জন্য ব্যথা হয়—যা অল্প কিছুদিনেই সেরে যায়। শিশুর কানে ব্যথা হচ্ছে কি না তা বোঝার কিছু উপায় হলো—

  • বাচ্চারা কান ঘষলে বা টানলে
  • আওয়াজে সাড়া না দিলে
  • শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হলে
  • খিটখিটে কিংবা খুব অস্থির হয়ে উঠলে
  • খাবার খেতে না চাইলে
  • শরীরের ভারসাম্য বা ব্যালেন্স হারিয়ে ফেললে

কানের খইল বা ময়লা তৈরি হলে করণীয়

কানের খইল জমলে সেটিকে আমরা কানের ময়লাও বলে থাকি। এটিকে ইংরেজিতে ইয়ার ওয়াক্স বলা হয়। এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়।

সাধারণভাবে ময়লা ভাবা হলেও কানের খইল আমাদের জন্য উপকারি। এটি কানের ভেতরের পরিবেশকে জীবাণু থেকে সুরক্ষা দেয়। এটি সাধারণত নিজ থেকেই নিয়মিতভাবে বেরিয়ে আসে।

যদি কানে বেশি পরিমাণে খইল জমা হয় এবং শক্ত হয়ে আটকে থাকে তাহলে কানে নানান সমস্যা দেখা দেয়। তখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়।

কানে খইল আটকে থাকলে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় তা হলো—

  • কানে শুনতে না পাওয়া
  • কানে ব্যথা হওয়া এবং কান বন্ধ হয়ে আছে বলে মনে হওয়া
  • বাইরে কোনো শব্দ না হলেও কানের ভেতর গুঞ্জন হচ্ছে বলে মনে হওয়া
  • মাথা ঘুরানো, শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা
  • বমি বমি লাগা

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

আঙুল ও অন্য কোনো বস্তু (যেমন: কটন বাড) দিয়ে কখনোই কানের ময়লা বের করার চেষ্টা করবেন না। কারণ এতে ময়লা উল্টো কানের ভেতরে ঢুকে যায়। ফলে খইলের সমস্যা আরও বেড়ে যায় এবং ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমাদের অনেকেরই এই অভ্যাস আছে। তাই এখন থেকে এই কাজটি একেবারেই বন্ধ করে দিতে হবে।

কানের খইল বা ময়লা বের করতে হলে মেডিকেল গ্রেড অলিভ ওয়েল ব্যবহার করবেন। এই তেল তুলনামূলক বেশি কার্যকর এবং কানের ময়লা সহজে নরম করে। ফলে সেটি আপনা-আপনি কান থেকে বেরিয়ে আসে।

কানে তেল ব্যবহারের নিয়ম

কানের ময়লা নিজ থেকেই বের হয়ে পড়ে যায়। কিন্তু যদি তা কানে আটকে থাকে এবং কান বন্ধ করে রাখে তাহলে দিনে তিন বার অথবা চার বার কানে দুই থেকে তিন ফোঁটা মেডিকেল গ্রেড অলিভ ওয়েল অথবা অ্যামন্ড ওয়েল দিন। টানা তিন থেকে পাঁচ দিন এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

কানে তেল দেওয়ার সুবিধার্থে ড্রপার ব্যবহার করুন। তেল যেন সহজে কানের নালিতে প্রবেশ করে তাই কিছুক্ষণের জন্য মাথা এক পাশে কাত করে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতের ঘুমানোর আগে কানে তেল দিলে পদ্ধতিটি মেনে চলা সহজতর হবে। এর ফলে দুই সপ্তাহের মধ্যে ময়লা দলা হয়ে কান থেকে বেরিয়ে আসবে।

জরুরি তথ্য

কানের পর্দায় ছিদ্র থাকলে ড্রপ ও তেল ব্যবহার করবেন না।

যখন ডাক্তারের কাছে যাবেন

ঘরোয়া পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান না হলে একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন। যে লক্ষণগুলো দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে তা হলো—

  • লক্ষণ ৫ দিনের বেশি স্থায়ী হলে
  • কান বন্ধ হয়ে আছে মনে হলে এবং কোনো ধরনের আওয়াজ শুনতে না পেলে। এক্ষেত্রে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে