অ্যাজমা অ্যাটাক

প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী অনেক মানুষ অ্যাজমা অ্যাটাকের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে এর অনেকগুলো মৃত্যুই ঠেকানো সম্ভব হত।

আপনি যদি হাঁপানিরোগের সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন, তবে অ্যাজমা অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেকটাই কমে আসে। বছরে কমপক্ষে একবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে হাঁপানির পরীক্ষা করিয়ে নিন এবং আপনার চিকিৎসা সম্পর্কে পরামর্শ নিন। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে কি করবেন সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে রাখুন। সম্ভব হলে লিখিত আকারে পরামর্শ নেবার চেষ্টা করবেন, যাতে অ্যাজমা অ্যাটাক হলে সেই লেখা অনুযায়ী আপনি চিকিৎসা নিতে পারেন।

অ্যাজমা অ্যাটাকের লক্ষণগুলো কী কী?

  • আপনার অ্যাজমার লক্ষণগুলো ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে (কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ চাপ অনুভব বা শ্বাসপ্রশ্বাসে শোঁ শোঁ আওয়াজ হওয়া)
  • ইনহেলার ব্যবহার করেও কাজ হচ্ছে না
  • শ্বাসকষ্ট এতই বেড়ে গেছে যে কথা বলা, খাওয়া বা ঘুমানো সম্ভব হচ্ছে না
  • আপনার শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হচ্ছে এবং মনে হচ্ছে যে আপনি দম ফেলতে পারছেন না
  • আপনার পিক-ফ্লো স্কোর স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেছে। এটা এক ধরনের পরীক্ষা যাতে মেপে দেখা হয় আপনি ফুসফুস হতে কত দ্রুত বাতাস বের করে দিতে পারেন। (আমরা পিক ফ্লো নিয়ে আর্টিকেল তৈরি করছি। তার আগ পর্যন্ত এই সম্পর্কে অন্য উৎস থেকে জানার চেষ্টা করুন।)
  • শিশুদের ক্ষেত্রে বুকে বা পেটে ব্যথার সমস্যাও দেখা দিতে পারে

এই লক্ষণগুলো যে হঠাৎ করেই শুরু হতে হবে, এমন না। বরং প্রায়ই লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে কয়েক ঘন্টা বা কয়েকদিন ধরে খারাপের দিকে যেতে থাকে।

অ্যাজমা অ্যাটাক হলে করণীয় কী?

আপনার যদি মনে হয় আপনার অ্যাজমা আটাক হচ্ছে তবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল করুন।

  1. সোজা হয়ে বসুন। শুয়ে পরবেন না।
  2. ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া আর ছাড়ার চেষ্টা করুন৷
  3. শান্ত থাকুন। ঘাবড়ে গেলে বা প্যানিক করলে অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে৷
  4. লক্ষণ খারাপ হলে যেই ইনহেলার নেয়ার কথা, সেটাকে সাধারণত রিলিভার ইনহেলার বলা হয়। আপনার রিলিভার ইনহেলার থেকে ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ড পরপর ১ বার করে পাফ (দম) নিন। সর্বাধিক ১০ বার পর্যন্ত পাফ নিতে পারবেন।

কখন দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে?

  1. যদি আপনার সাথে ইনহেলার না থাকে
  2. যদি ইনহেলার ব্যবহারের পরেও আপনার অবস্থা খারাপ হতে থাকে
  3. ইনহেলারের ১০টি পাফ নেয়ার পরও যদি ভালো বোধ না হয়
  4. যে কোন পর্যায়ে আপনি যদি দুশ্চিন্তা বোধ করেন

যেকোন জরুরি অবস্থায় সাহায্য চাইতে ভয় পাবেন না। যদি সম্ভব হয়, হাসপাতালে যাওয়ার সময় আপনার ব্যবহৃত ওষুধগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে যান। যদি ১৫ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে ৪ নং ধাপটি (ইনহেলার পাফ নেয়া) পুনরায় অবলম্বন করুন।

যদি আপনার লক্ষণসমূহের উন্নতি হয় এবং আপনার তাৎক্ষণিক সাহায্যের প্রয়োজন না হয়, তবে চেষ্টা করুন অন্ততপক্ষে ঐদিন একবার ডাক্তার দেখিয়ে নিতে।

যেসকল ব্যক্তি অ্যাজমা সংক্রান্ত MART বা SMART চিকিৎসাপদ্ধতি (যেখানে সাধারণত একটিমাত্র ইনহেলার দিয়ে অ্যাজমা চিকিৎসা করা হয়) এর অধীনে রয়েছেন, তাদের জন্য এই পরামর্শগুলো প্রযোজ্য নয়। এই ক্ষেত্রে অ্যাজমা অ্যাটাক হলে কী করণীয় সে বিষয়ে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন। লিখিত আকারে পরামর্শ নেবার চেষ্টা করবেন, যাতে অ্যাজমা অ্যাটাক হলে সেই লেখা অনুযায়ী আপনি চিকিৎসা নিতে পারেন।

অ্যাজমা অ্যাটাকের পরে কী করণীয়?

যদি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, তবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পুনরায় ডাক্তার দেখিয়ে নেয়া উচিত। আর যদি হাসপাতালের চিকিৎসার প্রয়োজন না হয়ে থাকে, তবে সেদিনই ডাক্তার দেখিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন।

অ্যাজমা অ্যাটাকের জন্য যাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, তাদের অনেকেরই আবার ২ সপ্তাহের মধ্যে একই কারণে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। তাই পরবর্তী অ্যাটাক ঠেকাতে আপনার করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা জরুরি৷ আপনার চিকিৎসাপদ্ধতি বা জীবনধারায় কোন ধরনের পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কিনা সে বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন। যেমন, আপনার ওষুধের ডোজ পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে বা সঠিকভাবে ইনহেলার ব্যবহারের পদ্ধতি আবার ঝালাই করে নিতে হতে পারে।

কীভাবে অ্যাজমা অ্যাটাক প্রতিরোধ করা যায়?

নিম্নোক্ত উপায়গুলো অবলম্বন করলে আপনার অ্যাজমা অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসতে পারে।

  • আপনার অ্যাজমার চিকিৎসা নিয়ম মত মেনে চলুন এবং প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধগুলো সময়মত সেবন করুন।
  • বছরে কমপক্ষে একবার আপনার হাঁপানি চিকিৎসা বিষয়ে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নিন৷
  • আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি ইনহেলার সঠিক কায়দায় ব্যবহার করতে পারছেন।
  • যে সমস্ত বিষয় আপনার লক্ষণগুলো বাড়িয়ে দেয়, সেগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।

যদি আপনার লক্ষণসমূহ খারাপ হতে থাকে বা আপনার ঘন ঘন ইনহেলার ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, তবে এ বিষয়ে সতর্ক হোন। আপনার নির্ধারিত চিকিৎসা পদ্ধতি সঠিকভাবে মেনে চলুন এবং লক্ষণগুলো খারাপ হতে থাকলে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন৷

অ্যাজমা রোগীর পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের জন্য পরামর্শ

অ্যাজমা অ্যাটাক হলে আপনার পরিবার বা বন্ধুরা কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারে, সেটা তাদের জানা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ব্যক্তিগত চিকিৎসা পদ্ধতির লিখিত বিবরণি কপি করে বা ছবি তুলে আপনার কাছের মানুষদের দিয়ে রাখতে পারেন যাতে আপনার অ্যাজমা এটাক হলে কি করণীয় সে বিষয়ে তারা জানতে পারেন ও সচেতন থাকতে পারেন।