গর্ভধারণের দ্বিতীয় সপ্তাহ

গর্ভধারণের চতুর্থ সপ্তাহ

এ সপ্তাহের হাইলাইটস

আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া চালিয়ে যান

শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র সুস্থভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য প্রতিদিন আয়রনফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া প্রয়োজন।[১] এ ব্যাপারে যদি আগে থেকে না জেনে থাকেন, তাহলে দেরি না করে এ সপ্তাহ থেকেই আয়রন-ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করে দিন।

গর্ভধারণের প্রস্তুতি নিতে চেকআপে যান

গর্ভধারণের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় থেকেই আপনার চেকআপে যাওয়া উচিত। ইতোমধ্যে কোনো ওষুধ খেতে থাকলে সেটা গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ কি না অথবা পরিবর্তন করতে হবে কি না—এসব সংক্রান্ত জরুরি উপদেশ চেকআপে পাবেন।

আগে কখনো গর্ভধারণের চেষ্টা করতে গিয়ে দুর্ঘটনা হয়ে থাকলে বিশেষ পরামর্শ দিতে পারবেন। তাই এ সপ্তাহে একজন গাইনী ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে চেকআপ করিয়ে আসতে পারেন।

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন

অতিরিক্ত ওজন আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য নানান ক্ষতির কারণ হতে পারে। আবার ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম হলেও আপনার ও ছোট্টমণির বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা হতে পারে।

২ সপ্তাহে বাচ্চার বৃদ্ধি

গর্ভে আপনার ছোট্টমণির জীবন শুরু হতে আরও কিছুদিন বাকি। তবে এরমধ্যেই আপনার শরীর সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু করে দিচ্ছে। আগামী ২ সপ্তাহ ধরে আপনার শরীর গর্ভধারণের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিবে।

এসময়ে আপনার পেটের ভেতরে ডিম্বাণু বের হয়ে সঙ্গীর শুক্রাণুর সাথে মিলিত হবে। সেখান থেকে আপনাদের সোনামণির ছোট্ট ভ্রূণ তৈরি হবে। এরই মধ্যে আপনার জরায়ু ছোট্টমণির বাসা বানানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে ফেলবে।

অবশেষে শিশুর ভ্রূণ আপনার জরায়ুতে নিজের জন্য জায়গা করে নিবে। সেখানেই ছোট্টমণি ৯ মাস ধরে একটু একটু করে বড় হয়ে অবশেষে আপনার ছোট্টমণি পৃথিবীতে আসবে।

২ সপ্তাহে মায়ের শরীর

গত সপ্তাহে গর্ভধারণের আগে আপনার শেষবারের মতো মাসিক হয়েছে। আপনি এখনো গর্ভধারণ করেননি, তবে কাগজে-কলমে কিন্তু আপনি এখন গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় সপ্তাহে আছেন!

শুনতে আশ্চর্য লাগছে? ডাক্তারি হিসেবে গর্ভধারণের আগে আপনার সর্বশেষ মাসিকটা যেদিন শুরু হয়েছে, সেই দিনটাকেই আপনার সম্পূর্ণ গর্ভাবস্থার প্রথম দিন হিসেবে ধরা হয়। তার মানে ছোট্টমণির জন্মের আগে ৯ মাস বা ৪০ সপ্তাহ অপেক্ষার পালা শুরু হয়ে গিয়েছে, আর প্রথম সপ্তাহ ইতোমধ্যেই পার হয়ে গিয়েছে। আপনাকে স্বাগতম!

গর্ভধারণের পূর্বে চেকআপ

আপনার মনে হতে পারে, গর্ভধারণের আগে আবার চেকআপ কেন? কারণ হলো, অনেকের গর্ভধারণের আগে থেকে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা থাকে। কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য নিয়মিত ওষুধ খাওয়া লাগে। এর মধ্যে কিছু ওষুধের ডোজ বাড়াতে হতে পারে। আবার কিছু ওষুধ আছে, যেগুলো খাওয়া চলাকালে গর্ভধারণ করলে গর্ভের শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

চেকআপে গেলে ডাক্তার এসব ওষুধের বিকল্প কোনো ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারবেন। যেই চিকিৎসাটি আপনার ও গর্ভের শিশু—দুজনের জন্যই সবচেয়ে নিরাপদ, সেটা বেছে দিতে পারবেন।

তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন, ডাক্তারের সাথে কথা বলার আগে হুট করে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। এতেও আপনার মারাত্মক কোনো ক্ষতি হতে পারে। তাই আপনার কোনো রোগ থাকলে এবং যেকোনো ধরনের ওষুধ, এমনকি ভিটামিন ও হারবাল ওষুধ খেলে সেটা নিয়ে ডাক্তারের সাথে খোলাখুলি কথা বলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা

গর্ভধারণের আগে থেকেই আপনার ওজন একটা স্বাস্থ্যকর সীমায় রাখা প্রয়োজন। অতিরিক্ত ওজন আপনার ও গর্ভের শিশুর জন্য নানান ক্ষতির কারণ হতে পারে।

আবার ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম হলেও আপনার ও ছোট্টমণির বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা হতে পারে। তাই আপনার উচ্চতার তুলনায় ওজন ঠিক আছে কি না সেটা হিসেব করুন।

বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলতে স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস মেনে চলুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। আর ওজন অনেক কম হলে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খান।

এ সপ্তাহে বাবার করণীয়

আপনি হয়তো জানেন না যে আপনি কিছুদিনের মধ্যে বাবা হতে চলেছেন। তাই গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন এমন সপ্তাহগুলোতে যা করণীয়, সেই বিষয়গুলো আমরা এখানে তুলে ধরছি।

গর্ভধারণের প্রস্তুতি নিতে চেকআপে যান

গর্ভধারণের আগে থেকেই চেকআপে যাওয়া উচিত। কারণ চেকআপের মাধ্যমে শিশুর মায়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসতে পারে। ডাক্তার আয়রন ও ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করার পরামর্শ দিতে পারেন। ইতোমধ্যে কোনো ওষুধ খেতে থাকলে সেটা গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ কি না অথবা পরিবর্তন করতে হবে কি না, এসব সংক্রান্ত জরুরি উপদেশ দিতে পারবেন।

জীবনধারায় ছোটোখাটো পরিবর্তন আনতে হলে সেটা নিয়ে ডাক্তার আপনাদের সাথে বিস্তারিত কথা বলবেন। আগে কখনো গর্ভধারণের চেষ্টা করতে গিয়ে দুর্ঘটনা হয়ে থাকলে বিশেষ পরামর্শ দিতে পারবেন।

তাই এ সপ্তাহেই একজন গাইনী ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে চেকআপ করিয়ে আসুন।

অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করুন

গর্ভধারণের আগে থেকেই শিশুর মায়ের ওজন একটা স্বাস্থ্যকর সীমায় রাখা প্রয়োজন। কেননা অতিরিক্ত ওজন শুধু আপনার সঙ্গীর জন্যই নয়, গর্ভের শিশুর জন্যও নানান ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন: নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শিশু অপরিণত বা প্রিম্যাচিউর অবস্থায় জন্মগ্রহণ করা, শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দেওয়া ও মৃতপ্রসব। তাই এখন থেকেই সঙ্গীর বাড়তি ওজনের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করুন।

ওজন কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস মেনে চলা ও নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি। সুস্থ থাকতে সবারই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। আর নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা মেনে চলা—এগুলো সবার জন্যই উপকারী।

আপনারা দুজনে যদি একসাথে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুরু করেন, তাহলে হয়তো সঙ্গীর জন্য ওজন কমানো সহজ হবে। দিনের একটা সময় দুজনে একসাথে শরীরচর্চা করতে পারেন। হাঁটতে যেতে পারেন। বাজার করার সময়ে বেশি বেশি শাকসবজি, ফলমূল ও মাছ কিনেও সাহায্য করতে পারেন।

ধূমপান ছেড়ে দিন

গর্ভবতী মা ধূমপানের আশেপাশে থাকলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শিশু প্রিম্যাচিউর হওয়া বা সময়ের আগে প্রসব হওয়া, ওজন কম হওয়া, জন্মগত ত্রুটি হওয়াসহ নানান জটিলতার সম্ভাবনা বাড়ে।[২][৩][৪] তাই আপনি ধূমপান করলে সেটা ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। বাসায় অন্য কেউ ধূমপান করলে, তার সাথে এই ব্যাপারে আলাপ করুন।